পৃথিবীতে অনেক ধরনের পাথর রয়েছে। এদের মধ্যে ক্রিস্টাল অন্যতম। ক্রিস্টাল পৃথিবীর খুব পরিচিত খনিজ পদার্থ। পৃথিবীর এমন স্থানে খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে যা সত্যিই বিস্ময়কর।
মিসর আর লিবিয়ার মধ্যকার সীমান্তজুড়ে আছে বিশাল এক বালির সমুদ্র। মরুভূমিটি এতই বড় যে গোটা আয়ারল্যান্ডের অনায়াসে জায়গা হয়ে যাবে এর মধ্যে। ধূলিঝড়ের দাপটে এখানে সৃষ্টি হয়েছে অনেক বালির পাহাড়। কোনো কোনো বালিরপাহাড় ১০০ মিটার বা ৩০০ ফুটের বেশি উঁচু। পাহাড়গুলোকে আলাদা করেছে বালির সমতল রাস্তা। সমতল এই জায়গাগুলোতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আশ্চর্য আর অমূল্য কিছু প্রাকৃতিক কাচ।
লিবিয়ার প্রাকৃতিক এই কাচকে বলা হয় পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে উন্নত স্বচ্ছ কাচের পিণ্ড। লিবিয়ার ডেসার্ট গ্লাসটি শক্তিশালী পাথর। লিবিয়ার ডেসার্ট গ্লাস একটি রহস্যময় শক্তি।
সিলিকা বালি থেকে তৈরি হওয়া এই কাচগুলোর রঙ এমনিতে হলুদ হলেও কিছু সাদা বা কালো রঙেরও হয়ে থাকে। একেকটি একেক ধরনের। এই মরুভূমিতে শুধু কয়েক শত কিলোমিটারজুড়েই আছে কয়েক হাজার টন সিলিকা পাথর।
বেশির ভাগ কাচ, নুড়ি পাথর আকৃতির। তবে অতিরিক্ত বাতাসে এগুলো ক্ষয়ে মসৃণ হয়ে গেছে। কিছু বড় টুকরোও আছে। এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বড় আকারের কাচটির ওজন প্রায় ২৬ কেজি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, বজ্রপাত, অগ্ন্যুৎপাত বা মরুভূমির বুকে উল্কা পড়ে কাচগুলোর জন্ম হতে পারে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলোর বয়স প্রায় দুই কোটি ৮৫ লাখ বছর। অনেকে ধারণা করেন, ওই সময় উল্কাপাতের কারণেই হয়তো এই কাচগুলোর জন্ম।
আরেক দল বিজ্ঞানীর ধারণা, মহাকাশ থেকে ধূমকেতু খসে পড়েছিল লিবিয়ান মরুভূমিতে। এই বিস্ফোরণে বালির তলদেশ অত্যন্ত গরম হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে গঠিত হয় সিলিকা কাচ।
কিভাবে এই মরুভূমিতে কাচ সৃষ্টি হয় তা নিয়ে ১৯৩২ সালে প্রথম গবেষণা করেন ইংল্যান্ডের প্যাট্রিক এ ক্লেটন। যদিও সাহারা মরুভূমির মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে পরিচিত হয়েছে এই কাচের গ্লাসের সাথে। তবে পশ্চিমা বিজ্ঞানীগণ কেবল ১৯৩০-এর দশকে লিবিয়ার ডেসার্ট গ্লাস আবিষ্কার করেছিলেন।
তখন কাচগুলোর কিছু নমুনাও ইংল্যান্ডে পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে যান। তবে এর বহুকাল আগে থেকেই ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা এর কথা জানত। প্রস্তরযুগের প্রথম দিকে তারা এই কাচ দিয়ে এক ধরনের যন্ত্র বানাত। পরে মিসরীয়রা অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করত এই কাচ। বিখ্যাত মিসরীয়ফারাও তুতেন খামেনের একটি লকেটের মধ্যেও এই একই সিলিকা কাচ পাওয়া গিয়েছে।
অমূল্য এ সিলিকা কাচ কিভাবে এই মরুর রাজ্যে এলো তা নিয়ে রহস্য এখনো রয়েই গেছে। তবে মহাকাশের খসে পড়া কোনো বস্তু থেকেই এর উৎপত্তি বলে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের ধারণা। তাই এর নাম দেয়া হয়েছে অলৌকিক অশ্রু।
এক সময় এই এলাকার অতীত অধিবাসীরা তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস, লাভার ঝর্না ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা করেন এবং এগুলোর ব্যবহার করেন। এভাবে একসময় তারা ভূতাত্ত্বিক এসব বিষয়ের ওপর প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিল। ক্রিস্টালের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি কোন শক্তিকে বিবর্ধিত করে। এটি বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং ধ্বংসের মুখে পড়ে। আটলান্টিয়ানদের মধ্যে ক্রিস্টাল বাস্ফটিকের ব্যবহার বেস ব্যাপকভাবে ছিল। তারা ক্রিস্টালের প্রতিসরণ, বিবর্ধন এবং সংগ্রহণ ক্ষমতার ভেতর দিয়ে গমনকারী শক্তিকে বিবর্ধিত করে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে আসে এবং এরপর তাকে স্থানান্তরিত বা ট্রান্সমিট করে বা বিক্ষিপ্ত করে। অপর একটি অনুরূপ ক্রিস্টালকে সংগ্রাহক বা রিসিভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর সেই রিসিভার ক্রিস্টালটি ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে যা অপর একটি ক্রিস্টালে শক্তি স্থানান্তর করে।
আটলান্টিয়ানরা এমন এক ধরনের ক্রিস্টালের তৈরি বিশাল পিরামিডগুলোকে শক্তি নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করত। বিষয়টা একটু গভীরভাবে দেখা যায়। যখন পৃথিবীর এক প্রান্ত শক্তির উৎসের দিকে মুখ করে থাকে তখন ঐ প্রান্তের পিরামিডটি শক্তিটিকে বিবর্ধিত করে দূরবর্তী এবং সঠিক গণনার মাধ্যমে স্থাপিত আরেকটি পিরামিডে শক্তি ট্রান্সমিট করে যা রিসিভার হিসেবে কাজ করে। এভাবে পর্যায়ক্রমে তারা শক্তি স্থানান্তরিত এবং ব্যবহার করত। এ পদ্ধতিতে যখন কোন পিরামিডে শক্তির ঘাটতি হয় তখন অপর পিরামিডগুলো তার প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। খুবই সহজ সরল এবং কার্যকর পদ্ধতি। কিন্তু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে না চলায় পরে এ পদ্ধতি তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। মরুভূমির মাঝে এমন মূল্যবান ক্রিস্টাল সৃষ্টির রহস্য এখনও উন্মোচন হয়নি। তবে এই পাথরগুলোর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এটি পৃথিবীর অন্যতম দামি পাথর হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।