Home বিশেষ রচনা কুয়ালালামপুর থেকে পচেফস্ট্রুম -আহমেদ বায়েজীদ

কুয়ালালামপুর থেকে পচেফস্ট্রুম -আহমেদ বায়েজীদ

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠ আর দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমের সেনওয়েজ পার্ক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই সোনালি অধ্যায়ের মঞ্চ। প্রায় ২৩ বছরের ব্যবধানের দুটি ঘটনা লাল-সবুজ জার্সিধারীদের দুটি বড় অর্জন। এই ২৩ বছরে এদেশের ক্রিকেটে আরো অর্জন এসেছে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলেছে, টেস্ট পরিবারে নাম লিখিয়েছে, বড় কিছু জয় পেয়েছে; কিন্তু সব কিছুর পরেও ওই দুটি দিন এদেশের ক্রিকেটে সোনালি অধ্যায় হয়ে থাকবে।
যথার্থ কারণও রয়েছে। প্রথম ঘটনাটি এদেশের ক্রিকেটের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের পরই মূলত শুরু হয়েছে এদেশে ক্রিকেটের বিস্তার। আকরাম-বুলবুলদের হাত ধরেই বিশ্ব ক্রিকেটের মূল ধারায় জায়গা করে নিতে পেয়েছে বাংলাদেশ। তোমরা যারা কিশোর, তাদের সেই দিনের স্মৃতি মনে থাকার কথা নয়, কারণ তোমাদের জন্মই তো হয়েছে সেই ঘটনার পরে। আমাদের দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে যাদের বয়স ত্রিশের বেশি, তারাই কেবল সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। রেডিওতে চৌধুরী জাফরউল্লাহ শরাফতের কণ্ঠে জয়ের সেই মুহূর্তের ধারাভাষ্য শোনার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজয় মিছিল।
সেবার আইসিসি ট্রফির ফাইনালে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়। ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে টানটান উত্তেজনার লড়াইয়ে শিরোপা জিতে আনন্দে ভাসায় দেশকে। দেশের ক্রিকেটের প্রথম অর্জন হিসেবে তাই চির অমলিন আইসিসি ট্রফির শিরোপা। আর বিশ্বকাপে গিয়ে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারানোর পরই বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দাবি জোরালো করতে পেরেছিল। বিশ্বকাপের ওই দুই সাফল্যের কারণে দ্রুত ধরা দেয় টেস্ট খেলার সৌভাগ্য। তাই বিশ্ব ক্রিকেটে আজ টাইগারদের যে পথচলা, তার শুরুটা হয়েছিল আইসিসি ট্রফি জেতার মাধ্যমেই।
আর এর ঠিক ২২ বছর ৯ মাস ২৬ দিন পর দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে আকবর আলীর দল জিতেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শিরোপা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে হলেও এটি বিশ্ব সেরার মর্যাদা। অর্থাৎ যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা দল। তাই এই অর্জনও বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা অর্জনগুলোর একটি। ২৩ বছরের ব্যবধানের এই দুই অর্জনের কোনটি বড় সেই প্রশ্ন অমূলক। কারণ সময়ের ব্যবধান, দুই সময়ে এদেশের ক্রিকেটের অবস্থান- কোন কিছু বিবেচনায়ই একটির সাথে অন্যটির তুলনা হয় না।
আইসিসি ট্রফি আইসিসির টুর্নামেন্ট হলেও সেখানে অংশ নেয় সহযোগী সদস্য দেশগুলো। যাদের কোনটিই ক্রিকেট কাঠামো শক্তিশালী নয়। অর্থাৎ সেরা ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো এই প্রতিযোগিতার বাইরে থাকে। আর বাংলাদেশও তখন ক্রিকেট বিশ্বে হাঁটিহাঁটি পা করে চলতে শুরু করেছে। তেমন একটি সময়ে ওই আন্তর্জাতিক শিরোপা এদেশের ক্রিকেটের গতিপথই পাল্টে দিয়েছে। আকবর আলীর দল যে উন্নত প্রশিক্ষণ, বিদেশী কোচিং স্টাফ, অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে- মোট কথা তারা যে ক্রিকেট কাঠামোর মধ্যে বেড়ে উঠেছে সেটির সূচনা হয়েছিল আকরাম খানের দলের সেই অর্জনের পর। হাসিবুল হোসেন শান্তর ব্যাটে ‘১ বলে ১ রানের’ সেই ¯œায়ুক্ষয়ী জয়ের পর যে পথ রচনা হয়েছিল সেই পথে চলেই ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে আকবর আলীদের এই অর্জন। আইসিসি ট্রফি না জিতলে এদেশে এত দ্রুত ক্রিকেটের বিস্তার হয়তো হতো না।
তুলনা না করে দুটো ম্যাচের মধ্যে চাইলে অনেকগুলো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। দুই ম্যাচই ছিল বৃষ্টিবিঘিœত। দুই জায়গাই আশা-নিরাশার দোলাচলে ছিলো বাংলাদেশের ইনিংস। কখনো হারের শঙ্কা, কখনো আশার আলো আর ব্যাটসম্যানদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া। দুটো দলই অপেশাদার ক্রিকেটারদের এবং উভয় দলই নিজ নিজ সার্কিটের সেরার খেতাব অর্জন করেছে। আর তার চেয়েও বড় মিল দুটো দলই দেশকে এনে দিয়েছে গৌরব। যে গৌরব চির অমলিন। দিন মাস বছর কেটে যাবে, আমাদের ক্রিকেটে আরো বড় বড় অর্জন আসবে; কিন্তু শত বছর পরেও এদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ফিরে আসবে কুয়ালালামপুর, পচেফস্ট্রুমের বিজয় গাথা।

SHARE

Leave a Reply