আলেম সমাজের ঐক্য এখন সময়ের দাবি
RAIHAN 111 views 0 comments
আলেম সমাজের ঐক্য এখন সময়ের দাবি
রাইহান উদ্দিন
ষোল কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা ৯০% মানুষ-ই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এমন একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের ইতিহাসের সাথে স্বভাবিক ভাবে-ই জড়িয়ে আছে মুসলমানদের অবদান। দেশের মানুষকে ইসলামের আলো দেখাতে সুদূর ইয়ামেন থেকে ছুটে আসা হযরত শাহ জালাল ইয়ামেনী (র.) সহ শাহ পরাণ (র.), শাহ মাখদুম (র.) এর মতো বিখ্যাত ধর্ম প্রচারকদেরকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস কল্পনা করা যায় না। কারণ তাঁদের প্রচারকৃত ধর্মের অনুসারী-ই যে দেশের শতকরা ৯০% মানুষ!
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বর্তমান বাংলাদেশ এ আসতে দেশের মানুষদেরকে বার বার পড়তে হয়েছে নানান বাঁধার সম্মুখে। প্রতিবার-ই জাতিকে পথ দেখাতে মীর নিসার আলী তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, মাওলানা ভাসানীর মতো মুসলিম নেতাদের সামনের কাতারে দেখা মিলেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন সংবিধান কিংবা একাধিক নেতার নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষকে কখনো শান্তির সমাজ কিংবা রাষ্ট্র উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা পারেনি মদিনার মতো কিংবা খোলাফায়ে রাশেদার যুগের সেই যিনা-ব্যাভিচার, সুধ-ঘুষ, ক্ষুধা-দরিদ্র মুক্ত একটি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিতে।
বাংলার আলেম সমাজ প্রচেষ্ঠা চালিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত সেই শান্তির সমাজ উপহার দিতে। এক্ষেত্রে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মাওলানা শাহ আহমদ শফী, মাওলানা দেলোয়ার হোসাঈন সাঈদীসহ আরো অনেক উলামায়ে কেরামের অবদান অনস্বীকার্য। এদের মধ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ কেউ আবার জালিমে কারাগারে শাহাদাৎ বরণ করেছেন।
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো সুদূর অতিতে বাংলাদেশে উলামায়ে কেরাম কিংবা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে তেমন বড় কোনো ঐক্য লক্ষ্ করা যায়নি। কওমী-আলিয়া, সুন্নি-ওয়াহাবী, মাযহাবী-লা মাযহাবী দ্বন্দ আমাদের আলেম সমাজকে বিভক্ত করে রেখেছে। যার ফলাফল স্বরূপ দেশের শতকরা ৯০% মুসলমান হওয়ার পর ও এদেশে আলেম সমাজ কিংবা দাড়ি-টুপিওয়ালা সৎ লোকেরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার। এদেশে প্রতিনিয়ত ইসলাম বিদ্বেষি নাস্তিক, ব্লগাররা আল্লাহ, রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, আলেম সমাজ, দাড়ি-টুপি নিয়ে ব্যঙ্গ করে যাচ্ছে। এর প্রতিবাদ করতে কি হচ্ছে তা ২০১৩ সালের ৫-ই মে শাপলা চত্বরে প্রমাণিত হয়েছে।
দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানের পর চলমান সংকট নিরসন এবং ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখতে এখনি উপযুক্ত সময় আলেম সমাজের ঘুরে দাড়ানোর। প্রয়োজন দ্রুত আলেমসমাজের মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে তোলার। কওমী-আলিয়া, মাযহাবী-লা মাযহাবীর দ্বন্দ ভুলে এখনি রুখে দাড়াতে হবে সকল বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি আশা জাগানিয়া বিষয় হলো, কওমি ঘরানার আলিম-উলামাদের সাথে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর আমীর এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় । সেখানে অংশ নেন জমিয়তের মাওলানা মুনির কাসেমি, হেফাজতের মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আজহারুল ইসলাম ও ফখরুল ইসলাম প্রমুখ। খেলাফত মজলিসের আমির, নায়েবে আমির, মহাসচিব প্রমুখ। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আল্লামা খুরশিদ আলম কাসেমী, মুফতি শারাফাত হুসাইন, মাওলানা আবু সাঈদ নোমান। ওলামা মাশায়েখ আয়িম্মা পরিষদের সেক্রেটারি মুফতি রেজাউল করিম আবরার। এছাড়া ও আলী হাসান উসামাসহ দেশের অনেক গন্যমান্য আলিমে দ্বীন এ সভায় অংশ নেন। স্বৈরাচার পতনের পর আলেম সমাজে/ ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন একটি সভা ঐক্য গঠনের ব্যাপারে আমাদের আশান্বিত করে। দ্রুত-ই তা আলেম সমাজ এবং ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গঠনে রূপ নেক এটাই প্রত্যাশা।
লেখক:
রাইহান উদ্দিন
শিক্ষার্থী,আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন...