Home বিজ্ঞান ও বিশ্ব বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ড্রোন -আল জাবির

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ড্রোন -আল জাবির

যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যত বেশি ভালো সেই দেশের সেনাবাহিনী প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে তত বেশি উন্নত। একবিংশ শতাব্দীতে মিলিটারি প্রযুক্তিতে এমনই এক অন্যতম হাতিয়ার ড্রোন। ড্রোন হলো এমন একটি চালকবিহীন আকাশযান যা কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ড্রোনটির মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর গতিবিধির লাইভ স্ট্যাটাসের পাশাপাশি ঐউ ছবি-ভিডিও দেখা যাবে। অভিনব এই ড্রোনের নাম ‘দ্য ব্ল্যাক হরনেট পার্সোনাল রিকনিসেন্স সিস্টেম।
বিগত বছরগুলোতে পুরো পৃথিবীতে বেড়েছে সামরিক ব্যয়। যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রস্তুতি, অস্ত্রাগার বাড়িয়ে তোলা আর বিধ্বংসী প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন কারণে অনেক দেশই সামরিক খাতে খরচ বাড়িয়েছে। সেই সামরিক ভাণ্ডারে এবার নতুন প্রযুক্তির ড্রোন যোগ করেছে আমেরিকা।
মার্কিন সৈন্যদের জন্য তৈরি নতুন এই ড্রোন কোনও ব্যক্তির পকেটে সহজেই ঢুকে যাবে। এমনকি হাতের তালুতেও লুকিয়ে রাখা যাবে ড্রোনটি। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে প্রায় ১.২ মাইল বা ২ কিলোমিটার পর্যন্ত নজর রাখতে সক্ষম এই ড্রোন।
ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো ড্রোনটি দেখতে একদম খেলনা হেলিকপ্টারের মতো। লেটেস্ট মডেলের ৬.৬ ইঞ্চি লম্বা এই ড্রোনটির ওজন মাত্র ৩৩ গ্রাম। ব্যাটারিতে ফুল চার্জ থাকাবস্থায় ঘণ্টায় সর্বোচ ২১ কিলোমিটার বেগে টানা ২৫ মিনিট উড়তে পারে ড্রোনটি। ওড়ার সময় শব্দ এতটাই কম হয় যে, সর্বোচ্চ ১০০ মিটার উচ্চতায় ওড়ার সময় ড্রোনটি দেখে অনেকেই একটি ছোট পাখি ভেবে ভুল করতে পারেন।
একটি ব্ল্যাক হর্নেট সর্বনিম্ন -১০ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ +৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, জিপিএস কাজ করে না এমন জায়গাতেও উড়তে পারে অনায়াসে। ফলে এর মাধ্যমে কোনো দুর্গম গুহায় ওঁৎ পেতে থাকা শত্রুপক্ষ বা আটকে পড়া শ্রমিক কিংবা অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
এতে রয়েছে ৩টি বিশেষ ধরনের উন্নতমানের ক্যামেরা যেগুলো দিনে এবং রাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম। এর একটি বিশেষ সুবিধা হলো, যদি শত্রুপক্ষের কাছে কোনোভাবে ধরা পড়ে যায়, তবে শত্রুপক্ষের বোঝা সম্ভব নয় এর মাধ্যমে তাদের কোন কোন তথ্যগুলো ফাঁস হয়েছে। কারণ ব্ল্যাক হর্নেটকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, এটি কেবল কন্ট্রোলার ডিভাইসেই লাইভ ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রেরণ করে থাকে, ড্রোনটির আলাদা কোনো স্টোর নেই যেখানে ভিডিও সংরক্ষিত থাকবে।
ব্ল্যাক হর্নেটের কন্ট্রোল অপারেটর ডিভাইস থেকে একাধিক ড্রোন একইসাথে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবার চাইলে দুজন অপারেটর একইসাথে একটি ড্রোন থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটি যেমন কন্ট্রোলার ডিভাইস দিয়ে কোনো ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তেমনই কন্ট্রোলার ডিভাইসে ম্যাপ যুক্ত করে দিলে সেই ম্যাপ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবেও উড়তে পারে।
প্রতি সেকেন্ডে ২০ পা-এর দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে সামরিক ড্রোন। শত্রুর এলাকায় পৌঁছে নীরবেই ভিডিও ও ছবির মাধ্যমে তথ্য জোগাড় করায় সক্ষম এটি।
ঋখওজ সংস্থার মতে, এই ড্রোন ব্যবহার করে যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে শত্রুর চেয়ে অনেক ধাপ এগিয়ে থাকার পাশাপাশি শত্রুর ফাঁদ থেকে আগাম সতর্ক হওয়া সম্ভব।
বিশেষ প্রযুক্তির উন্নত ড্রোনগুলো সহজেই রাডার উপেক্ষা করে শত্রুঘাঁটিতে হামলা করে মুহূর্তেই যুদ্ধের মোড় বদলে দিতে পারে। তবে ড্রোনের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। এটি যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণের কাজে ব্যবহৃত হয়, তেমনই এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের ওপর গোপন নজরদারিও করা যায়।
এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর নেওয়া, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সাহায্য পৌঁছানো, সিনেমার দৃশ্য ধারণ, ফটোগ্রাফি ইত্যাদির কাজেও আজকাল ড্রোনের ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানোতে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ড্রোনটির ব্যবহারকারী চমৎকার কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমন : কোনো কারণে যদি কন্ট্রোলার ডিভাইসের সাথে ড্রোনটির যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটে, তবে এটি যেখান থেকে ওড়ানো হয়েছিল ঠিক সেই জায়গাতে চলে আসবে। তা ছাড়া এটি ওড়ানোও বেশ সহজ, মাত্র ৩০-১২০ সেকেন্ড সময় নেয় যেকোনো মিশনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে।
অন্যান্য ড্রোনের চেয়ে খরচ তুলনামূলক কম হওয়াতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানোর বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। হওয়াটাও স্বাভাবিক, কারণ দুর্গম অঞ্চল বা দুর্ধর্ষ শত্রু অবস্থানের ওপর গোপন নজরদারিতে এটি অতুলনীয়।
বর্তমানে আমেরিকার স্পেশাল ফোর্স, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন, নরওয়ে ও ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশের সেনাবাহিনী ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো ড্রোনটি ব্যবহার করছে।

SHARE

Leave a Reply