আজব স্লোগান
গল্প মোহাম্মদ লিয়াকত আলী মে ২০২৩
“এক যে ছিল আজব দেশ
সব রকমে ভালো
রাতে সেথায় বেজায় রোদ
দিনে চাঁদের আলো”
পাঠ্যবইয়ের কবিতায় থাকলেও আল্লাহর দুনিয়ায় এমন আজব দেশ কোথাও নেই। একই নিয়মে চাঁদ ওঠে, সূর্য আলো দেয়, বাতাস বয়। তবে এই আজব নগরের কাজকাম একটু আজব রকম। আজব নগর প্রাইমারি স্কুলের পাঠদান সিস্টেমও আজব।
ক্লাস টিচার রুমে ঢুকেই রেজিস্ট্রি খাতা ছাড়াই রোল কল করেন:
-অইন্টে, মন্টে, হ্যাবলা, কেবলা, গোবরা, ঘণ্টা, পচা, গদা, মনা, রইস্যা, তোমরা সবাই আছ?
- উপস্থিত স্যার, হাজির স্যার, লাব্বায়েক স্যার।
- তাতো দেখতেই পাচ্ছি। সবাই চুপ করে বস।
ইংরেজি স্যারের বাংরেজি পদ্ধতির পাঠদানে ছাত্ররা বেশ মজা পায়:
- তোমাদের বলেছি, ইংরেজিতে কথা বলতে চেষ্টা করবে। যেখানে আটকে যাবে বাংলায় চালিয়ে নিবে। মনে আছে?
- জি স্যার।
- জি স্যার নয়, ইয়েস স্যার। ইয়েসও ভুলে গেছ? হোয়াই ইউ আর সো লেট?
- দি রেইন ইজ কম কম, পথের ওপর কাদা।
আই নট ফেল ডাউন স্যার, পড়ে গেছে দাদা।
হোয়াট ক্যান আই ডু?
- ইউ ক্যান ডু অনেক কিছু। কান ধরে সাম টাইম দাঁড়িয়ে থাক।
ইংরেজি একটি কঠিন বিষয়। কঠিন বিষয়কে সহজ করার জন্য স্যার মজার মজার গল্পের মাধ্যমে ইংরেজি শিখান। প্রতিদিন ইশপ ফ্যাবলস-এর ছোটো ছোটো গল্পগুলো প্র্যাকটিস করান।
- একজন দি বয়েস অ্যান্ড ফ্রগস গল্পটি পড়।
একজন ছাত্রের ভালো প্রিপারেশন থাকায় দাঁড়িয়ে যায়। গড়গড় করে গল্পটি পড়ে ফেলে।
- শেষ লাইনটি মুখস্থ বল।
- ওহ্ বয়েস, দিস ইজ প্লে ফর ইউ, বাট ডেথ ফর আস।
- এ থেকে তোমরা কী শিক্ষা পেলে?
- আমাদের লজ্জায় নিলডাউন হয়ে থাকা দরকার। ব্যাঙও ইংরেজিতে কথা কয়। আর আমরা বাংরেজিও পারি না।
অঙ্ক স্যারের যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ শিখানোর পদ্ধতিও আজব:
- একশ টাকা লিটার দরে পঞ্চাশ লিটার দুধ কিনে তার সাথে দশ লিটার পানি মিশিয়ে একই দামে বিক্রি করলে কত লাভ হবে?
- আল্লাহর মাইর খাইতে খাইতে লাভ যে কই যাইবে, তারই ঠিক নাই।
- এভাবে হিসেব করলে অঙ্ক শিখা হবে না।
- ঠিক আছে, এবার অন্য অঙ্ক দিচ্ছি। মনে কর টেবিলের ওপর দশটা মাছি আছে। তুমি থাপ্পড় দিয়ে তিনটে মেরে ফেললে। টেবিলে কয়টা মাছি থাকবে?
- তিনটা স্যার।
- এটা কেমন বিয়োগ হলো?
- স্যার, বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে বক উইড়া যায়। সে রকম থাপ্পড়ে মাছি উইড়া যায়। কিন্তু মরা মাছিতো টেবিলেই থাকবে।
- এরকম উল্টা পাল্টা জবাব দিলে অঙ্ক শিখতে পারবে না। যোগ বিয়োগ করে জবাব দিতে হবে। এবার বল, কোন দুই সংখ্যা যোগ ও গুণ করলে ফল একই হবে?
- দুয়ে দুয়ে চার আবার দুই দুগুনে চার, যোগ বিয়োগ গুন ভাগের একি অত্যাচার!
- কবিতা আবৃত্তি করতে বলি নাই।
- কবিতায় ছন্দে জবাব হলে অসুবিধা কী?
- যথেষ্ট হয়েছে, আজব আজব ছাত্রের পাল্লায় পড়েছি।
বিজ্ঞান স্যার সাধারণ বিজ্ঞানের কিছু থিউরি শেখানোর চেষ্টা করেন:
- বলতো গাছ থেকে ফল ওপরে না ওঠে নিচে পড়ে কেন?
- ওপরে খাওনের মানুষ নাই। তাই আল্লায় নিচে ফালায়া দেয়। তা না হলে বাজারে এতো ফল আসতো কেমনে? আল্লাহর বুদ্ধির জবাব নাই। আল্লাহকে থ্যাংক ইউ স্যার।
- আল্লাহকে থ্যাংক ইউ নয় আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়।
- ঐ হলো স্যার। আল্লাহয় বুঝলেই হলো।
- পড়াশোনাও কর না, যা বলি তা মনোযোগ দিয়েও শোন না। তোমাদের নিয়ে আর পারি না। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির থিওরি সব ভুলে গেছ। আবার রিপিট করছি। পৃথিবী প্রত্যেক বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে।
- তাহলে আমরা হাঁটতেই পারতাম না। চুম্বকে তো লোহা আইটকা থাকে। শুধু আকর্ষণ না, দরকার মতো বিকর্ষণও করে। হুজুর বলছে, দুনিয়ার প্রতি বিকর্ষণ ও আখেরাতের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হলে জান্নাতে যাওয়া যাবে।
- ঠিক আছে, তবে বিজ্ঞানও শিখতে হবে।
- স্যার, আমরা বিজ্ঞান শিখেই জান্নাতে যাব। হুজুর বলেছেন, আমাদের নবী করিম (সা) বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী ছিলেন। আল্লাহ নিজেই তার নবীকে বিজ্ঞান শিখিয়েছেন। আমরাও হিকমত শিখবো।
- অনেক কথার পর একটা অনেক ভালো কথা বলেছো। সবাই বলো রাব্বি জিদনি ইলমা।
- জি স্যার, গানের সুরে সুরে বলি
কাজ যদি নাই কিছু থাকে
অহরহ ডাকো আল্লাহকে
জ্ঞান যদি কম থাকে কারো,
রাব্বি জিদনি ইলমা পড়ো।
- কাম কাজ থাকলেও আল্লাহকে ডাকতে হবে। যতই জ্ঞানী হই পড়তে হবে। ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক।
- স্যার, বাংলায় বুঝায়া দেন। হুজুর তো অনেক কথাই বলেন। সব মনে থাকে না।
- আল্লাহ মানুষকে কলমের সাহায্যে অনেক অজানা বিষয় শিখিয়েছেন।
- ওরে বাবা, আল্লাহই কলম ধরতে কইছে? আমরা কলম থুইয়া মোবাইল টিপি! আসলেই আমরা বোকা।
- একদম তাই, ছিলাম বোকা, হব বুদ্ধিমান। এখন এটাই আমাদের স্লোগান।
আরও পড়ুন...