Home বিজ্ঞান ও বিশ্ব উইস্টেরিয়া ফ্লাওয়ার -টানেল আল জাবির

উইস্টেরিয়া ফ্লাওয়ার -টানেল আল জাবির

ফুল দিয়ে নানা রকম অবাক করা আর নজরকাড়া স্থাপনা তৈরি করা হয়। আর এসব স্থাপনা তৈরিতে প্রয়োজন হয় অনিন্দ্য সুন্দর ফুল উইস্টেরিয়া। উইস্টেরিয়া এক ধরনের ফুলগাছ, এটি উইস্টেরিয়া ফুজি ফ্লাওয়ার নামেও পরিচিত। উইস্টেরিয়া বিখ্যাত তার বিচিত্র রং আর মোহনীয় সৌরভের কারণে।
অপূর্ব সুন্দর এই ফুলের দেখা মেলে চীন, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে। রোদে জন্মানো এর স্বভাব হলেও উইস্টেরিয়া কখনো কখনো ছায়াতেও জন্মায়। বসন্তকালে সাধারণত উইস্টেরিয়া পরিপূর্ণ সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দিলেও গ্রীষ্মে কখনো কখনো এটি ফুটতে দেখা যায়।
এটি সাধারণত সাদা, গোলাপি, বেগুনি আর নীল রঙের হয়ে থাকে। নীল ফুলগুলো তীব্র সুগন্ধিযুক্ত। বসন্তের শেষে সবুজ পাতার আড়ালে বেগুনি-নীলের অসাধারণ এবং নাটকীয় পুষ্পপ্রদর্শনী মুগ্ধ করে দেয়। ১০-২৫ ফুট লম্বা হয় এই উইস্টেরিয়া গাছ। হালকা সবুজ পাতা আর বেগুনি বর্ণের সুগন্ধি প্রজাতির উইস্টেরিয়া ফোটে বসন্তের শেষে। এটি ১০-২০ ফুট লম্বা হয়। তুষার শুভ্র রঙের সাথে মিষ্টি গন্ধের সাদা উইস্টেরিয়া ফুলটি ১০-৪০ ফুট উচ্চতার হয়। হালকা গোলাপি রঙের জাপানি সুগন্ধি উইস্টেরিয়া ফুল ১০-৩০ ফুট লম্বা হতে পারে। গাছ কিংবা দেয়ালের গা বেয়ে ঝুলতে থাকা উইস্টেরিয়ায় সুসজ্জিত বসন্ত শীতের রুক্ষতার শেষে নিঃসন্দেহে প্রকৃতির অনন্য উপহার।
এই চমৎকার ফুলগুলো জাপানের নানারকম পার্কে শোভা পেয়েছে। ফুলগুলো দিয়ে পার্কে তৈরি করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর টানেল।

আশিকাগা উইস্টেরিয়া
ফ্লাওয়ার পার্ক
জাপানে উইস্টেরিয়া দর্শনের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হচ্ছে আশিকাগা উইস্টেরিয়া ফ্লাওয়ার পার্ক। ২০০৯ সালে সিএনএন এর জরিপে পৃথিবীর সেরা নয়টি স্বপ্নের গন্তব্যের একটি নির্বাচিত হয় এই পার্কটি। ৮২,০০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটিতে রয়েছে ৩০০ প্রজাতির উইস্টেরিয়া, যা পার্কটিকে করেছে অসাধারণ।
এই পার্কে বেড়াতে গেলে মনে গেঁথে থাকবে এর ৮০ মিটার দীর্ঘ উইস্টেরিয়ার সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে ওপরে তাকালে চোখে পড়বে চোখ ধাঁধানো সুন্দর ফুটন্ত উইস্টেরিয়ার রাশি, যার জাদুময় পরশে আপনি হারাবেন স্বপ্নময় কোনো জগতে।
এই পার্কের আরেকটি দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য হচ্ছে, ১৫০ বছর বয়স্ক বিশাল ছড়ানো একটি উইস্টেরিয়া বৃক্ষ। এই গাছকে প্রায়ই বিখ্যাত ‘অ্যাভাটার’ মুভির ‘ঞযব ঞৎবব ড়ভ ঝড়ঁষং’ এর সাথে তুলনা করা হয়।

কাওয়াচি ফুজি গার্ডেন
এটি ইদানীং সোশাল মিডিয়ার সৌজন্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এবং ভ্রমণ তালিকার সেরা দশটি স্থানে উঠে এসেছে। শুধু উইস্টেরিয়ার মৌসুমে এটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
বাগানটির বিশেষত্ব এর ২২০ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গে। প্রথম দেখায় এর নজরকাড়া সৌন্দর্যে আর মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণে বিমোহিত হতে হবে। সুড়ঙ্গ ধরে হাঁটতে শুরু করলে, মনে হবে যেনে এটি অনিন্দ্য সুন্দর কোনো রূপকথার রাজ্য। দর্শনার্থীরা এখানে এসে অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বাগানটি বেসরকারিভাবে তৈরি করা হয়েছে। মশাওমি জোগুচি নামের একজন ব্যক্তির একক পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় এই বাগানটি তৈরি হয়েছে। ১৯৭৭ সালে প্রথম জনসাধারণের জন্য কোয়াচি ফুজি গার্ডেনের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং কোনো রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই বাগানটি খুব দ্রুত জাপানে জনপ্রিয় স্থান হয়ে ওঠে।

ফুজিনো উশিজিমা
জাপানের কাশুকাবেতে অবস্থত ২০,০০০ বর্গমিটার এলাকার ফুজিনো উশিজিমায় রয়েছে বিচিত্র আকার ও প্রকারের উইস্টেরিয়া। এখানকার উইস্টেরিয়া গাছগুলোর বয়স ১,০০০ বছরের বেশি। এখানে জন্মানো উইস্টেরিয়া গুচ্ছগুলো সবচেয়ে বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয় এখানকার উইস্টেরিয়া। জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯২৮ সালে এই বাগানটি ‘প্রাকৃতিক গুপ্তধন’ হিসেবে তৈরি করে। পরে ১৯৯৫ সালে সাংস্কৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ আইনে আবারও বাগানটির সংস্কার করা হয়। আইরিস, রডোডেনড্রন আর প্রায় পাঁচশ’ বছরের পুরনো পাইন গাছে আচ্ছাদিত লেক আর ছোট ছোট দ্বীপ ফুজিনোকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করেছে।

কেমিডো তেনজিন মঠ
জাপানের ঐতিহ্যবাহী উইস্টেরিয়ার বাগিচা কেমিডো তেনজিন মঠ। জাপানের রাজাদেরও এখানে উইস্টেরিয়া দেখতে আসার ইতিহাস রয়েছে।
এখানকার কিংবদন্তিতুল্য উইস্টেরিয়াগুলো নানা শিল্পকর্মের উপাদান জুগিয়েছে। উইস্টেরিয়ার মৌসুমে এখানে লাল তাইকো ব্রিজের ওপরে ফুটন্ত উইস্টেরিয়া অপরূপ সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করে। উইস্টেরিয়ার ঝোপগুলোর নিচে থাকা শান্ত পুকুরের পানিতে ফুলের প্রতিবিম্ব পড়ে, যা একমাত্র কেমিডোতেই দেখা যায়।

কাসুগা মঠ
কাসুগা গ্র্যান্ড মঠের সামনে লাগানো উইস্টেরিয়া গাছগুলো ৮০০ বছরের পুরনো। এখানকার উইস্টেরিয়া বিখ্যাত এর দীর্ঘ পুষ্পপল্লবের কারণে। এখানকার উইস্টেরিয়া গুচ্ছ এতই লম্বা হয় যে, প্রায় মাটি স্পর্শ করে ফেলে। এ জন্য এই উইস্টেরিয়াগুলোকে বলা হয়, ‘ঝধহধুঁৎর-হড়-ঋঁলর’ অর্থাৎ মাটিস্পর্শী উইস্টেরিয়া।
মঠের লাল চূড়ার পাশে উজ্জ্বল বেগুনি রঙের উইস্টেরিয়া গুচ্ছের কারুকাজের দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ। মঠের পাশেই রয়েছে মেনিয়ো বোটানিক্যাল পার্ক।
পার্কটির দক্ষিণে ২০ প্রজাতির ২০০টি উইস্টেরিয়া গাছ বসন্তে অপূর্ব রং আর ঘ্রাণ নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়। এই উইস্টেরিয়ার বাগানে শান্তভাবে চরে বেড়ায় হরিণের দল।

শিরাই ওমাচি ফুজি পার্ক
সানিন অঞ্চলে উইস্টেরিয়া দেখার আদর্শ স্থান হচ্ছে শিরাই ওমাচি ফুজি পার্ক। ১৫০টি উইস্টেরিয়া বিথীতে ছাওয়া ৫০০ মিটার দীর্ঘ, ৪ মিটার প্রশস্ত বীথিকুঞ্জ এই পার্কের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
এই দৃষ্টিনন্দন পার্কগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝে। এই সময়টাকে বাগানের গোল্ডেন টাইম বলা হয়। কারণ এই সময় উইস্টেরিয়া ফুলগুলো তার সঠিক রং ও রূপ মেলে ধরে। দেখলে মনে হবে চোখের সামনে নানা রংয়ের ক্যানভাস ঝুলানো আছে। এই ক্যানভাসের ভেতরে ঢুকলে মনে হবে যেন ফুলের রাজ্য। যেখানে গেলে ক্লান্তি দূর হয়। যেখানে মন খারাপের কোনো স্থান নেই। সত্যিই অসাধারণ।

SHARE

Leave a Reply