নদী
তরিকুল ইসলাম মাসুম
নদীর বুকে আছে শত
পানিরাশি ভরা
নদীর পাড়ে বহু লোকের
ঘরবাড়ি গড়া।
নদীর স্রোতে দু’কূল ভাঙে
ভাঙে বাড়ি ঘর
মাটিগুলো দূরে গিয়ে
জেগে উঠে চর।
জেলেরা যায় মাছ ধরতে
ফেলে রাখে জাল
নৌকা চালায় স্রোতের মুখে
বুঝে ঢেউয়ের তাল।
গরম এলে পুকুর ডোবার
পানি থাকে তলে
তার পানিতে মাঠ ভিজিয়ে
সোনা ফসল ফলে।
মা
নাহিদা বিনতে সাহজাহান
আজকে হঠাৎ আম্মু তোমায় পড়ছে মনে খুব
শোক আকাশে মেঘের ভেলায়, কেঁদে ভাসায় বুক।
মমতা মেখে মিষ্টি হেসে ডাকে নাতো কেউ
বুকের ভেতর উপচে পড়ে দুঃখ নদীর ঢেউ।
তোমার কাছে পেতাম খুঁজে জগৎ জোড়া সুখ
দুঃখগুলো উবে যেতো দেখলে তোমার মুখ।
তুমি আমার ভুবন মাঝে সবার চেয়ে ভালো
আঁধার ঘরে তুমিই আমার জোছনা মাখা আলো।
তোমায় ছাড়া কেমনে বলো একলা আমি থাকি
ইচ্ছে করে তোমার কোলে মাথাটা আজ রাখি।
দুঃখে ভারাক্রান্ত হৃদয় ওষ্ঠাগত প্রাণ
এই জীবনে হবে না হয়তো! দুঃখের অবসান।
স্মৃতিপটে ভাসছে মাগো প্রীতি বারংবার
প্রীতির অনলে হৃদয় পুড়ে হয়েছে ছারখার!
পৃথিবীর বুকে তোমার চেয়ে আপন কাউকে নেই জানা
অল্প দিনেই তোমার অভাব বুঝেছি আমি ষোল আনা।
তোমার কথা ভাবলে আমি, নয়ন জলে ভাসি
খোদার পরে মাগো শুধু তোমায় ভালোবাসি।
দু’হাত তুলে চাইছি আমি, মহান রবের কাছে
জান্নাতে যেন দেখতে পাই মোর পাশে মা আছে।
ছড়া
সিফাতুল্লাহ
ছড়া হলো মিষ্টি হাসি
ছড়া হলো আলো
ছড়া হলো সুরের বাঁশি
মন যে করে ভালো।
ছড়া হলো মেঘের ছায়া
ছড়া হলো আশা
ছড়া হলো প্রাণের মায়া
মনের ভালোবাসা।
ছড়া হলো শীতল হাওয়া
ছড়া হলো আর্দ্র
ছড়া হলো ফিরে পাওয়া
কাশ-বাগানের ভাদ্র।
ছড়া হলো সত্যবাণী
ছড়া হলো খুশি
ছড়া হলো জ্ঞানের রানি
তথ্য রাশি রাশি।
এমন ছড়া হলে পড়া
প্রাণ যেন যায় ভরে
সুপ্ত মনের বিকাশ ঘটায়
দ্বীন ইসলামের তরে।
মনের ডানা
মঈন খান
আমার তো আর ডানা নেই
উড়বো না হয় নীল আকাশে
মনের ডানা মেলেই!
আমার তো আর ফুলকা নেই
ডুবসাঁতারে মাতবো না হয়
মনের ফুলকা দিয়েই!
আমার একটা মন আছে ভাই
সেটাই বা কম কিসে!
এ মন দিয়ে খুব সহজেই
যাই সুদূরে মিশে।
মনের জোরেই গড়ে তুলি
সুদৃশ্য সব ডানা
তাতে চড়েই শূন্যে ভাসি
কেউ করে না মানা।
গাছ লাগাও
মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী
বৃক্ষ রোপণ করতে হবে
এখন বর্ষাকাল,
দিনে দিনে উষ্ণতাতে
বিশ্ব বেসামাল।
কেয়ামত আসছে জেনেও
গাছের চারা লাগাও,
ঝিমিয়ে পড়া প্রকৃতিটা
সবুজ করে জাগাও।
গাছের চারা রোপণ করো
বইবে হিমের রেশ,
আসবে ফিরে প্রকৃতিতে
শান্ত পরিবেশ।
গাছের ফলে পুষ্টিভরা
সকলে তা খায়,
যতœ করে গাছ লাগাও
বাড়ির আঙিনায়।
পুকুর এবং রাস্তাধারে
লাগাও সারি সারি,
ছায়া পাবে পশু পাখি
এবং পথচারী।
পলি
আফসার নিজাম
আঁধার রাতের পর্দা ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ে আলো
শহর নগর গ্রাম পেরিয়ে পালিয়ে গেলো কালো
মিনার থেকে সুরের পাখি ছড়িয়ে দিলো নুর-ই
এমন সময় উঠলো পলি ঘুম করে দেয় ঘুড়ি।
অগোছালো বিছনাগুলো গুছায় রেখে হাতে
ছুটলো পলি বস্তা নিয়ে টোকাই সাথির সাথে
ময়লাগুলো ঘেঁটে দেখে কি আছে তার ভেতর
যা দেখে না কুকুর বিড়াল ভদ্র কিংবা মেথর।
বিষ্টি আসে রৌদ্র হাসে তবু পলি হাঁটে
ঘামে ভেজা বিষ্টি ভেজা এমনি সময় কাটে
সকাল বেলা হয়নি খাওয়া দুপুর বেলা তাই
রাত্রি এসে দিচ্ছে উঁকি খাওয়ার কিছু নাই।
সারা দিনের টোকনা টোকাই রাত্রি হলে বেচা
হিসাব কষে দেখেই পলির চোখ হয়ে যায় পেঁচা
যা পেয়েছে পয়সা কড়ি যায় না কিছু কেনা
খাওয়ার জন্য আর কতো দিন করতে হবে দেনা।
ঝুপড়ি ঘরের ভেতর বাবা ধুঁকছে রোগ আর জ্বরে
অষুধ পানি খানা দানা নেই কিছু তার ঘরে
তবু বাবা অপেক্ষাতে এলো বুঝি পলি
খাবার টাকা জোগাড় হলে আনতে অষুধ বলি
সেই আশাতে রোগা বাবার চোখ করে ছলছল
শূন্য পলি রিক্ত দেখে চোখ করে টলমল।
আজও বুঝি ভুখা রবো খালি পেটে ঘুম
স্বপ্ন দেখে বাবা মেয়ে খাচ্ছে ধুমাধুম
এই দুনিয়ার কুকুর বেড়াল তারাও খাবার পায়
সৃষ্টি সেরা মানুষগুলো ভুখা রয়ে যায়।
চিল ওড়ে
হেলাল আনওয়ার
ছোট্ট মাটির ঘর
কাদা পানির দেয়াল দেয়া
বড় যে নড়বড়।
কিচির মিচির পাখির গানে
ঘুম যে ভাঙে ভোরে
বুনো বিড়াল থাবা মারে
ভাঙা কাঠের দোরে।
পুবের পাশে ছোট্ট মাঠ
নোচুর কুড়ের বিল
রাতের বেলায় শেয়াল ডাকে
দিনের বেলায় চিল।
চিল ওড়েরে চিল ওড়ে
ওদের ডানার ঝাপটাতে
আমার ভাঙা ঘর নড়ে।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু
আবদুল ওহাব আজাদ
এখন আমার চোখের কোণায়
জমে থাকে জল
রোহিঙ্গাদের কষ্ট দেখে চোখ
করে ছলছল।
বানের পানি চারিদিকে
ভাসে নিম্নচাপে
মাথা গুঁজার ছাউনি যে নেই
ঠাণ্ডা জলে কাঁপে।
পেটে ক্ষিধে গায়ে অসুখ
কোথায় যাবে তারা
সব হারিয়ে তারা এখন
কেবল গৃহহারা।
মাথার ওপর ছাউনি দিতে
বুকের মাঝে টেনে নিতে
বাড়াই সেবার হাত,
সরকারের চেষ্টা বলে
আমাদেরও সেবার ছলে
কাটুক কালো রাত।
শরতের চিঠি
সাজজাদ হোসাইন খান
ধলবগাদের পাখায় গুঁজে কে পাঠালো চিঠি
সেই চিঠিতে শরত ফুলের পুলক ভরা দিঠি।
পাখির ঠোঁটে অলস সময় পাতার গালে নীল
গগন ফেটে হাসে প্রভাত সোনালি স্বপ্নিল।
শ্রাবণ ভেজা মেঘের ঘাড়ে ঝোলে রাতের তারা
আকাশ জুড়ে কাশফুলেরা দিচ্ছে শুধু নাড়া।
চাঁদের চোখে শিশির ফোটা নিশির দেহে হিম
বৈঁচি পাতায় চৈতি সুরে হাওয়ারা রিমঝিম।
স্বর্ণলতার কর্ণে ফোটে বর্ণ শত শত
রক্তচূড়ার তক্তপোষে বর্ষা যখন গত।
সূর্য তখন দাঁড়িয়ে থাকে স্নিগ্ধ ছায়ার তলে
ঘিয়ের মতো রোদের পানি নামছে গলে গলে।
বাতাস কেটে খুশির চমক ভূষির মতো উড়ে
হঠাৎ লালের আঁচল দোলে অনেক দূরে দূরে
শান্ত ঝিলের প্রান্তে কারা রঙের চিঠি রাখে
আটকে থাকে ধলবগারা মনের ফাঁকে ফাঁকে।
এই যে শরত বন্ধু শরত মহাকালের ঘাম
সময় গুনে হাঁটছে দেখো দিবস এবং যাম।