Home খেলার চমক অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছেন যারা – আবু আবদুল্লাহ

অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছেন যারা – আবু আবদুল্লাহ

যেকোনো ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন দেশের হয়ে বা জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা। দেশের জার্সি গায়ে পরতে রাত-দিন একাকার করে পরিশ্রম করে চলেন একেকজন তরুণ। কারো সেই স্বপ্ন ধরা দেয় হাতের মুঠোয়, কারো বা অধরাই থেকে যায়।

আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক যে কোন ক্রিকেটারের কাছে সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত। দেশের হয়ে প্রথম মাঠে নামার দিনটি জীবনের সেরা দিনগুলোর একটি তাতে কোনো সন্দেহ নেই; কিন্তু সেই প্রথম ম্যাচটি যদি আবার হয়ে যায় অবিস্মরণীয় কোন পারফরম্যান্সের, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। অভিষেক ম্যাচে দারুণ কিছু করে দেখানোর সৌভাগ্য অবশ্য সবার হয় না। এখন পর্যন্ত ক্রিকেট ইতিহাসে যাদের সেই সৌভাগ্য হয়েছে তাদের নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।

তারা ১৪ জন

গত আগস্ট মাসে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (ওডিআই) অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান রেজা হেনড্রিকস। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে অভিষেক হয় রেজার। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন ৮৯ বলে ১০২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪৬ বছরের ইতিহাসে ১৪তম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করলেন রেজা। অর্থাৎ তার আগে মাত্র ১৩ জন ক্রিকেটারের আছে এই বিরল কৃতিত্ব। একদিনের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে ৪ হাজারের বেশি। খেলেছেন অসংখ্য ক্রিকেটার, কিন্তু এমন কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছেন মাত্র ১৪ জন।

রেজা হেনড্রিকস

রেজা হেনড্রিকসের আগে সর্বশেষ এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন পাকিস্তানের তরুণ ওপেনার ইমাম-উল হক। কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ইনজামাম-উল হকের ভাতিজা হওয়ায় দলে সুযোগ পেয়েছেন কি না এই নিয়ে যখন বিতর্ক চলছিলো, তখনই ব্যাট হাতে সমালোচনার জবাব দেন ইমাম। ইমাম-উল হকের অভিষেক ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিলো শ্রীলঙ্কা। আবুধাবিতে ২০১৭ সালের অক্টোবরে।

অভিষেক ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব প্রথম দেখিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেনিস অ্যামিস ১৯৭২ সালে। একই সাথে সেটি ছিলো ওয়ানডে ইতিহাসেরও প্রথম সেঞ্চুরি। ইতিহাসের দ্বিতীয় ওয়ানডে ছিলো সেটি, সেদিন ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় অ্যামিসের। ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়ার ২২২ রান তাড়া করতে নেমে ১৩৪ বলে ১০৩ রানের একটি ইনিংস খেলেন অ্যামিস। তার ছয় বছর পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেসমন্ড হেইন্স (১৪৮)। এরপর এই তালিকায় নাম লিখিছেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, সেলিম এলাহি, মার্টিন গাপটিল, কলিন ইনগ্রাম, লোকেশ রাহুলের মতো ক্রিকেটাররা।  গৌরবজনক এই তালিকায় আছেন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বাউন্সারের আঘাতে নিহত অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ফিলিপ হিউজও। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে সেঞ্চুরি করা হিউজ ২০১৪ সালে সিডনিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিং করার সময় ঘাড়ে বল লেগে ২৬তম জন্মদিনের দুই দিন আগে মৃত্যুবরণ করেন এই ক্রিকেটার।

অভিষেক ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের (৩ জন)। আর অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করেছেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। দ্বীপ দেশটির বিরুদ্ধে অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন পাঁচজন ব্যাটসম্যান। অভিষেকে সেঞ্চুরিয়ানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস ডেনমন্ড হেইন্সের ১৪৮। সবচেয়ে কম বল খরচ করেছেন রেজা হেনড্রিকস (৮৯)। টেস্ট খেলুড়ে দেশের বাইরে একমাত্র অভিষেক সেঞ্চুরিয়ান হংকংয়ের মার্ক চাপম্যান।

বোলিংয়ে সেরা যারা

কাগিসো রাবাদার

এখানেও প্রথম নামটি একজন দক্ষিণ আফ্রিকানের। পেসার কাগিসো রাবাদা ওয়ানডে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডের মালিক। ২০১৫ সালের জুলাইতে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় রাবাদার। প্রথম ম্যাচেই গুঁড়িয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ৬টি উইকেট। রাবাদার আগে অবশ্য রেকর্ডটি ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিদেল অ্যাডওয়ার্ডসের দখলে। ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২ রান খরচ করে তিনিও নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। তবে রান কম খরচ করায় রেকর্ড বুকে রাবাদার নামটিই ওপরে থাকবে। অভিষেক ওয়ানডেতে ৫ উইকেট করে নেয়ার কৃতিত্ব আছে আরো ১১ জন বোলারের। তার মধ্যে বাংলাদেশের দু’জন। তাসকিন আহমেদ (২০১৪) ও মোস্তাফিজুর রহমান (২০১৫), দু’জনেরই অভিষেক হয়েছিলো ভারতের বিপক্ষে।

সাদা পোশাকে রঙিন অভিষেক যাদের

টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ফরম্যাট। টেস্ট ক্রিকেটের বয়স প্রায় দেড় শ’ বছর। এই ফরম্যাটে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি কৃতিত্ব আছে ১০৫ জন ক্রিকেটারের। ১৮৭৭ সালে ইতিহাসের প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান। দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে কিংবদন্তি ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডব্লিউ জি গ্রেস। গ্রেসের অভিষেক হয় ইতিহাসের চতুর্থ টেস্টে। এই তালিকায় আছেন জাভেদ মিয়াঁদাদ, মোহাম্মাদ আজহার উদ্দীন, মার্ক ওয়াহ, সৌরভ গাঙ্গুলি, বীরেন্দ্র শেবাগ, ইউনুস খানের মত তারকা ব্যাটসম্যানদের নাম।

মোহাম্মদ আশরাফুল

বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আবুল হাসান রাজুর রয়েছে এই কৃতিত্ব। এর মধ্যে দু’টিই বিশ্বরেকর্ড- আশরাফুলের সেঞ্চুরিটি ছিলো সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০১ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচে সেঞ্চুরির দিন তার বয়স ছিলো ১৭ বছর থেকেও একদিন কম। আর পেস বোলার রাজু করেছেন দশ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের লরেন্স রো ও পাকিস্তানের ইয়াসির হামিদ অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে করাচি টেস্টের দুই ইনিংসে ইয়াসির করেছিলেন ১৭০ ও ১০৫ রান। রো করেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৭২ সালে। অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান রো’র দখলে (২১৪+১০০*=৩১৪)। তবে সর্বোচ্চ ইনিংস আবার ইংল্যান্ডের টিপ ফস্টারের (২৮৭)।

সবচেয়ে বেশি অস্ট্রেলিয়ার ২০ জন ক্রিকেটার অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন, দ্বিতীয় ইংল্যান্ডের ১৯ জন। এরপর ভারতের ১৪, পাকিস্তানের ১২ জন, নিউজিল্যান্ডে ১১ জন।

টেস্ট বোলিং

টেস্ট অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড যৌথভাবে ভারতীয় লেগস্পিনার নরেন্দ্র হিরানি ও অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়াম পেসার রবার্ট ম্যাস্ই’র। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে দু’জনেই নিয়েছেন ১৬টি করে উইকেট। অবশ্য রান কম দেয়ায় রেকর্ড তালিকায় নরেন্দ্র হিরনির নামটিই শীর্ষে আছে। ১৯৭২ সালের জুনে লর্ডসে অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৭ রান খরচায় দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৬ উইকেট নেন ম্যাস্ই। আর এর ১৬ বছর পর (১৯৮৮ সালে) মাত্র এক রান কম খরচ করে চেন্নাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬ উইকেট নেন হিরানি। একটি জায়গায় মিল আছে এই দুই বোলারের- দু’জনেই উভয় ইনিংসে সমান ৮টি করে উইকেট নিয়েছেন। অভিষেক টেস্টের এক ইনিংসে ৮ উইকেট নেয়ার রেকর্ড আছে আরো চারজনের। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কম রান দেয়ায় রেকর্ড তালিকায় সবার ওপরের নামটি অস্ট্রেলিয়ার অ্যালবার্ট ট্রটের। ১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে অ্যাডিলেডে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অভিষিক্ত ট্রট ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ রানে ৮ উইকেট নেন।

এখন পর্যন্ত ১৫০ জন বোলার অভিষেক টেস্টের এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাদের সবচেয়ে বেশি ৪৭ বার এই কীর্তি ইংলিশ বোলারদের। আর অভিষেকে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন ১৫ জন।

বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে প্রথম অভিষেকে ৫ উইকেট নেন অলরাউন্ডার ও সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। ২০০০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১৩২ রানে ৬ উইকেট নেন নাইমুর। এ ছাড়া পরবর্তীতে মো: মঞ্জুরুল ইসলাম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইলিয়াস সানী, সোহাগ গাজী, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ এই কৃতিত্ব গড়েন ।।

SHARE

Leave a Reply