গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে আমরা মোটামুটি জানি। অথচ তার চেয়েও শক্তিশালী মিথেন নিয়ে সম্ভবত তেমন কোনো ধারণাই আমাদের নেই।
মিথেন অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণু কার্বন এবং এর চার বাহুতে চারটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সমন্বয়ে এর বিশেষ ত্রিমাত্রিক আকৃতি বা কনফিগারেশন মিথেনকে ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে।
২০ বছর সময়ে মিথেন গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে ৯০ গুণ বেশি শক্তিশালী গ্রিন হাউজ গ্যাস হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। শিল্প বিপ্লবের সূচনালগ্ন থেকে বর্তমানে বাতাসে প্রায় ১৫০ গুণ বেশি মিথেন উপস্থিত। কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় মিথেন অতিরিক্ত মাত্রায় তাপ ধরে রাখতে সক্ষম হওয়ায় বাতাসে এর পরিমাণ যত বাড়বে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তত বৃদ্ধি পাবে।
২০১০ থেকে আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০০ কয়লাভিত্তিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান হলো মিথেন, যা জ্বালানি হিসেবে কয়লার চেয়ে অনেক দক্ষভাবে পোড়ে। কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে মিথেনের বাতাসে উপস্থিত থাকার ব্যাপ্তি অনেক কম।
মিথেন যেখানে বাতাসে মাত্র নয় বছর থাকে, সেখানে কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রায় শতাব্দীজুড়েও থাকতে পারে। এসব কারণেই মূলত বিশ্বজুড়ে কয়লা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের দিকে স্থানান্তরের হিড়িক।
তাহলে মিথেন কেন এত দূষণীয়! তেল ও গ্যাস শিল্পে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহারের সময় যেটুকু মিথেন অব্যবহৃত থাকে বা সিস্টেম লস হিসেবে বিবেচিত হয়, সেটুকুই এত বিশাল ক্ষতির জন্য দায়ী।
লিকেজ রেট- পরিচিত শব্দযুগল। অর্থাৎ উৎপাদন ও ব্যবহারকালে ঠিক কী পরিমাণ মিথেন পরিবেশে বিমুক্ত হয়ে যায়। পুরো বিষয়টিকে সুসংহত রাখতে লিকেজ রেট ১ শতাংশ এর নিচে থাকা আবশ্যক। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিঃসরণের হার ২ শতাংশ এরও অধিক হতে পারে, যা কি না সন্দেহাতীতভাবে আশঙ্কাজনক।
পূর্বের ধারণা অনুযায়ী, প্রতি বছর বৈশ্বিক মোট নিঃসরিত মিথেনের ১০ শতাংশের উৎস হিসেবে কাজ করত আগ্নেয়গিরির লাভা, উষ্ণ কর্দমাক্ত মাটি।
তবে সম্প্রতি বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে ভিন্ন কথা। মূলত মিথেনকে ঘিরে বিজ্ঞানীদের ধারণাটা ছিল বেশ ভ্রান্ত। মিথেনের ক্ষতিকর প্রভাব বা উৎসবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বরাবরই ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলি সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু ন্যাচারের গবেষণানুযায়ী, মিথেন নিঃসরণের প্রধানতম উৎস হলো জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন ও নিষ্কাশনের সাথে জড়িত পুরো শিল্প।
এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ভুল উৎসের প্রতি মনোযোগ থাকায় মিথেনের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহকে প্রায় ৪০ শতাংশ কম গুরুত্ব সহকারে বিচার করা হয়ে এসেছে এতদিন।
বেঞ্জামিনের মতে, এই গবেষণার ভালো ও খারাপ দুটো দিকই আছে। খারাপ এই অর্থে যে, প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি মিথেন নিঃসরিত হচ্ছে, অথচ এই মিথেন নিঃসরণের মূল উৎস সম্পর্কে আমরা দীর্ঘকাল যাবৎ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে আসছিলাম। আবার ঠিক এই কারণটি আবিষ্কৃত হওয়ার একটি অত্যন্ত ইতিবাচক দিকও রয়েছে।
খুব সহজ একটি বিষয় হচ্ছে আগ্নেয়গিরির লাভা কিংবা উষ্ণ কাদামাটি। কোনোটিই আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। অর্থাৎ ভূতাত্ত্বিক উৎসসমূহকে নিজেদের আওতাধীন করা প্রায় অসম্ভব। তবে মানবসৃষ্ট উৎসসমূহের কঠোর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মিথেনের তাপ ধরে রাখার অসাধারণ নৈপুণ্যের দরুন এটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ২৫ শতাংশের জন্যই দায়ী পরিবেশে নিঃসরিত মিথেন গ্যাস।
আমাদের কার্যকলাপের ফলে উৎপন্ন মিথেনের ওপর যত বেশি দৃষ্টিপাত করা হবে, নীতিনির্ধাকরা তত বেশি বাধ্য হবেন এর ওপর আইন জোরদার করতে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস বৃদ্ধির হার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নেওয়া সব চেষ্টাই ক্ষুণœ হবে।