ঈদের চাঁদ

ঈদের চাঁদ

তোমাদের গল্প নভেম্বর ২০১৩

শাহরিয়ার ইবনে রফিক মসজিদের দক্ষিণ পাশে একটি বড় বিল আছে। তার পশ্চিম পাশে, বিলের দক্ষিণে একটি রাস্তা, সে রাস্তা দিয়েই আমাদের বাড়ি যেতে হয়। এ বছর তো বৃষ্টি কম পড়েছ তাই বিলের পানি জমেনি। আমি মনে মনে ভাবলাম রাস্তা দিয়ে না গিয়ে বিলের ভিতর দিয়ে যাই। তাহলে শরীরে বাতাস লাগবে আর মনটাও ভাল লাগবে। বিলের ভিতর দিয়ে আমি আস্তে আস্তে হাঁটছি। হঠাৎ কী যেন ভেবে উপরের দিকে তাকালাম। ছোট্ট তারার মত কী যেন খুব তাড়াতাড়ি নিচে নামছে। সেটা যদি তারা হয়ে থাকে তাহলে তো আমাদের দিকে মানে আমাদের দেশের দিকে আসছে। তাহলে তো আমাদের দেশটা ধ্বংস হয়ে যবে। এসব কথা ভাবতে না ভাবতেই তারার মত জিনিসটি আমার বাম পাশে মানে বিলের উত্তর পাশে এসে নেমেছে। তখন সেটা দেখতে বড় হয়েছে। ওটা দেখতে গোল পিরিচের মত। হঠাৎ আমার মনে হল সসার দেখতে পিরিচের মাত। সেগুলো দিয়ে ভিনগহের প্রাণীরা গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়ায়। তাহলে এটাও তো একটি সসার। তাহলে কী এর মধ্যে ভিনগ্রহের কোন প্রাণী আছে। হঠাৎ সসারটির ভিতর থেকে কে যেন বলল আবদুল্লাহ, এদিকে এসো। এখন আমি কী করব তা ভাবতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমার শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালাম। আবারও সসারটির ভিতর থেকে বলে উঠল, ‘তাড়াতাড়ি আবদুল্লাহ, তাড়াতাড়ি এসো’ কোন কিছু না ভেবেই সাসারটির দিকে পা বাড়ালাম। ওটার কাছে যেতেই তার দরজা খুলে গেল এবং সেখান দিয়ে একটি সিঁড়ি এসে মাটিতে পড়ল। আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে সসারটির ভিতরে ঢুকলাম। ভিতরে ঢুকে আমার চোখ খোলা রাখতে পারলাম না। কারণ ভিতরে প্রচুর আলো। এতক্ষণ তো আমি অন্ধকারে ছিলাম, অন্ধকার থেকে আলোতে আসলে আলোর সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। দেখি, সামনে মানুষের মত দেখতে একটি প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের রং গাঢ় হলুদ। চোখ তিনটিÑ মাথার উপর দুটো আর মুখের একটু উপরে একটি। নাক নেই। লম্বা একটি মুখ। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কী যেন হাতে নিয়ে। সেটা আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘স্বাগতম আমার সসারে তোমাকে।’ ‘ধন্যবাদ। এটা কি?’ প্রাণীটি আমাকে যেটা দিল তা তা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। ‘ফুল এটা। আমাদের গ্রহের।’ ‘আপনার গ্রহের নাম কী?’ ‘ভস্টক।’ ‘এটা তো রসকেমস নক্ষত্রের একটি গ্রহ।’ ‘ধন্যবাদ তোমাকে এই জন্য যে তুমি আমাদের গ্রহ সম্বন্ধে ধারণা রেখেছে।’ ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের ধারণ সেখানে কোন প্রাণী নেই। তার প্রমাণও তাদের কাছে আছে। তারা কিছু দিন আগে সেখানে একটি রকেট পাঠয়েছিল কিন্তু সেখানে কিছুই পায়নি। শুধুই মরুভূমির মত ধুধু বালি।’ ‘ও এই ব্যাপার। তোমাদের বিজ্ঞানীরা সেখানে রকেট পাঠিয়েছে এটাও ঠিক আর সেখানে মরুভূমির মত ধু ধু বালি দেখেছে তাও ঠিক। তবে তোমাদের মহাকাশযান রকেট যখন আমাদের গ্রহের আওতার ভিতরে যায় তখন আমরা তা দেখতে পাই। আমাদের গ্রহের সবাই চায় যে আমাদের সন্ধান কেউ যেন না জানে। আমাদের গ্রহের একটি বৈশিষ্ট্য হল এর অর্ধেক মরুভূমি সেখানে কেউ বাস করতে পারেব না প্রচণ্ড গরমের কারণে। গ্রহটি রসকেমস-এর খুব কাছে। আর আমরা থাকি গ্রহের অন্য পাশে সেখানটা আমাদের বাস করার উপযোগী।’ ‘আপনাদের গ্রহটি কি রসকেমসকে ঘিরে ঘুরে না?।’ ‘ঘুরে কিন্তু আমাদের গ্রহটির মরুভূমির অংশটি রসকেমস-এর দিকে থাকে।’ ‘তাহলে তো জায়গাটা খুব অন্ধকার।’ ‘না, অন্ধকার নয়।’ ‘কেন?’ ‘কারণ, আমাদের গ্রহের একটি উপগ্রহ আছে, যেটা সূর্য থেকে সরাসরি আলো পায় এবং তা আমাদের গ্রহে ছড়িয়ে দেয়। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি সবকিছু আমাদের ভালোর জন্যই করেন। তাঁর ক্ষমতা অসীম।’ সসারটি ততক্ষণ অনেক উপরে উঠে গেছে। আমি ভীনগ্রহের মানে ভস্টক গ্রহের মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করলাম তার নাম কী? ‘হেবনলী। ও একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি। তোমার কী জন্য মন খারাপ হয়েছে তা বল। তোমার মন খারাপ হওয়ার কারণটা আমি জানতে চাই। আর তা পূরণ করতে পারি কিনা দেখি।’ বলল ভস্টক গ্রহের হেবনলী। আমি প্রত্যেক বছর ঈদের আগে যে চাঁদ ওঠে তা দেখি। কিন্তু এবারে ঈদের চাঁদটি দেখতে পারলাম না।’ অনেকটা হতাশা মনে আমি কথাগুলো বললাম। ‘ও এই ব্যাপার। কোন চিন্তা করো না। এখনই তোমাকে চাঁদ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি আমার সাথে জানালার ধারে এসো।’ বলে হেবনলী জানালার দিকে পা বাড়াল। আমিও তার পিছু পিছু জানালার দিকে এগুলাম। জানালা কাছে গিয়ে দেখি ইয়া বড় চাঁদ। এত বড় চাঁদ দেখব আমি জীবনে কল্পনা করিনি। আল্লাহর সৃষ্টি যে এত সুন্দর হতে পারে তা দেখে আমার মাথা শ্রদ্ধায় তাঁর প্রতি নত হল। আমি হেবনলকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘মহান আল্লাহর তায়লার এত সুন্দর সৃষ্টিকে এত কাছে থেকে দেখে আমার মন আজ আনন্দে ভরে উঠল। আমার আর কোন দুঃখ নেই। আল্লাহর এ সুন্দর সৃষ্টি তোমার মাধ্যমে দেখতে পাওয়ায় তোমাকে ধন্যবাদ।’ ‘ধন্যবাদ তোমাকেও।’ হেবনল আমাকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল। ‘চল এবার তোমাকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়ে আসি। আমাকে আবার অন্য জাওগায় যেতে হবে।’ ‘চল।’ সসারটি খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবীর দিকে নামতে লাগল। এবং এক সময় মাটিতে ল্যান্ড করল। আমাকে নামিয়ে দিয়ে হেবনল বলল, ‘আসি।’ ‘আবার কবে দেখা হচ্ছে বন্ধু?’ কখন যে আমি হেবনলকে আমার বুকে বন্ধু হিসাবে ঠাঁই দিয়েছে তা বলতে পারব না। মনের কথাটা হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল। ‘বন্ধু বলে যখন ডেকেছে, আবার দেখা নিশ্চয়ই হবে। আমি এখন যাচ্ছি। খোদা হাফিজ।’ তারপর সসারটি উপরের দিকে উঠতে লাগল। আমিও বললাম, ‘খোদা হাফিজ।’ উপরের দিকে উঠতে উঠতে একসময় সসারটি অদৃশ্য হয়ে গেল। এ সময় কানে ভেসে এল এশার আজান। এখন আর বাড়ি যাব কী। নামাজ পড়ে তারপর বাড়ি যাই।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ