ঈদ মোবারক ঈদ

ঈদ মোবারক ঈদ

ফিচার আগস্ট ২০১৩

মঈনুল হক চৌধুরী

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। এই আনন্দ সবার জন্য। ঈদ হলো ছোট-বড় ভেদাভেদহীন একটি মিলনের দিন। মনে মনে একাকার হয়ে যাওয়ার দিন। বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এলো সেই খুশির দিন, আনন্দের দিন। পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে সারা মুসলি বিশ্ব। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ঈদের এই আনন্দ বেশি দেখা যায় ছোটদের মধ্যে। বছরের এই বিশেষ দিনটির জন্য তারা দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকে। ঈদের আগের দিন সাঁঝবেলায় পশ্চিম আকাশে কাঁচির মতো এক ফালি চাঁদ ওঠে। শিশু-কিশোররা ‘ঈদ মোবারক’ বলে অভিনন্দন জানায় তাকে। তারপর শুরু হয় মেহেদী লাগানোর ধুম। পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে ঈদের খুশি। তোমাদের মনে কি কখনো প্রশ্ন জাগে, এ কিসের আনন্দ? তাহলে বলছি শোনো। মনিব তার ভৃত্যকে কোনো কাজ সম্পাদনের নির্দেশ দিলে তা সে যথাযথভাবে পালন করলে একদিকে মনিব সন্তুষ্ট হন, আবার অন্যদিকে মনিবের সন্তুষ্টিতে ভৃত্যের মনেও যে আনন্দ আসে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তেমনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রোজা পালনের নির্দেশ করেছেন। সে অনুযায়ী বান্দারা এক মাস রোজা পালন করলে আল্লাহ রোজাদারদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যে উপহারটি দেন, তা হলো শাওয়াল মাসের পয়লা তারিখে ‘ঈদ উৎসব’। কিন্তু এই ঈদ নামের উৎসবটি এলো কোথা থেকে?  যতদূর জানা যায়, ৬২৪ সালের রমজান মাসে প্রথম রোজা পালিত হয়। সে বছর ১৭ রমজান হযরত মুহাম্মদ (সা) বদর প্রান্তরে কাফিরদের এক বিরাট বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। আর এই যুদ্ধই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। উল্লেখ্য, কাফির দলে সৈন্য সংখ্যা ছিল এক হাজার। আর  মুসলিম দলে সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। সে যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি ছিলেন আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)। সে সময় মুসলিম সৈন্যরা সবাই রোজাদার ছিলেন। রোজা রাখা অবস্থায় তারা কাফিরদের বিরাট বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। শেষে সবাই মিলে ফিরে আসেন  রাজধানী মদিনা মনওয়ারায়। সে বছর রমজান মাসের ২৮ তারিখে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ঘোষণা দিলেন, রমজান থেকে যে চাঁদ উদিত হবে সেটা খুশির চাঁদ। শাওয়ালের এই নতুন চাঁদ আসবে ঈদের বার্তা নিয়ে। পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতর। অনুষ্ঠিত হবে রোজা ভাঙার আনন্দ উৎসব। উল্লেখ্য, ৬২৪ সালের শাওয়াল মাসের পয়লা চাঁদ উঠেছিল আনন্দের এক নবতর বার্তা নিয়ে। সেই চাঁদ ছিল ঈদুল ফিতরের প্রথম চাঁদ। সেই চাঁদ দেখার জন্য মদিনা ও আশে পাশের শিশু-কিশোররা বিকেল বেলায় জড়ো হয়েছিল পাহাড়ের মাথায়, ঘরের ছাদে। চাঁদ দেখার সে কী আনন্দ! সে কী উৎসাহ! একসময় চাঁদ ওঠে। ঈদের চাঁদ। খুশিতে খুশিতে ভরে যায় আকাশ বাতাস। মানুষের মন। ঘরে ঘরে আনন্দ আর আনন্দ। খুশি আর খুশি। পরদিন সকালে নতুন কাপড়ে নতুন আনন্দে সবাই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইমামতিতে ঈদের নামাজে শরিক হয়েছিল। সেই যে রোজার শেষে ঈদের নামাজ শুরু হলো তা প্রতি বছর রোজা শেষে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর নির্দেশেই ঈদের এই মহা সম্মেলনের  দিন প্রবর্তন করেন। তিনি নিজেই এই আনন্দে অংশ নিতেন। তেমনি একটি ঘটনা তোমরা এবার শোনো। একবার রাসূলে করীম (সা) ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে যাচ্ছিলেন। পথে এক শিশুকে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। শিশুটির কাছে গিয়ে তাকে আদর করলেন। তাকে বুকে জড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কাঁদছো কেন? শিশুটি বলল, আমার বাবা মুসলমানদের  বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গেছেন। আমার মাও নেই। পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। শিশুটির কথা শুনে আমাদের প্রিয় নবীর (সা) মন কেঁদে উঠলো। তিনি আর ঈদগাহে গেলেন না। শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা)-কে বললেন, তোমার জন্য একটি পুত্র এনেছি।  নাও তোমার ছেলেকে। তাকে ভালো জামা-কাপড় দাও, খাবার দাও। হযরত আয়েশা (রা) গভীর মমতায় ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, নিজের ছেলের মতো। তারপর তাকে গোসল করালেন। নতুন জামা-কাপড় পরিয়ে দিলেন তার গায়ে। নতুন জামা-কাপড় পেয়ে ছেলেটির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে তার বাবা-মা হারানোর দুঃখ ভুলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে পেট ভরে খাওয়ালেন।  ঈদগাহে অন্যান্য শিশুরা তাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। তারা বলল, এসব তুমি কোথায় পেলে? শিশুটি রাসূলুল্লাহর কথা বলল। তখন শিশুরা বলল, ইস, আমরা যদি তার (প্রিয় নবীর) আদর পেতাম আর এ রকম সুন্দর জামা-কাপড় পেতাম! সত্যি বলতে কি, এসব ঘটনাই আমাদের শিক্ষা দেয় যে কোনো খুশিকে সমানভাবে ভাগ করে নেয়ার। উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই গরিব মিসকিনদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে দান করতে হয়। এই দানকে বলে ফিতরা। ধনীদের ওপর এই ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব বা অবশ্যই পালনীয়। ফিতরা সম্পর্কে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, ফিতরা যে দান করে, আল্লাহ তাকে পবিত্র করেন, দরিদ্রকে যা দেয়া হয়, আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি তাকে দান করেন। বছর ঘুরে ঈদ আসে বার বার। কিন্তু সবার ভাগ্যে কি আনন্দ করার সুযোগ রয়েছে? কতো লোক রয়েছে, যাদের রমজান মাসে সাহরি ও ইফতার খাওয়ার সামর্থ্য নেই। ফুটপাতে না খেয়ে পড়ে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এসো বন্ধুরা, আমরা তাদের সেবায় এগিয়ে যাই। যাদের অন্ন বস্ত্র চিকিৎসার সুযোগ নেই, তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে ঈদের আনন্দ সমানভাবে ভাগ করে নিই। ব্যয় সঙ্কোচ করে, পয়সা বাঁচিয়ে দুস্থ  মানবতার সেবায় ব্যয় সম্প্রসারণ করি। ঈদের আনন্দ যেন একটি দিনের মাঝে সীমিত না থাকে, বরং সারাটা বছর, সারাটা জগৎ যেন ঈদগাহে পরিণত হয়। আমাদের লক্ষ্য হোক মানুষের সেবা। এবারের ঈদ উৎসব অর্থাৎ ঈদুল ফিতরকে আমরা একটু ব্যতিক্রম আঙ্গিকে বরণ করি। স্বাগতম ঈদুল ফিতর, ঈদ মোবারক।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ