দেখতে দেখতেই চোখের পলকে রমজান মাস চলে যাচ্ছে। বান্দার জন্য আল্লাহর দেওয়া এক অফুরন্ত সুযোগ। রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের অন্যতম উপাদান এ রমজান মাস এবং এ মাসের রোজা। এ মাস মুমিনের জন্য সাওয়াব ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে পরবর্তী এগারো মাসের পাথেয় সংগ্রহের মৌসুম। রমজানের রোজা, সাহরি, ইফতার, তারাবিহ সবই জিহানের অনেক ভালো লাগে। ঈদের আর বেশি দিন দেরি নেই। মাত্র কয়দিন বাকি। এই অফুরন্ত সুযোগের মাস সে আবারও কখনো ফিরে পাবে কি না সে জানে না। ভাবতেই তার খুব খারাপ লাগছিল। সে প্রতি বছরই রমজান মাসকে উপভোগ করতে চায়। সাতাশ রমজান। আসরের নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরতে ফিরতে জিহানের মাথায় এমনই এক ভাবনা খেলা করছিল। হঠাৎ এক সময় সে খেয়াল করল, রাস্তার ধারে বসে আছে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে। বয়সই বা কত হবে, দশ-বারো বছর। এর বেশি হবে না। পরনে নোংরা, ছেড়া জামা। জীর্ণ-শীর্ণ চেহারা। মা-বাবা আছে কি না কে জানে। তাদের মধ্যে থেকে একজন বলছিল, ‘আইজ ইফতারে ভালা কিছু খাইতে মন চাইছে। কিন্তু আমগো কেডা দিব। লোকজন ইফতারে কত্ত কিছু খায়। আমগো কী ভাগ্য দেখ, ইফতারে পানি ছাড়া কিছুই জোডে না। ঈদের আর বেশি দিন নাই। ঈদের দিন সবাই নতুন নতুন জামা কাপড় পরব, ভালা ভালা খাবার খাইব। আর আমগো ঈদ বলতে কিছুই নাই।’ জিহান রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব কথা শুনছিল। কিছুক্ষণ পর সে আবার বাসার পথে হাঁটা শুরু করল। ছেলে-মেয়েদের কথা শুনে তার একটুও ভালো লাগছিল না। বাসায় এসেও তাদের কথা ভাবছিল। তাদের জন্য কী করা যায়, কীভাবে তাদের একটু আনন্দ দেওয়া যায়। ভাবতে ভাবতেই ইফতারের সময় হয়ে যায়। ইফতার শেষে জিহান মাগরিবের নামাযের জন্য বের হয়ে পড়ে। মসজিদে তার ছোটো বেলার বন্ধু ইফাদের সাথে দেখা হয়। তাদের সবকিছুই একজন আরেকজনের সাথে শেয়ার করে। নামাজ শেষে জিহান তার বন্ধু ইফাদকে রাস্তার সেই ছেলে-মেয়েদের কথা জানায়। আমরা ঈদে কত না আনন্দ করি! নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাই। খাবারে থাকে হরেক রকম আয়োজন। কিন্তু কত পথশিশু আছে যারা দিনের পর দিন না খেয়ে পার করছে। না আছে তাদের একটু থাকার জায়গা, না আছে তাদের ভালো পোশাক। তারা প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হতে থাকে ঈদের আনন্দ থেকে। তাদের জীবনে ঈদ আসে কষ্টের আধার হয়ে। তাদেরও তো ঈদ উপভোগ করতে ইচ্ছা হয়। চল না, আমরা তাদের আনন্দের জন্য কিছু করি। জিহানের কথা শুনে ইফাদ বলল, হ্যাঁ তাদের অবস্থা খুবই করুণ। আমাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু তাদের জন্য কী করা যায় তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এই বিষয়ে জিহান ও ইফাদ বেশ কিছুক্ষণ কথা বলছিল।
জিহান তার মা-বাবাকে পথশিশুদের কথা জানায়। জিহানের মা-বাবার পরামর্শে পরের দিন সকালে দু’জন মিলে পথশিশুদের খোঁজে রাস্তায় বের হলো। তারা খোঁজাখুঁজি করে বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ের সন্ধান পেল। তাদের খোঁজখবর নেওয়া হলে তাদেরকে ঈদের দিন ইফাদদের বাসায় আসতে বলা হলো। সেই সাথে ইফাদদের বাসার ঠিকানাও জানিয়ে দেওয়া হলো। জিহান ও ইফাদ তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ করে যাচ্ছিল। পথশিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কিছু করবে এটা ভেবেই তাদের ভালো লাগছিল। অবশেষে ঈদের দিন উপস্থিত। সবার সাথে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার দিন। জিহান ঘুম থেকে ওঠে ফজরের নামাজ শেষ করে ঈদগাহ মাঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। নাস্তা করে নতুন পোশাক পরিধান করে তার বাবার সাথে ঈদগাহ মাঠের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। মাঝ পথে ইফাদ ও তার বাবার সাথে সাক্ষাৎ হয়। ঈদের নামাজ শেষ করে তারা সবাই ইফাদদের বাসায় চলে আসে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজই প্রস্তুত ছিল। ঈদের আগেই পথশিশুদের জন্য নতুন জামা কাপড়, খাবারের আয়োজনের জন্য যা কিছু দরকার তার সবই ব্যবস্থা করে রেখেছিল। ইফাদের মা ও কাকী পথশিশুদের জন্য খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত। একের পর এক দাওয়াত করা শিশুরা আসতে থাকে। সকলের চলে আসার পর, জিহান ও ইফাদ তাদের জন্য নতুন জামা কাপড় নিয়ে হাজির। নতুন জামা কাপড় দেখে ছেলে-মেয়েরা অনেক খুশি। রান্না শেষে তাদের জন্য খাবার পরিবেশন করা হয়। তাদের জন্য অনেক রকম খাবারের আয়োজন ছিল। কেউ তাদের জন্য এত কিছু করবে সেটা তারা ভাবতেও পারেনি। ছেলে-মেয়েদের আনন্দ দেখে জিহান ও ইফাদের এত আনন্দ হচ্ছিলো যার শেষ হয় না। এ যেন সর্গ সুখ। খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব শেষে সবাই যার যার মতো চলে যায়। ছেলে-মেয়েদের আনন্দ দেখে তাদের ইচ্ছা প্রতি ঈদেই পথশিশুদের জন্য কিছু না কিছু করবে। সব সময় তাদের পাশে থাকবে।