আলিজা ও জার্মান নানা ভাই

আলিজা ও জার্মান নানা ভাই

গল্প সোলায়মান আহসান এপ্রিল ২০২৪

বার্লিন হলো জার্মানির সব চেয়ে জনবহুল শহর। শুধু জার্মানির ষোলোটি রাজ্যের মধ্যে নয়, সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের মধ্যে। অবশ্য শহরের সীমার মধ্যে জনসংখ্যা অনুসারে। শহরে বসবাসের চেয়ে শহরতলিতে বাসের পক্ষে জার্মানরা। তবে তাদের শহরতলিতে আধুনিক প্যাটার্নের ঘরবাড়িসহ রাস্তাঘাট, নাগরিক সকল সুবিধা পাওয়া যায়। জার্মানরা মুক্ত পরিবেশ পছন্দ করে। তাদের শহরও বেশ ফাঁকা ফাঁকা। দূরে দূরে ঘরবাড়ি দোকান বাজার।

জার্মানরা যেসব ঘরবাড়ি বানায় তার একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। সুউচ্চ ইমারত কম বানায়। একতলা দোতলা এবং ডুপ্লেক্স ঘর-বাড়ি বেশি। বাড়ির উভয় পাশে খোলা জায়গা ফেলে রাখে। শহরতলির বাড়িগুলোর ছাদে পুরু টাইলস ব্যবহার করে থাকে। পোড়ামাটির টাইলসগুলো বেশ  বড়ো বড়ো। এশীয় অঞ্চলের মতো ছোটো আকৃতির নয়। এসব টাইলস বেশ ভারী এবং মজবুত। সিমেন্ট-প্লাস্টার করে থরে থরে বসানো। দেখতে অনেকটা নদীর ঢেউয়ের মতো। সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। 

জার্মানির উত্তর-পূর্বে বার্লিন একটি প্রাচীন রাজ্য। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের ডামাডোলে এ শহরটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু জার্মানরা অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী জাতি। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী জার্মানরা যুদ্ধের সেসব দুঃসময়ের স্মৃতি ভুলে দ্রুত গড়ে তুলেছে ইউরোপের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে।

বার্লিন স্প্রি নদীর তীরে অবস্থিত। বার্লিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য শহরটিতে অনেকগুলো হ্রদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়োটি মুগগেলসি হ্রদ। এ ছাড়া শহরটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন, উদ্যান, খাল দ্বারা বেষ্টিত। জার্মানরা সাধারণত কেন্দ্রীয় জার্মানি ভাষা ব্যবহার করলেও তাদের বেশ কয়েকটি উপভাষা রয়েছে।

এতসব বললাম কেন, এই বার্লিনে বাস করে আলিজারা। বাংলাদেশি মেয়ে। মা-বাবাও বাংলাদেশি। আলিজার জন্ম ঢাকায়। বয়স যখন সাড়ে তিন আলিজা মা-বাবার সঙ্গে জার্মান আসে। সেটা বিশ^ব্যাপী করোনার ছোবলের আগে। আলিজার বাবা পলাশ জার্মানবাসী হয়েছেন আরো বছর আষ্টেক আগে। কিন্তু জার্মান আইন মানতে গিয়ে তাকে বেশ অনেকগুলো বছর একাধারে থাকতে হয়। পরে বিয়ে করে চলে আসে পলাশ। নানা জটিলতা ও আইনি বিধানের বেড়াজাল ডিঙিয়ে সাড়ে তিন বছর পর আলিজা ও আলিজার মা বীথিকে জার্মান নিয়ে আসে। এর আগে বীথিকে জার্মান ভাষা শিখতে হয়। বাংলাদেশের জার্মান দূতাবাসে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে তবেই ছাড়পত্র মিলে।

আলিজারা বার্লিন শহরের একটা পুরোনো এলাকায় থাকে। ল্যান্ডস বার্গার আলি। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে এ এলাকা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভাঙা ঘরবাড়ি মেরামত করে আগের মতো চেহারা ফিরিয়ে এনেছে। তবে এখনও স্মৃতি হিসাবে কিছু ভাঙা ঘরবাড়ি রেখে দিয়েছে। যেমন একটা গির্জা। বোমার আঘাতে অর্ধেক ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবু ঘণ্টা বাজে প্রতিদিন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা এসে গির্জায় বাইবেল পাঠ করে থাকে।

জার্মানরা এ এলাকার ঘরবাড়িগুলো যুদ্ধে আহত কিংবা সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে বসবাসের জন্য লিজ দিয়েছে। কর্পোরেশন আবার ভাড়াও দিয়েছে অল্প ভাড়ায়। জার্মানরা ঐতিহ্যপ্রিয় জাতি। পুরোনো বাড়িঘর ভাঙে না। ছেড়ে চলে যায় অন্য নতুন বানানো বাড়িতে। বিক্রিও করে না। কর্পোরেশনের  হাতে বুঝিয়ে দেয়। তারা ভাড়া দিয়ে দেখভাল করে। ভাড়ার টাকা যথারীতি মালিক একাংশ পেয়ে যায়। আলিজারা এমন একটি বাড়িতে থাকে।

আলিজারা যখন জার্মান আসে তাদের পরিবার ছিল তিনজনের। এখন চারজন। এখানে এসে সে একজন ভাই পেয়েছে, ওমর। জার্মান আইন অনুসারে ওমর জার্মান নাগরিক। তার মানে তার সব ফ্রি। কিন্তু আলিজা জার্মান নাগরিক না হলেও সে লেখাপড়া ফ্রিতে করে। জার্মান নিয়মে আলিজা স্কুলে যায় চার বছর বয়স থেকে। গত মাসের মাঝামাঝি খুব প্রত্যুষে আটতম জন্মদিনের কেক কেটেছে। মা বীথি সারপ্রাইজ দিতেই খুব ভোরে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা করে। বীথি খুব ভালো মানের কেক বানায়। ঢাকায় বাপের বাড়িতে থাকাকালেই কেক বানানোর প্রশংসা কুড়িয়েছে।

আলিজা স্ট্যান্ডর্ড টু-তে পড়ে। স্কুলের নাম, গ্র্যান্ড শিউল ব্লুম্যান ভারটেল। বাংলায় তরজমা করলে দাঁড়ায়-ফুলকুঁড়িদের প্রাথমিক বিদ্যালয়। জার্মান নিয়মে এ ধরনের স্কুলগুলো থাকে কর্পোরেশনের অধীন। লটারির মাধ্যমে স্কুল নির্ধারিত হয় বাচ্চাদের। আলিজার স্কুল বাসা থেকে বেশ দূরে। মা বীথির সঙ্গে যায় আসে। স্কুলবাসও আছে। তবে দূরত্বটা ততো নয় বলে বাসের সুবিধা পায় না।

স্কুল মানে বিশাল বাড়ি। বড়ো মাঠ। পড়াশোনার বালাই নেই। যা ইচ্ছে করো। পিরিয়ড সময় ধরে নেই। একেক ক্লাসে তিনজন টিচার। পড়ানো বলতে শেখানো। কীভাবে খেলতে হয়। কীভাবে খেতে হয়। দাঁত পরিষ্কার করতে হয়। আঁকিবুঁকি করা। আর একসঙ্গে কবিতা আবৃত্তি। টিচাররা বাচ্চাদের বন্ধু। বাচ্চাদের ডাইপার চেঞ্জ করাও টিচার করেন। তবে সময়টা অনেক দীর্ঘ স্কুলের। পাঁচ ঘণ্টা থাকতে হয়ে স্কুলে আলিজাকে। যদিও হেসেখেলে কাটে। দু’বার খাবার। একবার নাস্তা। আরেকবার লাঞ্চ। খেয়ে শেষ করতে পারে না বাচ্চারা। ফেলে দেয় নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে। যেখান সেখানে ফেলা জার্মান শিশুরা জানেই না।

বীথির সঙ্গে পাবলিক বাসে স্কুলে যায়। সঙ্গে ওমর থাকে। পাবলিক বাস মানে মজার ব্যাপার। পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর আসে। সাঁই করে ছুটে। পাঁচ মিনিটের পথ। বাসা থেকে বের হয়ে একটা উদ্যান। উদ্যানের পাশে খাল। স্বচ্ছ পানি কুলুকুলু বয়ে চলেছে। সেই উদ্যান খালের পাশ দিয়ে হেঁটে রাস্তায় উঠতে হয়। হাঁটতে বেশ লাগে ওদের। শুধু স্কুলে যাওয়া-আসার সময় নয় সপ্তাহান্তে একবার বাবা-মাসহ আলিজারা এই উদ্যানে আসে। এখানে আশপাশের বাসিন্দারাও আসে। কিছুদূর অন্তর লোহার বেঞ্চ পাতা। ছোটো ছোটো কৃত্রিম ঝরনা। নানাজাতের গাছ গাছালি-ফলফুলের উদ্যানটিতে। বসন্তকালে অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এই উদ্যানে আসা-যাওয়া করতে আলিজার সাথে জার্মান এক বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সঙ্গে ভাব জমে যায়। এমনিতে জার্মানরা বিদেশিদের পছন্দ করে না। বিদেশি বলে কোনো জার্মান বীথিদের সাথে তেমন ওঠাবসা করে না। শুধু মাত্র ক্রিসমাস উপলক্ষে খাবার নিয়ে আসে প্রতিবেশী এক জার্মান মধ্যবয়সি মহিলা বারবেল্লা। তারা মনে করে প্রভু যিশু সবার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে বলেছে এজন্য। কিন্তু আলিজা কীভাবে জার্মান দম্পতি মম্সেন ও মিসেস রিলকের সাথে ভাব জমিয়ে ফেললো, তা রহস্যজনক। অন্তত পলাশ ও বীথির কাছে।

একদিন ওরা উদ্যানে বেড়াতে এসেছে। তখনও তেমন শীত নামেনি। হিসেব মতো নভেম্বর মাসে প্রচুর শীত পড়ে। এমনকি মাইনাসে চলে যায় তাপমাত্রা। ১০ পর্যন্ত নামে। ডিসেম্বরে তা মাইনস ১২০ থেকে ২০০ পর্যন্ত নামে। তখন আকাশ থেকে পেঁজা তুলোর মতো তুষারপাত হয়। সাদা সাদা হয়ে যায় সব। আলিজা তখন স্কিবুট পরে রাস্তায় নেমে পড়ে। আরও আরও ছেলে-মেয়েরাও নামে। গোটা ইউরোপ জুড়েই তুষার আর স্কি খেলায় উৎসবের ধুম পড়ে। আলিজারা একটা বেঞ্চে বসে দই খাচ্ছিলো। ওটা ওমরের খুব পছন্দ। এমন সময় বৃদ্ধ দম্পতি ওদের দিকে এগিয়ে আসে। হাতে চকোলেটের বক্স। আলিজা উঠে এগিয়ে নিয়ে আসে। মুখে হাসি হাসি ভাব

- মাইন নামে ইস্ট মম্সেন!

- (আমার নাম হলো মম্সেন)

- মাইন নামে উস্ট বীথি! ডাস্ ইস্ট মাইনে টথ্টার।

(আমার নাম হলো বীথি। ও-টি আমার মেয়ে)

আলিজার হাতে চকোলেট বক্স দেয় মম্সেন। শব্দ করে হাসে। শিশুদের মতো। তার স্ত্রী রিলকেও প্রচুর হাসতে থাকে। 

- ডাস ইসট মাইন উপা। আলিজা বললো। 

(তিনি আমার নানা।)

আবার দু’জন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো। বীথি ভাবে ভালোই হলো জার্মান বাবা পাওয়া গেল একজন। বীথিও হাসে। পলাশ নীরব দর্শক। হাসির জবাবে হাসি পর্যন্ত।

-আব্-শিড! আউফ্ ভিডার জেহেন!

(বিদায়! আবার দেখা হবে।)

মম্সেন বলে যেতে উদ্যত হলো। এমন সময় তার স্ত্রী বলে উঠলো- বিস্ বাল্ট্ (আবার শিগগিরই দেখা হবে)

এরপর একদিন দেখা হয়েছে ওই জার্মান বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সঙ্গে বাসায়। 

বীথি আলিজা-ওমরসহ খাবার দিতে গিয়েছিল। সেটা ছিল রমজান মাস। বললো, তারাও ফাস্টিং করছে। কেন! বীথি অবাক। পরে মম্সেন খুলে বললো। সে ছিল সৈনিক। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সময় ছিল সে ইরাকে। সেখান থেকে মুসলিমদের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছিল। তখন দেখেছে রমজান মাস এলে মুসলিমরা মিলিতভাবে ফাস্টিং করে। তার কাছে খুব ভালো লাগে ব্যাপারটা। তখন থেকে পুরো একমাস তারা ফাস্টিং করে। মম্সেন জানায় প্রভু যিশুও ফাস্টিং করতে বলেছেন।

এরপর আরও দু’একদিন আলিজাসহ বীথি প্রতিবেশী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দম্পতির বাসায় গেছে। বিশেষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে একবার খাবার নিয়ে গেলে ওরা খুব খুশি প্রকাশ করেন। আলিজাকে সৈনিক জীবনের পাওয়া একটা চামড়ার ব্যাগ উপহার দেয়। গল্পচ্ছলে বৃদ্ধ মম্সেন ফরাসিদের ব্যাপারে ঘৃণা প্রকাশ করে। রুশদের ব্যাপারেও তার ক্ষোভ। তার মতে এরা কলহপ্রিয় জাতি। তাদের দেশকে ফরাসিরা অন্যায়ভাবে দখলে নিয়ে ধ্বংস করে দেয়। মম্সেন কামিনীদের ব্যাপারেও অসন্তোষ প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যে অন্যায্য যুদ্ধ চাপানোর জন্য।

মজার ব্যাপার হচ্ছে। আলিজার সঙ্গে সম্পর্ক নানা-নাতনির মতো হলেও কোনোদিন বাসায় বেড়াতে আসেনি। উদ্যানেই দেখা হতো। কথা যা হতো আলিজার সাথেই। জার্মান ভাষা বীথিও ভালো শিখে ফেলেছে। বাংলাদেশে একটা কোর্স করে বার্লিনে গিয়ে পরবর্তী কোর্স কমপ্লিট করেছে। তাই ভাষা কোনো বাধা হয়নি মমসেনের সঙ্গে।

একদিন মম্সেন একা এসেছে উদ্যানে। আলিজা দৌড়ে গেলো-উপা-উপা (নানা-নানা)

মম্সেন হাসতে হাসতে বলে- এঙ্কেল টথ্টার- এঙ্কেল টথ্টার... (নাতনি-নাতনি)

তারপর দু’জন হেঁটে হেঁটে গল্প করা। আলিজা এসে জানাল মিসেস রিলকে অসুস্থ। বীথি মনে মনে ঠিক করে দেখতে যাবে। কিন্তু কাজের ঝামেলায় একদিন দু’দিন করে পুরো সপ্তাহ চলে যায়। যাওয়া হয় না। আলিজা মামণিকে বলে-মিসেস রিলকে দেখতে যাবে বলেছিলে। বীথি ভাবে সত্যি সে ভুল করছে না গিয়ে। তাই সন্ধ্যার আগে আলিজা-ওমরসহ মম্সেনের বাসায় হাজির হলো।

নক্ করার অনেক পর মম্সেন দরোজা খোলে। চোখে মুখে বিষণ্নতা। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দরোজা না ছেড়ে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে। মুখে বললো- এন্ট-গুল্-ডি গুং (আমাকে মাফ করবেন)।

বীথির বুঝতে বাকি রইলো না রিলকের কিছু ঘটেছে। তাই ভেতরে ঢুকতে দরোজা ছাড়ছে না। কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না। জার্মানরা এমনই হয়। মুখে কম কথা বলে। আকার ইঙ্গিত ইশারায় কথা বলতে পছন্দ করে। বীথি ফিরে আসবে।

-আব্-শিড্ (বিদায়)। বীথি ঘুরে ফিরতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে মম্সেন বলে উঠে-আউফ্ ভিডার জেহেন (আবার দেখা হবে)।

কিন্তু মম্সেনের সাথে এরপর আর দেখা হয়নি। উদ্যানে দীর্ঘদিন না আসায় বীথি আলিজাকে নিয়ে আরেকদিন গিয়ে জানতে পারলো- মম্সেন এ বাসায় আর থাকে না। কিছুদিন আগে মম্সেনের একমাত্র মেয়ে এসে বন-এ নিয়ে গেছে।

জেনে আলিজা মুখে বললো, উপা। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো দু’ফোঁটা পানি।

বীথি মনে মনে ভাবে শেষ পর্যন্ত জার্মান বাবাকে সেও হারালো- মানুষের অপাত্য ¯েœহ কখন কার দিকে ধাবিত হয় জানা মুশকিল। তা না হলে হাজার হাজার মাইল দূরে এসেও আলিজা পেয়েছিল মম্সেনের মতো নানা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ