চুল রাখার ভুল
বহুদিন পর, নতুন জীবনের ছোঁয়া লেগেছে স্কুল-আঙিনায়। সবকিছু যেন অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখল। হতাশায় যেন মুষড়ে পড়েছিল ভবনের প্রতিটি দরোজা। মাঠের সবুজ ঘাসগুলোও কি অঝোরে কেঁদেছিল এতদিন? কোলাহলহীন পরিবেশে কী গান গেয়েছিল বাগানের পাখিরা? শিশুদের নরম মুখ দেখে যে ফুলগুলো হেসে উঠত, তারাও কি খুব একা হয়ে পড়েছিল? সব কথার জবাব হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাসনিমের মতো সবার মনেই কম-বেশি এমন প্রশ্নেরই আনাগোনা আজ। দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে বলে চেনা মুখগুলোও কেমন অচেনা অচেনা লাগছে। হায় করোনাকাল!
তাসনিম ও তার সহপাঠীরা গল্পে মেতে উঠেছে শ্রেণিকক্ষে। কতদিন পর দেখা! অন্যরকম আবেগে দুলছে সবাই। তাদের চমকে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই শ্রেণিশিক্ষক এসে হাজির! আজহার স্যার। স্যারেরও যেন দেরি সইছিল না! পরম মমতায় তিনি সবার খোঁজ-খবর নিলেন। জানালেন সবার প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা!
অনেক কথা বলার পর, স্যার বললেন- চলো, এখন থেকে আমরা আমাদের চুলগুলোকে সম্মান করি!
সবার কাছেই নতুন মনে হলো কথাটা। অনেকের চুলই এলোমেলো, বড়ো। লজ্জার ছাপ পড়ল তাদের চোখে-মুখে। তবে, স্যার কী বোঝাতে চেয়েছেন, কেউই তা বুঝে উঠতে পারছিল না। তাসনিম বলল, স্যার! চুলের সম্মান মানে কি তা ছোটো করে রাখা?
আজহার স্যার হেসে উঠলেন। বললেন, আরে নাহ্! আমাদের প্রিয়নবী (সা)-এর চুলই তো বড়ো বড়ো ছিল! তাঁর চুল কখনো কানের মাঝামাঝি, কখনো কানের লতি এবং কখনো কাঁধ বরাবর নেমে আসত! তাই চুল বড়ো রাখা অপরাধ নয়- অপরাধ হলো চুল কোথাও ছোটো, কোথাও বড়ো করে রাখা! যা বখাটেদের মতো দেখায়। কেউ কেউ বিভিন্ন খেলোয়াড় ও অভিনেতাদের অনুসরণে বিদঘুটেভাবে চুল রাখে। যা একেবারেই উচিত নয়। আর চুলকে পরিপাটি রাখাই হলো চুলের প্রতি সম্মান দেখানো। একদিন আবু কাতাদাহ আনসারি (রা) মহানবী (সা)-কে বললেন, আমার চুল কাঁধ পর্যন্ত প্রসারিত- আমি কি তা আঁচড়াব? মহানবী (সা) বললেন, হ্যাঁ! আঁচড়াও এবং চুলকে সম্মান করো। এরপর আবু কাতাদাহ কোনো কোনো সময় দিনে দু’বার চুলে তেল দিয়ে পরিপাটি করতেন। কারণ মহানবী (সা) বলেছেন- ‘হ্যাঁ! চুলকে সম্মান করো’! (মুয়াত্তা মালিক)। চুল ছোটো করেও রাখা যাবে, তবে তা হতে হবে মাথার সবখানে একসমান।
এমন চমৎকার কথায় সবার বুক থেকে যেন বিশাল পাথর নেমে গেল! তাসনিম বলল- স্যার আমরাও সঠিক নিয়মে চুল রাখব, ভুলভাবে নয়। অন্য ছাত্ররাও বলল, জি স্যার!
স্যারের বুকটা যেন আনন্দে ভরে উঠল!
বিলাল হোসাইন নূরী