আদরের পণ

আদরের পণ

তোমাদের গল্প জানুয়ারি ২০১৩

সালাম হাসেমী

ঢং ঢং করে স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল। দ্বিতীয় শ্রেণীর আদর তার স্কুল ব্যাগ পিঠে বুঝিয়ে দিলো দৌড় বাড়ির অভিমুখে। আজ প্রথম পিরিয়ডেই স্কুল ছুটি। আদরের আনন্দ আর ধরে না। মহা খুশিতে সে ছড়া আবৃত্তি করতে করতে নেচে নেচে ছন্দময় গতিতে চলছে গাঁয়ের পায়ে চলা মেঠোপথ দিয়ে।
আজকে আমার স্কুল ছুটি তাইরে নাইরে না,
খুশিতে মন ঝঙ্কার তুলে বাজাচ্ছে বীণা।
হারিয়ে যাব ফুল পরীদের স্বপ্ন সুখের দেশে,
স্বপ্ন ডিঙায় চড়ে যাব খুশির বানে ভেসে।
সরিষার ক্ষেতের পাশে এসে, হঠাৎ আদর থমকে দাঁড়ায়। দেখে মেঠোপথের পাশে ফসলের মাঠে সরিষার ফুল। ক্ষেতের পরে ক্ষেতে সরিষার ফুল। মাঝে মাঝে কুসুম ও সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত আছে। চপল বাতাসে ফুলগুলো দুলছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে হলুদ পরীদল দুলে দুলে নাচছে। পৌষের রবি শস্যের মাঠ আদরের কাছে চমৎকার লাগছে। সে ফুলের বুকে অগণিত লাল ফড়িং, মৌমাছি আর প্রজাপতি বসে আছে। আবার কিছু কিছু উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। আদরের কাছে মনে হচ্ছে আজকের ফসলের মাঠ যেন ফুল পরীদের দেশ।
আদর বড় দুরন্ত ও দুষ্ট ছেলে। তার স্কুল ব্যাগের মধ্যে বই, খাতা, কলমের সাথে লাটিম, ডাংগুলি, বাঁশি, বল, সুতার রিল ইত্যাদি জিনিস থাকে। ব্যাগটি আদর মাঠের সবুজ ঘাসের বুকে রাখে। চুপিসারে নিঃশব্দে এগিয়ে যায় সরিষা কুসুম ও সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেতের দিকে। ফুলের বুকে বসা ফড়িং প্রজাপতি দেখে তার মনটা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। চুপি চুপি ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে সূর্যমুখী ফুলের ওপর বসা একটি লাল ফড়িং ধরে ফেলে। ব্যাগ হতে সুতা বের করে ফড়িংটার পেছনে বেঁধে দিয়ে সুতার অপর প্রান্ত সূর্যমুখী গাছের সাথে বাঁধে। এভাবে অনেক প্রজাপতি ও ফড়িং ধরে সুতায় বেঁধে সব সুতার অপর প্রান্ত হাতের মুঠায় নিয়ে দৌড়িয়ে খেলা করছে আর ছড়া আবৃত্তি করছে।
ফড়িং ও প্রজাপতিগুলো সুতায় বেঁধে আদর মেঠোপথের পাশে খালি সবুজ পতিত জমিতে খেলা করছে আনন্দের সাথে। তার আনন্দের আজ বাঁধ ভেঙেছে। ঠিক সেই সময় ওই মেঠোপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আদরের দাদু। আদরকে এভাবে ফড়িং প্রজাপতি নিয়ে খেলা করতে দেখে দাদু তার কাছে এসে প্রশ্ন করলেন, কী করছো আদর?
ফড়িং ও প্রজাপতি নিয়ে খেলা করছি হলুদ পরীদের স্বপ্নের দেশে! দেখো দাদু কী সুন্দর এই হলুদ মাঠ! যেন হলুদ পরীর দেশ। এখানে আছে কত শত ফড়িং ও প্রজাপতি, তারা ফুলের বুকে বসে মনের সুখে মধু খাচ্ছে। এ স্বপ্নের দেশ আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি এখানে সারা দিন খেলা করব। তুমি আমার সাথে খেলবে দাদু? তোমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর ফড়িং ও প্রজাপতি ধরে দেব।
তোমার সাথে আমি খেলা করব কিন্তু ফড়িং ও প্রজাপতি দিয়ে নয়। অন্য কিছু দিয়ে।
কেন দাদু? ফড়িং প্রজাপতি দিয়ে নয় কেন? ওরা তো ভালো। কী সুন্দর ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। আমারও ওদের মতো উড়তে ইচ্ছে করে।
ফড়িং ও প্রজাপতি দিয়ে খেলা করব না কেন শুনবে?
হ্যাঁ শুনব বল।
ফড়িং ও প্রজাপতি হলো আমাদের উপকারী পতঙ্গ।
কেমন করে উপকারী পতঙ্গ হলো?
ওরা ফুলের মধু খেতে এসে ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। যে কারণে ফুল হতে ফল এবং শস্য হয়। সে ফল ও শস্য খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি। ওদের নিয়ে এভাবে খেলা করতে গিয়ে মেরে ফেললে এক সময় ওরা বিলীন হয়ে যাবে। তখন ফুলের পরাগায়ন ঘটবে না। সে জন্য ওদের নিয়ে খেলে ওদের ধবংস করো না দাদুভাই। তাতে ধীরে ধীরে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।
দাদুর কথা শুনে আদর দাদুর হাত ধরে পণ করে বলল, সে আর ফড়িং ও প্রজাপতি নিয়ে খেলা করে তাদের ধবংস করবে না। দূর থেকে শুধু তাদের দেখবে।
দাদু খেয়াল করে দেখলেন যে আদরের চাঁদ মুখখানা বেজার বেজার হয়ে গেছে। তাই দাদু তাকে সোহাগ করে কোলে তুলে নিয়ে তার তুলতুলে গালে চুমু দিয়ে বললেন, এসো আদর আমরা ডাংগুলি খেলা করি।
দাদু-নাতি ডাংগুলি খেলা করছে। এক সময় দাদু খেলায় হেরে গেলেন। নাতির মুখে হাসি ফুটে উঠল। দাদু-নাতি হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে এলো।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ