সেই ছোটোবেলা থেকেই ভূত-প্রেতের প্রতি তাপসের ভীষণ ভয়। মায়ের কাছ থেকে ভূত-প্রেতের অনেক গল্প শুনেছে সে। ওরা নাকি ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড ঘটায়। চোখের পলকে রঙ ও আকার বদলাতে পারে। ধাঁধা লাগিয়ে ছোটো ছোটো শিশুদের নিয়ে যায় ভুল পথে। গহিন অরণ্যে। কখনোবা নিয়ে যায় জনমানবহীন কোনো হাওর বা দীঘিতে। তাদের হাতে ধরা পড়লে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই মোটেও।
মায়ের মুখ থেকে এসব গল্প শুনে তাপসের মনোবলটাই ভেঙে পড়েছে। এখন সে স্কুলে একা যেতে ভয় পায়। রাতে কাউকে ছাড়া ঘুমুতে যেতে ভয় পায়। এমনকি আকাশে কালো মেঘের ওড়াউড়ি দেখলেই ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে যায় তাপস।
তাপসের ভূত আতঙ্ক নিয়ে প্রতিবেশীরা বড্ড হাসাহাসি করে। মিছামিছি ভয় দেখায়। রাস্তায় বের হলেই দুষ্টু পোলাপান চেঁচিয়ে উঠে-‘তাপস! সামনে গেলে ভূতে খাবে।’ ভয়কাতুরে তাপস তখন ফিরে আসে নিজের বাড়িতে।
সে বছর তাপসদের বাগানে অনেক আম ধরেছে। তাপসের মা প্রতিদিন দুপুরে ঝুড়ি ভর্তি করে আম ঘরে নিয়ে আসেন। তাপসরা খায়। প্রতিবেশী অন্তুদেরও খেতে দেয়। কিন্তু অল্পতে মন ভরে না অন্তু ও তার ভাই সল্টুর। তারা আরো খেতে চায়। কিন্তু পায় না। কতো আর আশা করা যায় অন্যের কাছে?
অন্তু ও মন্টু তাই ভিন্ন পথ ধরে। তারা জানে, তাপসের বাবা গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন। সন্ধ্যার পর তাপসরা ঘর থেকে বের হয় না ভূতের ভয়ে। শুধু বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাঁকডাক ছুড়ে। চোরদের ভয় দেখায়। অন্তু ও তার ভাই সিদ্ধান্ত নেয়, রাতে এসে বস্তা ভরে আম নিয়ে যাবে তারা। যেমন কথা, তেমন কাজ। দিন গড়িয়ে রাত এলো। অন্তু ও সল্টু চলে এলো বাগানে। পরনে তাদের কালো পোশাক। হাতে কালো লাঠি। মাথায় নকল চুল। দেখলে খুব সাহসীরাও ভয়ে চিৎকার দেওয়ার কথা। তারপর বাগান থেকে ওরা ইচ্ছেমতো আম পেড়ে বস্তায় ভরতে লাগল। ঘরের বারান্দায় বসে সবই দেখছিল তাপস। কিন্তু কোনো কথাই বের করেনি মুখ থেকে। সে ভাবে, এরা নিশ্চয়ই ভূত-প্রেত হবে। আওয়াজ করলে বিপদ হতে পারে। ফলে নিশ্চুপ রইল সে।
রাতের পর দিন এলো। প্রতিদিনের মতো তাপসের মা গেলেন বাগানে। কিন্তু কী হবে বাগানে গিয়ে? এক-দুটো আমও কি আর বাগানে আছে? মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন তিনি। মায়ের কাণ্ড দেখে দৌড়ে এলো অন্তু।
– মা! মা! কী হয়েছে, শুনি। ভূত কি মাথায় থাপ্পড় দিছে, মা?
– থাপ্পড় না, লাত্থি দিছে। সারাদিন শুধু ভূতের ভয়। পাগল হইছিস্ বুঝি? ভাল্লাগে না তোর ‘ভূত ভূত’ প্যাচাল! দেখতেইতো পাচ্ছিস বাগানের আমগুলো চুরি হয়ে গেছে। তারপরও তুই ফাজলামো করছিস বুঝি। যা, সর এখান থেকে।
তাপস লাজে ও ক্ষোভে ফিরে গেল ঘরে। ভূতের ওপর খুব গোস্বা হলো তার। আহা! পুরো বাগানটাই আজ তছনছ করে দিয়েছে ভূতের দল। কিন্তু কী আর করবে?
ভূততো ভূতই। ওদের যে কিছুই করতে পারবে না সে!