Home ক্যারিয়ার গাইড লাইন জীবনে সফলতার জন্য ব্যক্তিগত বাধা অবশ্যই দূর করতে হবে -ড....

জীবনে সফলতার জন্য ব্যক্তিগত বাধা অবশ্যই দূর করতে হবে -ড. মুহা: রফিকুল ইসলাম

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। বন্ধুরা কেমন আছ? নিশ্চয় ভালো। আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, কেউ কোন অসুবিধায় থাকলেও মহান আল্লাহ যেন তা দূর করে দেন। আর একটা তথ্য ‘আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেন সবসময় আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে; কারণ আমাদের থেকেও অনেক মানুষ অধিকতর কষ্টের মাঝে দিন পার করে সে জন্য। প্রিয় বন্ধুরা রমজান মাস খুবই কাছে এসে গেছে। এ মাসটি পাওয়ার জন্য সবার দোয়া করা উচিত। রাসূল সা: সাওমের মাস আসার পূর্বে নিম্নোক্ত দোয়াটি বেশি বেশি বলতেন, “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমাদান” ‘হে আল্লাহ তুমি রজব এবং শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং রমজান মাসে আমাদের পৌঁছে দাও।’ আমরা সবাই রমজান মাস আসার পূর্বে এ দোয়া খুব বেশি বেশি করবো ইনশাআল্লাহ।
জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখা
বন্ধুরা এবার চলো আমরা আমাদের জীবন গড়ার কথা আলোচনা করি। জীবন সাজানোর স্বপ্ন সবার আছে তাই না। কবি বলেন, ‘এমন জীবন করো গঠন মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন; এমন জীবন করো না গঠন মরণে কাঁদিবে তুমি হাসিবে ভুবন।’ তোমরা কোন জীবনটা চাও? নিশ্চয়ই যে জীবন সুখ-শান্তি, হাসি-আনন্দের, ভালো লাগা-ভালোবাসার জয়গান করে তাই না? জীবন সাজানোর কথা বললে কত কিছু সামনে ভেসে ওঠে? এখন তোমার উঠছে না? সত্যি করে বলোতো? কত গল্পের, কত নাটকের সংলাপ এবং চিত্র সামনে আসছে তার হিসাব নেই। তবে আল কুরআনের কোনো আয়াত বা রাসূল সা:-এর কোনো হাদিস মনে পড়ছে তোমাদের এ ব্যাপারে? একটু মনে করার চেষ্টা করে দেখ? ওকে, আমি একটি আয়াতের কথা কথা বলছি ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আপ্যায়নের জন্য থাকবে ফেরদৌসের বাগান? সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং কখনো সে স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে তাদের মন চাইবে না (সূরা আল কাহাফ ১০৭ ও ১০৮ নং আয়াত)। জীবনকে রঙিন এবং স্বপ্নময় করে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর কী অসাধারণ ওয়াদা! এ সফলতার জন্য এখানে মাত্র দু’টি শর্ত আছে। ১. মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ২. সৎ কাজ করা।
প্রিয় বন্ধুরা! সফল জীবনের জন্য বা জীবনে সফলতার জন্য আমাদের সামনে কিছু বাধা বা ব্যারিয়ার আছে, যা ব্যক্তিগতভাবে (অর্থাৎ তুমি নিজে) তার মুখোমুখি হবে, আবার তা তুমি নিজেই সমাধান করবে। তাহলেই বাধার প্রাচীর দূর হয়ে তোমার সামনে উদ্ভাসিত হবে সোনালি ভোর, যার আলোয় তুমি অবগাহন করতে পারবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ সূরা আল ইনশিরাহ বা আলামনাশরার ৫ এবং ৬ নং আয়াতে বলেন, “প্রকৃত কথা এই যে, সঙ্কীর্ণতার সাথে প্রশস্ততাও রয়েছে? আসলে সঙ্কীর্ণতার সাথে আছে প্রশস্ততাও।

ব্যক্তিগত জীবনের অন্যতম
বাধাসমূহ
একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত কী কী সমস্যা হতে পারে? তোমার নিজেরগুলোসহ অন্যান্য বন্ধুদের সমস্যা নিয়ে একটু চিন্তা করো। অনেক সমস্যা পাওয়া যাবে তাই না? আচ্ছা খুব বেশি যে সমস্যাগুলো হতে পারে তার কিছু এমন-
১. দারিদ্র্য ২. ক্লাসে যথাসময়ে না আসা ৩. শিক্ষার্থীকে অবহেলা করা ৪. মারামারি করা ৫. টিফিন না থাকা ৬. মাদক সেবন করা ৭. অনৈতিক সম্পর্ক থাকা ৮. অকৃতকার্য হওয়া ৯. সহপাঠীদের সাথে মিশতে না পারা ১০. প্রয়োজনীয় বই ক্রয় করতে না পারা ১১. অতিরিক্ত কোন শিক্ষকের কাছে আলাদাভাবে পড়তে না পারা ১২. বাড়ির কাজ (Home task) না করা ১৩. দেরি করে ঘুমানো এবং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ১৪. মোবাইল ফোন ব্যবহার ১৫. যারা মেস বা হোস্টেলে থাকে তাদের গৃহকাতরতা ১৬. পরস্পর শত্রুতা ১৭. স্কুল বা কলেজের পাওনা পরিশোধ করতে না পারা ১৮. ক্লাস পালানো ১৯. কোন কাজে কালক্ষেপণ বা গড়িমসি করা ২০. পরীক্ষায় নকল করা ২১. ক্লাস-রুমে গোপনে ফেসবুক বা গুগল করা ২২. কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা ২৩. বাড়ির কাজ খুব বেশি হওয়া ২৪. বিনোদন করতে না পারা ২৫. সবসময় পরিবারের অথবা প্রতিষ্ঠানের চাপে থাকা ইত্যাদি নানা রকমের সমস্যার মুখোমুখি তুমি বা তোমরা প্রতিনিয়ত হচ্ছো।

অন্যান্য মনীষীদের ব্যক্তিগত জীবনে বাধাসমূহ
এত সব সমস্যার মাঝে তোমার সাথে কোন্ কোন্ সমস্যার মিল আছে? চিন্তা করো। আচ্ছা কোন কোন সমস্যা খুব বেশি বড় মনে হচ্ছে? অর্থ? পড়াশুনার প্রেসার? না পড়তে ভালো লাগে না? কোনটা? যা-ই হোক তোমাকেই তার মুখোমুখি হতে হবে এবং তা সমাধানের পথ বের করতে হবে।
আমাদের প্রিয় নবী হয়রত মুহাম্মদ সা:-এর সমস্যাগুলো মনে আছে তোমাদের? দেখ তাঁর কী কী মৌলিক অসুবিধা ছিলো-
ক. জন্মের ছয় মাস আগে পিতা মারা গেলেন
খ. জন্মের সাত বছর পর মা জননী মারা গেলেন
গ. বেড়ে উঠলেন আপনজন ছাড়া দাদা এবং চাচাদের কাছে
ঘ. অর্থ জোগানের জন্য তিনি নানা ধরনের শ্রম বিনিয়োগ করেছেন। তিনি তাঁর জীবনের সার্বিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে চল্লিশ বছরের আগে তৎকালীন সমাজের কাছে আল-আমিন (বিশ্বাসী) এবং আস সাদিক (সত্যবাদী) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি জীবনের সকল পর্যায়ে এত সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পরও নিজের প্রচেষ্টায় সকল কিছু পরাভূত করতে সক্ষম হয়েছেন।
তোমার এবং তোমাদের সমস্যা নবী করিম সা:-এর থেকেও কি অধিক? অবশ্যই না। তিনি এত বড় হলেন কিভাবে? পরিশ্রম, সততা, সত্যবাদিতা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে। তাঁর সম্পর্কে ব্রিটেনের প্রখ্যাত নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ (জ. ১৮৫৬- মৃ. ১৯৫০ খ্রি.) বলেছিলেন:
I believe that if a man like him were to assume the dictatorship of the modern world, he would succeed in solving its problems in a way that would bring the much needed peace and happiness
অর্থাৎ আমি বিশ্বাস করি, যদি তাঁর মত ব্যক্তি আধুনিক বিশ্বের একচ্ছত্র শাসক হতেন তাহলে তিনি সমস্যাগুলোর সমাধান এমনভাবে আনতেন, যে বিশ্ব বহুল প্রত্যাশিত শান্তি এবং সুখে ভরে উঠত।

ব্যক্তিগত বাধা পেরিয়ে সামনে যাওয়ার গল্প
বন্ধুরা তোমাদের তো অনেক কিছুই আছে। এতো কিছু থাকার পরও তুমি তোমার নিজের সমস্যাগুলো সমাধান করছ না কেন? তোমাদের সাথে আগেও শেয়ার করেছি ড. আতিউর রহমানের কথা। তার জীবনের একটু গল্প বলি। তিনি বলেছেন:
“আমি যখন সপ্তম শ্রেণী পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে উঠবো, তখন চাচা একদিন কোত্থেকে যেন একটা বিজ্ঞাপন কেটে নিয়ে এসে আমাকে দেখালেন। ওইটা ছিল ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বিজ্ঞাপন।… আমি রাত জেগে পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিলাম। নির্ধারিত দিনে চাচার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে রওনা হলাম। ওই আমার জীবনে প্রথম ময়মনসিংহ যাওয়া। গিয়ে সবকিছু দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ! এত এত ছেলের মধ্যে আমিই কেবল পায়জামা আর স্পঞ্জ পরে এসেছি! আমার মনে হলো, না আসাটাই ভালো ছিল। অহেতুক কষ্ট করলাম। যাই হোক পরীক্ষা দিলাম; ভাবলাম হবে না। কিন্তু দুই মাস পর চিঠি পেলাম, আমি নির্বাচিত হয়েছি। এখন চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে।
সবাই খুব খুশি; কেবল আমিই হতাশ। আমার একটা প্যান্ট নেই, যা পরে যাবো। শেষে স্কুলের কেরানি কানাই লাল বিশ্বাসের ফুলপ্যান্টটা ধার করলাম। আর একটা শার্ট জোগাড় হলো। আমি আর চাচা অচেনা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। চাচা শিখিয়ে দিলেন, মৌখিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমি যেন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলি: ম্যা আই কাম ইন স্যার? ঠিকমতোই বললাম। তবে এত উচ্চস্বরে বললাম যে, উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।”
বন্ধুরা তোমরা ড. আতিউর রহমান থেকেও আর্থিকভাবে গরিব? তার থেকেও অসহায়? বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তবে তিনি যে রাত জেগে পড়াশুনা করতেন, তোমরা কতজন করো এখন? যদি কেউ সত্যিই করে আমি নিশ্চিত সে সফল হবেই। ড. আতিউরের যেমন চেষ্টা বৃথা যায়নি, তোমাদের চেষ্টাও বৃথা যাবে না। কেউ না কেউ তোমার জন্য ভালোবাসা ও আন্তরিকতাপূর্ণ হৃদয় নিয়ে অপেক্ষা করছে। তুমি শুধু তোমার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হিসেবে তাকে গিয়ে একটু বলো .. তাহলেই সমাধান নিশ্চিত।
সুপ্রিয় বন্ধুরা, তোমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের সাহস দেয়ার জন্য বাস্তব কিছু ঘটনার উল্লেখ করছি-
বর্তমান সময়ের বিখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসি ফুটবল ট্রেনিংয়ের খরচ জোগাতে চায়ের দোকানে কাজ করতেন। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম আজাদের বাবা ছিলেন মাঝি। সে পরিবার থেকে তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হয়েছেন।

ব্যক্তিগত বাধা দূরীকরণের জন্য তোমাদের জন্য কিছু পরামর্শ-
সুতরাং তোমরা তোমাদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আজ থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো। সে জন্য তোমরা যেসব কাজ করবে তা হচ্ছে-
কখনো পরিবারের কর্তা বা পিতা-মাতাকে তাদের অপারগতার জন্য দোষারোপ করবে না।
তোমার পড়ালেখার টাকা উপার্জনের জন্য যখন স্কুল, কলেজ এবং মাদরাসা বন্ধ থাকে তখন পার্টটাইম কাজ করবে। তোমরা যারা গ্রামে তারা সে ধরনের, আর যারা শহরে থাক তারা সে ধরনের কাজ জুটিয়ে নেবে। পৃথিবীর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী সপ্তাহ শেষে বা কোন বন্ধের সময়ে হোটেল, ফার্ম এবং কফিশপে চাকরি করে নিজের অধ্যয়নের খরচ জোগাড় করে।
নিজের সুযোগ নিজেই তৈরি করে নিতে হবে। অন্যের করে দেয়া সুযোগের জন্য কখনই অপেক্ষা নয়।
তোমরা নিজস্বতায় বিশ্বাসী হবে। তোমাদের ধ্যান ধারণা, বুদ্ধি কখনই যেন অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়।
তোমার সম্মানটা অর্জন করে নিতে হবে তোমার নিজেকেই। নিজের সম্মান নিজের কাজের মাধ্যমে অর্জন করতে না পারলে কখনই সম্মানিত হওয়া যায় না।
সফল ব্যক্তিরা কখনই হার মানেন না। একটি কাজ প্রয়োজনে হাজার বার করতে রাজি আছেন, কিন্তু পরাজিত হতে তাঁরা রাজি নন। এ জন্য তোমরাও কখনও ব্যক্তিগত বাধার সামনে মাথানত করবে না, বরং সমস্যাকে তোমাদের সামনে পরাভূত হতে বাধ্য করবে।
যে সব ব্যক্তি জীবনে সফল হয়েছেন তারা নিজের ওপর সবচাইতে বেশি বিশ্বাস করতেন। অর্থাৎ তারা যথেষ্ট পরিমাণে আত্মবিশ্বাসী। তোমরা অবশ্যই এর ব্যতিক্রম হবে না।
সফল ব্যক্তিরা ভয় পায় না। সমাজের কে কি বললো, কে কিভাবে গ্রহণ করলো সেটা নিয়ে তারা মাথা ঘামান না। সুতরাং তোমার বড় হওয়ার জন্য সৎ ও সত্য পথে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে, সুতরাং ‘পাছে লোকে কিছু বলে’- এ ভাবনা বিদায় করতে হবে।
সফল ব্যক্তিরা নিজের কাজে খুবই নিমগ্ন থাকে। নিজের কাজে কখনই তারা ফাঁকি দিতে পারেন না। সুতরাং তোমার লেখাপড়ার কাজে কখনই কোনোভাবে ফাঁকি দেবে না। প্রশ্ন ফাঁস হলেও তুমি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
সর্বোপরি আমাদের সকলের স্রষ্টা মহান আল্লাহর কাছে তোমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য দোয়া করবে এবং ধৈর্য ধারণ করবে, তিনি সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।

SHARE

Leave a Reply