উৎসাহ

উৎসাহ

তোমাদের গল্প সেপ্টেম্বর ২০১৩

মুহাম্মদ নেজামুল ইসলাম

আব্বু প্রবাসী হওয়ায় দীর্র্ঘদিন পরে এসে তাদেরকে একটু আদর করেন। কিন্তু তা সামান্যই। ওরা ভয় পায় বেশি আম্মুকে। পড়ালেখায় তেমন খারাপ না। একজনের রোল দুই অন্যজনের এক। বড়ভাই গত বছর এক ছিল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে একটু পেছনে গেল। কিন্তু পেছনে যাওয়ার ছেলে রাইয়ান নয়। বড় ভাই ক্লাস ফাইভে, ছোট ভাই ক্লাস ফোরে। ছোট ভাই রাজিন রেজাল্ট শোনার সাথে সাথে আব্বুকে ফোনে জানিয়ে দেয়। আব্বুও রাইয়ানকে অনেক বকা দিল। এ দিকে প্রতিদিন বকা শুনতে হয় আম্মুর। স্যার এসে দু’বেলা পড়ান। বাইরে আবার বিকেল বেলা অন্য শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট পড়তে যেতে হয়। এটি আম্মুর সিদ্ধান্ত। যাতে ওরা বিকেলে খেলা না করে পড়ায় ব্যস্ত থাকে। কিশোরকণ্ঠ বলে কথা। এই বয়সেই তাদের সাথে সম্পর্ক করে ফেলেছে নতুন কিশোকণ্ঠ। এতো পড়ালেখার ছাপের ভিতর কিশোরকণ্ঠ তাদের চায়-ই চায়। স্যার তাদের জন্য মাসের শুরুতেই কিশোরকণ্ঠ এনে দেন। মাঝ্যে মাঝ্যে আসতে দেরি হলে কত না অভিমান! স্যার তাদরেকে বুঝাতে মুশকিলে পড়ে যান। কিশোকণ্ঠ নিলে কী হবে, পড়তে বড় কষ্ট হয়ে যায। মানে যখন তখন পড়তে চায় বলে আম্মু বাঁধ সাধেন। এই যেমন স্কুল থেকে এসে খাবার বাদ দিয়ে আজান শুনেও না শোনার ভান ধরে পড়তে থাকলো। আম্মু এসে হাত থেকে কেড়ে নিলেন। এ দিকে স্যারকে বড় সমস্যায় ফেলে দিলো ওরা। মানে দুই ভাইয়ের মধ্যে কে আগে পড়বে তার বিচার করা। বড় ভাইও কম যুক্তি দেয় না। আবার ছোট ভাইয়ের যুক্তিগুলো ফেলে দেয়ার মতো নয়। শেষ পর্যন্ত নাছোড়বান্দার সিদ্ধান্ত হলো দুজনে দুইটা নেবে। এই বছর রাইয়ান আব্বুর কাছ থেকে ল্যাপটপ পাওয়ার যোগ্যতা হারালো। কারণ আব্বু গত বছর শর্ত দিয়েছিলেন রোল আবার এক হলে ল্যাপটপ হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু তা আর হলো না। কারণ, রাইয়ানের রোল এবার আর এক হয়নি। বিষন্ন মন নিয়ে দিন কাটে ওর। ঠিক এই সময় তার সামনে এলো এপ্রিল মাসের কিশোরকণ্ঠ। পেয়ে পড়া শেষ না হতেই চোখে পড়লো ল্যাপটপ পাওয়ার প্রতিযোগিতা। তখন সে আর দেরি না করেই প্রথম জাতীয় কিশোরকণ্ঠ পাঠ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলো, মামা ওকে উৎসাহিত করলো। কারণ আব্বুর কাছ থেকে ল্যাপটপ পাবে কিনা সন্দেহ। যেহেতু তার ক্লাসে এখন অনেক মেধাবী ছাত্র হয়েছে। কিন্তু তার মনে হঠাৎ আবার কী চিন্তা উঁকি মারল। মামা লক্ষ্য করলেন তা। বললেন, কী হলো রাইয়ান? কী চিন্তা করছো? বড় শ্বাস ফেলে জবাব দিল রাইয়ান, মামা, আমি ল্যাপটপ পাবো না। কেন তোমার কি সন্দেহ হচ্ছে? হ্যাঁ মামা, আমি পাবো কিনা সন্দেহ। কারণ আমার ক্লাসে অনেক জন ছাত্রের মধ্যে আমার রোল দুই নাম্বার। আর এই প্রতিযোগিতায় তো লক্ষ লক্ষ ছাত্র অংশগ্রহণ করবে মামা। তাহলে আমার কী হবে? আমি কি প্রথম হবো? মামা তখন সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, তোমার ভাগ্যে থাকলে কেউ সেটি ধরে রাখতে পারবে না। তুমি অত চিন্তা মাথায় রেখ না। চেষ্টা চালিয়ে যাও। এদিকে মুয়াজিনের আজান মাগরিবের নামাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। এভাবে মামা প্রায়ই এসে তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার  উৎসাহ দিয়ে যান। তখন আর দেরি না করে মামা দুজনকে দুহাতে ধরে মসজিদের দিকে চললেন। রাজিন অজু করে মসজিদের ঢোকার আগেই রাইয়ান দেখে ফেললো তার পা ভালো করে ধৌত করে নাই। তখন সে মামাকে বলতেই মামা তাকে ডেকে বললো, অজু করার সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো করে ধৌত করতে হয়। তখন সে পা আবার ভালো করে ধৌত করলো। মামা অন্য মসজিদের ইমাম। কিন্তু আজ জুমাবারে তিনি দাওয়াত খেয়ে যাওয়ার পথে ভাগিনাদের সাথে সময় কাটালেন। নামাজ শেষে মোনাজাত করলো রাইয়ান ল্যাপটপ পাবার জন্য চুপি চুপি আল্লাহর কাছে। আজকে অবশ্য জুমাবার হওয়ার কারণে মামা ভাগ্নে গল্প করার সুযোগ পেল। কিন্তু স্যার জুমারার হলেও ওরা ঘরে বসতে না বসতেই দরজায় নক করলেন। স্যার এসে বসার সাথে সাথেই আম্মু নাস্তা তৈরি করে দিলেন। খেতে খেতেই স্যারকে তারা আবেদন করলো কবিতা বলার কারণ প্রতিদিনই তাদেরকে তিনি কবিতা শোনান। খাবারের সময় বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পড়া আরম্ভ করলো। রাইয়ান এই বছর সমাপনী পরীক্ষা দিবে। তাই তার দৌড়ঝাপ একটু বেশি। নামাজ পড়ে এসে আর একটু পরেই আম্মু ভাত রেডি করবেন। আজকে তরকারিতে মাছ থাকায় স্যার এই ফাঁকে বলে ফেললেন রাইয়ানকে দুই লাইন কবিতা। স্যার প্রথমদিনই বলে দিয়েছেন ওদেরেকে ডান হাতে খেতে হয়, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করতে হয়, পরিষ্কার করে খেতে হয়, একপাশ থেকে খেতে হয়Ñ আরো কত কী! রাত জেগে না থেকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার নির্দেশ আম্মুর পক্ষ থেকে। কারণ বেশি জেগে থাকলে আবার ফজরের নামাজ পড়তে পারবে না। আম্মু মশারী টাঙিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। অমনি রাইয়ান বালিশের নিচ থেকে কিশোরকণ্ঠ পড়ার চেষ্টা করলো ডিম লাইটের আলোতে। কিন্তু ঘুম তার একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়ালো। ঘুমের সাগরে রাইয়ান ল্যাপটপ নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে দিল। সে সত্যিই আশ্চর্য হলো সোনার হরিণ প্রথম পুরস্কার ল্যাপটপ তার হাতেই ধরা দিল। বাহ, কী আশ্চর্য! স্যার এলে বলবে। আব্বুকে বলবে, মামাকে প্রথমে বলবে। আরো সহপাঠীকে বলবে। মামার মাধ্যমে সে উদ্বোধন করার নিয়তে আর নাড়াচাড়া না করে রেখে দিল। কল্পনা-জল্পনা করতে করতে ‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান নাও...ম....’ কানে ধাক্কা লাগলো। আম্মু ডেকে দিতেই ও আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই তাড়াতাড়ি বালিশের পাশে রাখা ল্যাপটপ খুঁজে দেখলো। কিন্তু কোথায় গেলো তার ল্যাপটপ! হায়রে তাহলে কি আমি এতক্ষণ স্বপ্নই দেখছিলাম? ভাবল রাইয়ান।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ