আতঙ্কের প্রহর

আতঙ্কের প্রহর

তোমাদের গল্প মে ২০১২

মুজাহিদুল ইসলাম..
আজকের দিনটা খুব সুন্দর। এখন দুপুর। সূর্যের তাপ বেশি প্রখর নয়। আমগাছটায় অনেক আম ধরেছে। আমি এখন আমাদের বাসার ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারে বসে এই কথাগুলোই ভাবি। আমাদের বাসাটা দোতলা, ওপর তলায় থাকে ভাড়াটে আর নিচতলায় আমরা। আমাদের বাসার সামনে অনেক বড় উঠান। আব্বা এতে অনেক ফল গাছ লাগিয়েছেন- আম, জাম, পেয়ারা, কাঁঠাল আরও কত কী! আব্বা-আম্মা গ্রামে বেড়াতে গেছেন। কিন্তু আমি যাইনি। আমার দেখাদেখি আমার ছোট ভাই জিহানও রয়ে গেছে। তাই আমি, আমার ছোট ভাই ও কাজের ছেলেটা বাসায় রয়েছি। ও ক্লাস এইটে আর আমি নাইনে পড়ি।
হঠাৎ কাদের গোলমালের আওয়াজ কানে এলো আমার। বাইরে বেরিয়ে এলাম।  তাকালাম চারদিকে। হঠাৎ চোখে পড়লো প্রায় ১০-১৫ জন ছেলে আমগাছে উঠল। আম পাড়ছে।
‘এই ছেলে, সরো, সরো ওখান থেকে’ চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। আমার কণ্ঠস্বর শুনে দেয়াল টপকে পালাল ছেলেগুলো।
‘প্রতিদিন ছেলেগুলো এসে শুধু আম পাড়ে।’
অস্ফুটে বলে উঠলাম আমি। আচানক কারো কণ্ঠস্বর শুনলাম। চমকে উঠে চারদিকে তাকালাম। আবার শুনলাম কণ্ঠটা। কে যেন বলছে, ‘বাঁচাও আমাকে, বাঁচাও!’
শব্দের উৎস লক্ষ্য করে এগোলাম। আমগাছের নিচে একটা ছেলে বসে আছে।
‘কী হয়েছে?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘একটা বিড়াল’ ভয়ে ভয়ে বললো ছেলেটা।
‘হা হা হা হা’ হেসে উঠলাম আমি। বিড়ালকে কেউ ভয় পায় নাকি? ‘না, না, বিড়াল না, দেখতে বিড়ালের মতো আর আকারে গরুর মতো।’
‘গরুর মতো?’
‘হ্যাঁ’।
‘ধ্যাত, কিসব আবোল তাবোল বলছো আচ্ছা, আমাকে দেখাওতো কোথায় তোমার গরু মার্কা বিড়াল?
‘ঐতো ঐদিকে গেছে’ হাত উঁচিয়ে একটা ঝোপ দেখালো ছেলেটা।
‘চলতো দেখি, কোথায় ওটা?’
‘না’ আমার হাত চেপে ধরলো সে, ‘আপনি যাবেন না?’
‘আচ্ছা, বাদ দাও তোমার বাসা কোথায়?’
ও একটা তিনতলা বাসা দেখালো।
‘চলো, তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিই, যেভাবে ভয়ে কাঁপছো তাতে কখন রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে যাও ঠিক নেই।’
‘জি চলুন।’
পথ চলতে চলতে বললাম, ‘তোমার নাম কী?’
‘জি, রকিব।’ আপনার নাম?
মুচকি হেসে বললাম, ‘জিসান।’
‘যাই ভাইয়া, বাসায় পৌঁছে গেছি।’
‘আচ্ছা, যাও।’
সে তার বাসায় চলে গেলো, আমিও আমাদের বাসায় চলে এলাম।
গভীর রাত, ঘুম আসছে না আমার। বাইরে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনছি, হঠাৎ জানালার কাচের ওপর কে যেন ঢুঁশ করে ধাক্কা খেলো, চমকে উঠে তাকালাম ঐদিকে। কাচ ফেটে গেছে জানালার, ধক করে উঠলো বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা, যেন বেরিয়ে আসছে। জানালা খুললাম। আল্লাহর নাম নিয়ে বাইরে তাকালাম। ইয়া আল্লাহ! ওটা কি? আকৃতিতে গরুর মতো একটা বিড়াল। চট করে ঐ ছেলেটার কথা মনে পড়লো, আমি কি পাগল হয়ে গেছি?
দৌড় দিতে চাইলাম কিন্তু পা মানলো না।
চিৎকার করলাম কিন্তু কোনো আওয়াজ হলো না।
বিছানার কাছে টুলে একটা ফুলদানি ছিল।
নিজের অজান্তেই সেটা ছুড়ে মারলাম বিড়ালরূপী প্রাণীটার দিকে। সজোরে আঘাত করলো তা প্রাণীটার গায়ে। মিউ বলে লাফিয়ে উঠলো প্রাণীটা। আমি অবাক হয়ে গেলাম। ওই প্রাণীটা আসলেই একটা বিড়াল। আমার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকাল, দৌড়ে এসে লাফ দিলো জানালায়, এসে পড়লো আমার বিছানার ওপর।
আমার মাথায় যেন আগুন ধরে গেল। দ্রুত দাঁড়িয়ে সজোরে ওর পেটে লাথি মেরে বেরিয়ে এলাম আমার ঘর থেকে। ছিটকিনি লাগাতে চাইলাম দরজার। কিন্তু তার আগেই বিড়ালটা এসে দাঁড়াল আমার সামনে। দাঁত কটমট করলো। লাফ দিলো আমার ওপর। দ্রুত সরে দাঁড়ালাম। আমার পেছনের দেয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়লো বিড়ালটা। হঠাৎ একটা চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেলাম।
বিড়ালটা সোজা হয়ে দাঁড়ালো। পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো আমার দিকে। শ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে গেলো আমার। মুহূর্তে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম। কারণ বাঁচার জন্য এটা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
দু’ হাতে চেয়ারটাকে আঁকড়ে ধরলাম। কাজের ছেলে ও আমার ভাইকে দেখলাম বিড়ালটি থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর হঠাৎ সরে গেলো তারা সেখান থেকে। বিড়ালটা লাফ দিলো আমার মাথার ওপর। সমস্ত শক্তি দিয়ে দু’হাতে চেয়ারটা তুলে আঘাত করলাম। চিত হয়ে সে পড়ে গেল মাটিতে।
মনে হচ্ছে আর উঠতে পারবো না। সাথে সাথে পুলিশের গাড়ির হর্ন শুনলাম। একটু পরই পুলিশ এসে বেঁধে ফেলল বিড়ালটাকে, তারপর খাঁচায় করে নিয়ে গেল।  মনে মনে শুকরিয়া জানালাম আল্লাহকে। পরদিন টেলিভিশনে খবর প্রচারিত হলো- সিলেটের নয়াবাজার থেকে একটা বিশাল আকারের বিড়াল আটক করা হয়েছে। বিড়ালটি সোমবার রাতে জিসান নামের এক ছেলেকে আক্রমণ করে। কিন্তু ছেলেটি অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়।
হঠাৎ কলিংবেল বাজলো। টিভি অফ করে দরজা খুলে দেখি গতকালের সেই ছিলেটি। বললো, ‘কি ভাই আমার কথা বিশ্বাস হলো তো?’
আমি হেসে বললাম, ‘হ্যাঁ, হয়েছে, ভেতরে এসো।’
‘না, থাক’ বলেই দৌড়ে চলে গেলো ছেলেটি। আমি তাকিয়ে থাকলাম তার পথের দিকে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ