ঈদের সুখ-অসুখ

ঈদের সুখ-অসুখ

প্রবন্ধ নিবন্ধ রফিক রইচ এপ্রিল ২০২৩

দেখতে দেখতেই আবার ফিরে এলো আমাদের সকলের খুশির ঈদ। আর আসবেই বা না কেন? ঈদ মানেই তো উৎসব যা বারবার ফিরে আসে। জানোতো বন্ধুরা- ঈদ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ “আউদ” থেকে যার অর্থ উপরেই বললাম। এই ঈদের নাম যেহেতু ঈদুল ফিতর তাই ফিতর শব্দটি জানলে আমাদের আরো ভালো হবে। ফিতর শব্দটিও আরবি শব্দ ফিতরা থেকে এসেছে। যার অর্থ ভেঙে দেয়া। তার মানে দাঁড়াচ্ছে রোজা ভাঙার উৎসবের দিন বা আনন্দের দিন। এটি একটি সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবের সূচনা করেন আমাদের প্রিয় নবী মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা:)। তিনি মক্কা থেকে মদিনায় এসে এটি হিজরি দ্বিতীয় সনে চালু করেন। দীর্ঘ একটি মাস রোজা রাখার পর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতরের এ উৎসব হয়। এ ঈদের আগের রাত্রিকে ইসলামী পরিভাষায়- লাইলাতুল জায়জা বলে। এর অর্থ হলো পুরস্কারের রজনী বা পুরস্কারের রাত। আমাদের দেশে এ রাত চাঁদ রাত হিসেবে জনপ্রিয়।

যাহোক বন্ধুরা- ঈদ আমাদের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক বিশাল বড় নিয়ামত। যে নিয়ামতের শুকরিয়া করে শেষ করা যাবে না। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমরা আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের শুকরিয়া এতই কম করি বা করে থাকি যা বলার মতো নয়। তবে আমি আশা করি তোমরা এ নিয়ামতের শুকরিয়া করবে। মহান রবের জিকির করবে। তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে শালীন আমোদ ফুর্তি, সাজসজ্জা, সুগন্ধি মাখা, ঘোরাফেরা, পরিমিত পরিমাপে নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য-খাবার খাবে।

এখানে কিছু কথা তোমাদের না বললেই নয়- আর তা হলো, তোমাদের এবং বড়দের মধ্যে অনেকেই ঈদ যে মৌলিক শালীন ও ধর্মীয় উৎসব সেটার কথা একেবারেই ভুলে গোমরাহির পথ বেছে নিয়ে নিয়ামতে পূর্ণ বরকতময় এ উৎসবকে কলঙ্কময় করে তোলে। অন্য ধর্মের মানুষেরা এদের কর্মকাণ্ড দেখে হাসাহাসি করে। আমাদের ধর্মীয় উৎসবকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, যা মোটেই কাম্য নয়। 

ঈদের দিনে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করা অপরিহার্য। কিন্তু দেখবে অধিকাংশেরই ফজরে ঘুম ভাঙে না। ঘুমায়। অনেকে আবার সারা রমজান মাস জুড়েও রোজা রাখে না। এমনকি ঈদের নামাজও পড়তে যায় না। আবার অনেকে কোনোভাবে ঈদের নামাজে গেলেও সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে নামাজ শেষে খোতবা এবং মোনাজাতেও শরিক হয় না। দেয় দৌড়- গোল্লাছুট। বাড়িতে এসেই পেট পুরে খেয়ে টিভি, স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ নিয়ে বসে দেখে নানান অশ্লীল বিষয় আশয়। সারাদিন নামাজের কোন বালাই নেই। কেউ কেউ নানা হারাম খেলাধুলায় মত্ত হয়ে পড়ে। অভাবী অনাহারী ও এতিমদের খোঁজখবর রাখে না। প্রতিবেশীরও খোঁজখবর রাখে না। ফিরেও দেখে না কেমন  করে কাটছে তাদের ঈদ। শুধু আনন্দ ফুর্তিতে মগ্ন তাও আবার যা ইসলাম সমর্থন করে না এমন কিছু। তোমাদের কিন্তু দেখতে হবে- এগুলো যারা করে প্রথমে তাদের বোঝানো এবং কৌশল করে তাদের বাধা প্রদানে ব্যবস্থা করবে। 

প্রিয় বন্ধুরা তোমাদের ঈগলের মতো চোখ রাখতে হবে, খরগোশের মতো কান খাড়া রাখতে হবে, জিহ্বায় সাহস ও শক্তি রাখতে হবে এবং ইসলামিক বইপুস্তক পড়তে হবে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য ও পিতা-মাতার প্রতি যত্নবান থাকতে হবে। শেষ কথা ইসলামের বিধি নিষেধের ঝালরের সমেত সজ্জিত শামিয়ানার নিচে বেষ্টিত থেকে নিজেদের সমৃদ্ধ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই ঈদের সুখের বৃষ্টি চারিদিকে সিক্ত করে সুখের ফলনকে বহুগুণে  বাড়িয়ে তুলবে।

আশা করি তোমরা এ বিষয়গুলোর প্রতি নজর রেখে ইসলামী ভাবধারায় কুরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে ঈদের সুখ বিলাবে, আনন্দ করবে, ফুর্তি করবে, ঘোরাফেরা করবে। 

কিন্তু বন্ধুরা যখন আমরা ঈদের এ উৎসব নানাভাবে নানান সব বর্ণিল আয়োজনে পালন করার তথা উদযাপন করার সুযোগ পাচ্ছি ঠিক তখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রদেশে তোমাদের মতো নিরীহ সোনামণিদের বুলেটের আঘাতে ঝাঁজরা করে মেরে ফেলছে তাদের মা-বাবার সামনে। মা বাবার কান্নায় ভারি হচ্ছে আকাশ বাতাস। অথবা, তোমাদের মতো শিশু কিশোরদের সামনে পাখির মতো গুলি করে মারছে তাদের পরম শ্রদ্ধেয় ভালোবাসার ব্যাংক বাবা ও মায়েদের। একবার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করে দেখো তো যদি বিষয়টি আমাদের উপর হতো তাহলে কেমন লাগতো?

বন্ধুরা, নির্যাতিত এসব মুসলিম দেশ ও প্রদেশগুলোর মধ্যে- মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন বিশেষ করে চীনের উইঘুর, রাশিয়ার চেচনিয়া ও দাগেস্থান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সমগ্র ভারত বিশেষ করে ভূস্বর্গ কাশ্মির। বাদ নেই ইউরোপ ও আমেরিকাতেও মুসলিম নির্যাতন। আবার জান কি বন্ধুরা মুসলমানরাই মুসলমানদের শিশু-কিশোরদের নির্মমভাবে মেরে ফেলছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। তার মধ্যে ইয়েমেন উল্লেখযোগ্য। আবার গত ৬ ফেব্রুয়ারি-২০২৩ এ তুরস্ক ও সিরিয়ায় হয়ে গেল প্রাকৃতিক ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প। যে ভূমিকম্পে ছেলে-মেয়ে হারিয়েছে মা-বাবাকে, মা-বাবা হারিয়েছে তোমাদের মতো  আদরের সন্তানদের। তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ দানবীয় ভূমিকম্প।

যেখানে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা রয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছো এদের ঈদ কেমন কাটছে বা কাটবে। তাদের কাছে ঈদের সুখ বলে কিছু নেই। শুধু রয়েছে অসুখ, অশান্তি, অস্থিরতা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। কাজে কাজেই এবারের ঈদ তোমরা উদযাপন করো তাতে বাধা নেই। তবে তোমরা আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করবে এবং সর্বোপরি মুসলিম বিশে^র জন্য দোয়া করবে।

আমাদের দেশের সরকার সাহায্য পাঠানোর ব্যবস্থা করলে তোমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে তাতে। দোয়া করবে নিজেদের জন্য। আল্লাহ্ যেন তোমাদেরকে অন্যদের মতো পথভ্রষ্ট না করেন। তবেই ঈদের যে শিক্ষা ও তাৎপর্য রয়েছে তার কিছুটা প্রকাশ পাবে। দয়াময় আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সহায় হোন। ভালো থেকো তোমরা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ