আলহামদুলিল্লাহ! বছর ঘুরে আবারও এসে গেল পবিত্র রমাদান মাস। এ মাস আসার পূর্বে দুনিয়া ও আখিরাতে সাজ সাজ রব শুরু হয়ে যায়। চলুন ভাই ও বোনেরা আমরাও আমাদের সাজাই। আমরা অনেক কাজ করি, তার কোনটা বলতে হয় না; আর কোনটা অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে করি তাই না? দুটো কাজের মানসিক অর্জন কি সমান? অবশ্যই না। কারণ, একটিতে ছিল প্লেজার বা আনন্দ, আরেকটিতে ছিল প্রেসার বা বাধ্যবাধকতা। সুতরাং যে কাজ প্লেজারের জন্য হয় তার জন্য তোমরা কি কর?
মনে করুন আপনারা পছন্দের কোন জায়গায় পিকনিকে যাবেন। হাতে সময় আছে দশ দিন। কী কী করবেন? এককথায় বলা যায় পিকনিককে কেন্দ্র করে অনেক পরিকল্পনা আঁটবেন। কারণ সেখানে গেলে আপনার নানাবিধ লাভ হবে। তাহলে এই যে পিকনিককে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ব্যাপী চিন্তা করলেন, পরিকল্পনা সাজালেন এতেই আপনার অর্ধেক পিকনিক হয়ে গেল। তাহলে এখানে মূল মেসেজটা হলো “যে কোন কাজ ভালোভাবে করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ।”
এবার আরেকটা কথায় আসি। পৃথিবীতে সফলতার জন্য মানুষ সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। একজন ব্যবসায়ী কোনো ব্যবসায় কখন সফলতা লাভ করা যাবে সে চিন্তায় থাকে। আপনারা ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে কোন প্রশ্ন কীভাবে লিখলে ভালো নম্বর আসবে সেই চিন্তা করেন। তাহলে সকলে তাদের উপযোগী লাভের জন্য সুযোগ তালাশ করে। আচ্ছা এটা কি মন্দ কোন বিষয়? অবশ্যই না। কারণ যে যে পেশায় আছেন তিনি যদি কোন মওসুমকে বা সময়কে কেন্দ্র করে লাভবান হতে পারেন তাহলে এটা দোষের কিছু নয়। এ কথা থেকে যা বোঝা যাচ্ছে তা হলো “কোন বিশেষ সময়কে বা মওসুমকে টার্গট করে বেশি প্রফিট বা লাভ করা যায়।”
অতএব, এখন আমাদের হাতের নাগালে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসকে সামনে রেখে ‘পরিকল্পনা গ্রহণ’ করতে হবে এবং সর্বাধিক সওয়াব অর্জনের জন্য ‘সুযোগ বা মওসুম’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সুতরাং প্রিয় ভাই-বোনেরা কী করা যায়? এক..দুই..তিন মিনিট অপেক্ষা করুন! নিচের লেখা পড়ার আগেই আপনি নিজে খাতা কলম নিয়ে কী পরিকল্পনা করা যায়? এ মওসুমকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় লিখে ফেলুন। ওকে ডান?
এবার নিচের কথাগুলো পড়ুন। যেটা আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে সেটা করুন এবং যেটা নতুন মনে হচ্ছে সেটা করার জন্য চেষ্টা করুন।
মহান আল্লাহ তা’আলা রমজান মাসকে তাকওয়া (তাকওয়া অর্থ: আল্লাহর ভয় বা খোদাভীতি অর্জন বা দীনদার হওয়া) অর্জনের মাস হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন : ‘হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেওয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল।এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি সৃষ্টি হয়ে যাবে।’ (সূরা আল বাকারা : ১৮৩)। মহান আল্লাহ যেহেতু বলেছেন, আশা করা যায় মুত্তাকি হওয়া যাবে; তাহলে রমাদান মাসে কী কী করা যায়, যার মাধ্যমে মুত্তাকি হওয়া যাবে সংক্ষেপে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
হতে পারে এ রমাদান অনেকের জীবনের শেষ রমাদান, তার মধ্যে আমিও হতে পারি এ ধরনের একটি ভাবনা থেকে এ মাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা।
হাদিস শরিফে এসেছে ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় সাওম পালন করবে তার সকল পাপ ক্ষমা করা হবে।’ সুতরাং এ রকম একটি বড় প্রত্যাশা নিয়েই রোজা শুরু করা।
হাদিসে কুদসিতে এসেছে ‘মহান আল্লাহ তেমন যেমন বান্দা তাঁর সম্পর্কে ধারণা করে।’ অতএব আমরা মহান আল্লাহর কাছে সব কিছুই পাওয়ার আশা করে সাওম শুরু করা।
রমাদানের সূচনাসময় থেকেই সকল প্রকার ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত এবং নফল ইবাদত যথাযথভাবে পালন করা। কারণ এটা বোনাসের মাস। এখানে সব থেকে ছোট আমলের প্রতিদান ফরজ ইবাদতের প্রতিদান সমতুল্য।
রমাদান মাসে প্রতিদিন কমপক্ষে এক টাকা করে দান করা, কমপক্ষে একটা খেজুর সমতুল্য খাবার দান করা।
সবার সাথে সর্বোচ্চ ভালো আচরণ করা। সিনিয়রদের সেবা করা, জুনিয়রদের ভালোবাসা, বাসায় ইফতার প্রস্তুতির কাজে সাহায্য করা।
প্রতিদিন আল-কুরআন অধ্যয়ন করা। সম্ভব হলে অর্থসহ শেষ করা। অথবা সর্বোচ্চ যতটা পারা যায় তা করা। হাদিস পাঠ করা। কুরআন ও হাদিস মুখস্থ করার চেষ্টা করা।
যারা কুরআন পড়তে পারে না বা শুদ্ধ হয় না, তারা অবশ্যই এ রমাদানে সেটা সমাধান করা।
যত আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক গ্যাপ রয়েছে, তা পুনঃস্থাপন করা।
প্রতিবেশী অসহায়, গরিব ও বঞ্চিত মানুষের জন্য সাহায্যের হাত অবারিতভাবে প্রশস্ত করা। অসহায় মানুষদের ইফতার করানো।
তারাবির সালাত আদায় করা, সাহরির একটু আগে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা।
অবশ্যই ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জার, হোয়াটস আপ, ইমো, টুইটার ব্যবহার খুব খুব কম করা।
শেষ দশদিন ইতিকাফ করার পরিকল্পনা করা। লাইলাতুল কাদর পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা।
সবসময় বেশি বেশি ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ পড়া। সর্বদা দু‘আ ও জিকির করা।
হিংসা, গিবত, পরশ্রিকাতরতা পরিহার করে সবার জন্য কল্যাণ কামনা করা।
সকল রকমের মন্দ অভ্যাস যেমন: ধূমপান, রাত জেগে কথা বলা, সালাত ফাঁকি দেওয়া পরিত্যাগ করা।
রমাদান মাসে মুসলিম মুজাহিদরা কীভাবে যুদ্ধ করেছেন, কতগুলো যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছে, যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষকে কীভাবে সাহায্য করেছেন সেসব ইতিহাস জানার চেষ্টা করা।
পরিবারের সিনিয়রদের কোন গ্যাপ হলে বিনয়ের সাথে তা সংশোধন করাতে চেষ্টা করা।
বাসা-বাড়িতে যেসব মানুষ কাজ করে তাদের জন্য সাহরি, ইফতার, কাজের লোড কম প্রদান, যাকাত-ফিতরা প্রদান, ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাক গিফট করাসহ রমাদান উপলক্ষে এমন অনেক কাজ থাকে, সেসব বিষয় পিতা-মাতাকে সফট রিমাইন্ড করা।
সর্বোপরি এ রমাদানকে সামনে রেখে জীবনের সর্বোত্তম অভ্যাসগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করা।
মহান আল্লাহ রমাদান মাসে সাওম পালন করার এবং সকল ভালো কাজ সঠিকভাবে করার, রমাদান মাসের অর্জিত শিক্ষা বছরব্যাপী পালন করার এবং মহান আল্লাহর পছন্দের বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন।