Home ফিচার পামুক্কালে তুরস্কের তুলার প্রাসাদ -ইরফান তানভীর

পামুক্কালে তুরস্কের তুলার প্রাসাদ -ইরফান তানভীর

শিরোনাম দেখে হয়ত কেউ কেউ নড়েচড়ে বসেছি! বারে এ কেমন কথা! তুলার আবার প্রাসাদ হয় নাকি? চৈত্রের গনগনে দুপুর। সে নিস্তব্ধ দুপুরে আমরা অনেকেই পুবাল বাতাসের সাথে গাঁও-গ্রামের পথে প্রান্তরে, পুকুরপাড়ে, একলা নিঝুম গোরস্থানে অথবা পাড়ার খেলার মাঠ থেকে শিমুলের তুলা দলবেঁধে সুদূরের কোনো নতুন ঠিকানায় উড়ে যেতে দেখেছি। রূপবতী বাংলার এ মনোরম দৃশ্য আমাদের কার না ভালো লাগে!
তা-ই বলে সেই তুলার আবার প্রাসাদও হয়? হ্যাঁ দেখতে অবিকল তুলার প্রাসাদের মতো পৃথিবীতে একটি প্রাসাদ রয়েছে। ইউরোপ-এশিয়ার দেশ তুরস্কের দেনিজলি রাজ্যে এ কটন ক্যাসল বা তুলার প্রাসাদের অবস্থান। তুর্কিরা এ জায়গাটিকে পামুক্কালে বলে ডাকে। জেনে রাখা ভালো- তুর্কি অভিধানে পামুক্কালে মানে হলো তুলার প্রাসাদ।
আমরা যারা পড়ুয়া এবং ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে টুকটাক খোঁজখবর রাখি তারা কিন্তু অনেক প্রাসাদ বাড়ির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। খোদ আমাদের বাংলা মুলুকেও কত প্রাচীন আর অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদ বাড়ি রয়েছে তার জুড়ি মেলা ভার। এ যেমন, ১৯ শতকে নির্মিত মানিকগঞ্জ জেলার বিখ্যাত বালিয়াটি প্রাসাদ, নাটোরের রানী ভবানীর প্রাসাদসহ আরো কত প্রাচীন প্রাসাদ বাড়ির সঙ্গে আমাদের সখ্য রয়েছে। কিন্তু এমনও কি হয়! দেখতে প্রাসাদ বাড়ির মতো, কিন্তু এতে চুন সুরকি, পাথর, ইট, বালি, সিমেন্টের কোনো প্রলেপ লাগেনি! ভাবতেও অবিশ্বাস্য মনে হয়!
তুরস্কের পামুক্কালে দেখতে অন্য আট দশটি প্রাচীন প্রাসাদের মতো নয়। এখানে যদি আমাদের কোনো দিন যাওয়ার সুযোগ হয়, তাহলে আমরা দেখতে পাবো- পামুক্কালে প্রবেশের পর কোনো অজানা আতঙ্ক আমাদের তাড়িত করছে না। বরং তুরস্কের মেন্দেরেস নদীর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে থাকা এ অনিন্দ্য সুন্দর পামুক্কালে বা তুলার প্রাসাদ আমাদের নিয়ে যাবে কল্পনার চির নতুন এক রাজ্যে। যে রাজ্যে অবগাহন করে হয়তোবা তুমি হতে চাইবে কবি ফররুখের সিন্দাবাদ।
পামুক্কালে দেখতে হুবহু তুলার প্রাসাদের মতো মনে হলেও এর সাথে আদতে তুলার কোনো যোগসূত্র নেই। বিশাল ঘন তুলা বাগানের সঙ্গে এ পামুক্কালের সাদা পাহাড়ের ঢালগুলোর এক অদ্ভুত মিল রয়েছে। প্রশ্ন জাগে মনে, কেন এমনটি হয়েছে? কেন পামুক্কালের পাহাড়ের ঢালগুলো দেখতে অবিকল তুলার প্রাসাদের মতো? বলছি তাহলে। এখানে কার্বনেট ক্যালসিয়াম খনিজপদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি। মূলত জমাটবাঁধা খনিজ লবণে পাহাড়ের ঢালগুলো তুষার শুভ্র হয়ে থাকে। পাহাড়ি এ উপত্যকাটি খনিজ লবণে সমৃদ্ধ। এ লবণগুলো জমাটবেঁধে তুলার প্রাসাদের আকৃতি ধারণ করে। দেখলে মনেই হয় না এটি তুলোর প্রাসাদ নয়!
আর পামুক্কালের এ জায়গাটিতে রয়েছে অনেকগুলো গরম পানির ঝরনা। সে ঝরনার পানি জমে জমে এ উপত্যকায় অনেকগুলো পুকুরের সৃষ্টি হয়েছে।
মজার বিষয় হচ্ছে, যে লবণ জমাটবেঁধে পাহাড়ের ঢালগুলোকে তুলার প্রাসাদের আবরণ দিয়েছে- সে লবণ কিন্তু ঝরনা থেকেও নির্গত হয়। আর ছোটো ছোটো পুকুরগুলোও একেবারে লবণ দিয়ে ঠাসা। সে লবণ মুঠোভর্তি করে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন অনেক ভিনদেশী পর্যটক।
পামুক্কালে উচ্চতায় প্রায় ১০০ মিটারেরও বেশি। পামুক্কালে থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এর নিকটতম শহর দেনিজলি। সেখান থেকেও পামুক্কালে দেখা যায়। বিশ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তুলার প্রাসাদের অবয়বে পামুক্কালে যেন কোল বাড়িয়ে দিয়ে ডেকে যায় স্বপ্নচারীদের। আহা হতেম যদি এমন আশ্চর্য সুন্দরের অভিযাত্রী।
পামুক্কালে পানির তাপমাত্রা উষ্ণ ধরনের। ৩৫ থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। সেখানে ১৬৭টির মতো এমন উষ্ণ জলের প্রস্রবণ আছে।
বিস্ময়কর পামুক্কালেতে আরো কত চোখধাঁধানো বিস্ময় আছে তা কি এক লেখাতে শেষ করা যাবে? আমাকে যদি বলা হয় পামুক্কালে নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলতে, আমি বলব-পামুক্কালে মানে এক বিস্ময়কর অপার সৌন্দর্যের নাম।
প্রাকৃতিক বিস্ময় ও প্রাচীন বিস্ময়ে ভরপুর এ পামুক্কালে ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

SHARE

Leave a Reply