মুরাদ এবার ক্লাস সিক্সে উঠেছে। ছাত্র হিসেবে সে যেমন ভালো তেমনি ধর্ম-কর্ম পালনেও তার পরিবারের কাছে যথেষ্ট সুনাম আছে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সে মসজিদে গিয়ে আদায় করার চেষ্টা করে। একদিন জুমার নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর মুরাদ দেখল যে তার জুতার মতো দেখতে একজোড়া নতুন জুতা মসজিদের বারান্দায় পড়ে আছে। চারপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো তার আশপাশে কোনো লোকজন নেই। তখন হঠাৎ করে তার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। তৎক্ষণাৎ সে কোনো কিছু না ভেবে তার পুরনো জুতা জোড়া রেখে নতুন জুতা জোড়া পায়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসলো। বাড়িতে আসার পর এইরকম কাজের জন্য তার ভেতরে কিছুক্ষণের জন্য অপরাধবোধ জেগে উঠলেও সে সেটাকে তেমন পাত্তা দিলো না। অনেকক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার পর সে সিদ্ধান্ত নিলো যে, এই জুতা আর পাল্টিয়ে আনবে না। কারণ জুতোটা ছিল বেশ নতুন আর দামি। জুতা জোড়া আনার পর থেকে সে মসজিদে যাওয়া অনেকটা বন্ধ করে দিল। এভাবে বেশ কয়েকটা দিন কাটলো। তখন বর্ষাকাল চলছিল। একদিন কী হলো, সারারাত বৃষ্টির কারণে রাস্তা পুরোপুরি কাদা ভর্তি হয়ে গেলে। মুরাদ বাড়ি থেকে বের হলো বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যখন মুরাদ রাস্তা পার হচ্ছিল তখন কাদায় তার পা পুরোপুরি আটকে যায় এবং একটু সামনে আগাতেই সে পিছলা খেয়ে সোজা পাশের একটা ধানক্ষেতে গিয়ে পড়ে। ক্ষেতে পড়ায় সে মাজা ও হাড়ে কিছুটা ব্যথা পায়। তবে এ যাত্রায় সে কোনোরকম বড়ো দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায়। আরো কয়েকটা দিন কাটার পর ঘটলো আরেকটা অঘটন। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরার সময় তাদের বাড়ির পাশের বিল্ডিংয়ের কাজের জন্য আনা কাঠের মধ্যে থাকা পেরেকে ভুলক্রমে পা দিয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে তার ডান পায়ে দুইটি পেরেক ঢুকে যায় এবং পা রক্তে রক্তাক্ত হয়ে যায়। সেখানে তার সাথে থাকা সহপাঠীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায়। আল্লাহর রহমতে সে এবারও বড়ো দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরার সপ্তাহ খানেক পর সে পুরোপুরি সুস্থ হয়।
সুস্থ হওয়ার পর থেকে সে আবার মসজিদে গিয়ে নামাজে আদায় করা শুরু করে। কিন্তু এত দিনে পাল্টিয়ে আনা সেই জুতার কথা মুরাদ প্রায় ভুলেই যায়। আবারো এক জুমার নামাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় তার সেই জুতার কথা মনে পড়ে যেটা সে পাল্টিয়ে এনেছিল। সে তার ভুল বুঝতে পারে। মনে মনে সে খুব অনুতপ্ত হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় যার জুতা তাকে ফেরত দিবে। কিছুক্ষণ খুঁজে সে একটি স্থানে তার নিজের সেই পুরনো জুতা দেখতে পায়। সে তার পুরনো জুতার স্থানে তার পায়ে থাকা জুতা রেখে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে। কী মনে করে সে আবার মসজিদের বাইরে একটু দাঁড়ায়। তখন ওই লোকটি মসজিদ থেকে বের হয়ে তার জুতা দেখে আনন্দিত হয়। এ দৃশ্য দেখে মুরাদও আনন্দে, অনুতাপে প্রায় কেঁদে দেয়।