Home স্বাস্থ্য কথা মুক্তঝরা হাসির জন্য চাই সুন্দর দাঁত -ডা. এহসানুল কবীর

মুক্তঝরা হাসির জন্য চাই সুন্দর দাঁত -ডা. এহসানুল কবীর

মানুষের সৌন্দর্যের অনেকটাই নির্ভর করে তার মুখশ্রীর ওপর। তার মধ্যে অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে দাঁত। একটা মিষ্টি হাসিতেই মন জয় করা যায় অনেকের। একটু মুচকি হাসি কিন্তু এক ধরনের সাদকায়ে জারিয়া। আর হাসিটা যদি সুন্দর দাঁতের হয়, তাহলে ভুবনকে ভুলিয়ে দেওয়া সম্ভব।
সাধারণত দাঁতের অনেক ধরনের রোগ আছে। সব রকমের রোগের একটাই লক্ষণ, সেটা হলো দাঁতে ব্যথা। দাঁতে যাদের ব্যথা হয়নি কখনো তারা কিছুতেই বুঝতে পারবে না কি যে অসহনীয় যন্ত্রণা সেটার। ভুক্তভোগীরাই কেবল তা অনুমান করতে পারে মাত্র। তাই মুক্তঝরা হাসির জন্য এবং দাঁতকে সুন্দর পরিপাটি রাখার জন্য কিছু নির্দেশনা মেনে চলার দরকার।
দাঁতের কী কী ধরনের অসুখ হয়?
১. দাঁতের ব্যথাসহ মাড়ি ফুলে যাওয়া
২. পাইওরিয়া বা জিনজিভাইটিস
৩. দাঁত হলুদ হয়ে যাওয়া
৪. বাঁকা দাঁত
৫. দাঁতের প্লাক
৬. দাঁতের ক্যারিস বা ক্ষয়রোগ

তাহলে করণীয় কী?
সুস্থ দাঁতের জন্য দৈনিক দুইবার করে দাঁত ব্রাশ করা উচিত অর্থাৎ সকালে নাস্তার পরে ও রাতে খাওয়ার পরে।

কীভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে?
২/৩ মিনিট সময় ধরে আলতো করে সার্কুলার মোশনে ব্রাশ করতে হবে।
দাঁত ব্রাশ এমনভাবে করতে হবে যেন ব্রাশটি দাঁতের ভেতরে ও বাইরে সবদিকে পৌঁছায়, এমনকি জিহবাকেও স্পর্শ করে। অনেকের ধারণা জোরে জোরে ব্রাশ করলে বুঝি দাঁত ভালো পরিষ্কার হয়। এটা মোটেও ঠিক নয়, এতে বরং দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কী ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে?
ব্রাশটি ভালো মানের ও নরম হতে হবে।
ফাইবারযুক্ত নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করাটা শ্রেয়। মনে রাখতে হবে পরিবারের সবার টুথব্রাশ একসাথে না রাখাই ভালো। ব্রাশের ফাইবারগুলো বা ব্রিসলগুলো যদি সোজা না থাকে বা বেঁকে যায় তাহলে সেই ব্রাশ আর ব্যবহার না করাই উত্তম। সে জন্য প্রতি ৪/৫ মাস অন্তর ব্রাশ চেঞ্জ করা উচিত।

কী ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত?
আমরা সবাই জানি ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দাঁতের জন্য ভালো। তবে সব সময়ের জন্য নয়। কারণ অতিরিক্ত ফ্লোরাইড ব্যবহারে ক্যান্সারও হতে পারে বলে শোনা যায়। এ ছাড়া ফ্লোরোসিস নামক রোগ হতে পারে। তাতে দাঁত সাদা বা হলদেটে রঙ হয়, দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যায়। তবে ফ্লোরাইড দাঁতের ক্যারিজ হওয়াকে প্রতিহত করে। উল্লেখ্য যে, মাঝে মাঝে টুথপেস্টের ব্র্যান্ড চেঞ্জ করা উচিত অর্থাৎ বিভিন্ন কোম্পানির টুথপেস্ট অলটারনেট করে ব্যবহার করা ভালো। কারণ পৃথিবীর এমন কোনো স্থানে এমন কোনো টুথপেস্ট নেই যার ভেতরে দাঁত ও মুখের উপকারী সব উপাদান একসাথে বিদ্যমান রয়েছে এবং সেটি সম্ভবও নয়।

দাঁতের যত্নে আরো কিছু
করণীয় ও বর্জনীয়
দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি ফ্লস বা সুতা দিয়ে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণাগুলোকে বের করে দিতে হবে যাতে মুখে দুর্গন্ধ না হয় বা পুঁজ না জন্মে। নিয়মিত জীবাণুনাশক মাউথ ওয়াশ অথবা কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা উত্তম। তাতে দাঁতের ক্ষয়রোগ ও দাঁতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দাঁত পরিষ্কার করার সময় টাং স্ক্রেপার বা ব্রাশ দিয়ে জিহবা পরিষ্কার করা উচিত। শরীরের মতো দাঁত ও মুখের কিছু ব্যায়াম আছে, সেগুলো করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চিনিমুক্ত চুইংগাম চিবালে কিছুটা উপকার হতে পারে। টুথপিক দিয়ে কখনোই দাঁত পরিষ্কার করা ঠিক নয়। তাতে দাঁতের ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা থাকে। কয়লা, ছাই, মাটি, গাছের ডাল ইত্যাদি দিয়ে দাঁত মাজা ঠিক না। পান-সুপারি, জর্দা, তামাক ইত্যাদি না খাওয়া দাঁতের জন্য ভালো। বিড়ি-সিগারেট ধূমপানের কারণে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। দাঁতের যত্নে নিয়মিত মাড়ি ম্যাসাজ করা উচিত। তাতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং দাঁত ও মাড়ি সুস্থ-মজবুত থাকবে। তাছাড়া দাঁতের যেকোনো সমস্যায় ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দাঁতের যত্নে খাবার
ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার- ডিম, দুধ, দই, পনির, শিমের বিচি, চীনাবাদাম, কাঁটাযুক্ত ছোটো মাছ এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার- পেয়ারা, কমলা, মাল্টা, লেবু, টমেটো, আমলকী এবং আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার- বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ফ্লোরিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। ভিটামিন-বি১ দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই তাজা ফলমূল ও সবজি চিবিয়ে খাওয়াটা উত্তম। এসিডিক ও মিষ্টিজাতীয় খাবার দাঁতের ক্ষয়রোগ বাড়িয়ে দেয়। তাই এগুলো পরিহার করে চলা শ্রেয়। দাঁতের যত্নে প্রচুর পানি পানের বিকল্প নেই। তাতে দাঁত ও মুখের ভেতরটা আর্দ্র থাকে, ক্ষয়রোগমুক্ত থাকে। তবে দাঁতের যত্নে অবশ্যই ফাস্ট ফুড বা জাংক ফুড পরিহার করা উচিত। পাশাপাশি কোমল পানীয় পান না করাই উত্তম।

SHARE

Leave a Reply