বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Hasin Arman comment 76 views comment 0 comments

এন্টি ডিসক্রিমিনেশন স্টুডেন্ট মোভমেন্ট

                                      হাসিন আরমান


১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম কোটার প্রবর্তন করা হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে মোট কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কৌটা ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠি কোটা ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ। তবে সমস্যা যেটা হয় তা হচ্ছে বেশিরভাগ চাকরি প্রত্যাশিদের ছিলনা কোটা অর্থাৎ তাদের সবার প্রতিযোগিতা করা লাগত মাত্র ৪৪ শতাংশ সিটের জন্য। এই বৈষম্যের কারনে ২০১৮ সালে জানুয়ারী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলতের রাস্তায় নামেন তাদের দাবি ছিল কোটা সংস্কার করা। যেন মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয় এছাড়াও তখন সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে যে এই কোটার ব্যবহার করে তার অনুগত লোকদের সব খাতে বসাচ্ছেন যেন সব ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ এক সরকার এর নিয়ন্ত্রণ থাকে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপর্জা ভাবে দেশের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে অবস্থান -নেয়। তাদের দাবির জবাবে তৎক্যার্লীন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি সংসদে দাড়িয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারও পাবে না তো কী রাজাকারের বাচ্চারা পাবেন কোটা পাবে। তার এই বক্তব্যের ফলে ফেটে পড়েন ছাত্রসমাজ আরো জোরদার হয় আন্দোলন। কিন্তু সেই আন্দোলন থামাতে সরকার পুলিশ ও ছাত্রলীগকে দায়িত্ব দেই। একদিকে পুলিশ টিয়ারশেল ও লারি চার্জ করে অন্যদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী- সংগঠন দের্শীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ও সাধারন শিক্ষার্থীদের উপর। এই হামলায় বহু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয আমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার ভিডিও ছডিয়ে যায় দেশ বিদেশে। সরকার ফেসবুক সহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ইতমধ্যে এই হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর কারে এবং অনেকট চাপেই পড়েই তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী শেখ হামিনা কোটা প্রথা বাতিল করে দেন এবং শেষ হয় আন্দোলন ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিব করে [প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।


এর পর কেটে যায় ৬ বছর ২০২৪ এর নির্বাচনে চতুর্থবারের আওয়ামীলীগ শপথ নেয়ার মতো সরকার গঠন করে আওয়ামীল ছয় মাসের মাথাই ৫ই জুন ২০১৮ তে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করেন বাংলাদের সুপ্রিম কোর্ট এর হাহকোট ডিভিশন। এবং কোটা পুর্ণর্বহাল করা হয়। ফলে ফুসে ওঠে ছাত্রসমাজ। এবার বৈষম্য বিরোধী, ছাত্র আন্দোলন এর নেতৃত্বে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নামে। এবারও তাদের দাবি কোটা সংস্কারের সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রী বলেন। তাদের দাবির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে এক বিষয়টি প্রক্রিয়া ধীন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে বলেন তারা শুনানীর দিন ধার্য করা হয় ৭ই আগষ্ট কিন্তু ছাত্রদের বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা সরকারের একটা কৌশল কোটা পুনর্বহাল করার কারন বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রমাসনের সব ক্ষেত্রই আওয়ামীলীগ সরকারের অনুগত্য। তাই তাদের দাবি ছিল সংসদে আইন পাশ করে কোটা প্রথা সংস্কার করা। ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই চীন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা। আন্দোলন কারীদের রাজাকারের নাতি পুতি বলে অভিবিত করেন। তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেদিন রাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন "তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার" "কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার। শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানকে, ইস্যু করে একে একে উস্কানি মূলক বক্তব্য দিতে থাকে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর নফেল।সহ অনেকেই ওবাইদুর কাদের এক বক্তব্যে বলেন এসব রাজাকারদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগই যথেষ্ঠ। তার এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ এর সভাপতি ছাদ্দামের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঠিক ২০১৮ এর মতো এবারও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ লাঞ্ছিত করা হয় নারী শিক্ষার্থীদের। তবে এবার আর শিক্ষার্থীরা চুপ থাকেনি তারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ এব মুখে বিশ্ববিদ্যালয় হল ছেড়ে পালাতে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একে একে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রলীগ মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষনা করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগের চেষ্টা বিফলে গেলে মাঠে নামে পুলিশ তারা শিক্ষার্থীদের উপর লাঠি চার্জ করে, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এমনকী ছড়া গুলিও চালায়। একে একে সব বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। এমন অবস্থায় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে পুলিশ নিরস্ত্র অবস্থায় খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আবু সাইদের হত্যার ভিডিও। এতদিন চুপ থাকলেও আবু সাইদ এর মৃত্যুর পর মাঠে নামে বেসরকারী বিদ্যালসের শিক্ষার্থীরা। শুধু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় না সারাদেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয় আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরা, উত্তর,  যাত্রবাড়ী অনেক জায়গায় শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ ১৭ তারিখও ইস্ট ওয়েস্ট, ব্যাক, এম আই এস টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রসহ সারাদেশে অনুত ১০ জন নিহত হন। পরি পরদিন ১৮ জুনাই চলে সংঘর্ষ রামপুরায় বিটিভির ভবনে ধরিয়ে দেওয়া হয় আসুন। হেলিকপ্টার

থেকে ছোড়া হয় গুলি। একের পর এক খবর আসতে থাকে ছাত্র হত্যার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এসব ভিডিও। অবস্থাক্রমেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে চলে যায। ১৮ জুনাই রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। ফলে পুরো বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যায় বাংলাদেশ। জারি করা হয় কারফিউ এবং রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রতি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন শিক্ষার্থীরা ডেটা সেন্টারে আগুন দিয়েছে তাই বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধের পিছনে ছিল এক ভয়াবহ পরিকল্পনা।সারাদেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে শুরু হয় ক্র্যাকডাউন বিভিন্ন বাহিনীতে থাকা সরকারের অনুগত লোকেদের নামিয়ে দেওয়া হয রাস্তায়। এবার আর ছড়া গুলি নয় চাইনিজ রাইফেল, অ্যাসল্ট রাইফেল ও পিস্তল নিয়ে একে একে গুলি করে মারা হয় নিরস্ত্র ছাত্রদের। শিক্ষার্থী দের বুকে ও মাথায় টার্গেট করে চালানো হতে থাকে গুলি ১৯, ২০, ২১ জুলাই চলে এই গণহত্যা। ইন্টারনেট বন্ধ থাকাই গণহত্যার খবর খুব একটা প্রকাশ্যে আসেনি কিন্তু ২৩শে জুলাই ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপে পঠে ইন্টানেট চালু করেতে বাধ্য হয় সরকার। ফলে তবে বন্ধ থাকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ বেশ কিছু ও সামাজিক সাধ্যম কিন্তু ভিপিএন এর কল্যানে সামাজিক মাধ্যমে একে একে প্রকাশ হতে থাকে গণহত্যার ভিডিও ও ছবি। শুধু তাই না প্রতি রাতে দেশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় লাইট বন্ধ করে ব্লক রেড চালিয়ে আন্দোলন এর সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যায়। কারোই আর বুঝতে বাকি থাকে না কেন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। এরই মধ্যে তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন আর রশিদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় স্বমন্বয়ককে নিরাপত্তার অজুহাতে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখে এমন একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করায় যাতে বলা হয় তারা সব আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন।কিন্তু শিক্ষার্থীরা বুঝে ফেলে যে এই বক্তব্য জিম্মি করে আদায় করা।তাই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেয়। শেখ হাসিনার মাফ চাওয়া, স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী, ও সাধারণ সম্পাদক এর পদত্যাগ এবং সকাল গনহাত্যার বিচার সহ নয় দফা দাবি প্রস্তুত করে শিক্ষার্থীরা। এদিকে শেখ হাসিনা একে একে বিটিভি ভবন, ভাঙচুর হওয়া মেট্রোরেল এর স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে কান্না করেন যা শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে জন্ম দেয় চরম ক্ষোভ। তারা বলেন, এতগুলো মৃত্যুর চেয়ে মেট্রোরেল আর বিটিভির মূল্য বেশি। একে একে বাস্তায় নেমে আসেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, অভিভাবক, শিক্ষক, অভিনয় শিল্পী, ব্যান্ড তারকা সহ সর্বস্তরের মানুষ এমনকি আন্দোলবত শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ান রাজধানীর রিকশা চালকরাও।

সরকার চাপে পড়ে আশ্বাস দেয়, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে এবং আটক ছয় সমন্বয়কদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। নিহত শিক্ষার্থীদের স্বরনে ৩১শে জুলাই সরকারী ভাবে শোক ঘোষনা করা হয়। সারাদেশের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ সেই শোক প্রত্যাখ্যান করে কালোর বদলে লাল রং ধারণ করেন। ৩১শে জুলাই সমপূর্ণ ফেসবুক ছেয়ে যায় লাল রং এর প্রোফাইল পিকচারে। আগস্টের দুই তারিখ বিকেলে আনুমানিক দুই লক্ষ লোক জড়ো হন কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বসে যায় এক গণজোয়ার। অনেকেই একে বলেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সেদিনই ছয় সমন্বয়ক এক দফা দাবি তুলে ধরেন শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ২ আগস্ট থেকে ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলন এর । শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানান।তিনি বলেন গণভবনের দরজা সবসময় খোলা আছে। তবে পরদিনই অর্থাৎ ৩ আগস্ট উত্তরা, মুনিসগঞ্জ সহ বেশ কিছু জায়গায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। সেদিনও নিহত হয় বেশ কয়েকজন। ৩ তারিখ রাতেই ওবাইদুল কাদের আওয়ামীলীগ নেতাকর্মিদের নির্দেশনা দেন পরদিন থেকে প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে।এদিকে সেনা প্রধান জেনারেল ওকারুজ্জামান

বৈঠকে বসেন অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সাথে সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেনাবাহিনী আর গুলি চালাবে না। তারা সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে। আর এই সিদ্ধান্তের পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায় ছাত্রদের পক্ষে। ৪ আগস্ট রবিবার সকাল থেকেই অসহযোগ আন্দোলন এ যোগ দেয় শিক্ষার্থী সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। আন্দোলকারীরা জড়ো হতে থাকে শাহবাগে, সাইন্স ল্যাবসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় । বেলা ১১:০০ টার পর থেকেই তান্ডব শুরু করে অস্ত্র ধারী আওয়ামীলীগ যুবলিগ, ছাত্রলীগ এর নেতা- কর্মিরা। এবং এইদিন পুলিশ  নিশক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সম্পূর্ণ কোট আন্দোলনে

৪ আগস্ট ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত। এদিন পুলিশ আওয়ামী লীগ এর নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। শুরুতে কিছুটা পিছু পা হলেও অনেকট পাবজি স্টাইলে পাল্টা আক্রমন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগেট আক্রমন থেকে রক্ষা করে সেনাবাহিনী সদস্যরা। ফলে আওয়ামীলীগ এর সন্ত্রাসীরা পিছু হাটতে বাধ্য হয়।৪ আগষ্ট দুপুরে ঘোষনা আসে ৬ আগস্ট লং মার্চ টু ঢাকা অনুষ্ঠিত হবে । তবে সারাদিনে চলা তান্ডবের কথা বিবেচনা করে ছয় সমন্বয়ক ঘোষনা দেন পর দিনই অর্থাৎ ৫ আগষ্ট হবে লং মার্চ টু টাকা। আরো ঘোষনা আসে সবকার যদি আবার ইন্টারনেট মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় অথবা ছয় সমন্বয়কদের যদি হত্যা বা গোমও করে ফেলে তবুও যেন এই লংমার্চ অব্যাহত থাকে। তারা সারাদেশের সাধারণ জনগনকে সেদিন বাস্তায় নেমে আসার আহব্বান জানান। তাদের আহব্বানে সাড়া দিতে রাতেই ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে মানুষ। যে যেভাবে পেরেছে কেউ ট্রাকে, কেউ সিএনজিতে, অধিকাংশই পায়ে হেটে আসতে থাকে ঢাকার দিকে। এদিকে ৫ আগষ সকাল থেকেই থমথরে ছিল রাজধানী ঢাকার পরিবেশ। সকাল ১০:৩০ টায় শিক্ষার্থীরা শহিদ ও মিনারে জাড়ো হওয়া শুরু করলে আবারো একশনে নামে পুলিশ। ছোডা হয় টিয়ারশেল, গুলি ও সাউনে গ্রেনেড।


তবে ১১টার পর থেকে শাহবাগে নামতে শুরু করে সাধারণ মানুষের ঢল। বঙ্গভবন ও গাভবন এ বাড়িয়ে দেওয়া হয় নিরাপত্তা। এদিকে সকাল ১০ টায় শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের আইজিপি কে ডেকে আরো বেশি কঠোর হওয়ার নির্দেশন দেন। বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে মোকানো মূল্যেই তিনি ক্ষমতা ধরে রেখতে চেয়ে ছিলেন। সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের উপদেশ দেন এবং বলেন পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন এর বাইরে, আইজিপিও বলেন পুলিশও বেশি সময় কঠর অবস্থান ধরে রাখতে পারবেনা। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও পুত্র জয়ও বলেন পদত্যাগ করতে।পরে তিনি পদত্যাগে রাজি হন এবং জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চান। এদিকে ১১টার পর থেকে যাত্রাবাড়ি, শনি আকরা, উত্তরা, সাভার দিয়ে কয়েক লক্ষ লোক ঢাকাই প্রবেশ করে। শাহবাগে তৈরি হয় এক জনসমূদ্র এবং এই জনসমুদ্র যাত্রা শুরু করে গণভবন এর দিকে। পরিস্থিতি ও দুরত্ব বিবেচনা করে সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে ৪৫ মিনিটের সময় বেধে দেন। তার ভাষণ রেকর্ডের প্রক্রিয়াও বাতিল করা হয়। দুইটি লাগেজ নিয়ে গণভবন থেকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার শেখ হাসিনা চলে আসেন তেজগাও পুরানো বিমানবন্দরে সেখান থেকে। তিনি বঙ্গভবনে এসে বাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে আবার চলে যায় বিমানবন্দরে। বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পালিয়ে যান দেশ থেকে। দুপুর দুইটায় সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেয়ার কথা থাকলেও সে ভাষনের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে দুইটার কিছু পর থেকে খবর প্রকাশিত হয়ে যায় যে শেখ হাসিনা পদত্যাদ করেছেন এবং দেশ ছেড়েছেন। বাধ ভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষ। ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় নামে আনন্দ মিছিল। লোকের লোকারণ্য হয়ে যায় সারাদেশের মানুষ। জনগণ সব বাধা উপড়ে পৌঁছে যায় গণভবনে | যদিও ততক্ষণে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে শেখ হাসিনা। উচ্ছ্বাসে আনন্দে গণভবন থেকে শেখ হাসিনার ব‍্যবহার করা জিনিসপত্র নিয়ে যেতে থাকে আম জনতা। যদিও সেদিন রাতের মধ্যেই ৮০ ভাগ জিনিস ফিরিয়ে দেয় সাধারণ মানুষ। বেলা সাড়ে ৩ টায় সেনাপ্রধান জেনাবেল ওয়ারাজজামান আনুষ্ঠানিক ভাবে, জানান যে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এবং শীঘ্রই দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে এবং সেই সরকারের অধিনে হবে নির্বাচন অবশেষে পতন হলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় স্বৈরাশসকের।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ