Home বিজ্ঞান জগৎ কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে? -নাদিম নওশাদ

কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে? -নাদিম নওশাদ

ছোট্ট বন্ধুরা, যদি তোমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বলোতো বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কারের নাম কী? হয়তো উত্তরে যে জিনিসটার নাম তোমার মাথায় আগে ভাগে আসবে সেটা হলো কম্পিউটার। আসলেই তাই। কম্পিউটার হলো বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। কখনো কি মনে হয়েছে, এমন বিস্ময়কর আবিষ্কার যা মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে দিয়েছে, সেটা কীভাবে কাজ করে? রহস্যের গন্ধ পাচ্ছ? আজকে আমরা এই রহস্যের গিঁট কিছুটা খোলার চেষ্টা করবো।

প্রথমেই চলো কম্পিউটার সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক। সাধারণত কম্পিউটার বলতে আমরা ল্যাপটপ (laptop) আর ডেক্সটপ (desktop)-কে বুঝি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে কম্পিউটারের আরও অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন : সুপার কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার ইত্যাদি। প্রত্যেকটা কম্পিউটারকে দুটি মৌলিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। একটা হলো হার্ডওয়্যার (hardware) অন্যটি সফটওয়্যার (software)। হার্ডওয়্যার কম্পিউটারের ফিজিক্যাল পার্ট, যেটা দিয়ে কম্পিউটারের সমস্ত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। ইংরেজিতে বলা হয়- processing of data। যেমন মাউস, কিবোর্ড, মনিটর ইত্যাদি। আর সফটওয়্যার হচ্ছে কিছু নির্দেশ (command) যার সাহায্যে ঠিক করা হয় কম্পিউটার কী করবে। ইংরেজিতে বলা হয় -set of command which tells the computer what to do। যেমন ফটোশপ, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি। কি, অনেক প্যাঁচানো মনে হচ্ছে? চলো একটু সহজ করে নেওয়া যাক। যেগুলো সাধারণত আমরা ছুঁতে পারি সেগুলো হার্ডওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত। আর যেগুলো সাধারণত আমরা ছুঁতে পারি না সেগুলো সফটওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত। এখন আশা করি তোমরা বুঝতে পেরেছো। বন্ধুদের সামনে নিজেকে জাহির করার মতো মোক্ষম একটা বিষয়ে আমরা শিখলাম। এইবার আমাদের রহস্যের গিঁট খোলার পালা।

সফটওয়্যারের সংজ্ঞা থেকে কি কিছু অনুমান করতে পেরেছো? চলো আবার সংজ্ঞাটা পড়ি। সফটওয়্যার হচ্ছে কিছু নির্দেশ যার সাহায্যে ঠিক করা হয় কম্পিউটার কী করবে। এখন নিশ্চয়ই তোমরা বুঝতে পেরেছো যে, কম্পিউটার মশাইকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য তাকে প্রথমে কিছু নির্দেশ দেওয়া লাগে। আর এ নির্দেশাবলির একটি সেট তৈরি করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রোগ্রামিং (programming) বা কোডিং (coding)। প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে ঠিক করা হয় কম্পিউটার কীভাবে কাজ করবে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, ধরো তুমি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছো। সাইকেল তখনই চলবে যখন তুমি প্যাডেল ঘুরাবে। তুমি ডানে যেতে চাইলে হ্যান্ডেল ডানে ঘোরাবে, বামে ঘোরালে বামে যাবে। যখন তোমার থামার প্রয়োজন হবে তুমি ব্রেক করবে। তোমার নির্দেশ ছাড়া যেমন সাইকেল চলতে পারছে না, ঠিক তেমনই কম্পিউটারকে নির্দেশ না দিলে সে কোনো কাজ করবে না। এখন হয়তো ভাবতে পারো সাইকেল তো আমার নির্দেশ ছাড়াই মাঝে মধ্যে পড়ে যায়। কম্পিউটারও দেখবে মাঝে মাঝে তোমার নির্দেশ ছাড়াই নষ্ট হয়ে যায়। একটু মজা করলাম।

এখন চলো একটু সিরিয়াস কথায় চলে যাই। সিরিয়াস বললাম বলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের সিরিয়াস হওয়াটা শেয়াল পণ্ডিতের কুমিরের বাচ্চা পড়ানোর মতো। সবাই দেখবে আমরা সিরিয়াস কিন্তু আমরা প্রোগ্রামিং নিয়ে নিছক মজা করবো।
আমরা আগেই জেনেছি প্রোগ্রামিং আসলে কী। এখন আমরা জানবো কীভাবে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে কম্পিউটার কাজ করে। কখনো ভেবে দেখেছো, তোমার বন্ধুর কথা তুমি কীভাবে বুঝতে পারো? শুনতে কি অবাক লাগছে? ভাবছো, এটা আবার কেমন প্রশ্ন? আচ্ছা আরেকটু বুঝিয়ে বলছি। তোমার বন্ধু যখন তোমার সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলে, তুমি অবশ্যই তা বোঝো। কারণ তোমার বাংলা ভাষার জ্ঞান আছে। কিন্তু যখন একজন চাইনিজ মানুষ তোমার সাথে কথা বলবে তখন অবস্থাটা কেমন হবে একটু ভেবে দেখোতো। তিনি কী বলছেন তুমি কিছুই বুঝবে না। হা করে শুধু শুনবে আর ভাববে আল্লাহ তা’লার সৃষ্টি বড়ো অদ্ভুত।
আমাদের যেমন বাংলা মাতৃভাষা, ঠিক তেমনই কম্পিউটারেরও মাতৃভাষা আছে। তার ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার জ্ঞান তার নেই। সে শুধুমাত্র তার ভাষার কথা বোঝে। তার ভাষার নাম কি জানো? তার ভাষার নাম হলো মেশিন ল্যাংগুয়েজ (machine language) বা মেশিন ভাষা।

হাসি পাচ্ছে তাই না? মেশিন ভাষার নাম হয়তো আগে শোনা হয়নি। একটা সিক্রেট কথা বলি। এটার নাম যেমন অদ্ভুত ভাষাটাও অদ্ভুত। বাংলা ভাষায় বর্ণমালা ৫০টি, ইংরেজি বর্ণমালা ২৬টি কিন্তু এ ভাষায় বর্ণমালা মাত্র ২টি। কী কী জানো? শুধুমাত্র ০ এবং ১। অবাক হলে? আসলেই, অঙ্ক দিয়েও ভাষা হয়? হ্যাঁ হয়। দুই বর্ণের ভাষা বলে শব্দগুলোও অনেক বড়ো বড়ো। মনে রাখাও কঠিন। শব্দগুলো দেখলে মনে হবে বঙ্গোপসাগরের মতো বিশাল। একটা উদাহরণ দেই। ধরো তুমি ইংরেজি ‘অ’ লিখতে চাচ্ছো। তার জন্য তোমাকে লিখতে হবে ০১০০০০০১। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটা ‘অ’ এর জন্য মেশিনে ০১০০০০০১ লিখতে হচ্ছে, তাহলে একটা পুরো বাক্য লিখতে গেলে তো আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। সেই জন্যই আমাদের বিজ্ঞানীরা একজন দোভাষীকে তৈরি করেছেন। যার নাম হলো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (programming language)।

মানুষ একজন অপর জনের কথা না বুঝলে যেমন দোভাষীর সাহায্য নেয়, যে দু’জনের মাঝখানে থেকে দু’জনের কথা তাদের নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে দেয়, ঠিক তেমনই কম্পিউটার ও মানুষের ভাষার দোভাষী হিসাবে কাজ করে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আমাদের কথাকে কম্পিউটারের ভাষায় রূপান্তর করে। যার ফলে কম্পিউটার আমাদের কথা বুঝতে পারে। আমরা যেমন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলি তেমনই বিভিন্ন ভাষার প্রোগ্রামিং আছে।

যেমন : c, c++, java, python ইত্যাদি। আমরা ধীরে ধীরে সেই ভাষাগুলোর সম্পর্কেও বিস্তারিত শিখবো ইনশাআল্লাহ।

SHARE

Leave a Reply