কচিকাঁচা বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি এই মহামারীর মধ্যেও আল্লাহর অশেষ রহমতের কারণে নিশ্চয়ই তোমরা ভালো আছো। অনেক দিন পর তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সঙ্গত কারণে তোমাদের কিশোরকণ্ঠে হাজিরা দিতে পারিনি, সে জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আর দোয়া করো সামনে যাতে মাসে একবারের জন্য হলেও তোমাদেরকে সাহচর্য দিতে পারি। চলো, আজকের মূল আলোচনায় অংশ নেওয়া যাক-
সাফল্য হচ্ছে জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি খেলা। ঝুঁকি এই খেলার অংশ। সাফল্যের জন্য বিচার বিবেচনাপূর্বক যেমন ঝুঁকি নিতে হয় তেমনি ঝুঁকি নেওয়ার জন্যও ঝুঁকি নিতে হয়। সেই সকল লোক জীবনে সবার আগে এগিয়ে থাকে যারা প্রচণ্ড দুঃসাহসী এবং ঝুঁকি নিতে ভালোবাসে। ঝুঁকি নেওয়া মানে বোকার মতো জুয়ার বাজি ধরা কিংবা দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার নয়। অনেকে কখনও কখনও দায়িত্বজ্ঞানহীন হঠকারিতাকে ঝুঁকি বলে ভুল করে। ফলে যখন উল্টো ফল বয়ে আনে তখন ভাগ্যকে দোষ দিয়ে পার পেতে চায়।
ঝুঁকি নেওয়া একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। ঝুঁকির অর্থ ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন প্রশিক্ষণের ফলে ঝুঁকি নেওয়ার বিপদকে কমিয়ে দেওয়া যায়। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্বতারোহী এবং একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তি দু’জনের ক্ষেত্রে পর্বতারোহণের দু’রকম ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু যিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তার কাছে এই ঝুঁকি বিবেচনাহীন ঝুঁকি নয়। যখন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, জ্ঞান অর্জন ও নিজের প্রতি পূর্ণ আত্মবিশ্বাস তৈরি করার পর ঝুঁকি নেওয়া হয় তখন তাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ঝুঁকি বলা যায় না বরং সেটাই হয় যথার্থ ঝুঁকি।
যে ব্যক্তি কখনো কোনো কাজ করে না তার ভুলও হয় না। কাজ না করাটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। সিদ্ধান্তহীনতা ও ঝুঁকি না নেওয়ার ফলে আমাদের অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা নষ্ট হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা ক্রমে ক্রমে অভ্যাসে পরিণত হয়। ঝুঁকি না নিতে নিতে আমাদের সাহস ও মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং ঝুঁকি নেওয়া উচিত কিন্তু জুয়ার বাজির মতো কিংবা অযৌক্তিক ঝুঁকি নয়। প্রকৃতপক্ষে জেনে-বুঝে যারা ঝুঁকি নেয় তারা চোখ কান খোলা রেখে সামনে এগিয়ে যায় কিন্তু জুয়াড়িরা অন্ধকারে গুলি ছোড়ে।
তুমি জীবনে সফল হতে চাইলে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে এবং সে ঝুঁকি হবে ‘ঈধষপঁষধঃবফ ৎরংশ’ বা পরিকল্পিত ঝুঁকি। এমন নতুন নতুন কাজে হাত দিতে হবে যে কাজ কেউ করেনি। এমন নতুন রাস্তায় চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যে রাস্তায় কেউ যায়নি। আমরা যা ভাবি এবং আমরা যেখানে থাকি তা এক ধরনের অন্ধকুঠির। এই অন্ধকুঠির থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের বাইরে তাকাতে হবে। কারণ বাইরে অনেক আলো, সে আলোয় আমি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর পথটা আরও স্পষ্ট দেখতে পাবো। তুমি যদি ভেবে থাকো কোন বুদ্ধিমান লোক এসে তোমাকে সফলতার গল্প শুনিয়ে যাবে আর সেই গল্প শুনে শুনে তুমি বড় হবে তাহলে সেই ধারণা এক ধরনের ভ্রান্তি। সেই আশা এক ধরনের মরীচিকা। এমন আশা করে বসে বসে কেউ কালক্ষেপণ করলে তার পক্ষে আদৌ সফলতার মুখ দেখা সম্ভব হবে না। কারণ পৃথিবীর অনেক বয়স হয়েছে, ওর সে শক্তি আর সময়ও নেই। তাই বড় কোনো সুযোগ বা প্লাটফর্ম পেতে হলে তোমাকে আরামের জায়গা ছাড়তে হবে। চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। দেখবে, ভেতরে তোমাকে সাহায্য করবার কেউ না থাকলেও বাইরে সাহায্য করবার লোকের অভাব নেই। এ প্রসঙ্গে ব্রাজেলীয় বিখ্যাত লেখক পাওলো কোহেল হো একটি চমৎকার কথা বলেছেন- ‘ডযবহ ুড়ঁ ধিহঃ ংড়সবঃযরহম ধষষ ঃযব ঁহরাবৎংব পড়হংঢ়রবৎং রহ যবষঢ়রহম ুড়ঁ ঃড় ধপযরবাব রঃ’ অর্থাৎ যখন তুমি মনেপ্রাণে কোনো কিছু চাইবে তখন গোটা পৃথিবীর সব কিছু তোমাকে সেটা পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করা শুরু করে দেবে।
একটু খেয়াল করলে দেখবে আমাদের জীবনটাই একটি ঝুঁকি এবং পৃথিবী ঝুঁকিপূর্ণ একটি জায়গা। তুমি জীবনের এমন কোন গতিপথ খুঁজে পাবে না যেখানে কোনো ঝুঁকি নেই। এই ঝুঁকি অতিক্রম করেই জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একজন সফল মানুষও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা আজ সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছেছেন কিন্তু তাদের জীবনে কোনো ঝুঁকি নিতে হয়নি। তবে তারা ঝুঁকি নিয়েছেন বিচার বিশ্লেষণ ও খুঁটিনাটি দিক যাচাই বাছাই করে। চলো আজ আমরা এমন একজন মানুষের জীবনের গল্প বলব, যার একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে গোটা পৃথিবী ছাপিয়ে মানুষ চাঁদে পা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
নিল আর্মস্ট্রংয়ের কথা বলছি, যিনি চাঁদে হাজার বছরের নিঃসঙ্গতা প্রথমবারের মতো ঘুচিয়েছিলেন। যে চাঁদ ছিল মানুষের রাতের আকাশে গান, কবিতা আর গল্পে, সে চাঁদকে প্রথমবারের মতো ছুঁয়ে দিয়েছিলেন এই মার্কিন নভোচারী।
আর্মস্ট্রংয়ের জন্ম ১৯৩০ সালের ৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে। তিনি উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স পান মাত্র ১৬ বছর বয়সে, তখন তাঁর গাড়ি চালাবারও লাইসেন্স ছিল না। ১৯৪৭ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন পারডু ইউনিভার্সিটিতে। সাবজেক্ট ছিল অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯৪৯ সালে পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। দুই বছর পর কোরিয়ার যুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আবার চলে আসেন বিদ্যাপীঠে। এর তিন বছর পর ১৯৫৫ সালে যোগ দেন ‘ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কমিটি ফর অ্যারোনিটিকস’-এ। ১৯৫৮ সালে যেটি রূপান্তরিত হয় নাসায় (ঘঅঝঅ- ঘধঃরড়হধষ অবৎড়হধঁঃরপং ধহফ ঝঢ়ধপব অফসরহরংঃৎধঃরড়হ). ১৯৫৬ সালে জ্যানেটিকে বিয়ে করেন আর্মস্ট্রং। অ্যাস্ট্রেনট প্রোগ্রামে যোগ দেন ১৯৬৩ সালে। পৃথিবীর কক্ষপথ পাড়ি দেন ১৯৬৬ সালে।
১৯৬৯ সালে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ চন্দ্রজয়ের মিশন হাতে নেন আর্মস্ট্রং। অ্যাপোলো-১১ অভিযানের কমান্ডার আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। চাঁদে পা রেখে আর্মস্ট্রং প্রথমেই বলেছিলেন -‘ঞযরং রং ংসধষষ ংঃবঢ় ভড়ৎ ধ সধহশরহফ নঁঃ ধ মরধহঃ ষবধঢ় ভড়ৎ সধহশরহফ’ অর্থাৎ এটা একজনের জন্য ছোট একটা পদক্ষেপ হলেও গোটা মানবজাতির জন্য বিশাল এক অগ্রযাত্রা। আর্মস্ট্রং চন্দ্রজয়ের এই ঝুঁকিপূর্ণ সাহসী চ্যালেঞ্জ গ্রহণে উদ্যোগী না হলে হয়তো আজো বিশ্ববাসীর কাছে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের পা রাখার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেতো।
চন্দ্রজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের হিরো হিসেবে মর্যাদা পান আর্মস্ট্রং। অথচ তিনি নিজেকে কখনও আমেরিকান হিরো ভাবতে পছন্দ করতেন না। তাঁর কাছে চন্দ্রজয় ছিল গোটা মানবজাতির অর্জন এবং পৃথিবীকে এগিয়ে নেওয়ার এক অগ্রযাত্রা। আর্মস্ট্রং যখন চাঁদে পা রাখেন তারো ২০ মিনিট পর তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন অলড্রিন। তারা যখন চাঁদের বুকে পায়চারি করছিলেন ঠিক এমন সময় মহাকাশ থেকে একটি অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছিল তাদের কানে। এটি তাদের কাছে ছিল একটি অজানা ভাষায় কিছু সুমধুর কথা। যেহেতু আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিন পূর্বে কখনও এই কথাগুলো শুনেননি তাই তারা এই কথার অর্থ কিছুই বুঝতে পারেনি। তবে তাদের মনে কথাগুলো গেথে গিয়েছিল। অনেকেরই দাবি, এটি ছিল আজানের সুমধুর ধ্বনি। এতে মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আবার বামপন্থীদের একটি গ্রুপ তাঁর ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি মানতে চান না। তবে তাঁর ইসলাম গ্রহণের স্বপক্ষে দুটি ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায় এবং এ দুটিকেই ভিত্তিমূল হিসেবে ধরা হয়।
এক. আর্মস্ট্রং যখন চাঁদের মাটিতে তথ্যানুসন্ধান করছিলেন তখন তিনি চাঁদের মাটিতে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত একটি দীর্ঘ ফাটল দেখতে পান। এই ফাটলের সাথে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর হাতের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনার যোগসূত্র খুঁজে পান। মুহাম্মদ (সা) এর দ্বারা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
দুই. আর্মস্ট্রং যখন চাঁদের মাটিতে হাঁটছিলেন তখন এক অজানা ভাষায় সুমধুর সুরে তিনি কিছু শব্দমালা শুনতে পান। সেই অসাধারণ শব্দমালা সেই সময়ে তাঁর কাছে বোধগম্য হয়নি। পরবর্তীতে পৃথিবীতে ফেরার পর তিনি একবার মিশর ভ্রমণে যান এবং সেখানে আজানের ধ্বনি শুনতে পান। আজানের ধ্বনি শুনে তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন- ‘আমি চাঁদের পৃষ্ঠে পা রেখে এরকমই কিছু মধুর ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম। তখন তাঁর মিশরীয় বন্ধু এটিকে তাঁর কাছে আযানের ধ্বনি নিশ্চিত করলে তিনি তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করেন।
চন্দ্রজয়ের পরবর্তী ১৯৭১ সাল পর্যন্ত নাসার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন আর্মস্ট্রং। তারপর ‘ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটিতে’ ১০ বছর অধ্যাপনা করেন। তারও পরে ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ‘কম্পিউটিং টেকনোলজি ফর এভিয়েশন ইন কর্পোরেটেড’- এ। পরবর্তী সময়ে আর্মস্ট্রং জীবন কাটিয়েছিলেন নীরবে-নিভৃতে। ২০০৫ সালে জীবনের সর্বশেষ ৬০ মিনিটের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে চাঁদ নিয়ে প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় আর্মস্ট্রং বলেছিলেন -‘সূর্যালোকে চাঁদের পৃষ্ঠটি অসাধারণ। জায়গাটি বেশ দারুণ এবং উপভোগ্য। সুযোগ করে আমি তো সবাইকে সেখান থেকে ঘুরে আসতে বলব। ২০১২ সালের ২৫ আগস্ট ৮২ বছর বয়সে এই পৃথিবী থেকে অনন্তলোকে পাড়ি জমান শতাব্দীর অন্যতম এই শ্রেষ্ঠ মনীষী।
আর্মস্ট্রং আমাদের উদ্দেশে দারুণ কিছু কথা বলেছেন- ‘ণড়ঁ যধাব ঃড় ঃধশব ৎরংশং, বি রিষষ ড়হষু ঁহফবৎংঃধহফ ঃযব সরৎধপষব ড়ভ ষরভব ভঁষষু যিবহ বি ধষষড়ি ঃযব ঁহবীঢ়বপঃবফ ঃড় যধঢ়ঢ়বহ.’
আর্মস্ট্রং মনে করতেন, তরুণরা যদি যে কোনো কাজে ঝুঁকি নিতে শেখে তাহলে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় শক্তিতে মানুষ আজীবনের জন্য আটকে থাকে না। যে কোনো গ্রহে এমনকি মঙ্গলগ্রহেও পৌঁছা মানুষের পক্ষে সম্ভব। তিনি সবসময় একটি বিষয় জোর দিতেন নাগরিকদের, বিশেষ করে তরুণ নাগরিকদের ভালোবাসতে, নতুন কিছু শিখতে এবং শেখাতে। তরুণদের সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে উৎসাহিত করা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন। তিনি মানুষের বুদ্ধিমত্তা, উন্নত চরিত্র গঠন এবং প্রজ্ঞার উন্নতি সাধনের প্রতি সব সময় জোর দিতেন।
জীবনে সফল হবার জন্য ঝুঁকি নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে মনীষীরা কথা বলেছেন। মার্কিন এন্টারট্রেইনার ও বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীতে তুমুল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মার্ক জাকারবার্গ এ প্রসঙ্গে একটি চমৎকার কথা বলেছেন- ‘The biggest risk is not taking any risk, in a world that’s changing really quickly, the only strategy that is guaranteed to fail is no taking risks.’ Robin Sharma বলেছেন- Sometimes, the biggest risks are those we take with our hearts.’ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন অসাধারণ এক কথা- ‘জীবনে ঝুঁকি নাও, জিতলে তুমি নেতৃত্ব দিবে আর হেরে গেলে পরবর্তী কাউকে পথ দেখিয়ে যাবে।’
আমাদের অধিকাংশই ভীরু। জীবনে আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না। চাপ ও সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে চাই। আমরা সাহসিকতাপূর্ণ কাজের কথা ভাবি কিন্তু খুব কম সময়েই জীবনে তা বাস্তবায়ন করি। আমরা যদি আমাদের স্বাভাবিক স্থানের বাইরে যাই তার ফল কী হবে, অন্যেরা আমাদের সম্পর্কে কী ভাববে, যে বিরোধের সৃষ্টি হবে তার ভয়ে আমরা আগেই ভীত হয়ে পড়ি।
অন্যদের আঘাত বা রুষ্ট না করার বিবেচনা দিয়ে আমাদের ভীরুতাকে লুকাতে পারি কিন্তু আমাদের বাস্তব অবস্থা পুরোটাই ভিন্ন। আমরা আমাদের মধ্যেই নিমগ্ন। অন্যেরা আমাদের কী ভাবেন তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। অন্য দিকে সাহসিকতা এবং বহির্মুখী চিন্তা মানুষকে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি এনে দেয়। আমরা সাহসীদের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের প্রশংসা করি এবং তাদের কাছাকাছি হতে পছন্দ করি কারণ তাদের সাহসিকতাপূর্ণ কাজ আমাদের দোলা দেয়, অনুপ্রেরণা জোগায়। কিন্তু আমরা কোন সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারি না। অথচ দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সফল হবার মাত্র একটি উপায় আছে, আর তা হলো সাহসী পদক্ষেপ তথা ঝুঁকি নেওয়া। বাঁচার মতো বাঁচতে হলে আমাদের জীবনকে অসাধারণ রোমাঞ্চকর একটি অভিযানে পরিণত করতে হবে। আর একদম ঝুঁকিহীন জীবন হচ্ছে মুরগির খোঁয়াড়ের মতো ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকা। এই টিকে থাকাকে বাঁচা বলে না, বলে জীবন্মৃত।
সুতরাং জীবনে সফল হবার লড়াইয়ে নেমে পড়ার এখনই তোমাদের উপযুক্ত সময়। জন্মগতভাবে মানুষ যেহেতু বিজয়ী তার পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সত্যিকারার্থে যারা মানুষ হয় তারা বিজয়ী হয়, না হয় লড়াই করতে করতে ধ্বংস হয়ে যায়। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে।