কোনো বড় ফলই বড় রকমের ব্যর্থতা কিংবা দুঃখভোগ ছাড়া পাওয়া যায় না। তাই আমাদের জীবনে ব্যর্থতার গানগুলোই সবচেয়ে বেশি মধুর। কারণ কোনো মানুষ ব্যর্থ না হলে সে কোনোদিন সাফল্য লাভের অনুপ্রেরণা পায় না। নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮-২০১৩) মাদিবা (জাতির জনক) ম্যান্ডেলায় পরিণত হয়েছিলেন ব্যর্থতার অনুপ্রেরণা থেকেই। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ম্যান্ডেলা তৎকালীন সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হন। যার ফলশ্রুতিতে সুদীর্ঘ ২৭ বছর রোবেন দ্বীপের অন্ধকুঠিরে বন্দি থাকতে হয়েছিল। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে মুক্তি দেওয়া হলে সাদা-কালো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের ভালোবাসার স্রোতে মিশে গিয়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কিংবদন্তি প্রতীক ম্যান্ডেলা ২৫০ টিরও অধিক দেশীয়-আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কার, ১৯৯০ সালে ভারতরত্ন পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর জীবনের এত বড় সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ম্যান্ডেলা বলেছিলেন – ‘Don’t judge me by my success, judge me by how many times I fall down and got back up again.’ অর্থাৎ সাফল্যের ভিত্তিতে আমাকে বিচার করো না। আমাকে বিচার করো ব্যর্থতার পর আমি জীবনে কতবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি তার ভিত্তিতে।
ম্যান্ডেলা আরও একটি দারুণ কথা বলেছেন ‘Everyone can rise above their circumstances and achieve success if they are dedicated to and passionate about what they do.’
আরেক পৃথিবীখ্যাত বিপ্লবীর কথা বলছি- যিনি নিজ দেশ থেকে নির্বাসিত হয়েও একটি বিপ্লবের সূচনা করে সফল হয়েছিলেন। তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের রূপকার সাইয়্যেদ আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি (১৯০২-১৯৮৯)। খোমেনির জীবন সংগ্রাম খুবই ঘটনাবহুল। তাঁর তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। এমনকি জন্মের পর পিতার পবিত্র মুখটি দেখারও সুযোগ পাননি। তৎকালীন সময়ের অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ নিতে গিয়ে তাঁর জন্মের আগেই পিতা শাহাদাত বরণ করেন। সে সময়ে ইরানকে শাসনের নামে যৌথভাবে শোষণ করতো ব্রিটেন ও সোভিয়েত রাশিয়া। রাশান বাহিনী ইরান আক্রমণ করলে আত্মরক্ষার মানসে মাত্র বারো বছর বয়সে জালিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে হয়েছিল খোমেনিকে।
ইরানের সর্বশেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভী (১৯১৯-১৯৮০) ১৯৪১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২২ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে ইরানের সিংহাসনে বসার পর সাধারণ জনগণ এবং ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতন ক্রমশ প্রকট হতে থাকে। ঐ দিকে খোমেনি ইরানসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে বিপ্লবের বীজ বপন করতে থাকেন। কালক্রমে আয়াতুল্লাহ খোমেনি হয়ে ওঠেন সেই বিপ্লবের পুরোধা এবং ইরানি মুক্তিকামী জনতার আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে পাহলভীর রাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে খোমেনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিদ্রোহে ব্যর্থ হলে খোমেনিকে ফ্রান্সের প্যারিসে নির্বাসনে পাঠানো হয়। খোমেনি সেখানে বসেই জনগণকে সংগঠিত করতে থাকেন। ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি খোমেনি ফ্রান্সে বসেই পাহলভী স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আবারো বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বহু লোক মারা যায়, হতাহত হয়। বিপ্লবী জনতার কাছে পরাজিত হয়ে পাহলভী পলায়ন করে মিশর চলে যেতে বাধ্য হয়। পাহলভী সরকারের দীর্ঘ দিনের অত্যাচার-নির্যাতনের নিগড় থেকে মুক্তি পেয়ে ইরানের আপামর জনগণ পায় ইসলামি বিপ্লবের স্বাদ। অবশেষে খোমেনি ১৯৭৯ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি বীরের বেশে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
কেমন নেতা ছিলেন খোমেনি? লিংকন, লেলিন, চার্চিল, হিটলার মুসোলিনির মতো বিপ্লবী থেকে শুরু করে কামাল পাশা, মাও সেতুং, জামাল নাসের, নেহেরু, ক্যাস্ট্রো হয়ে এমনকি চেগুয়ে ভারার কথায় মুখর দুনিয়ার মাঝে খোমেনি ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এক নেতা। তিনি এমন বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যার বিজয় ছিল অবধারিত। তিনি সেক্যুলারিস্ট ছিলেন না, ক্যাপিটালিস্ট কিংবা ন্যাশনালিস্টও ছিলেন না। প্রথমত তিনি ছিলেন পোড় খাওয়া একজন রাজনীতিক ও তুখোড় ইসলামি নেতা, দ্বিতীয়ত: ইরানের জনগণের নেতা। বিপ্লবের সময় তাঁর শ্লোগান ছিল- ‘পশ্চিমের মতও নয়; পূর্বের মতও নয়, শুধু ইসলামি প্রজাতন্ত্র চাই।’ তাঁর সেই আশা, স্বপ্ন ও শ্লোগান সবই বাস্তবায়ন হয়েছে যার ফলাফল ইরানের জনগণ এখনো ভোগ করছে।
খোমেনি তাঁর এই মিশন সফল করতে গিয়ে বহুবার ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলেন কিন্তু নির্বাসিত হবার পরও একবারের জন্যও হাল ছাড়েননি। তাঁর দূরদর্শী চিন্তা, আপসহীন মনোভাব ও দুর্দান্ত সাহসী পদক্ষেপের কারণেই এই বিশাল বিজয় সম্ভব হয়েছিল। তিনি সফল হতে হতে চূড়ান্ত সফলতায় পৌঁছে যাননি বরং ব্যর্থ হতে হতেই চূড়ান্ত সফলতায় পৌঁছে ছিলেন। খোমেনির এই সফল বিপ্লব আমাদেরকে এই শিক্ষাটাই দেয়- ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তা না করে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের শুধু কাজ করে যাওয়া উচিত। কারণ জীবনে আমাদের শুধুমাত্র একবারই সফল হতে হবে।
আমরা বড় বড় মানুষদের সাফল্যই শুধু দেখি কিন্তু তারা যে সাময়িক কত ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিলেন সে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাই। তুমি কাজ করার পরও যখন ব্যর্থ হবে তখন বুঝে নিতে হবে তোমার পরিকল্পনা সুষ্ঠু না হওয়ায় এটি একটি সংকেত। তখন নতুন করে আবার পরিকল্পনা শুরু করে ঈপ্সিত লক্ষ্যের দিকে আবার যাত্রা শুরু করো। লক্ষ্যে পৌঁছবার আগেই হাল ছেড়ে দিলে তুমি হবে একজন ‘কুইটার’ অর্থাৎ যে দায়িত্ব পালন কিংবা তার ওপর অর্পিত কাজ শেষ না করেই চলে যেতে চায়। একজন কুইটার কখনও জীবনে জয়ী হতে পারেন না আর একজন বিজয়ী কখনো হাল ছাড়ে না।
মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭) এমন একটি সিস্টেমের স্বপ্ন দেখেছিলেন যা ইথারের অধরা শক্তিকে ধরতে পারবে। এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব করতে গিয়ে কম করে হলেও তিনি পাঁচশত বার ব্যর্থ হয়েছিলেন। একবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে তাঁর গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কারণ তিনি গবেষণার নামে দেশের অর্থ অপচয় করছেন। তাঁর সে স্বপ্ন যে বৃথা যায়নি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সারা পৃথিবীর সমস্ত রেডিও ও টেপ রেকর্ডার। তবে মার্কোনি যখন বলেছিলেন তিনি তারের সাহায্য ছাড়া বাতাসের মাধ্যমেই এক জায়গা হতে আরেক জায়গায় খবর প্রেরণ করবেন, এই কথা শুনে বন্ধুরা তাঁকে পাগল ভেবে মানসিক হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। যে টাইমস সম্পাদকীয়তে তার গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল পরবর্তীতে সেই টাইমস তাঁর সফলতা নিয়ে প্রতিবেদন ছাপাতে বাধ্য হয়েছিল। বিজ্ঞানী মার্কোনি একজন মানুষের সফলতার জন্য নয়টি ধাপ অনুসরণের কথা বলেছেন-
১. চেষ্টা করুন
২. আবার চেষ্টা করুন
৩. আরও একবার চেষ্টা করুন
৪. একটু ভিন্নভাবে চেষ্টা করুন
৫. আগামী দিন আবার চেষ্টা করুন
৬. চেষ্টা করতে থাকুন এবং কারো সাহায্য নিন।
৭. কাজটি করতে কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা একজন মেন্টর থেকে ভালোভাবে বুঝে নিন
৮. এমন কাউকে অনুসরণ করুন যে কাজটি শেষ করতে পেরেছেন
৯. চেষ্টা করতে থাকুন যতক্ষণ না সফল হচ্ছেন।
বিশ্ব এখন নতুন নতুন আবিষ্কার দেখে অভ্যস্ত। পৃথিবীতে আমরা আজ যত আবিষ্কার দেখতে পাই এসব কিছুর আবিষ্কর্তাগণ স্বপ্নচারী মানুষ ছিলেন। এদের বেশির ভাগই প্রথম জীবনে ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু তারা জানতেন ব্যর্থতার মাঝেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের বীজ।
তুমি একা একা তো আর সফল হতে পারবে না; এর জন্য অবশ্যই তোমাকে মাস্টারমাইন্ড দল তৈরি করতে হবে। মাস্টারমাইন্ড দল মানে মেধাবী, সৎ এবং পারদর্শী লোকবল বাছাই করে কোনো কাজের সূচনা করা। সেটা হতে পারে কোনো বিষয়ে গ্রুপ স্টাডি করা কিংবা কোনো একটি ব্যবসা আরম্ভ করার মতো কাজ। যখন মাস্টারমাইন্ড দল তৈরি করবে তখন এমন সব লোকজনকে গুরুত্ব দেবে যারা যোগ্য, শতভাগ সৎ এবং পরাজয়ে ভীত নয়। পরাজয়কে পাত্তা না দিয়ে বরং তাকে স্বাগত জানানোর সাহস রাখে। যদি বিশাল কোনো ক্ষতিরও আশঙ্কা থাকে তাতেও সিদ্ধান্তে অনড় এবং অবিচল থাকে। তোমার মাস্টারমাইন্ড দলের প্রথম লক্ষ্য শুধু টাকা উপার্জন করা উচিত হবে না বরং লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিমূল গড়ার প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে। শুধু টাকার পেছনে নয়, লক্ষ্যে দৌড়াতে পারলে টাকা এমনিতেই তোমার পিছনে ছুটবে।
ইমাম জাওজী (রহ) এ বিষয়ে একটি চমৎকার কথা বলেছেন- ‘কাউকে কখনো তার অতীতের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা দিয়ে মূল্যায়ন করবেন না। বর্তমানে সে যে অবস্থানে আছে সেটাও তার সফলতা নয় বরং ভবিষ্যতে সে যেটা হবে সেটাই তার সফলতা।’
বিপণন বিদ্যার গুরু ফিলিপ কাটলার বলেন- ‘শূন্য থেকে শুরু করতে পারলেই আপনার জয় মধুর হবে।’
জীবনের গতানুগতিক ধারণা অনেককেই আগে বাড়তে দেয় না। ব্যক্তির মাঝে অভ্যন্তরীণ বিপ্লব না ঘটলে তো আর বাহ্যিক বিপ্লব ঘটবে না। মূলত আমরা ভেতর থেকে যেভাবে বদলাই সে অনুযায়ী আমাদের বাইরের বাস্তবতা বদলে যায়। এজন্য সবার আগে নিজেকে বদলানো জরুরি। নিজেকে বদলানোর এমন তিনটি সূত্র আছে যেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের ভিতর এবং বাহির দুটো অবস্থারই বদল ঘটানো সম্ভব।
১. Knowing more than others (অন্যের চেয়ে বেশি জানো)
২. Working more than others (অন্যের চেয়ে বেশি কাজ করো)
৩. And hope less than others (এবং অন্যের চেয়ে কম প্রত্যাশা করো)।
তুমি হয়তো কোনো কাজ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছো, হতাশ হয়ে পড়ছো, গতকাল হয়তো পড়েও গিয়েছো তাতে কোনো সমস্যা নেই যদি আজ আবার উঠে দাঁড়ানোর হিম্মত রাখো। দেখো, মার্কিন লেখক হেলেন কিলার (১৮৮০-১৯৬৮) জন্মের কিছুদিন পরেই বোবা, অন্ধ এবং সমস্ত শরীর কালো হয়ে জনমের মতো পঙ্গু হয়ে যান। শারীরিক এই অক্ষমতা কিন্তু তাঁকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ঙঢ়ঃরসরংস, খরমযঃ রহ গু উধৎশহবংং, ঞযব ঝড়হম ড়ভ ঃযব ঝঃড়হব ডধষষ- এর মতো বিখ্যাত বই লিখে ইতিহাসের সেরা মানুষের তালিকায় ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর গোটা জীবন একথাই প্রমাণ করে পরাজয়কে বাস্তবতা হিসেবে মেনে না নিলে কেউ কখনো পরাজিত হয় না। একজন মানুষের অর্জন কত বড় তা বুঝতে হলে তোমাকে দেখতে হবে অর্জনের পথে সে কত বড় বাধা পেরিয়ে এসেছে। বেটোফেন কানে শুনতে পেতেন না, মিল্টন চোখে দেখতেন না অথচ এরাই কালজয়ী সিম্ফোনি ও সাহিত্য সৃষ্টি করে গেছেন। মিল্টন অন্ধ হয়ে যাবার পরও তাঁর অন্তরের অনুভূতির আলোয় লিখে ফেলেছিলেন জগদ্বিখ্যাত মহাকাব্য ‘চধৎধফরংব খড়ংঃ’. এগুলো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র ব্যর্থতাকে পাত্তা না দিয়ে স্বপ্নগুলোকে গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনায় রূপান্তরিত করতে পেরেছিলেন বলে।
কোনো কিছু মনেপ্রাণে চাওয়া এবং সেটি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা দু’টি ভিন্ন জিনিস। কেউ যদি বিশ্বাস না করে সে অমুক জিনিসটি পেতে পারে তাহলে তা পাওয়ার জন্য তার প্রস্তুতি সেই মানের হয় না। স্রেফ ইচ্ছে করলে কিংবা আশা থাকলেই হবে না, সেটি পাওয়ার জন্য মনের মধ্যে প্রবল বিশ্বাস আনতে হবে। সন্দেহে ঢাকা মনে বিশ্বাস, সাহস ও আস্থা কোনো কিছুরই জায়গা থাকে না। মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শত্রু হলো তার সংশয় এবং অবিশ্বাস। এই সংশয় এবং অতিরিক্ত অবিশ্বাসের কারণে সে সারাজীবনে কোনো কাজ শুরুই করতে পারেনি।
একটু খেয়াল করলে তোমরা দেখবে, সফল মানুষদের ভাষায় এই শব্দগুলো রয়েছে। আমি করেছি। আমি আশাবাদী আমি পারব। আমাকে দিয়ে এটি সম্ভব। ভুলভ্রান্তি আমার। আমাকে সুযোগ দিতে পারেন। আমি আবার চেষ্টা করে দেখতে পারি। আমি কাজটিতে প্রচণ্ড আনন্দ পাচ্ছি। বিপদে সার্বক্ষণিক স্রষ্টার সাহায্য পাচ্ছি। আমি একা নই, স্রষ্টা আমার সাথে আছেন।
সফল মানুষগুলো প্রচণ্ড আশাবাদী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যার কারণে সবাই তাদেরকে পছন্দ করে। তারা সব সময় সাদামাটা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, খোলামেলা, বন্ধুবৎসল ও পরোপকারী মনোভাবের অধিকারী হয়ে থাকে। এরা নিজে পরিবর্তন হয় এবং অন্যেরও পরিবর্তন চায় এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এরা অপরের ভালো কাজের প্রশংসা করেন, সবাইকে সাথে নিয়ে চলেন। সব ব্যর্থতাকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে অপরের সাহায্য ও সফলতাকে বড় করে দেখেন। আমার আমিত্ব ও অহংকারকে পায়ের নিচে পিষ্ট করে অপরকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতি দেন।
প্রতিটি কাজে তিনটি প্রশ্ন থাকে- কী করতে হবে? কে করবে? কিভাবে করবে? সফল মানুষগুলো এ তিন প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে জেনে কাজে নেমে পড়েন। ব্যর্থ মানুষগুলো এই তিন প্রশ্নের মধ্যে ঘুরপাক খান। তোমাদের মনে রাখতে হবে, একশ ভাগ সাফল্যের মধ্যে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারা পঁচিশ ভাগ, কাজ শুরু করতে পারা পঁচিশ ভাগ এবং লেগে থাকা পঞ্চাশ ভাগ। একটু দাঁড়িয়ে থাকার জন্যে হলেও পৃথিবীতে তোমাকে কেউ জায়গা দেবে না। পৃথিবীতে কেউ কাউকে জায়গা দেয় না, বরং জায়গা করে নিতে হয়। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে।