কতদিন পর নানাবাড়ি এলো ইয়াসির! নানাবাড়ির আঙিনায় পা রাখলেই মন হয়ে যায় উত্তাল বঙ্গোপসাগর। খুশির দোলায় সে দুলছে তো দুলছেই। পৃথিবীর সব ভালোবাসা যেন এখানেই থাকে, সব আদর গলা জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে থাকে এখানেই!
নানা! নানু! এ দু’টি শব্দের তুলনা নেই, উপমা নেই। নেই কোনো প্রতিশব্দ!
মা-বাবা আর বড় আপুকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমে দেখা হয়ে গেল নানার সাথে। নানা উঁচু আওয়াজে বলে উঠলেন- মারহাবান ইয়াসির! মারহাবান সুমাইয়া! মা-বাবার নাম ধরেও এভাবে অভিবাদন জানালেন তিনি। নানার হাসিভরা মুখটায় যেন কাঁচা হলুদের মতো মায়া মেখে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।
বিকেলবেলা। নানার সাথে, নানার ফলের বাগানে ঘুরতে বেরিয়েছে ইয়াসির। কথায় কথায় ইয়াসির বলল, নানা! একটা কথা অনেকদিন ধরেই জানতে ইচ্ছে করছে। বাসায় কেউ এলেই, তাকে মারহাবান বলেন কেন? এর মানে কী?
এ তো নবীজির সুন্নাহ! এর অর্থ হচ্ছে- সুস্বাগত!
তাঁর কাছে কেউ এলে, তিনি মারহাবান বলে বরণ করে নিতেন। আয়েশা (রা) বলেছেন- একবার ফাতিমা (রা) নবীজির কাছে এলেন। আর তার হাঁটার ধরন ছিল নবীজির মতোই। তিনি তাকে বললেন-
মারহাবান বি-ইবনাতি! সু-স্বাগত, আমার কন্যা! (বুখারি)।
ইকরিমা বিন আবি জাহল (রা) বলেন- আমি যেদিন রাসূল (সা) এর নিকট এলাম, তিনি বললেন-মারহাবান বির-রাকিব আল-মুহাজির!
আরোহী মুহাজিরকে স্বাগত! (তিরমিজি)।
আলি বিন আবু তালিব (রা) বলেন- আমি নবী (সা)-এর নিকট বসা ছিলাম। আম্মার (রা) প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নবী (সা) বললেন- তাকে অনুমতি দাও। মারহাবান বিত-তায়্যিব আল মুতায়্যাব!
এই পূত-পবিত্র মানুষটাকে সু-স্বাগত। (ইবনে মাজাহ)।
একবার এক প্রতিনিধিদল নবীজির সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেও তিনি তাদের মারহাবান বলে স্বাগত জানিয়েছিলেন! (বুখারি)। এমন আরও বহু প্রমাণ রয়েছে তার জীবনে। এভাবেই তিনি তার কাছে আগতদের জন্য হৃদয়ের দরজা খুলে দিতেন। আর এ কাজ করলে, অতিথিদের মন বড় হয়ে যায়। তারা সম্মানিত বোধ করেন।
ইয়াসির বলল- কত চমৎকার মানুষ ছিলেন আমাদের প্রিয় নবীজি! এখন থেকে আমিও এভাবে স্বাগত জানাব ইনশাআল্লাহ।
– বিলাল হোসাইন নূরী