মায়ের একমাত্র আদরের ছোট্ট সন্তান রোমান। বয়স পাঁচ বছর।
রোমান পাখি ধরতে খুব পছন্দ করে। সে সারা দিন পাখি কীভাবে ধরবে সেই সকল ফাঁদ বা যন্ত্র বানাত।
কখনো বাটালি দিয়ে আবার কখনো সুতা দিয়ে মাটিতে ফাঁদ পাতত। পাখি ধরে সব বাচ্চাকে নিয়ে ছোটো পাতিলে ভাত ও পাখির মাংস রান্না করে খেত।
তার মা নাহিদা এসব পছন্দ করত না। সে তার ছেলেকে সব সময় বুঝাত যেন পাখি না ধরে, কিন্তু রোমান তার মায়ের এ সকল কথা শুনতো না।
মা যখন রোমানকে পাখি মারতে নিষেধ করে তখন সে চুপ করে থাকে আর মায়ের সব কথা মাথা নিচু করে শোনে। আর মায়ের আড়ালে ঠিকই পাখি ধরে এবং জংলায় খাঁচার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। মা ঠিকই বুঝতে পারছিল যে রোমান এখন পাখি ধরে বাড়িতে আনে না কিন্তু জংলায় কোথাও লুকিয়ে রাখে, কারণ সে বাড়ি থেকে কিছুক্ষণ পরপর জংলার দিকে গিয়ে আড্ডা দেয় তার সমবয়সীদের নিয়ে।
মা নাহিদা এটা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল, কারণ বারবার জংলার ভেতরে যাওয়া-আসা করছে তার ছেলে হঠাৎ কখনো যদি সাপে কামড় দেয়, তখন কী হবে? নাহিদা মনে মনে ভাবলো- যেভাবেই হোক পাখি ধরা থেকে তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
এই ভেবে সে একদিন খুব সকালে ঘুমের মধ্যে তার ছেলেকে রেখে পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকে।
ছেলের ঘুম ভাঙার পর যখন মাকে পাশে না পায় তখন সে খুঁজতে শুরু করে। বাড়ির চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে যখন কোথাও না পায় তখন তার মাকে ডাকতে শুরু করে। কয়েকটি ডাক দেওয়ার পর যখন তার মা কোনো সাড়া না দেয় তখন সে আরো জোরে জোরে ডাকতে শুরু করে।
জোরে ডাকার পরও যখন মায়ের কোনো সাড়া পেল না তখন সে কান্না শুরু করে দিলো।
কাঁদতে কাঁদতে তার মাকে ডাকছিল তারপরও যখন তার মা আসেনি তখন সে মাটিতে শুয়ে চিৎকার শুরু করল। মা নাহিদা শুধু এটি করছিল তার ছেলেকে সঠিক পথে আনার জন্য।
ছেলে যখন মাটিতে শুয়ে চিৎকার করছিল খুব জোরে জোরে মায়ের মন তখন আর মানছিল না।
মা তখন বুঝতে পারলো যে এবার হয়তো তার ছেলেকে বুঝালে তার ছেলে বুঝবে।
মা তখন দৌড়ে গিয়ে তার ছেলেকে মাটি থেকে কোলে তুলে নিলো।
– কোথায় গিয়েছিলে তুমি? তোমাকে না পেয়ে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল! কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল।
– আমাকে না পেয়ে তোমার এত কষ্ট হচ্ছিল, তুমি যখন পাখিগুলোকে ধরে আনো তখন ঐ পাখির বাচ্চাদেরও তো ঠিক তেমনি কষ্ট হয়, তাহলে তুমি পাখি ধরো কেন?
– পাখির বাচ্চাদেরও কি এমন কষ্ট হয় মা?
– হ্যাঁ, পাখির বাচ্চাদেরও ঠিক তেমন কষ্ট হয়।
– আমি আর কখনো পাখি ধরবো না মা, তুমি আমাকে কখনো একা ছেড়ে যাবে নাতো?
– না বাবা, তুমি আর কখনো পাখি ধরো না, আমি তোমাকে আর কখনো একা ফেলে যাবো না।
– আচ্ছা মা জংলায় একটা পাখি ধরে আটকে রেখেছি খাঁচার মধ্যে, ওটা ছেড়ে দিয়ে আসি?
– আচ্ছা বাবা যাও গিয়ে ছেড়ে দিয়ে এসো।