বন্ধুরা! আজ তোমাদের জানাবো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি সম্পর্কে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি টাইটান। এই পাখিটির ওজন প্রায় ৮৮০ পাউন্ড এবং এদের উচ্চতা তিন মিটার ছিল। টাইটান পাখির ডিমের ওজন ছিল তিন পাউন্ড। বুঝতেই পারছ বন্ধুরা! পাখিটি কত বড় ছিল। এখন তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে এত বড় পাখির খাদ্য কী ছিল! গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে টাইটান পাখিরা সাধারণত উদ্ভিদ, ফল, বীজ এবং মাঝে মাঝে কীটপতঙ্গও খাদ্য হিসেবে গ্রহণত করেছে।
তবে টাইটান বড় পাখি হিসেবে প্রথমেই স্বীকৃতি পায়নি। ফরাসি বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল সবচেয়ে বড় পাখি ‘এলিফ্যান্ট বার্ড’। হাজার বছর আগের কথা। সাভানা ও মাদাগাস্কারের গহিন বৃষ্টি অরণ্যে তখন হামেশাই দেখা মিলত বিশালাকার পাখি ‘এলিফ্যান্ট বার্ড’ বা ‘অ্যাপিওরনিস ম্যাক্সিমাস’র। সেখানে ছয় কোটি বছরের বেশি সময়ের বসবাস ছিল তাদের। কিন্তু মানুষের শিকার হতে হতে এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বিশাল আকৃতির অথচ নিরীহ প্রকৃতির এই পাখিটি। শক্তি সামর্থ্য কম হওয়ায় প্রায়ই এরা প্রতিপক্ষের সহজ শিকারে পরিণত হতো।
ফরাসি বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি। যদিও ১৮৯৪ সালেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন ‘অ্যাপিওরনিস ম্যাক্সিমাস’র চেয়েও বড় ছিল ‘অ্যাপিওরনিস টাইটান’।
ব্রিটিশরা টাইটানকে নিয়ে তাদের দাবির পক্ষে গবেষণা চালিয়ে যান। সেই সঙ্গে পাখিটির কঙ্কাল আর জীবাশ্ম দিয়েও চলতে থাকে বিস্তর পরীক্ষণ ও পর্যালোচনা। দীঘির্দন ধরে ম্যাক্সিমাস নাকি টাইটান? এই নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকে। এ যেন পাখিদের ছাড়িয়ে ব্রিটিশ আর ফরাসিদের মযার্দা আর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
সম্প্রতি ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা দাবি করলেন, এলিফ্যান্ট বার্ডের অন্য একটি প্রজাতি আকারে আরও বড় ছিল। সেটির ওজন ছিল প্রায় ৮৬০ কিলোগ্রাম, প্রায় একটা জিরাফের সমান। ‘জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন’ বিজ্ঞানী জেমস হ্যান্সফোর্ড বলেন, এটি সম্পূর্ণ একটি আলাদা প্রজাতি। নাম রাখা হয়েছে ‘ভোরোম্বে টাইটান’। পূর্বে যে হাড়গুলো মিলেছে, তা থেকে অনুমান করা যায় যে কিছু পাখির ওজন ৮৬০ কেজিও ছিল। এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় পাখি। হ্যান্সফোডের্র গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্সে’।
পূর্বে এই দৈত্যাকার পাখির ১৫ট ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে দু’টিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি লন্ডনের জুয়োলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এটি আসলেই ওই প্রজাতির নয়। গবেষক জেমস হান্সফোর্ড দাবি করেন, এই পাখিই হলো মাদাগাস্কারের প্রাণিজগতের মধ্যে বৃহত্তম। এবং দ্বীপপুঞ্জের বিবর্তনের ইতিহাসে যার অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গিয়েছে, বড় বড় প্রাণীদের বাস্তুতন্ত্রের ওপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। যদিও টাইটান পাখি নেই তবে এদের কিছু আত্মীয় আজও বেঁচে থাকে। এই পাখিগুলো সমতল স্থলে থাকে। এরা উড়তে অক্ষম। যেমন- ostrriches এবং emus।
সাভানা ও মাদাগাস্কারের মতো অনেক গহিন অরণ্যে এখনো অনেক বিলুপ্তপ্রায় হরেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। তবে পৃথিবী থেকে প্রতিদিন হাজারো প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থেই এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যেসব প্রজাতির পাখিগুলো এখন হুমকিপ্রাপ্ত তাদের কিভাবে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্যের ইতিহাসও আমাদের সবার জেনে রাখা জরুরি।