সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। জীবনধারণকারী অন্যান্য সৃষ্টির সাথে যে সকল বৈশিষ্ট্য মানুষকে অনন্য করেছে তার মধ্যে কণ্ঠের ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য প্রাণীর কণ্ঠ বলতে গেলে প্রায় একই রকম। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এক একজনের কণ্ঠ এক এক রকম। কারো সাথে মিল নেই কারো। তাই কণ্ঠ নকল করার বিষয়টি খুবই চমকপ্রদ। আর সে বিষয় নিয়েই আমাদের এবারের আলোচনা।
কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে কণ্ঠ নকল করা যায়। এ জন্য মাত্র কয়েক মিনিট কণ্ঠের রেকর্ডিং করে দিলেই হয়। এভাবে সফটওয়্যার কণ্ঠের আওয়াজ ও বাচনভঙ্গি জেনে যায়। কথা বলার ঢং, উচ্চারণভঙ্গি, গতি, কথা বলার সময় কণ্ঠ কতটা ওঠে বা নামে, শব্দের মাঝে যেভাবে শ্বাস নেওয়া হয় এবং গলার স্বর কতটা হালকা বা গম্ভীর সবই এ সফটওয়্যার হুবহু নকল করে ফেলতে পারে। কণ্ঠস্বরের সব বৈশিষ্ট্য জেনে নেওয়ার পর কম্পিউটারের কিবোর্ডে কোনো শব্দ বা বাক্য লিখলে সেটা কম্পিউটার হুবহু সেই ব্যক্তির গলার আওয়াজে উপস্থাপন করতে পারে। তাছাড়া নকল কণ্ঠস্বরে দরকার হলে নানা ধরনের আবেগ- যেমন রাগ, ভয়, আনন্দ, প্রেম, বিরহ বা বিরক্তিও ফুটিয়ে তুলতে পারবে এই সফটওয়্যার।
প্রথমে চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য এ প্রযুক্তি তৈরি করা হয়। যেসব রোগী অসুস্থতার কারণে কথা বলার ক্ষমতা হারায় তাদের কণ্ঠস্বর যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে তৈরি করার জন্য এ প্রযুক্তির ব্যবহৃত হয়। এ প্রযুক্তি কাজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সফটওয়্যার ব্যবহার করে। প্রয়োজন বুঝতে পারার ক্ষমতা আছে এআই-এর। তবে এখন শুধু কণ্ঠস্বর হারানো রোগী নয়, ভয়েসওভার শিল্পীরাও ব্যবহার করছেন এ প্রযুক্তি। তাতে তাদের সময় বাঁচে এবং পরিশ্রম কমে। তাছাড়া নানা ধরনের কণ্ঠ তৈরি করা যায় এর মাধ্যমে। এমনকি ট্রান্সজেন্ডারদের কণ্ঠও তৈরি করা হচ্ছে যেখানে কণ্ঠটা পুরুষের নাকি নারীর তা বোঝা যায় না। ভয়েস ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা কারোর বক্তব্যকে বিভিন্ন ভাষাতেও অনুবাদ করা যায়।
তবে এ প্রযুক্তিতে মারাত্মক ঝুঁকিও রয়েছে। সাইবার অপরাধের জন্য খুবই উর্বর ক্ষেত্র এটা। কারণ, যে কথা বলছে সে আসল মানুষ নাকি নকল মানুষ তা বোঝা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এবং ফাঁদে ফেলা খুবই সহজ হবে অপরাধীদের জন্য। যাই হোক- ভালো মন্দ দুটি দিকই আছে এ প্রযুক্তির। তাই বলাই যায়- ভয়েস ক্লোনিং আগামীর বিশে^ নবতর গতি সঞ্চার করবে।