Home চিত্র-বিচিত্র কেশরওয়ালা ঈগল -নুসাইবা মুমতাহিন

কেশরওয়ালা ঈগল -নুসাইবা মুমতাহিন

দুনিয়ায় যত শিকারি পাখি আছে, ঈগল তাদের মধ্যে একটি। শুধু তাই নয়, এটি আকারে ইয়া বড় হয়ে থাকে। ডানা ছড়ানো অবস্থায় ৭ ফুট ২ ইঞ্চি থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সব ঈগল কিন্তু দেখতে এক রকম নয়। জানা যায়, প্রায় ৬০ প্রজাতির ঈগল রয়েছে তিন মহাদেশÑ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে। অন্য মহাদেশগুলোতে রয়েছে আরও প্রায় ১৪ প্রজাতির ঈগল।
এক ধরনের ঈগল পাখির ঠিক সিংহের মতো কেশর রয়েছে। ইংরেজিতে এদের ব্যাল্ড ঈগল নামে ডাকে। শুধু তাই নয়, এটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি।
ঈগলের রয়েছে ইয়া বড় বড় বাঁকানো ঠোঁট, ঠিক বড়শির মতো। তাই ওরা ছোঁ মারলে, কিছু না-কিছু আটকে যায় ওদের ঠোঁটে।
জগতে যত পাখির দৃষ্টিশক্তি ভীষণ প্রখর, ঈগলের নাম নির্দ্বিধায় সেগুলোর শুরুর তালিকাতেই রাখতে হয়। কেননা, ওরা অনেক উঁচু থেকেই ঠিকঠাক খুঁজে নিতে পারে নিজের শিকারকে।
ওদের নখ তোমার আমার নখের মতো নয় বরং বাঁকানো। আর ভীষণ ধারালো। ফলে ওরা যে কোনো কিছুকে নখের মধ্যে আটকে নিতে পারে। তা ছাড়া ওদের থাবায় অনেক জোর থাকে।
আমাদের মত ঈগলেরও ঘর-বাড়ি আছে। তবে ওরা ঘর বানায় সাধারণত অনেক উঁচু কোনো গাছের মগডালে, নয়তো দুর্গম কোনো পর্বতের চূড়ায়। অনেক উঁচুতে থাকা ঘরে বসে ওরা দোল খায়, ভাবতেই কী যে মজা লাগছে, তাই না?
গোল্ডেন ঈগল বা সোনালি রঙের ঈগলেরা খুবই দাপুটে হয়ে থাকে। হয়ে থাকে অনেক বেশি সাহসী আর ভয়ানক খাদকও। ওরা কী খায়, জানো? আস্ত শিয়াল, বুনো বিড়াল, এমনকি হরিণ ও ছাগলছানা সাবাড় করে দেয়।
কেশরওয়ালা ঈগলেরা সাধারণত ২০ বছরের মতো আয়ু পায়। তবে যতদূর জানা যায়, সবচেয়ে বয়স্ক ঈগলটির বয়স ছিল নাকি পাক্কা ৩৮ বছর।
ফিলিপাইনের বনজঙ্গলে বাস করে Philippine eagle নামক বিশাল এক ধরনের ঈগল পাখি। এদের ফিলিপাইন ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। এদের বৈজ্ঞানিক নাম pithecophaga jefferyi. এরা পৃথিবীর অন্যতম বড় ঈগল। এরা ওজনে প্রায় ৮ কেজি এবং লম্বায় প্রায় ৩ ফুট কিংবা সাড়ে ৩ ফুটের কাছাকাছি হয়ে থাকে। স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির চেয়ে আকারে বড়। Philippine eagle বানরখেকো ঈগল নামেও পরিচিত। কারণ বানর শিকার করে খেতে এরা বেশ পটু। এদের শিকার পদ্ধতি অন্যরকম। বানর শিকারের জন্য প্রথমেই এরা গাছের চূড়ায় উঠে অপেক্ষা করে এবং অনুসন্ধানী চোখ গাছে বসেই বানরের খোঁজ করে। বানরের দেখা পেলে আস্তে আস্তে গাছের নিচের দিকে নামতে থাকে। কোনো কারণে ঈগলের উপস্থিতি বানর টের পেয়ে পালিয়ে গেলে এরা আকাশে উড়ে আবার শিকার খোঁজা শুরু করে। বানরের দেখা পাওয়া মাত্র খুব কাছে গিয়ে এবং ওপর থেকে ড্রাইভ দিয়ে লোহার হুকের মতো তীক্ষè নখর বিদ্ধ করে বানরকে শিকার করে। ব্যতিক্রমী বানর শিকারের জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা এ ঈগলকে বাচ্চা অবস্থা থেকেই লালন-পালন করে এবং বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পোষ মানায়। এরা মাংস পাওয়ার জন্যই ঈগল পোষে। বর্তমানে বানরখেকো ঈগল পৃথিবীতে মহাবিপন্নের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
বাংলাদেশে একসময় সাদা বুকের সমুদ্র ঈগল (Haliacetus Leucogaster), কুড়াবা পলাশ মেছো ঈগল (Haliacetus leucoryphus), কুল্লে বা সাপখেকো ঝুঁটি ঈগল (Spilornis cheela) ছোট নখের ঈগল (Little Eagle) দেখা যেত কিন্তু বর্তমানে এরা বিলুপ্তির পথে।

SHARE

Leave a Reply