Home গল্প তোমাদের গল্প প্রভাতী -সাইদুল হাসান

প্রভাতী -সাইদুল হাসান

পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে প্রভাতীর। রোজ ভোরে ওর জানালার পাশে মিষ্টি সুরে গান বিলায় কোকিল। মধুর সুরের গানে শুরু হয় ওর মিষ্টি সকাল। ওদিকে ওর শখের পোষা মোরগ অনবরত হাঁক দিচ্ছে কুক কুকুক….. কুক। ওহ নো! ওতো ভুলেই বসেছে যে আজ স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে ওঠে বসে। দৌড়ে গিয়ে প্রথমে মুরগি খোঁয়াড়ের খিল খুলে দেয়। তারপর টুথব্রাশ হাতে নিলো কিন্তু টুথপেস্ট খুঁজে পাচ্ছে না।
এই আম্মু, আম্মু!
– কিরে, ভোরে এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?
– আমার টুথপেস্ট কোথায়? পাচ্ছি না যে!
– তা আমি কী করে বলব তোর টুথপেস্ট কোথায় রেখেছিস তুই! ভালো করে খুঁজে দেখ পাবি।
– অনেকক্ষণ যাবৎ তো খুঁজতেছি, কিন্তু পাওয়ার তো কোনে নাম-ই নেই। তোমার ছোটো ছেলে পুঁচকেটা লোকায়নি তো?
– তা আমি কি জানি। ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো পারিস।

ওর ছোটো ভাইটা এখনো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। মাথার নিচ থেকে একটানে বালিশটা সরিয়ে নিল প্রভাতী। আমার টুথপেস্ট লুকিয়ে শান্তিতে ঘুমানো হচ্ছে, অ্যা! আচমকা এমন টানে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠে ফ্যিতম।

– ওই কে কে কে…
– আমি তোর বোনরে পুঁচকে। ওঠ, ওঠ।
– এই! তুমি সকাল সকাল কাঁচা ঘুমটা ভেঙে দিলে কেন?
– তো কী করবো? নাচবো নাকি!
– হ্যাঁ, দিদি নাচো। তুমি অনেক সুন্দর নাচতে পারো।
– ঠাস করে একটা দিমু ধইরা। আজাইরা কথা বাদ দিয়ে বল আমার টুথপেস্ট কোথায় রেখেছিস?
– একি দিদি! তোমার টুথপেস্ট আমি লুকাবো কেন! আমার এতো কীসের ঠ্যাকা যে তোমার টুথপেস্ট লুকাবো।
– ওই! এতো ঢং করিস না তো। তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। সোজা কথায় বল কোথায় রেখেছিস।
– ওকে, ওকে, বলছি, বাবা বলছি। তবে একটা শর্ত মানতে হবে।
– কী শর্ত? বল।
– তুমি স্কুল থেকে আসার সময় আমার জন্য খেলনা গাড়ি ও পুতুল আনতে হবে।
– ওলে বাবা! কী শখ রে ওনার! ঠিক আছে, ঠিক আছে এনে দিব নে। বল এবার।
– ওয়্যারড্রবের নিচের বাক্সটাতে দেখ। আমার খেলার জিনিসের নিচে রেখেছি। আর হ্যাঁ, শর্ত মনে থাকে যেন। তুমি আমার ভালো দিদি।
– হইছে! আর বলতে হবে না।

মুখ ভেংচি কেটে টুথপেস্ট নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে বাড়ির দক্ষিণ পাশের ফুলের বাগানটায় চলে গেল। রোজ এটাই ওর রুটিন। দাঁত মাজবে, ফুল পাখিদের সাথে আলাপচারিতা করবে। মাটিতে বিছানো শুকনো ফুল কুড়াবে। সেগুলো আবার বইয়ের পৃষ্ঠার ভাঁজে রেখে দিবে। হাঁটতে হাঁটতে ও বাগানের পূর্ব পাশে গেল। ওখানে দেওয়ালের পাশে একটা মাছরাঙা মাটিতে পড়ে ডানা ঝাপটাচ্ছে। ও দ্রুত পাখিটার কাছে গেল এবং দেখতে চেষ্টা করল পাখিটার সমস্যা কী। ও যা দেখল তাতে সে বেশ দুঃখ পেল। মাছরাঙাটির দুটো পায়ে কারেন্ট জালের সুতো পেঁচিয়ে আছে যার কারণে ওটা উড়তে পারছে না। ওদের বাড়ির পাশেই নদী। সেই নদীতে কারেন্ট জাল ফেলে পাশের বাসার তাপস ও তার বাবা। সে কিছুক্ষণ ভেবে তারপর আবিষ্কার করল যে পাখিটা মনে হয় তাপস দাদাদের বাড়ি গিয়েছিল এবং উঠানের একপাশে বিছানো ছিঁড়া কারেন্ট জাল থেকে মাছ খেতে চাচ্ছিল। কারণ রোজ সন্ধ্যায় তাপস দাদারা নদীতে জাল ফেলে এবং ভোরে জাল তুলে আনে। তাছাড়া মাছ বেশি আটকা পড়ে বলে জাল থেকে সব মাছ সংগ্রহও করা হয় না যার কারণে জালে কিছু মাছ আটকে থাকে এবং সেটা থেকেই হয়তো মাছরাঙা পাখিটা মাছ খেতে চেষ্টা করেছিল। যাক, অত না ভেবে ও পাখিটার পা থেকে পেঁচানো সুতো খুলার চেষ্টা করল এবং খুললো। পাখিটা এখন আর চেঁচামেচি করছে না। অতি শান্ত হয়ে প্রভাতীর নরম হাতের তালুতে বসে রইল। হঠাৎ পিছন থেকে প্রভাতীর মায়ের ডাক কানে এলো।

SHARE

Leave a Reply