হজ পালন করে আজই দেশে ফিরলেন দাদা। আর নাবিলের জন্য নিয়ে এলেন কত কত উপহার! ভালোবাসার ডালি সাজিয়ে এনেছেন যেন। খুশিতে নাবিলের হৃদয় তো তারা-ঝিলমিল! সবশেষে এক বোতল পানি হাতে দিয়ে দাদা বললেন- এ হচ্ছে সবচেয়ে বড় উপহার! সবচেয়ে বড় উপহার? তা-ও এক বোতল পানি? নাবিল অবাকই হলো। দাদা তার চোখে চোখ রেখে বললেন- আরে! এ তো জমজমের পানি। এ পানির গল্প শুনলে তো তুমি আরও অবাক হবে। তাহলে শোনো- নবী হজরত ইবরাহিম (আ) তার স্ত্রী হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইলকে নির্বাসনে রেখে এসেছিলেন মক্কার বিরান ভূমিতে। আল্লাহর নির্দেশেই তিনি এ কাজ করেছিলেন। তখন সেখানে কোনো মানুষের বসবাস ছিল না। ছিল না ফল-ফলাদি এমনকি একফোঁটা পানিও! বুকে পাথর বেঁধে ইবরাহিম (আ) তাদের একা রেখেই ফিরে চললেন। যখন সবার চোখের আড়ালে চলে এলেন, তখন আল্লাহর কাছে হাত তুলে বললেন- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার কিছু বংশধরকে বসতি স্থাপন করালাম ফসলহীন উপত্যকায়- আপনার পবিত্র ঘরের পাশে! হে আমাদের প্রতিপালক! তারা যেন সালাত কায়েম করে। কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের প্রতি ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদের রিজিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে। আশা করা যায়, তারা শুকরিয়া আদায় করবে।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৭)
এ দিকে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লেন শিশু ইসমাইল এবং হাজেরা নিজেও। তিনি সাফা পাহাড়ে ছুটে গেলেন। কিন্তু কোথাও কাউকে না দেখতে পেয়ে ছুটে গেলেন মারওয়া পাহাড়ে। এভাবে দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করেছিলেন তিনি। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন, হজরত ইসমাইল (আ)-এর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে বেরিয়ে আসছে পানির ফোয়ারা। হাজেরা এর চারপাশে বাঁধ দিলে তা কূপের আকার ধারণ করে। এ কূপের নামই হলো ‘জমজম’। যার রহমতের ধারা আজও প্রবহমান। পরবর্তীতে এর পাশেই কাবাঘর নির্মাণ করেন নবী ইবরাহিম (আ)।
নাবিল সত্যি অবাক হলো। বলল, এ তাহলে অলৌকিক নহরের পানি! দাদা বললেন, হ্যাঁ। মহানবী (সা) বলেছেন, ‘এ পানি অতিশয় বরকতময়!’ (মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন, ‘যে উদ্দেশ্যে জমজমের পানি পান করা হবে, তা পূর্ণ হবে’। (ইবনে মাজাহ) নাবিল ‘সুবহানাল্লাহ’ বলেই হাতে রাখা বোতল থেকে পান করা শুরু করল। দাদা বললেন- আচ্ছা, কী উদ্দেশ্যে পান করছো বলো তো! নাবিল বলল- আমি ‘ভালো মানুষ’ হতে চাই। তা শুনে দাদা খুবই খুশি হলেন। বললেন, এ পবিত্র পানি তোমার হৃদয়কে পবিত্র করুক। রহমতে ভিজে যাক তোমার প্রতিটি শিরা-উপশিরা! নাবিল বলল- আমিন।
– বিলাল হোসাইন নূরী