Home বিজ্ঞান ও বিশ্ব বরফগুহা আল জাবির

বরফগুহা আল জাবির

পৃথিবীতে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। এ রহস্যের ভেতরেই আবার আছে সৌন্দর্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার। এমনই এক সৌন্দর্যময় স্থান বৈকাল হ্রদের বরফের গুহা। পৃথিবীতে বরফের গুহা নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। কানাডা, সুইজারল্যান্ড, চীনসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশে অসংখ্য বরফের গুহা রয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার সাইবেরিয়ার বৈকাল হ্রদে অবস্থিত এ গুহাটি সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে অন্য সবগুলোর চেয়ে আলাদা।

বৈকাল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে পুরনো স্বচ্ছ পানির হ্রদ। শীতকালে এই হ্রদ জমে যায়। কিন্তু এই হ্রদের পানি এতটাই পরিষ্কার যে বরফের ১৩০ ফুট নিচে পর্যন্ত পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়। মার্চ মাসে বরফে তুষার এবং রোদের কারণে ফাটল ধরে। এর ফলে বরফ থেকে ফিরোজা রঙের আলো ঠিকরে বের হয় যেটা বাইরে থেকে দেখা যায়। অপূর্ব সুন্দর সেই দৃশ্য দেখতে প্রবল শীতেও এখানে ভিড় জমান পর্যটকেরা।
এখানেই অবস্থান বরফ গুহার যা এতদিন সবার অগোচরে ছিল। সাধারণত হিমবাহের মধ্য দিয়ে চলমান পানির প্রবাহ হিমবাহের পৃষ্ঠে প্রথমে একটি গর্ত তৈরি করে এবং পানির প্রবাহ যতই সামনে এগিয়ে যেতে থাকে এই গর্ত আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং এক সময় দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়ে একটি গুহার আকার ধারণ করে।
এটিই বেশির ভাগ বরফের গুহা গঠনের কারণ। আর এইভাবেই প্রতিনিয়ত বরফ গলিয়ে নতুন নতুন গুহার সৃষ্টি হয় আবার সময়ের সাথে সাথে এই সব গুহা ধসে পড়ে।
বরফগলা পানির প্রবাহ যদি হিমবাহের ভিতরে সর্বদা চলতে থাকে তবে হিমবাহ আস্তে আস্তে নিচের দিকে চলতে থাকে সেই সাথে বরফ গুহাগুলো বছরে বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, বিস্তৃত বা পরিবর্তিত হতে পারে বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
রাশিয়ার এক শৌখিন আলোকচিত্রী আবিষ্কার করেন গুহাটি। আন্দ্রেই গ্রেশেভ বৈকাল হ্রদে এক সপ্তাহ সময় কাটান। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় হঠাৎ করেই পেয়ে যান গুহাটি। তিনি এর আগেও অনেক বরফের গুহা দেখেছেন, কিন্তু এটির গঠন ও সৌন্দর্য অন্যগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
বৃহৎ গুহার ভেতর হাজার হাজার লম্বাকৃতি বরফকণা এমনভাবে ঝুলে আছে যে, মনে হতে পারে শিল্পী সালভাদর দালির কোনো পরাবাস্তব চিত্রকর্ম।
কোনো কোনো বরফকণার উচ্চতা চূড়া থেকে নিচের দিকে লম্বায় ১০ মিটার। নানা দিক থেকে নানা গাঠনিক কারণে এটিকে গথিক স্থাপত্যের মতোই মনে হবে।
এই গুহার আরেকটি আশ্চর্যজনক দিক হলো- পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের লাল আলো সরাসরি এসে ঢোকে গুহার ভেতরে, এতে গুহাটি যে কমলা রঙ ধারণ করে, তাতে তার সৌন্দর্য ও রহস্য শতগুণ বাড়িয়ে দেয়।

আরও মজার ব্যাপার হলো- এই গুহা প্রতি বছরই তার রূপ বদলায়। এমনটাই জানালেন আন্দ্রেই গ্রেশেভ। তার মতে, গুহার ভেতরে এমন গাঠনিক ক্রিয়ার পেছনের মূল কারণ প্রচণ্ড ঝড়ে ভেতরে পানি ঢুকে গিয়ে শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় তৎক্ষণাৎ জমাট বেঁধে যাওয়া। এভাবেই তৈরি হয়েছে লম্বাকৃতির বরফকণার। প্রতিনিয়ত এমন রূপ বদলের মাধ্যমে প্রকৃতি তার রহস্য উন্মোচন করছে আর আমাদের করছে চমৎকৃত!

SHARE

Leave a Reply