কুরআনকে কে না ভালোবাসে? কুরআনের ছবি আঁকা আছে প্রতিটি মুমিনের হৃদয়পাতায়। কিন্তু সাজিদের কাছে মনে হলো, তার আব্বু কুরআনকে একটু বেশিই ভালোবাসেন। বেশি ভালোবাসেন অন্য সবার চেয়ে। সুযোগ পেলেই তিনি কুরআন নিয়ে বসে পড়েন। কী সকালে কী সন্ধ্যায়। কখনো কখনো রাত গভীর হয়ে যায়, তবু তার কুরআন পড়া শেষ হয় না।
সাজিদ এমনও দেখেছে, আব্বু চোখ বন্ধ করে কুরআন তিলাওয়াত শুনছেন। আর তার দু’ চোখ বেয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রুধারা। এ অশ্রু যেন হদয়গলা ঝরনার পানি। ভালোবাসার জমজম।
সাজিদ একদিন বলল, আচ্ছা আব্বু! তুমি সবসময় কুরআন নিয়েই পড়ে থাকো। এর বিশেষ কোনো কারণ আছে কি? আব্বু বললেন, আছে! কুরআনে আমি আমার নিজেকে খুঁজে ফিরি। আমার কথা কুরআনে কোথায় কিভাবে আছে, জানতে চাই।
তোমার কথা কুরআনে আছে? অবাক হলো সাজিদ। আব্বু বললেন, শোনো- আমি কিভাবে নিজেকে খুঁজি। আমি তোমার বাবা। একজন বাবার কী কাজ, তা কুরআনেই আছে। আমি কারো ছেলে। আমি খুঁজে ফিরি, ছেলে হিসেবে আমার করণীয় কী! আবার কারো ভাই। কারো স্বামী। কারো আত্মীয়। প্রতিবেশী। প্রতিটি পরিচয়েরই আলাদা দায়িত্ব আছে। বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলো কুরআন থেকেই বের করার চেষ্টা করি আমি। আবার আমি যখন উপার্জনকারী- তখন আমি কেমন হবো? সবই কুরআনে আছে। জীবনের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে, আমি নিজেকে খুঁজে নিতে পারি কুরআনে! তুমিও তোমাকে খুঁজতে পারো এভাবেই। আল্লাহ বলেছেন, ‘আর আমরা আপনার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ!’ (সূরা আন-নাহল : ৮৯)। এখানে তুমি সবই পাবে, যা তোমার প্রয়োজন।
সাজিদ যেন অন্য জগতে আছে এখন। কুরআনে এত মুক্তো-মানিক, হিরে-পান্না! এবার সে বলল, তাহলে তো আমাকে বেশি বেশি পড়তে হবে! আব্বু বললেন, অবশ্যই। কুরআনের প্রথম কথাই হলো, পড়ো। হেরা গুহার প্রথম বাণী। লাওহে মাহফুজের প্রথম আলো।
সাজিদ বলল, আব্বু! আজ থেকে আমি ভিজে যাবো এ আলোয়। আর মনের সকল আঁধার ধুয়ে ধুয়ে খুঁজে নেবো আমার আমিকে। ইনশাআল্লাহ।
বিলাল হোসাইন নূরী