শেষ হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ট্রফির জন্য লড়াই করেছে ১০টি দেশ। বিশ্বকাপ ট্রফি প্রতি চার বছর পর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা নিয়ে যায় এই লড়াইয়ে জিতে। এই ট্রফির সাথে জড়িয়ে আছে ক্রিকেট বিশ্বের মর্যাদার প্রশ্ন। যে দেশ যতবার বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলেছে তাদের মর্যাদা ততোই উচ্চে। বিশ্বকাপ ছাড়াও খেলাধুলার যেকোনো আসরেই বিজয়ী দলের জন্য থাকে ট্রফি। কিছু ট্রফি যেমন ক্রীড়া আসরের মর্যাদা ও আভিজাত্যকে ফুটিয়ে তোলে, তেমনি কিছু ট্রফি জন্ম দেয় সমালোচনার। আজ তোমাদের জানাবো ক্রিকেটের এমন কিছু ট্রফির কথা যেগুলো নিয়ে সমালোচনাই নয়, সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরসও।
বিস্কুট ট্রফি
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। মোড়ক খুলে যখন ট্রফি উন্মোচন করলেন দুই অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ও অ্যারন ফিঞ্চ- তখন তাদের চক্ষু চড়কগাছ। অবাক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকরা। ট্রফি নয় যেন একটি বিস্কুট বের করা হয়েছে মোড়ক খুলে। তিনটি লাঠির ওপর বড় আকারের একটি বিস্কুট। এ কেমন ট্রফি! পরে জানা গেল টাক নামের একটি বিস্কুট প্রস্তুতকারী কোম্পানি ওই সিরিজের স্পন্সর, তাই তাদের একটি বিস্কুটের ডিজাইনে করা হয়েছে টুর্নমেন্টের ট্রফি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সইতে হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে।
ওয়ে হোয়ে ট্রফি
পরের মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আরেক কাণ্ড করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এবার পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজের ট্রফি আবারো আলোচনায়। এই সিরিজের ট্রফি দেখেও হাসির রোল উঠল ট্রফি উন্মোচনের রুমে। তিনটি উইকেটের পাশে একটি বল, তার সামনে বিশাল অক্ষরে লেখা ‘ওয়ে হোয়ে’।
ব্রিগটো পেইন্টস নামের একটি কোম্পানি পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড সিরিজের টাইটেল স্পন্সর। তাদের স্লোগান ‘ওয়ে হোয়ে’ এর প্রচারণার জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে ধারণা সবার। ঠিক যেমনটা করা হয়েছিল বিস্কুট ট্রফির ক্ষেত্রে। বিস্কুট ট্রফির মত ‘ওয়ে হোয়ে’ ট্রফি নিয়েও ক্রিকেটভক্তদের হাসি ঠাট্টার কমতি ছিল না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মজা করে বলেছেন, ট্রফি দেখেই হয়ত সিরিজ জিততে চাইবে না নিউজিল্যান্ড!
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে টেস্ট-সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় এই নামে। দুই দেশের দুই কৃতী ক্রিকেটার অ্যালান বোর্ডার ও সুনীল গাভাস্কারের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে সিরিজটির। তো ১৯৯৬ সালে এই সিরিজের ট্রফি নিয়ে হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। বাদামি রঙের একটি বড় কাঠের টুকরার মাঝে সাদা রঙের একটি গোল বল, ট্রফির নকশা ছিল এমনই। আসলে কী ভেবে যে ট্রফির নকশা করা হয়েছিল, সেটা এখনো রহস্য! বলটি আবার ক্রিকেট বলের মতোও নয়। অনেকটা ভূগোলের ক্লাসে ব্যবহৃত গোলকের মতো। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেবার ট্রফিটি ঘরে তুলেছিল ভারত।
কোকাকোলা ট্রফি
এক সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হতো শারজাহ কাপ নামে একটি টুর্নামেন্ট। ১৯৯৮ সালের আসরে অংশ নেয় ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। ভারতের অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনের হাতে আয়োজকরা যে ট্রফিটি তুলে দিয়েছিল সেটি দেখতে ছিলো বড়ই অদ্ভুত। বিশাল আকৃতির কোকের বোতলের মুখের আদলেই তৈরি করা হয়েছিল ট্রফিটি। কোকাকোলা ছিলো সেই টুর্নামেন্টের অফিশিয়াল স্পন্সর। তাই তাদের ব্র্যান্ডের আদলেই তৈরি হয় ট্রফিটি।
আফ্রিদি ট্রফি
২০১৫ সালে পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সিরিজে জয় পায় শহীদ আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আফ্রিদির হাতে যখন ট্রফি তুলে দেন অতিথিরা দেখা গেল আফ্রিদির সাথে মিল রয়েছে ট্রফির। উইকেট নেয়ার পর আফ্রিদি যেভাবে দুই হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতেন ঠিক সেই স্টাইলের একটি মানুষের প্রতিকৃতি দিয়ে তৈরি করা হয় ট্রফিটি। পরদিন একটি সংবাদ মাধ্যম মজা করে লিখেছে, আয়োজকরা কি আগেই জানতেন কে এই ট্রফি জিতবেন?
সত্যি যদি শ্রীলঙ্কা সিরিজ জিততো তাহলে বিষয়টি কেমন হতো যে, পাকিস্তানি একজন খেলোয়াড়ের উদযাপন স্টাইলে তৈরি ট্রফি থাকবে তাদের শোকেসে! ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজের ট্রফিও বানানো হয় একই স্টাইলে।
এমন অদ্ভুত ট্রফি ক্রিকেটে আগে অনেকবারই বানানো হয়েছে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে একবার বানানো হয়েছিল এমন একটি ট্রফি যেটির ওপরে একটি বল আর নিচে চারদিকে অনেকগুলো হাত। যেন হাতগুলোর সব বলটি ধরতে চেষ্টা করছে। অস্ট্রেলিয়া শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ওয়ার্ন-মুরালিধরন সিরিজে একবার ট্রফি বানানো হয়েছি দুই স্পিনার হাত দিয়ে। একজন অফ স্পিনার ও লেগ স্পিনার নিজ নিজ স্টাইলে হাতের মুঠোয় বল ধরে আছেন- এমন।
২০০৪ সালে জনশক্তি ট্রফি জিতেছিল শ্রীলংকা। ট্রফিটি ছিল লংকান অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনের উচ্চতার সমান। ২০০৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দুই প্রীতি ম্যাচের সিরিজের ট্রফি তো লম্বা ছিল, সাথে ছিল বিশাল চওড়াও! ট্রফির ওপরে বসান ছিল আরব আমিরাত, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের পতাকা। দুই অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় ও ইনজামাম-উল-হক দু’জন মিলেও তুলতে পারছিলেন না। উভয় দল একটি করে ম্যাচ জেতায় ট্রফিটি কেউ নেয়নি। স্থানীয় একটি ক্লাবে দেয়া হয় সেটি। এমন ট্রফি নিজ দেশ পর্যন্ত বয়ে নিতেই বা কে চাইবেন?