খুদে বাহিনীর গুহা অভিযান মূল : অ্যালান ফিনচ রূপান্তর : হোসেন মাহমুদ
উপন্যাস সেপ্টেম্বর ২০১৮
পাথুরে টিলার ওপর দিয়ে হাঁটছিল ওরা- ন্যান্সি আর কুর্ট। আরো দু’তিনটা টিলার পর সৈকত। টিলাগুলোর নিচ থেকেই বালিময় সৈকত শুরু হয়েছে। মিশেছে সাগরে। সেখানে খেলছে ওদের ছোট দু’ভাই-বোন- লিন আর ডেভ। কিছুক্ষণ আগে সৈকতে এসেছে ওরা। বড় থেকে ছোট পর্যন্ত ওদের চার ভাই-বোনের প্রত্যেকের মাঝে বয়সের ব্যবধান দু’বছর। সবার বড় কুর্টের বয়স পনেরো। ন্যান্সির তেরো। লিন এগারোতে, আর ডেভের নয় চলছে। লিন আর ডেভ সৈকতে খেলার ছলে বালির প্রাসাদ গড়ছে আর ভাঙছে। আনন্দে আছে ওরা। ওদেরকে খেলায় মেতে উঠতে দেখে কুর্ট আর ন্যান্সি টিলাগুলো একটু ঘুরে দেখতে গিয়েছিল। বিশেষ করে গুহাগুলোর দিকটা। এর পেছনে একটা কারণ আছে। কাল বিকেলেই তারা মি. ওলসেনের কাছে গল্পটা শুনেছে। মি. ওলসেন দাদু বাড়ির কেয়ারটেকার। শুধু দিনের বেলা থাকেন তিনি। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তার ডিউটি। সত্তরের কাছে বয়স তার। খুব ভালো আর সাদাসিধে মানুষ। মাঝে মাঝে ওদের গল্প শোনান তিনি। তিনিই বলেছেন, সৈকতের পুবদিকে পাথুরে টিলার নিচে গোটাকয় গুহা আেেছ। প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো। গুহাগুলো খুব পুরনো। মানুষ ওদিকে মোটেই যায় না। গুজব আছে যে কবে কোনকালে জলদস্যুরা এসব গুহার কোনো একটিতে লুট করে আনা ধনরত্ন রেখেছিল। কিন্তু পরে সেগুলো তারা এখান থেকে আর নিতে পারেনি। কারণ, তার কিছুদিন পরেই এক যুদ্ধে জলদস্যু নেতাসহ কয়েকজন মারা পড়ে, বাকিরা আটক হয়ে বাকি জীবন জেলে কাটায়। গুজব গুজবই। তা লোকে শোনে, কিন্তু বিশ্বাস করে কম। তাই কেউ সে গুজবের জিনিস খুঁজতে যায়নি বা গেলেও পায়নি। ওরা দু’জন সে গুহাগুলোর লোকেশন দেখতে গিয়েছিল কৌতূহলী হয়ে। দেখেছে। এখন ফিরে যাচ্ছে লিন আর ডেভের কাছে। দু’জন সৈকতে ওদের কাছে গিয়ে পৌঁছলো। ঠিক সে মুহূর্তেই ডেভ লাফিয়ে পড়ে অনেক সময় নিয়ে গড়ে তোলা লিনের বালির প্রাসাদের ওপর। চোখের পলকে লীন হয়ে গেল সেটা। প্রতিশোধ নিতে লিনও লাফিয়ে পড়ল ডেভের তৈরি করা প্রাসাদের ওপর। ব্যস, শোধবোধ। হাসিতে ভেঙে পড়ে দু’জন। এ সময় কমান্ডারের ঘোষণা শোনা গেল- বিকেলের চা পানের সময় হয়ে গেছে। চল, এখন বাড়ি ফিরতে হবে। নইলে দাদি ভীষণ রেগে যাবেন। চা খাওয়ার পর আমাদের পরবর্তী প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করব। সবার বড় হিসেবে চার ভাই-বোনের এ খুদে বাহিনীর কমান্ডার কুর্ট। ন্যান্সি সহকারী কমান্ডার। ছোট দু’জন সৈনিক মাত্র। চার ভাই-বোনের মধ্যে নানা বিষয়ে খুব মিল। প্রায় প্রতি ছুটির দিনেই একটা সময় ঠিক করে নিয়ে পাড়ায় একটা রাউন্ড দেয় তারা। ফলে সবাই তাদের ভালো করেই চেনে। বন্ধুদের কেউ কেউ ওদের নাম দিয়েছে খুদে বাহিনী। ওরা নামটি তেমন পছন্দও করেনি, আবার প্রতিবাদও করেনি। তাই মোটামুটি এ নামটাই চালু হয়ে গেছে ওদের ব্যাপারে। ন্যান্সির কথা, খুদে বাহিনী শুনতে ভালো লাগে না। ওরা তো কোনো কাজ করে না, তাহলে ওদের বাহিনী বলা হবে কেন? তবে ‘গ্রুপ ফোর’ বললে আপত্তি নেই তার। নামটি বেশ আধুনিক। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। শিগগিরই হয়ত নামটা অনুমোদন করবে সবাই মিলে। টিলায় উঠল ওরা সবাই। কয়েকটি টিলা পেরিয়ে পৌঁছে গেল বাড়ির সীমানার পেছন দিকের দরজায়। খোলাই ছিল সেটা। ভেতরে পা রাখল ওরা। খানিকটা খোলা জায়গা। তা পেরিয়ে চারধাপ সিঁড়ি টপকে পৌঁছে গেল বাড়ির করিডোরে। প্রথমেই ওরা গেল কিচেনে। দাদি রান্না করছেন। তাকে সাহায্য করছেন দাদু। বেশ ব্যস্ত। দু’জনকে হ্যালো বলল তারা। মাথা ঝুঁকিয়ে সাড়া দিলেন তারা। কিচেন থেকে বেরিয়ে বিশাল ডাইনিং রুমে গিয়ে বসে পড়ল খুদে বাহিনী। একটু পরই দাদি প্লেট ভর্তি স্যান্ডউইচ এনে রাখলেন টেবিলে। পেছনে এলেন দাদু। তার হাতে বড় জগ। ফলের রস ভরা। নীরবতার মধ্যে খাওয়া শেষ হয়। ঘড়ির টিক টিক শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না ঘরটিতে। : আমরা এগুলো ধুয়ে দিচ্ছি দাদি, বলল ন্যান্সি। তার কথা শেষ হতে এগিয়ে আসে অন্যরা। কাপ-পিরিচ-ডিশগুলো কিচেনে নিয়ে গিয়ে ধুয়ে ফেলে তারা। তারপর জায়গামত রেখে দেয়। এবার সবাই গিয়ে জড়ো হয় কমান্ডার কুর্টের ঘরে। বন্ধ করে দেয় দরজা। ন্যান্সি আর লিন দখল নেয় বিছানার। আর ছেলেরা পা ছড়িয়ে বসে মেঝেতে। কুর্ট বলে- : শোনো সবাই। কাল যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে ব্রেকফাস্ট করেই আমরা বেরিয়ে পড়ব অভিযানে। সৈকতের পুবদিকের শেষপ্রান্তের গুহাগুলোই আমাদের লক্ষ্য। এসব গুহায় আমরা আগে যাইনি। তাই জায়গাটা চিনি না বললেই হয়। আমরা গুহাগুলো ঘুরে দেখব। বলা যায় না, পুরনো কোনো কিছু হয়ত পেয়েও যেতে পারি। তাহলে কী মজাই না হবে, তাই না? সমর্থনের আশায় কথা থামিয়ে অন্যদের দিকে চাইল সে। দেখল, সবারই চোখ জ্বলজ্বল করছে। তার মানে এতে কারো আপত্তি নেই। ফাইন। বলল- : আমাদের এতে সময় লাগতে পারে। তাই বেশি সময় পাওয়ার জন্য ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়তে হবে। ফিরতে হবে দুপুরে লাঞ্চের আগেই। নইলে দাদু-দাদি রাগ করতে পারেন। সেটা ভালো হবে না। : দরকার কী! বিজ্ঞের মত বলে ওঠে ন্যান্সি। দাদু-দাদিকে বলব যে আমাদের একটু দেরি হতে পারে। ফিরে আসার পর খাবো। কিন্তু দরকার হলে আমরা আজ সৈকতে লাঞ্চ করব। সে জন্য হালকা কিছু খাবার সাথে নিতে হবে। : ভালো বলেছিস তো! প্রশংসার চোখে ন্যান্সির দিকে তাকায় কুর্ট। তাহলে সকাল আটটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়ব আমরা, কেমন? আজ ডিনার সেরে সকাল সকাল শুয়ে পড়তে হবে সবাইকে। ঠিক আছে? : ঠিক আছে। এক সাথে বলে ওঠে বাকি সবাই। ২. ওরা চার ভাই-বোন স্কুলের ছুটিতে ক’দিনের জন্য ব্রাইটনে দাদু বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। দাদু-দাদির সাথে ওদের বাবা-মার সম্পর্ক তেমন জোরালো না। তারা দাদু বাড়িতে আসেন না। তার কারণ জানে না ওরা। তবে কুর্ট একটু বড় হওয়ায় ব্যাপারটা অল্পস্বল্প আঁচ করেছে। ওদের মাকে একটুও পছন্দ করেন না বুড়োবুড়ি, বিশেষ করে দাদি। তবে একমাত্র সন্তান হওয়ায় ওদের বাবার সাথে তারা সম্পর্ক একেবারে ছেদ করতে পারেননি। বিশেষ করে দাদুর ছোট ভাই জিম দাদু এটা হতে দেননি। বলতে গেলে তিনিই এ সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন। কারণ, ছোটবেলা থেকেই বাবাকে ভীষণ স্নেহ করেন তিনি। তার নিজের ছেলে নেই, দু’ মেয়ে। তাই কুর্টের বাবা চার্লসই তার ছেলে। মাঝে মধ্যেই লন্ডনে ওদের বাড়িতে ছুটির দিনে চলে আসেন জিম দাদু। বাবার সাথে গল্প-গুজব আর হাসি-ঠাট্টায় কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে যান। আর তিনি এলে বাবা যে কী খুশিই হন! সেই জিম দাদুই দু’ বছর আগে প্রথম ওদের বড় তিনজনকে দাদু বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে আসেন। শহরের এক প্রান্তে সাগর তীর থেকে শ’ দুয়েক গজ দূরে দাঁড়ানো দাদুর পুরনো কালের প্রাসাদের মত একতলা বাড়িটা। পাকাপোক্ত গাঁথুনির বাড়িটা চমৎকার। সারাক্ষণ সাগরের বাতাস এসে জানালা-দরজায় বন্ধুর মত পরশ বুলিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে ঝড় বয়ে যায় এ এলাকায়। তখন সাগর ফুলে ওঠে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় না এ বাড়ির। এমনিতে বাড়িটা সুদৃঢ়, ঝড় তাকে কাবু করতে পারে না। আর সাগরের প্রবল জোয়ারও এখানে পৌঁছতে পারে না। কারণ, সাগর রয়েছে বাড়ির পেছন দিকে। আর সাগর ও বাড়ির মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো টিলা। সাগরের পানি যতই ফুলে উঠুক, টিলা পেরিয়ে এদিকে আসতে পারে না। সাগরে যাবার অন্য পথও আছে। কিন্তু কুর্ট বাহিনীর কাছে এই টিলা পেরিয়ে যাওয়াটাই পছন্দের। এ নিয়ে তিনবার এল ওরা। গত বছর দ্বিতীয়বার তারা এসেছিল। অবশ্য সবাই নয়। আগের দু’বার ছোট বলে ডেভকে মা ছাড়েনি। ফলে তার আসা হয়ে ওঠেনি। এ বছর সে প্রথম এসেছে দাদু বাড়িতে। বাড়িতে যতক্ষণ থাকে তারা, আর দশটি ছেলে-মেয়ের মত দাদু-দাদির বিপুল স্নেহ ওদের ওপর উপচে পড়ে না। কেমন যেন মাপা কথাবার্তা বলেন তারা। নাতি-নাতনিদের প্রতি অনাদর নেই, কিন্তু মমতা মাখা উচ্ছ্বসিত আদরও নেই। তবে ওরা এসব নিয়ে ভাবে না। প্রথম কথা, ওদের একটা দাদু বাড়ি আছে ও দাদু-দাদি আছে। এটা বিরাট ব্যাপার। দ্বিতীয় কথা, সেখানে একটু দূরেই একটা ছোট কিন্তু সুন্দর, নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত আছে। বেশ নিরাপদও। সেখানে ওরা আশ মিটিয়ে হৈ চৈ, খেলাধুলা, ছুটোছুটি করতে পারে। ক’টা দিন কাটাতে পারে খুশি-আনন্দে। তারপর তো আবার ফিরে যাওয়া সেই স্কুল আর লেখাপড়ার একঘেয়ে পরিবেশে। সকাল সাতটা বাজতেই উঠে পড়ে সবাই। ঝটপট ব্রেকফাস্ট সেরে বেরোতে হবে। সারাদিনের প্রোগ্রাম। ভেতরে ভেতরে উত্তেজনায় টগবগ করছে সবাই। কিন্তু বাইরে তার প্রকাশ নেই। দাদু-দাদি টের পেয়ে গেলে হয়ত যেতেই দেবেন না। ওরা ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখল টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি। স্যান্ডউইচ, কেক, কর্নফ্লেক, দুধ। আর আছে আপেল, কমলালেবু, আঙুর। পরিমাণে যথেষ্ট। দাদি বললেন- : বাচ্চারা বসে পড়। তাড়াহুড়ো করবে না। ধীরে সুস্থে খাবে। খেতে খেতে দাদু-দাদির চোখ এড়িয়ে চারজনের লাঞ্চের ব্যবস্থা করে ফেলল কুর্ট আর ন্যান্সি। একটা থলে সাথে নিয়ে এসেছে সে। দ্রুতই ভরে ফেলল সেটা। চারজনের লাঞ্চ ভালো মতই হয়ে যাবে। এখন যেভাবেই হোক ন্যান্সির রুম পর্যন্ত তা নিয়ে যেতে হবে। সে সুযোগটাও এসে গেল। দাদি কী কাজে যেন কিচেনে গেলেন। তার পিছু পিছু গেলেন দাদুও। সে ফাঁকে ন্যান্সি চোখের পলকে হালকা খাবারের থলেটা তার রুমে রেখে এল। এখন পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। ব্রেকফাস্ট সেরে সবাই গিয়ে বসল ন্যান্সির রুমে। চটপট বেরিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কথা উঠল, যদি কোনো কারণে তারা লাঞ্চে বাড়িতে না ফেরে তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে। দাদি ভীষণ কড়া মহিলা। নিয়মের এদিক ওদিক করা তার একেবারেই পছন্দ নয়। তাদের সাথে দাদুর আচরণ বরং অনেক নরম। কিন্তু সারাক্ষণ তিনি দাদির সাথেই থাকেন, তার কাছ ছাড়া হন না। তাই নাতি-নাতনিদের সাথে আলাদাভাবে মিশে নৈকট্য গড়ে তোলার সময় হয় না তার। তবে ওরা তার একমাত্র সন্তানের ছেলে মেয়ে, তারই রক্ত। তাই ওদের দিকে খেয়াল ঠিকই আছে তার। আসলে ছেলের বউ প্যাটির সাথে কেন যেন বনিবনা হল না শাশুড়ি এলিজাবেথের। অবস্থাটা এমন যে তার সাথে দেখা বা কথাও বলেন না এলিজাবেথ। আর প্যাটিও তেমনই। শাশুড়িকে আপন করার কোনো চেষ্টাই করেন না। এতে খুব যে একটা সমস্যা হয়েছে তা নয়, কিন্তু নাতি-নাতনিগুলোকে সব সময় বা বেশিরভাগ সময় কাছে না পাওয়ার একটা কষ্ট আছে তাদের। ওরা বেড়াতে এসে খুশি মত ঘুরে বেড়াচ্ছে, খেলছে। তারা কিছু বলেন না। তবে খেয়াল রাখেন যেন কোনো সমস্যার মুখে না পড়ে। তাদের জানা নেই যে ওরা এখন সাগর তীরে পাহাড়ি গুহাগুলোতে যাচ্ছে। বিশেষ করে দাদু যদি জানতেন তাহলে বাচ্চাদেরকে গুহাগুলোর দিকে যেতে দিতেন না। কারণ, আবছাভাবে তার কানে এসেছে যে সম্প্রতি কিছু খারাপ ধরনের লোকজন গুহাগুলোতে যাওয়া-আসা করছে। হয়ত বা পুলিশের চোখ এড়িয়ে সেখানে কোনো অবৈধ কাজ-কারবার করে তারা। সেটা মাদক পাচারও হতে পারে। এ সব কাজে জড়িতরা খুবই বাজে লোক। তারা পারে না এমন কাজ নেই। আটটা বেজে গেছে। ওরা ঘর থেকে বের হবে, এমন সময় ডোর বেল বেজে উঠল। কে না কে এসেছে, তা দেখা ওদের ব্যাপার নয়। কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই দাদু দরজা খুলে দিলেন। তার ঘরের পাশে বলেই হয়ত। বসার ঘরে ঢুকলেন জিম দাদু। পর মুহূর্তেই হাঁক শোনা যায় তার- : কই কুর্ট, ন্যান্সি তোমরা কোথায়। থমকে যায় সবাই। কুর্ট বলে- : সেরেছে। জিম দাদু এসে গেছেন। এ বেলায় আর যাওয়া হলো না তাহলে। ঠিক আছে, লাঞ্চের পরই না হয় বেরিয়ে যাব আমরা। এখন সব কিছু রেখে তার কাছে যাই চল। তিনি ডাকছেন। জিম দাদু ওদের খুব ভালোবাসেন। ওরাও ভালোবাসে তাকে। সবাই গিয়ে তার কাছে বসতেই আড্ডা জমে ওঠে। ৩. লাঞ্চের আগেই চলে গিয়েছিলেন জিম দাদু। লাঞ্চ সেরে বেরিয়ে পড়ে ওরা। সৈকতের পুব দিকে বেশ কয়েকটি গুহা। সেগুলোর কোনো কোনোটিতে জোয়ারের সময় পানি ঢোকে। আবার কয়েকটি বেশ উঁচুতে বলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে না। সব মিলিয়ে দশ-বারোটা গুহা। কুর্ট তার বাহিনীর দিকে তাকিয়ে দেখল। এর আগে তাদের কারোরই গুহায় ঢোকার অভিজ্ঞতা হয়নি। ওর ইচ্ছে, সবাইকে নিয়ে প্রতিটি গুহা ঘুরে দেখবে। বিশেষ করে এ গুহাগুলো পুরনো হওয়ায় হয়ত এমন কিছু ওরা পেয়ে যেতে পারে যা মূল্যবান। প্রথম গুহাটার ভেতরটা ভেজা, মেঝে পিছল। বোঝা গেল, জোয়ারের সময় এখানে পানি আসে। সেটা থেকে বেরিয়ে এল ওরা। দ্বিতীয়টিতে ঢুকল। একই অবস্থা। বেরিয়ে এসে ঢুকল আরেকটিতে। এটি খানিকটা উঁচুতে। মেঝে শুকনো, আকারে বেশ বড়। ওরা ঘুরে দেখতে লাগল। গুহার শেষ দিকটা অন্ধকারে গিয়ে মিশেছে। কুর্টের মনে হলো, এদিকটা এগিয়ে গেছে এমন এক দিকে যেদিক দিয়ে হয়ত বাইরে যাওয়া যায়। তার মানে এ গুহায় কেউ বা কারা সম্ভবত আসা-যাওয়া করে। এ সময় খুব শীত বোধ করতে থাকে সবাই। হঠাৎ করেই তার হাত ধরে টান দেয় ন্যান্সি। আঙুল তুলে দেখায় অন্ধকারের দিকে। কুর্ট তাকায় সেদিকে। তার মনে হয়, কারো ছায়া নড়ছে অন্ধকারে। কিন্তু কোনো শব্দ নেই। এ ছায়া কি মানুষের? নাকি ভূতের? ভয়ের শিহরণ বয়ে যায় কুর্টের শরীরে। : এগুলো কী? কিছু বুঝতে পারছিস? খুব নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে ন্যান্সি। মাথা নাড়ে কুর্ট- : না। এদিকে অন্ধকারে ছায়ার নড়াচড়া দেখে ভয় পেয়ে যায় লিন আর ডেভ। কাঁদতে কাঁদতে ডেভ বলে- : আমার ভয় করছে। বাড়ি যাব। তার সাথে সুর তোলে লিনও- : এখানে থাকব না। আমি চলে যাব। দু’জনে কাছে টেনে নেয় দু’ ভাই-বোনকে। ন্যান্সি খুব নিচু গলায় তাদের বোঝায়- : কাঁদছিস কেন তোরা? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা তো চারজন। সবাই তো সাহসী তাই না? তাহলে ভয় পাব কেন? কিন্তু তোরা যদি কাঁদতে থাকিস তাহলে কান্না শুনে দুষ্ট লোকেরা চলে আসবে, আমাদের ধরে ফেলবে। ওদের কান্না থেমে আসে। ডেভ কুর্টের আর লিন ন্যান্সির হাত শক্ত করে চেপে ধরে। ওরা যে সাথে করে দু’টি টর্চ নিয়ে এসেছিল তা খেয়ালই ছিল না। ন্যান্সিরই আগে মনে পড়ে। ব্যাকপ্যাক ছিল কুর্টের পিঠে। তাকে বলে- : টর্চগুলো বের কর ভাইয়া। : আরে তাই তো! আমার তো মনেই ছিল না। দ্রুত হাতে ব্যাকপ্যাক থেকে টর্চ দুটো বের করে আনে কুর্ট। একটি নিজে নিয়ে অপরটি ন্যান্সির হাতে ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আলোর দু’টি বর্শাফলক ছিঁড়ে ফেলে অন্ধকারের কালো পর্দা। সে আলোতে আরেকটু ভেতরের দিকে এগোয় ওরা। কয়েক গজ এগোনোর পর গুহার পথটি বেশ চওড়া হয়ে যায়। আরেকটু এগিয়ে বামে বাঁক নিতেই চমকে যায় ওরা। অনেকটা জায়গা নিয়ে বেশ বড় একটি গুহা। দু’টি পেট্রোম্যাক্স জ্বলছে। ফলে আলোকিত হয়ে আছে জায়গাটা। সেখানে বেশ কয়েকজন কঠিন চেহারার লোক মেঝেতে বিছানো ম্যাটের ওপর বসে। নানা রকমের অনেকগুলো প্যাকেট একদিকে জড়ো করে রাখা। মনে হয়, মাদকদ্রব্য আছে সেগুলোতে। কুর্টের দল থমকে দাঁড়ায়। কাছেই একটি বিরাট পাথর। তার পেছনে লুকায় তারা। আগেই টর্চ নিভিয়ে দিয়েছিল কুর্ট আর ন্যান্সি। হঠাৎ লক্ষ করে যে তারা পাথরের পেছনে লুকালেও লিন তখনো কি করবে বুঝতে পারেনি। সে দাঁড়িয়ে আছে খোলা জায়গায়। সে মুহূর্তে লিনের পেছনের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে বিরাটদেহী এক ব্যক্তি। তার বিশাল দু’টি হাত তুলে নেয় লিনকে। তারপর তাকে ধরে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় মেঝেতে বসে থাকা লোকগুলোর সামনে। : আরে, এ কে? কোত্থেকে এল এখানে রিড? নেতা গোছের এক লোক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। : তা তো জানি না বস। আমি গুহার পথটায় টহল দিচ্ছিলাম। এবার ফিরতেই একে এখানে দেখতে পেলাম। কুর্ট আর ন্যান্সি বুঝতে পার এর ছায়াই তারা দেখেছিল। নেতা লিনের দিকে তাকায়। কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করে- : কে তুমি, কি নাম তোমার? কেন এসেছ এখানে? লিন লোকটার প্রশ্নে ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলে। ভীষণ বিরক্ত হয় লোকটি। রিডকে নির্দেশ দেয়- : মেয়েটার দু’হাত ভালো করে বেঁধে কোথাও রাখ। তারপর তুমিও এস এখানে। জরুরি আলোচনা আছে। এদিকে এ আকস্মিক ঘটনায় বিস্মিত হয়ে পড়ে কুর্ট ও ন্যান্সি। পরস্পরের দিকে তাকায় তারা- ভাবখানা এই যে এ কী হলো? অন্যদিকে ডেভ ভয় পেয়ে ন্যান্সির কানে ফিসফিস করে বলে- : আপি! এবার কী হবে? ওরা কি লিনকে মেরে ফেলবে? তাড়াতাড়ি ওকে থামায় ন্যান্সি। সে নিজেও ভয় পেয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও সান্ত¡না দেয় ডেভকে- : না ভাই, ওর কিছু হবে না। আমরা ওকে উদ্ধার করব এখুনি। পেট্রোম্যাক্সের আলো জ¦লতে থাকায় এদিকে অন্ধকার তেমন গাঢ় নয়। সবই মোটামুটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কুর্টের মাথায় লিনকে উদ্ধারের কথা ঘুরছে। চারপাশে তাকায়। দেখে, একদিকে বেশ কিছু আবর্জনা জমে আছে। তার মধ্যে রয়েছে কিছু ক্যানভাস কাপড়, পোড়া কাঠ ও কিছু দড়ি। কুর্টের মাথার মধ্যে চিন্তা চলছে। ফিসফিস করে দু’জনের উদ্দেশে বলে- : এখানে যেসব জিনিসপত্র আছে, এগুলো আমাদের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু খুব সাবধানে যাতে এ লোকগুলো কিছু টের না পায়। আমরা একজন একজন করে এগুলো বাইরে নিয়ে যাবো। কুর্ট প্রথমে ন্যান্সিকে একটি বড় সাইজের পোড়া কাঠের টুকরো দেয়। ও সেটা নিয়ে বাইরে যায়। ন্যান্সির ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কুর্ট। কিন্তু তার দেরি হচ্ছে দেখে ডেভকে কিছু কাঠ দিয়ে পাঠায় বাইরে। বলে- : তুই ন্যান্সির কাছে যা, কোনো শব্দ করিস না যেন। ভাই ওকে একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছে। বুকটা গর্বে ফুলে ওঠে ডেভের। উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দু’ চোখ। : ঠিক আছে। বেরিয়ে যায় ডেভ। কিন্তু ভাগ্য খারাপ ডেভের। তার বয়ে নেয়া কাঠগুলো থেকে একটা বড় টুকরো কিভাবে যেন মেঝেতে পড়ে যায়। একটা শব্দ হয়। সাথে সাথে সতর্ক হয়ে ওঠে গুহার লোকগুলো। কথা বন্ধ হয়ে যায়। শব্দের উৎসের সন্ধানে তাকায় তারা। ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে কুর্টের। লোকগুলো যদি শব্দের কারণ খুঁজতে এদিকে আসে তাহলে ধরা পড়ে যাবে সে, সে সাথে ন্যান্সি আর ডেভও। কিন্তু না, কেন জানি লোকগুলো এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিল না। ৪. পড়ে গিয়ে একটু সময় চুপ করে শুয়ে থাকে ডেভ। তারপর পড়ে যাওয়া কাঠের টুকরোটা তুলে নিয়ে গুহামুখের দিকে হাঁটতে শুরু করে। সেখানে ন্যান্সি আছে। ডেভের যাওয়ার পর খানিকটা অপেক্ষা করে কুর্ট। এতক্ষণে ন্যান্সির কাছে সে পৌঁছে গেছে বলে অনুমান করে সে। বাকি ক’ টুকরো কাঠ, সবটা দড়ি আর ক্যানভাসের টুকরোগুলো এক সাথে করে কাঁধে তুলে নেয় কুর্ট। লিনকে ঐ লোকগুলোর কাছে একা রেখে বেরিয়ে আসে। তার খারাপ লাগছিল খুব। ফিসফিস করে নিজেকে শোনায়- লিনকে উদ্ধার করতে দ্রুত ফিরে আসব। গুহার বাইরের উজ্জ্বল সূর্যালোকে দাঁড়িয়েছিল ওরা দু’জন। কুর্টকে দেখে জিজ্ঞেস করে ন্যান্সি- : লিনকে মুক্ত করার কথা কী ভাবছিস? : আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। ড্রাগন বানাতে হবে। : কি বলছিস, ড্রাগন দিয়ে কি হবে? আর তা বানাবই বা কিভাবে? প্রশ্ন করে বিস্মিত ন্যান্সি। কুর্ট বলে- : এখন কথা বলার সময় নেই। চল, কাজ শুরু করি। সব কাঠ, ক্যানভাসের টুকরো আর দড়ি মিলিয়ে একটা ড্রাগন বানানোর কাজ শুরু করে ওরা। খানিকটা সময় পর ড্রাগনের কাছাকাছি দেখতে কিছু একটা তৈরি হয়ে যায়। একটু দূরে গিয়ে তৈরি করা জিনিসটিকে পরখ করে দেখে ওরা। : চলনসই একটা ড্রাগন, কি বলিস তোরা? ন্যান্সি আর ডেভ সায় দেয় তার কথায়। হাতের ঘড়িতে সময় দেখে কুর্ট। প্রায় দশটা। বলে- : চল, এখন আমরা বাড়ি ফিরে যাই। সারাদিন আর এখানে আসা হবে না। সন্ধ্যা হলে লিনকে উদ্ধার করতে আমাদের অভিযান শুরু হবে। তার কথায় চমকে ওঠে ন্যান্সি- : কী বলছিস তুই? লিনকে ঐ খারাপ লোকগুলোর হাতে ফেলে আমরা চলে যাব? আর রাতে আমরা ওকে উদ্ধারই করব কিভাবে? এখুনি পুলিশের কাছে চল। : থাম। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ ব্যাপারটা। আমরা যদি লিনের আটক হওয়ার কথা দাদুকে জানাই সাথে সাথে পুলিশকে জানাবেন তিনি। বাবা-মাও জেনে যাবেন সব। আমাদের এখানে আসা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। আর পুলিশকে খবর দিয়ে আনতে আনতে কমপক্ষে এক ঘন্টা লেগে যাবে। তাদের মনে যদি খারাপ ইচ্ছা থাকে তাহলে লিনকে এর মধ্যে অন্য কোথায়ও সরিয়ে ফেলতে পারে, সে সাথে সবাই পালিয়েও যেতে পারে। তখন ব্যাপারটা জটিল হয়ে যাবে। আর এখন যদি লিনের খোঁজে কেউ না যায় তাহলে ব্যাপারটাকে তারা গুরুত্বই দেবে না। তা ছাড়া ক্ষতিকর কেউ নয় ভেবে ওকে ছেড়েও দিতে পারে। বড়জোর আটকে রাখবে। আমার মনে হয়েছে, এটা ওদের নিরাপদ আস্তানা। এখানেই থাকবে তারা। সন্ধ্যায় আমরা আসব। কুর্টের যুক্তি একেবারে ফেলে দেয়ার মত নয়, ভাবে ন্যান্সি। কিন্তু লিন এখানে থাকবে ভাবতেই ভয় হচ্ছে তার। রাতে এসে যদি লিনকে উদ্ধার করতে না পারে তখন কী হবে? কুর্টকে কথাটা বলার পর ও বলে- : তখন বাধ্য হয়ে পুলিশকে জানাতেই হবে। : কিন্তু দাদু আর দাদি লিনকে না দেখে তো জানতে চাইবেন তার কথা। তখন? ডেভ জিজ্ঞেস করে। এর জবাব দেয় ন্যান্সি- : বলব যে মাথায় ব্যথা হয়েছে বলে লিন ঘরে ঘুমাচ্ছে। এখন বড় কথা যে এ ড্রাগনটিকে কোথাও লুকিয়ে রাখতে হবে। কুর্ট আশপাশ ঘুরে দেখতে যায়। মিনিট দশেক পর ফিরে আসে সে। খুশিভরা গলায় বলে, পেয়েছি। গজ পঞ্চাশেক দূরে দু’টিলার মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা দেখে এসেছে। তার মধ্যে তাদের কাঠ-কাপড়ের এ প্রাণহীন ড্রাগনটাকে লুকিয়ে রাখা যাবে। এদিকে লোকজন আসে না। অতএব ওরা ফিরে না আসা পর্যন্ত এটা ঠিক থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়। ওরা বাড়ি ফেরার পর কোনো সমস্যা হলো না। লিন যে নেই, তা দাদু আর দাদি খেয়ালই করলেন না। লাঞ্চের পর ওরা জড়ো হল কুর্টের ঘরে। শুরু হল আলোচনা। কে জানে লিন এখন কেমন আছে। ঐ লোকগুলো তাকে কিছু খেতে দিয়েছে কি না। তবে বড় কথা হচ্ছে, ওরা তাকে উদ্ধার করবে কিভাবে, আর কখন রওনা হবে। কুর্ট ততক্ষণে একটা পরিকল্পনা ছকে ফেলেছে। : রাত ঠিক সাড়ে আটটায় রওনা হব আমরা। সবার কাছে একটা করে টর্চ থাকবে যাতে অন্ধকারে কোনো অসুবিধা না হয়। ঠিক সময়ে কোনো শব্দ না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে তারা। ওরা জানে, দাদু বা দাদি কেউই ওদের খোঁজ করবেন না। একবার বেডরুমে ঢুকলে সকালের আগে আর ঘর থেকে বের হন না তারা। বাইরে বেরিয়ে দেখল, আকাশে চাঁদ উঠেছে। বেশ আলো ছড়াচ্ছে। তাই টর্চ জ্বালানোর দরকার হলো না। সৈকতে পৌঁছে যায় ওরা। জিজ্ঞেস করে ন্যান্সি- : আচ্ছা, তোর প্ল্যানটা কী? একটু বল আমাদের। : আমরা এখন ড্রাগনটা নিয়ে গুহার মধ্যে ঢুকব। আমার ধারণা যে রাতের বেলা গুহার মধ্যে ড্রাগনের মত কিছু দেখে ওরা ভয় পাবে এবং পালাবে। তখন লিনকে নিয়ে আমরা বেরিয়ে আসব। তবে এ লোকগুলোর ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। ওরা যেন আমাদের ধরতে না পারে। কাঠ, ক্যানভাস ও দড়ি দিয়ে ড্রাগনের মত যে জিনিসটা কুর্ট বানিয়েছিল তা প্রায় ছয় ফুট লম্বা। কাঠের কাঠামোর ওপর এটা তৈরি। পুরো কাঠামো ক্যানভাসে ঢাকা। মুখটা কদাকার, দু’দিকে কাঠের টুকরো দিয়ে হাত তৈরি করা হয়েছে। ফ্রেমের ভেতরটা এমন করে বানানো যে প্রয়োজনে দু’জন সেখানে বসতে পারবে। সেটাকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে তারা। কুর্ট বলে- : ডেভ, তুই এর ভেতরে বসবি। আর আমরা দু’জন এটাকে টেনে নিয়ে যাব গুহার মধ্যে। এটা দিয়ে ভয় দেখিয়েই ওদের কাছ থেকে লিনকে উদ্ধার করব আমরা। ডেভ ড্রাগনের ভেতরে গিয়ে বসে। অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পাচ্ছে সে। গুহার ভেতরে ঢোকে ওরা। আস্তে আস্তে হাঁটছে, চোখ খাপ খাইয়ে নিচ্ছে অন্ধকারে। কিছুটা এগিয়ে থেমে যায়। সামনে আগুন জ¦লছে। বেশ কিছু লম্বা কাঠ দিয়ে জ¦ালানো হয়েছে আগুন। মনে হয়, কয়েকটি কাঠের তক্তা মাঝখানে ফেড়ে নেয়া হয়েছে। আশপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মনে হয়, ঠান্ডা তাড়াতেই এ আগুনের ব্যবস্থা। কুর্টের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। জ¦লন্ত কাঠগুলো থেকে দু’টি তিন-চার হাতের মত লম্বা টুকরো তুলে আনে। সেগুলোর আগুন না জ¦লা দিকটা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধে ড্রাগনের উপরের দিকের দু’পাশে। এতে ড্রাগনের চেহারাটা আরো ভীতিকর হয়ে ওঠে। হঠাৎ এটাকে দেখলে যে কেউই ভাববে যে ড্রাগনের দু’চোখ থেকে আগুনের হলকা বের হচ্ছে। তাতে তারা ভয় পেতে পারে। ড্রাগন নিয়ে খানিকটা এগিয়ে যেতেই দু’ জন লোককে দেখতে পায় ওরা। দু’টি মাঝারি আকারের পাথরের ওপর বসে আছে। মাঝে মাঝে গুহার পথের দিকে চেয়ে দেখছে। পাহারায় রয়েছে হয়ত। কুর্টের মনে হলো, লোক দু’টি তেমন সতর্ক নয়, কেমন যেন ঢিলেঢালা ভাব তাদের মধ্যে। কে জানে, নেশা করেছে হয়ত। হঠাৎ সামনে ড্রাগন দেখে ভড়কে যায় তারা। ভয়ঙ্কর দানবটা অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। আগুনের শিখায় বোধ হয় পুড়িয়ে মারবে ওদের। প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় তারা। দৌড় দেয় কোনো কথা না বলে। মিলিয়ে যায় অন্ধকারে। [চলবে]
আরও পড়ুন...