অবাক পাথর

অবাক পাথর

বিজ্ঞান সুজন আহমেদ মার্চ ২০২৪

মরুভূমির ধূ ধূ প্রান্তরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল পাথরখণ্ড। পাথরের ঠিক মাঝখানে ১ ইঞ্চিরও কম ফাঁকা রয়েছে। যেন মসৃণভাবে ছুরি দিয়ে কেটে দু’ভাগ করা হয়েছে পাথরটিকে। দেখতে ভাস্কর্যের মতো মনে হলেও এটি প্রাকৃতিকভাবেই এমন। এর বয়স ৪,০০০ বছর। যুগ যুগ ধরে মরুভূমির মাঝে পড়ে আছে পাথরটি। সৌদি আরবের তাইমা মরুদ্যানে রয়েছে পাথরটি।

দেখে মনে হবে, একটি শক্তিশালী লেজার রশ্মি দিয়ে পাথরটি মাঝ বরাবর কাটা হয়েছে। বিশ্ব বিখ্যাত এই পাথর দু’টি বড়ো বেলেপাথরের সমন্বয়ে গঠিত।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে গাড়িতে ৮ ঘণ্টায় পৌঁছনো যায় আল নসলায়। ইতিহাস বলে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময় ব্যাবিলনের সম্রাট নেবোনিদাসের প্রাসাদ ছিল তায়মায়।

আধুনিক যুগে তায়মার মরুদ্যানটি মদিনা থেকে আল-জওয়াফ যাওয়ার দিকে বাণিজ্যপথে রয়েছে। ফলে পর্যটকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছেও এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

নানা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আল নসলার উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। লম্বায় এবং চওড়ায়  যথাক্রমে ৩০ ও ২৫ ফুট। আয়তনের তুলনায় পাথর দুটোর ভিত্তি বড়ো না হলেও এটি দাঁড়িয়ে আছে যুগের পর যুগ, শতকের পর শতক।

তবে এখনও পর্যন্ত পাথরটি কাটার বিষয়ে কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। অনেকেই বলছেন, আল নাসলা পাথর প্রমাণ করে প্রাচীন সভ্যতা অনেক বেশি উন্নত ছিল। এর স্থায়ী শিলা গঠন গবেষকদের অবাক করে দেয়।

পাথরটি আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই এটি নিয়ে অনেকবার গবেষণা হয়েছে। ঐতিহাসিকদের মধ্যে পাথরটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলেও এটি কোন স্থান থেকে এসেছে বা কীভাবে কাটা হয়েছে তার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেননি।

কাছ থেকে পাথরটি দেখলে মনে হবে, কোনো শক্তিশালী মানুষ পাথরটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটেছেন। তবে তা প্রমাণ করা বেশ কঠিন! বিজ্ঞানীরা এমন কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি।

বিস্তর গবেষণার মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি ব্যাখ্যাটা হলো টেকটোনিক প্লেট ব্যাখ্যা। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ভূখণ্ডের নিচে বিশালাকার দুটো টেকটোনিক প্লেট খানিকটা সরে যাওয়াতেই একটি পাথর নিখুঁতভাবে দুই টুকরো হয়েছে। কেউ বলছেন, ফল্টলাইন থাকলেই নিখুঁতভাবে এভাবে দুটো পাথর আলাদা হতে পারে। তবে এর ভিত্তিতে কোনো ফাটল না থাকায় এ তত্ত্ব মানতে পারেনি অনেকে।

কারও মতে চার হাজার বছর আগে এখানে এমন কোনো সভ্যতা ছিল, যাদের কাছে লেজার বিমের মতো কোনো প্রযুক্তি ছিল যা দিয়ে তারা পাথরকে এভাবে কাটতে পারতো। তথাপি এমন পাথর-কাটার আর কোনো নজির না থাকায় এ তত্ত্বও বেশ দুর্বল।

আরেকটি ব্যাখ্যা হলো- পাথর আগে থেকেই দুটি ছিল। মাঝে গ্লু হিসেবে ছিল এমন কিছু খনিজ যা কি না সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল।

অনেকে আবার দাবি করেন, ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি, বালির ঝড় এবং জলধারার প্রভাব; সব মিলিয়ে আল নসলায় এ ধরনের খাঁজ তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীরা এমনটি বিশ্বাস করলেও সাধারণ মানুষ এসব ব্যাখ্যা মানেন না। তাদের মতে, আল নাসলা একটি উন্নত প্রাচীন সভ্যতার ইঙ্গিত দেয়।

পাথরটির গায়ে তা¤্র যুগের অসংখ্য আঁকিবুঁকি ছড়িয়ে রয়েছে। সে সব নিয়েও একাধিক তত্ত্ব রয়েছে।

আল নাসলা দেখতে তায়মা মরুদ্যানে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। নিত্য-নতুন সব ব্যাখ্যা শুনে রোমাঞ্চপ্রেমীরাও হচ্ছেন পুলকিত।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ