Home জাতীয় কিশোরকণ্ঠ পাঠ প্রতিযোগিতা কিশোরকণ্ঠ জাতীয় গল্প লেখা প্রতিযোগিতা ২০২০-এর ক-গ্রুপে তৃতীয় স্থান অধিকারী গল্প

কিশোরকণ্ঠ জাতীয় গল্প লেখা প্রতিযোগিতা ২০২০-এর ক-গ্রুপে তৃতীয় স্থান অধিকারী গল্প

বন্ধু
আকিব হোসাইন

বাড়ির ঠিক সামনে গাড়ি থামল, কিন্তু কেউ গাড়ি থেকে নামছে না, সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বাড়ির ঠিক পাশে। বিশাল খালি মাঠটি এখন পুরোটাই বস্তি। সারি সারি টিনের বাড়ি আর সামনে লুঙ্গি শাড়ি, গামছা নেড়ে দেওয়া। রাফি লক্ষ করছে তার বাবার মাথা ক্রমেই গরম হয়ে যাচ্ছে। এমন কিছু তিনি মোটেই আশা করেননি। নিরিবিলি জায়গায় বাড়ি বানিয়েছিলেন একটু শান্ত পরিবেশের জন্য। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই পাশের খালি জমিটা বস্তি হয়ে যাবে তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।
রাফির মা বাবা বলাবলি করছেন কিভাবে পাশের জমির মালিক কিছু টাকার জন্য নিজের জমিতে বস্তি বানানোর অনুমতি দিলো। কিন্তু এসব কিছু নিয়েই রাফি মাথা ঘামাচ্ছে না। ওর মেজাজটা খুবই খারাপ। তিন মাস আগে রাফির ছোট বোন হয়েছে। তারপর থেকেই বাবা মার আদর যতেœর সম্পূর্ণ ভাগীদার হয়ে গিয়েছে রাফির ছোট বোন মিলি। মা এখন সারাদিন মিলিকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আগে যেখানে বাবা মার পুরো ভালবাসাটাই রাফির জন্য বরাদ্দ ছিল। সেখানে এখন নতুন অংশীদার এসেছে। এমন অভিজ্ঞতা ১১ বছরের রাফির কাছে একদম নতুন। তার ওপর চিরচেনা এলাকা থেকে জোর করে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।
মা, আমরা এখানে কেন এসেছি?
এটাই তো আমাদের নিজের বাসা বাবা। এতদিন এটার কাজ চলছিল তাই আমরা ভাড়া বাসায় ছিলাম। এখন তাই আমরা এখানে চলে এসেছি।
– ভাড়া বাসাই ভালো ছিল বলে রাফি গাড়ি থেকে নেমে গেল। চমৎকার দোতলা বাড়ি, খেলার জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে সামনে। রাফির মনে মনে আনন্দ লাগছে। কিন্তু এখনি সেটা সবাইকে দেখানো যাবে না। নইলে সবাই ভাববে রাফি বড় বাসা দেখে দুঃখ ভুলে গেছে।
রাফির মা মিলিকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলেন। রাফি তার বাবার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। বাসায় মালামাল ওঠানো তদারকি করছে। বস্তি থেকে ঝগড়া করার শব্দ আসছে। কী বিকট আওয়াজ। রাফির বাবা বাড়ির সামনের চা দোকানে গেলেন খবর নিতে। রাফিও বাবার পিছু নিলো। কী খবর চুন্নু মিয়া? ভালো আছেন?
জি ভাই ভালোই আছি। আপনারা একবারে চলে এসেছেন বুঝি?
হ্যাঁ চলে এলাম। বাড়ির কাজও শেষ আর আমার ছোট মেয়ে হওয়ার পর একটু বড় বাসার দরকার ছিল তাই চলে এলাম। এই বস্তিটা কবে হলো?
আর বইলেন না, মেলা ঝামেলা! এই বস্তিটা আগে আরও দূরের এলাকায় ছিল। পরে এদের বাড়ি ভাইঙা দিসে। এদের ওখান থেকে তাড়ায় দিসে। এখন আইসে এখানে বস্তি বানাইসে। মাসে মাসে জমির মালিক টাকা উঠাইতে আসে।
বস্তির সামনে অনেকগুলো ছেলে মার্বেল দিয়ে খেলা করছে। কী খেলছে রাফি বুঝতে পারছে না। ছেলেগুলো খালি গায়ে এতো কড়া রোদে খেলছে। পায়ে জুতাও নেই। রাফির খুব অবাক লাগছে। রাফি এক নজরে ওদের খেলা দেখছে। আচমকা একটা মার্বেল জোরে এসে লাগলো রাফির পায়ে। অমনি চুন্নু মিয়া ছেলেগুলোকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে শুরু করলো। রাফির বাবা ওকে জলদি বাসায় নিয়ে গেল।
দুপুর হয়ে গেছে। রাফির বাবা মা ঘর পরিষ্কার করছেন। আজকে রাফির বাবা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসেছেন। খাওয়া শেষে রাফি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তিতে তখনও ঝগড়া চলছে। আর বাইরে ছেলেগুলো খেলছে। এখন তারা নতুন খেলা খেলছে, ক্রিকেট। একটা লম্বা কাঠের তক্তাকে ব্যাট বানিয়ে আর খড় গোল করে দড়ি দিয়ে বেঁধে কী চমৎকার করে ক্রিকেট খেলছে তারা। রাফির খুব পছন্দের খেলা ক্রিকেট। দৌড়ে গিয়ে সে মাকে বলল- মা, আমি নিচে গিয়ে ক্রিকেট খেলি?
কার সাথে খেলবে বাবা?
ওই যে নিচে যারা খেলছে!
খবরদার না! বস্তির ছেলেদের সাথে কোন খেলাধুলো করবে না!
– বস্তির ছেলে শব্দটা রাফির কাছে অন্যরকম শুনালো,
– বস্তির ছেলে কী মা?
খারাপ ছেলেদের বস্তির ছেলে বলে, এখন যাও পড়তে বস সোনামণি।
দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল হয়েছে, অবাক কাণ্ড! বস্তির ছেলেগুলো এখনও বাইরে হাঁটাহাঁটি করছে। রাফির বাবা মা দু’জনেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই সুযোগে রাফি নিচে নেমে গেল।
রাফি একটি ছেলেকে ডাক দিলো, এই এদিকে শুনে যাও!
জি কন, আপনারা এহানে নতুন আইছেন?
হ্যাঁ। তোমার নাম কী?
সালু, আমার নাম সালু।
সালু? এটা আবার কেমন নাম! তোমার কোন ভালো নাম নেই?
সালু বিরক্ত হচ্ছে, সে নিজের এতো পরিচয় কাউকে দিতে অভ্যস্ত নয়।
বিরক্ত হয়েই সালু বললো, আমার নাম সালাউদ্দিন, আপনি কি আমাগো লগে খেলবেন?
খেললে মা অনেক বকা দিবে, মা বলেছে বস্তির ছেলেদের সাথে খেলবে না।
সালু খুব সাধারণ ভঙ্গিতে খেলায় ফিরে গেল, যেন তার কাছে বস্তির ছেলে কথাটা খুব স্বাভাবিক।
মিলির কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নিশ্চয়ই মা জেগে গেছে। রিফাত দৌড়ে বাসার ভেতর ঢুকে গেল।

দুই.
সালু খাতি আয়।
সালু ঘরে ঢুকে গেল। সামনে ভাত, করলা ভাজি আর মুরগির মাংস। সালুর দৃষ্টি মুরগির মাংসের দিকে। অনেক দিন পর আজ সালুর মা মুরগি রান্না করেছে। সালুর খুবই পছন্দ। মা মুরগির মাংসের বাটিটা সরিয়ে নিলো।
মুরগি কই নাও?
আগে করলা দিয়া ভাত শেষ করবি, তারপর মুরগি পাবি।
সালু আর সালুর মার কথার মাঝেই সালুর বাবা ঘরে ঢুকলো। তার পুরো শরীর ঘামে ভেজা। সালু বাবার হাতে নতুন প্লাস্টিকের ব্যাট দেখে খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ব্যাট হাতে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল সবাইকে দেখাতে, ভাতটুকুও খেল না। সালুর মা কিছু বলল না। ছেলের খুশি দেখে নিজেও হেসে দিলেন অজান্তেই।
সালুর বাবা বলল, সালুর মা ভাত বাড়ো খুব খুধা পাইছে।

রাফির পরিবারের সবার মেজাজ খারাপ? আজ সবার ঘুম ভেঙেছে বস্তির ঝগড়া শুনে।
এদের কি প্রতিদিন চিল্লাতে হয়? রাফির বাবা বিরক্তি নিয়ে বললেন-
রাফির মা কথার উত্তর দিচ্ছেন না। তিনি মিলিকে খাওয়াচ্ছেন।
রাফি সালু আর ওর বন্ধুদের ক্রিকেট খেলা দেখছে। সালুর হাতে নতুন ব্যাট। একের পর এক চার, ছয় মারছে সালু।
রাফি বিব্রত, মা যদি জেনে যায় গতকাল সে না বলে বের হয়েছে, তাহলে তাকে অনেক বকা দিবে।
দুপুর বেলা রাফি ঘুমায় না। বের হয়ে খেলা দেখে। খেলতে ইচ্ছে করলেও মায়ের ভয়ে খেলে না। রাফি হাততালি দেওয়া শুরু করলো। খুব ভালো সালু-
রাফি এগিয়ে গিয়ে সালুকে জিজ্ঞেস করলো, নতুন ব্যাট?
হ্যাঁ। বাবা আইনা দিছে।
তোমার বাবা কী করে?
রিকশা চালায়, ‘তোমার বাবাও কি রিকশা চালায়?’
না। আমার বাবা অফিসে যায়। তোমরা বস্তির ছেলেরা কি সত্যি সত্যি খারাপ?
জানি না।
আমার তো মনে হয় তোমরা খুব ভালো।
মা তাহলে কেন বলল এমন কথা? আচ্ছা আমাকে খেলায় নিবে?
নিব আসো।
সালু রাফিকে ব্যাট ধরিয়ে দিলো, রাফির ব্যাটিং দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সালু। কী ভালো খেলতে পারে রাফি! তুমি খুব ভালো খেল রাফি।
না সালু, তুমি আমার থেকেও ভালো খেল, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
কোনো ক্লাসে পড়ি না, আমি স্কুলে যাই না।
রাফি! রাফি!
রাফি ভয়ে আঁতকে উঠলো। মা দেখে ফেলেছে, রাফি! কাদের সাথে খেলছ তুমি?
মা ওর নাম সালু, আর ওরা সালুর বন্ধু।
তোমাকে না বলেছি বস্তির ছেলেদের সাথে মিশবে না, ওপরে চলে আসো!
রাফি ভয় পেয়ে ব্যাট ফেলে ওপরে উঠে গেল। মা এবার তাকে অনেক বকা দেবে।

তিন.
সালু ঘরে ঢুকেছে, মা বাবা পাশাপাশি বসা, বাবার মেজাজ খারাপ। সালু মায়ের পাশে এসে মাকে জিজ্ঞেস করলো- মা, বাবার রাগ কেন?
তোর বাবার আজকে কামাই কম হইছে সালু।
মা জানো, আজকে আমার লগে পাশের বাড়িটার সুন্দর ছেলেটা খেলা করেছে।
সালুর মা বাবা দু’জনেরই চোখ কপালে!
সালুর বাবা চিৎকার দিয়ে উঠলো, কি কইলি? তুই পাশের বাড়ির পোলার লগে খেলছস? তুই জানস না যে ওরা পয়সাওলা মানুষ। ওই ছেলের গায়ে হাত দেস নাই তো? এসব টাকাওয়ালা লোকজনের একদিনও লাগব না আমগো এখান থেকে উঠায় দিতে। খবরদার! আর ওই ছেলের সাথে খেলবি না!
সালু বাবার কথা শুনে চুপচাপ শুয়ে পড়লো, পাশের বাড়ির ছেলেকে বাবা কেন খারাপ বললো সেটা ভাবার সময় নেই। কালকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে খেলতে যেতে হবে।
সালু তার বন্ধুদের সাথে খেলছে।
দুপুরে মা বাবা ঘুমিয়ে পড়ায় রাফিও বের হয়েছে খেলতে। সালু, আমিও খেলবো। সালু রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। তার বাবার কথাগুলো মনে পড়ছে। আমি তোমার লগে খেলতে পারবো না। আমারে বাবা বলছে পয়সাওয়ালা লোকেরা খারাপ হয়। রাফি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সালুর কথাগুলো তার মাথায় ঢুকছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রাফি বাসায় চলে এলো। মা ঘুমিয়ে আছে দেখেও সে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জাগিয়ে তুলল।
মা, মা।
কী হয়েছে রাফি?
আচ্ছা মা, পয়সাওয়ালা মানুষ কারা?
কেন বাবা?
পয়সাওয়ালারা কি খারাপ হয়?
রাফির মা বুঝতে পারছেন রাফি পাশের বস্তির ছেলের কাছ থেকে কথাটি শুনেছে। তিনি রাফিকে পরে বুঝিয়ে দিবে বলে শুয়ে পড়লেন। তার মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকাটা থাকার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। কথাটা রাফির বাবাকে জানাতে হবে।
রাফি এখন আর নিচে নামে না। বারান্দায় দাঁড়িয়েই খেলা দেখে। সালু আপন মনে খেলে যায়। যেন সে ভুলেই গেছে রাফি নামে কারো সাথে ওর দেখা হয়েছিল। রাফির মন-মেজাজ ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। তার মা বাবা মিলিকে নিয়েই একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। গ্রীষ্মের ছুটি থাকায় রাফি স্কুলের বন্ধুদের সাথেও দেখা করতে পারছে না। সবকিছু খুব মলিন লাগছে রাফির কাছে। সালুকে ডাক দিবে রাফি? মা জানলে রাগ করবে। সালুও তো এখন আর খেলতে চায় না রাফির সাথে।
সালু, সালু। সালু ওপরে তাকায়। বারান্দায় রাফি দাঁড়িয়ে আছে।
কী হইছে, কও। তোমরা এটা কী দিয়ে বল বানিয়েছো?
খড় দিয়া বানাইছি কেন?
আমার কাছে একটা টেনিস বল আছে, খুব ভালো বল, ওইটা দিয়ে খেলো।
রাফি ঘরের ভেতর থেকে লুকিয়ে নিজের বল নিয়ে সালুকে ছুড়ে দিলো। সালু বল হাতে ধরে অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছে। এমন সুন্দর বল দিয়ে সে কখনো খেলেনি। চকচকে দারুণ বল, সালুর চোখে মুখে আনন্দ। সে রাফির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, খেলবা আমাগো লগে?
রাফি আনন্দে লাফিয়ে উঠলো, দরজা খুলে নামতেই মা হাজির!
কোথায় যাওয়া হচ্ছে? ওই বস্তির ছেলেদের সাথে আবার খেলা হচ্ছে তাই না?
মাথা নিচু করে রাফি বললো, হ্যাঁ মা।
কোন খেলা লাগবে না ওদের সাথে। স্কুল খুললে বন্ধুদের সাথে খেলবে। এখন তাড়াতাড়ি চলো আমার সাথে বাজারে যাবো। তোমার বাবার কাছে মিলিকে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না। তোমার বাবা ওকে সামলাতে পারবে না।
রাফির মা হাত ধরে রাফিকে নিয়ে গেল। বাড়ির কিছুটা সামনে প্রচণ্ড ব্যস্ত সড়ক। রাস্তার ওই পারে বাজার। রাফির মায়ের ফোন বাজছে। ফোন ধরতে গিয়ে রাফির হাত ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। কথা বলতে বলতে একাই পার হয়ে গেলেন রাস্তা। মাঝ রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে আছে রাফি। গাড়ির জন্য এগোতেও পারছে না। হঠাৎ একটি গাড়ি চলে এলো রাফির সামনে। রাস্তা পার হতেই রাফির মা বিকট আওয়াজ শুনতে পেলেন। ফিরে তাকাতেই হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল তার। একটি গাড়ির সামনে পড়ে আছে সালু। পাশে পড়ে আছে রাফি, ভয় ভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সালুর দিকে। সালু রাফিকে ধাক্কা দিয়ে সামনে ফেলে দিয়েছে আর গাড়ির ধাক্কা খেয়ে পড়ে আছে ছোট্ট সালু।
চিৎকার করে রাফির মা এগিয়ে যান, রাফিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। রাফির হাত পা ছিলে গেছে। সামনে পড়ে আছে সালুর দেহ।
রাফির মা জলদি সালুকে নিয়ে গেলেন পাশের হাসপাতালে।
আমাকে সালু বাঁচিয়ে দিয়েছে মা, নইলে আমি মরেই যেতাম।
রাফির মা চুপ হয়ে ছেলের কথা শুনছেন। যেই ছেলেকে বস্তির ছেলে বলে ঘৃণা করেছেন, সেই কি না তার ছেলের প্রাণ বাঁচালো! রাফির মার চোখ ছলছল করছে।
একজন ডাক্তার রাফিদের সামনে এলেন। বাচ্চাটির সাথে কে এসেছেন? আমরা এসেছি।
বাচ্চা আপনাদের কে হয়?
রাফির মা আমতা আমতা করছেন, হঠাৎ রাফি বলে উঠলো- ও আমার বন্ধু।
ততক্ষণে সালুর মা চলে এসেছেন খবর পেয়ে। এসেই আর্ত চিৎকার করে কান্না করা শুরু করে দিলেন। ডাক্তার এবার সালুর মায়ের কাছে গেলেন। আপনি কি বাচ্চার মা?
হ, আমি ওর মা, আমার পোলার কী হইসে, আমার পোলা বাঁচবো তো ডাক্তার সাহেব?
আপনার ছেলে বেঁচে আছে কিন্তু অবস্থা তেমন ভালো না, ওকে বাঁচাতে অনেক রক্ত লাগবে।
আমার পোলারে আমি রক্ত দিমু।
আপনাকে দেখে তো অনেক দুর্বল লাগছে, আপনি রক্ত দিতে পারবেন না, ছেলের বাবাকে নিয়ে আসুন। আমি ওর বাপরে এখন কই পামু?
আপনার ছেলের বি পজেটিভ রক্ত লাগবে, জোগাড় করুন জলদি।
রাফির মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছেন, ওনার রক্তের গ্রুপও বি+ হলেও তিনি বলছেন না, কারণ সালুকে রক্ত দিতে তিনি বিব্রত অনুভব করছেন। এরই মাঝে রাফি ডাক্তারের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো-
– আচ্ছা আঙ্কেল, আমি কি রক্ত দিতে পারব না!
ছেলের এমন কথা শুনে বোধোদয় হলো রাফির মায়ের। তিনি দেরি না করে ডাক্তারকে বললেন সালুকে রক্ত তিনিই দিতে চান। এমন কথায় হতবাক রাফি এবং সালুর মা। রাফির মাকে নিয়ে যাওয়া হলো রক্ত দেওয়ার জন্য এবং সালুকে সেই রক্ত দেওয়া হলো। সালুর জীবন এখন বিপদমুক্ত।
রাফিদের বাসার বারান্দায় বসে আছেন রাফির মা-বাবা এবং মিলি তার মায়ের কোলে। তারা মনোযোগ দিয়ে সালু এবং রাফির ক্রিকেট খেলা দেখছেন। রাফি খুব জোরে একটা ছয় মারলো।

SHARE

Leave a Reply