প্রাণপ্রিয় কচিকাঁচা বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো তোমরা? নিশ্চয়ই ভালো আছো। আমিও তোমাদের দোয়ায় ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। জীবনে সফল হতে চায় না, এমন মানুষ হয়তো সমগ্র পৃথিবীতে একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তোমরাও হয়তো সফল হতে চাও, তাই না? সফল হওয়ার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো কঠোর পরিশ্রম। চলো, জীবনে সফল হতে চাইলে পরিশ্রম কতটা বেশি প্রয়োজন সে বিষয়েই আলোকপাত করা যাক আজকের এই পাঠে।
সাফল্য লাভের জন্য কোনো জাদুদণ্ড নেই। শিকড় থেকে শিখরে ওঠার আলাদা কোনো সিঁড়ি নেই। বাস্তব জগতে যারা পরিশ্রম করেন তারা-ই সফল হন। জীবন মানেই কাজ। জীবনের এক নাম রহস্য আরেক নাম সংগ্রাম, আড়ালেই থেকে যায় যে নাম। আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুধু কায়িকশ্রম নয়, কাজ হতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক। শুধু পড়ে নয়, কাজ হতে হবে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
যে ঘোড়া গাড়ি টানে সে লাথি মারতে পারে না। আবার যে ঘোড়া লাথি মারে সে গাড়ি টানতে পারে না। গাড়ি টানাটা দরকার, লাথি মারা নয়। মহান আল্লাহ পাখিদের আহারের ব্যবস্থা করেছেন কিন্তু খাবার তাদের বাসায় পৌঁছে দেননি। পাখিগুলো সকালে খালি পেটে বাসা থেকে বের হয়, সন্ধ্যায় ভরা পেটে বাসায় ফিরে আসে। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করতে হয় শুধু তার বেঁচে থাকার তাগিদে। তেমনিভাবে সফল হওয়ার জন্য প্রতিটি মানুষেরই কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। জন ওয়েবস্টার এর ইংরেজি ডিকশনারি সঙ্কলনের জন্য প্রায় ৩০ বছর সময় লেগে গিয়েছিল। বিখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন দশ হাজার বার ব্যর্থ চেষ্টার পর বৈদ্যুতিক বাল¡ আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা শুধু মহান আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য দেখার আশায় সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। অথচ তার সময়ে কোন ভালো যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না। ডেল কার্নেগিকে তার ময়লা পোশাকের জন্য এক পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ত্রিশ বছর পর কার্নেগি সে পার্কটি কিনে নিয়ে তাতে সাইন বোর্ড লটকিয়ে দেন ‘পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত’।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ভয়েস এস্টিভেজেজ ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে সারাজীবন পার করেছিলেন হুইল চেয়ারে চড়ে। অথচ আধুনিক বিজ্ঞান তার গবেষণা দিয়েই শাসিত হচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ও পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম দরিদ্র এক মাঝির ছেলে হওয়ায় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। অনেক সময় তাকে উপোস থাকতে হতো। দৈনিক দশ মাইল পায়ে হেঁটে তিনি স্কুলে যেতেন। পরবর্তীতে পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা আর জ্ঞানের আলোতে পুরো বিশ্ববাসীকে উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছেন। আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ বলের সূত্র আবিষ্কার করে একটি যুগকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। যুগকে জাগাতে পারলেও তিনি তার মৃত সংসারকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেননি। নারীর ক্ষত দূর করা তো দূরের কথা, কোন নারীকে বোঝার যোগ্যতাই তার ছিল না। সে এক আরেক প্রসঙ্গ, সময় এবং সুযোগ হলে সেই মজার বিষয়ে আরেকদিন লিখব। বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস যেদিন ‘তরলের ভর’ সূত্রটি আবিষ্কারের ফাইনাল ডিসিশনে পৌঁছান তখন এতটাই আত্মভোলা হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি উলঙ্গ হয়ে রাজপথে বেরিয়ে পড়েছিলেন। মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শহিদ মুরসি কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন। জীবনে তার বহু এমন সময় অতিবাহিত হয়েছে যে, পরীক্ষার ফি পরিশোধ করতে পারেননি। তাই বলে মিসরের প্রেসিডেন্ট হওয়া তার জন্য আটকে যায়নি। তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বাল্য বয়সে পথে পথে কমলা লেবু ও রুটি বিক্রি করতেন। কই? কোনো বাধা-ই তো তাদের টলাতে পারেনি।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় চার ব্যক্তিত্ব অ্যাপেল এর মালিক স্টিভ জবস, ফেসবুকের জাকারবার্গ, মাইক্রোসফটের বিল গেটস ও আলীবাবা ডট কমের মালিক জ্যাক ম্যা, একজনও অ্যাকাডেমিক লেখাপড়া শেষ করেননি। অথচ মেধা, পরিশ্রম ও জ্ঞানের প্রায়োগিক ব্যবহারের ফলে তারা কর্মজীবনে যেমন সফল তেমনি বিশ্বের অগণন মানুষের কাছে অনুকরণীয়। এরা বিশ্বকে নতুন পথ দেখিয়েছেন। এদের সবার সাফল্যের পেছনে শুধু একটি কথা- ‘জীবনে ঝুঁকি নাও, পরিশ্রম করো, জিতলে তুমি নেতৃত্ব দেবে। আর হেরে গেলে পরবর্তী কাউকে পথ দেখিয়ে যাবে। এদের গুরু বিল গেটসের একটি মজার উক্তি হলো- ‘তরুণ বন্ধুরা! তোমরা মেয়েদের পিছনে না ঘুরে পড়ালেখার পেছনে ঘুরো, পরিশ্রম করো। সময় হলে মেয়ে নয় মেয়ের মা-বাবারাও তোমার পিছনে ঘুরবে। সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলেছেন- I am a great believer in luck and I find the harder I work the more, I have of it. ডিপেক চোপড়া একটি চমৎকার কথা বলেছেন- “When you struggle with your partner, you are struggling yourself. Every fault you see in them touches a denied weakness in yourself.”
পবিত্র কুরআনেও মানুষকে উদ্যমী ও পরিশ্রমী হতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেন।” (৬৫:৭) “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি ও আরাম রয়েছে।” (৯৪:৫) “ফলাফলের জন্য বিশ্বাসীরা আল্লাহর ওপরই নির্ভর করবে এবং তার সাথে ধৈর্য ধারণ করবে।” (১৪:১১-১২)
সুতরাং জীবনে সুখী হতে চাইলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। একটি মহান উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পরিশ্রম ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি বা সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হলে সেটা হবে মহাভুল।
জীবন জ্ঞানীর জন্য স্বপ্নময়, ধনীর জন্য হাস্যরস আর গরিবের জন্য উপহাস। জীবন একটা চমৎকার খেলার আসর, এখানে হার-জিত রয়েছে। জিততে হলে অবশ্যই ভালো খেলতে হবে। খারাপ খেলে যেমন কেউ জিততে পারে না তেমনি ভালো খেলেও কেউ হারে না।
তোমরা কখনো মনে করবে না যে, দেরি হয়ে গেছে। জীবনের শুরু আজই। এখনই। জীবন ক্ষুদ্র এবং তা উপভোগের সময় আরো ক্ষুদ্র। দেরি হয়ে গেছে বলে কোনো কথা নেই। এলাম, দেখলাম, জয় করলাম এমন ঘটনা খুব কমই ঘটে। পৃথিবী বীরভোগ্য। উদ্যমশীল ও পরিশ্রমী মানুষের জন্যই আজকের পৃথিবী।
তা ছাড়া তোমরা একটু খেয়াল করলে দেখবে, সৃষ্টিগতভাবে আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আমাদের হাত সামনে চলে, পা সামনে চলে, নিঃশ্বাস নিই সামনে থেকে। আমাদের দৃষ্টি সামনের দিকে, মুখে কথা বলি সামনা সামনি। আমাদের সমস্ত শরীর, সমস্ত কিছু সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সৃষ্টি। তবে পিছনেও আমরা যেতে পারি সেটা ব্যতিক্রম হিসেবে। আমরা তিন পা পেছাতে পারি ছয় পা এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে। তোমাদের এটা বুঝতে হবে যে, এই তিন পা পিছিয়ে যাওয়াটা পরাজয় নয় বরং সাফল্যের দারুণ একটি কৌশল।
গবেষণা বলছে, জীবনে সফল হওয়ার জন্য মেধার ভূমিকা মাত্র দশ ভাগ। নব্বই ভাগই নির্ভর করছে তোমার পরিশ্রমের ওপর। জীবনকে সাইকেলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যে সাইকেলের ব্যালান্স ঠিক রাখার জন্য দরকার তীব্র গতি। সাইকেল চালানো বন্ধ হলেই যেমন তা পড়ে যায় তেমনি পরিশ্রম না করলেও জীবন ভেস্তে যায়। জীবনে কারো কাছ থেকে কোনো কিছুই আশা করতে নেই। কারো কাছে কোনো কিছু আশা করলে হতাশ হতে হয়। গতকাল ইতিহাস হয়ে গেছে। আগামীকাল রহস্যময়। আজ হলো স্রষ্টার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। তাই বর্তমানকে কাজে খাটানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
শুধুমাত্র বোকারাই অন্যের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হতে চায়। সাহসীরা বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
একবার স্বপ্নেরা জীবনকে প্রশ্ন করেছিল, ‘আমরা কখন সত্যি হব?’ জীবন বলেছিল- ‘কখনোই না। কেননা স্বপ্ন যখন সত্যি হয়, জীবন তখন মূল্যহীন হয়।’
বোকা মেয়েরা তার স্বামীকে দাস বানিয়ে তারা হয় গোলামের স্ত্রী। আর বুদ্ধিমতী মেয়েরা স্বামীকে রাজা বানিয়ে তারা হয় রানী। বোকা মেয়েরা পাঁচ হাজার টাকার ভ্যানিটি ব্যাগের ভিতর রাখে ১০০ টাকা। আর বুদ্ধিমতী মেয়েরা ১০০ টাকা দিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ কিনে ব্যাগের ভিতরে রাখে পাঁচ হাজার টাকা।
অন্যকে দেখিয়ে নিজের পুঁজি শেষ করার মতো বোকামি আর কী হতে পারে আমাকে বলো? যারা প্রকৃত বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিমতী তারা অন্যকে দেখিয়ে নয়, পরিশ্রম করে যায় নীরবে নিভৃতে। হঠাৎ তারা যখন কোনো সাফল্য লাভ করে তখন অনায়াসেই অন্যেরা চমকে যায়। জীবনে কখনো শর্টকাট সফলতা খুঁজবে না। সফলতার কোনো শর্টকাট ফর্মুলা নেই। শর্টকাট সফলতা স্থায়ী হয় না।
তা ছাড়া পরিশ্রম ছাড়া যে সাফল্য অর্জিত হয় সে সাফল্যে তৃপ্তি নেই। যারা কোনো বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়নি তাদের থেকে যারা বাধা অতিক্রম করে এসেছে তাদের সাফল্যের মূল্য অনেকগুণ বেশি। সমস্যার সম্মুখে আমরা কখনও কখনও নিরুৎসাহ বা হতাশ হয়ে পড়ি কিন্তু যারা পরিশ্রমপ্রিয় তাদের কখনও মনোবল নষ্ট হয় না। এই মনোবল নষ্ট না হওয়ার জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়। শান্ত সমুদ্রে যেমন দক্ষ নাবিক হওয়া যায় না তেমনি বিনা পরিশ্রমে সাফল্যের স্বাদ পাওয়া যায় না। প্রথমে সব সমস্যা-ই কঠিন মনে হয়, কালক্রমে তা সহজ হয়ে আসে। আমরা আমাদের সমস্যা হতে পালিয়ে যেতে পারি না, মনে রাখবে কেবল বিজিতরাই রণে ভঙ্গ দেয়। মানুষের জন্মই সংগ্রাম করার জন্য এবং সামনের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে।
সফল মানুষের জীবনী পর্যালোচনা করলে তোমরা দেখবে তাদের জীবন কতটা সংগ্রামমুখর ছিল। যে জীবনে কোনো সংগ্রাম নেই সে জীবনে কোনো উন্নতিও নেই। পবিত্র কুরআনেও মহান আল্লাহ একই কথা বলেছেন, ‘আমি কোন জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করি না, যতক্ষণ না সে নিজে তার ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়।’
ইংরেজ কবি রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন, “The struggle you’re in today is developing the strength you need for tomorrow. Don’t give up.” দুইবার নোবেল জয়ী একমাত্র নারী বিজ্ঞানী মাদাম কুরি বলেছেন-“You can’t hope to build a better world without improving the individuals. To that end, each of us must work for his own improvement. At the same time, share a general responsibility for all humanity, our particular duty being to aid those to whom we think we can be most useful.”
দার্শনিক ডিজরাইল বলেছেন- ‘জীবনটা একটা মস্তুভুল, জীবনটা একটা সংগ্রাম আর বার্ধক্য এক বিরাট আক্ষেপের সমষ্টি।’ দার্শনিক জর্জভিল বলেছেন, ‘যৌবন যার সৎ, সুন্দর ও কর্মময় তার বার্ধক্যকে স্বর্ণযুগ বলা যায়।’ ডেল কার্নেগি বলেছেন- ‘কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে মোড়ানো একটি জীবন্ত লাশ।’ আরেকটি দারুণ কথা বলেছেন জর্জ বার্নার্ড শ।
“Yesterday I dared to struggle. Today I dare to win.”
জীবন হচ্ছে একটি দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। সফলতার জন্য কোন বিশেষ সিক্রেট নেই। এটা হচ্ছে সঠিক প্রস্তুতি, কঠোর পরিশ্রম এবং অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। জীবন সংগ্রামে নামলে জয় অথবা পরাজয় দুটোই হতে পারে। কোন জয় সংগ্রাম ছাড়া আসে না। এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দেয়া যাক-
জীব বিজ্ঞানের এক শিক্ষক তার ছাত্রদের শেখাচ্ছিলেন, শুঁয়োপোকা কিভাবে প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়। তিনি ছাত্রদের বললেন- পরবর্তী দু’ঘণ্টার মধ্যে শুঁয়োপোকার গুটি থেকে প্রজাপতি বেরিয়ে আসবে। কিন্তু কেউ তাড়াহুড়ো করে প্রজাপতিকে গুটি থেকে বের করবার চেষ্টা করবে না। এই কথা বলে তিনি ক্লাস থেকে চলে গেলেন।
ছাত্ররা গুটির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। প্রজাপতি গুটি থেকে বের হওয়ার জন্য নড়েচড়ে চেষ্টা করছিল। একটি ছাত্র দয়া পরবশে শিক্ষকের উপদেশ অমান্য করে গুটি ভেঙে প্রজাপতিকে বাইরে আসতে সাহায্য করল। ফলে প্রজাপতিটিকে বাইরে আসার জন্য বেশি চেষ্টা করতে হলো না, পরিশ্রম করা লাগল না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই প্রজাপতিটি মারা গেলো।
শিক্ষক ফিরে এলে অন্য ছাত্ররা ঘটনাটি তাকে জানিয়ে দিলো। শিক্ষক ব্যাখ্যা করে সবাইকে বোঝালেন যে, প্রজাপতিটিকে সাহায্য করতে গিয়ে ওই ছাত্রটি অনিচ্ছাকৃতভাবে ও মনের অজান্তেই প্রজাপতিটিকে মেরে ফেলেছে। কারণ প্রাকৃতিক নিয়মে গুটি থেকে বের হওয়ার সময় তাকে যে সংগ্রাম করতে হয় যার ফলে প্রজাপতির ডানা দুটো বেড়ে ওঠে এবং শক্ত হয়। বালকটি প্রজাপতিকে সংগ্রাম করতে না দিয়ে তাকে বাঁচবার শক্তি সংগ্রহ করতে দেয়নি। ফলে প্রজাপতিটি মারা যায়।
এই তত্ত্বটি আমাদের জীবনেও আমরা প্রয়োগ করতে পারি। সংগ্রাম ছাড়া মানুষ জীবনে কোনো কিছুই লাভ করতে পারে না। পিতা-মাতারা যখন তাদের সন্তানদের অতিরিক্ত স্নেহ করতে গিয়ে পরিশ্রম ও সংগ্রাম থেকে আড়াল করে রাখেন, তখন শক্তি বৃদ্ধি না হতে গিয়ে তারাই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেন। পরাজয়কে মেনে নিলেই তুমি পরাজিত হবে। ব্যর্থতা হচ্ছে জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ভয়ঙ্কর একটি ব্যাধি। পরিশ্রম ছাড়া এই ব্যাধি সারানোর দ্বিতীয় আর কোন ঔষধ নেই। পরিশ্রম কোন ঘটনার ফলশ্রুতি নয় বরং পরিশ্রম অলৌকিক ফলাফল সৃষ্টি করে। এপ্রিলে তোমাদের সাথে আবার সাক্ষাতের আশা নিয়ে আজকে এখানেই শেষ করছি।