Home চিত্র-বিচিত্র প্রজাপতির রঙিন ডানা -নুসাইবা মুমতাহিন

প্রজাপতির রঙিন ডানা -নুসাইবা মুমতাহিন

প্রজাপতি শব্দটা শুনলেই প্রথমেই আমাদের মাথায় রঙবেরঙের পাখাওয়ালা পতঙ্গের ছবি ভেসে ওঠে যারা কিনা মধু আহরণের জন্য ফুলের ওপরে বসে পরক্ষণেই উড়ে যায় এবং ফুলে ফুলে উড়েই এদের সময় কেটে যায়। হয়তো শহরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থাকার কারণে আমাদের অনেকেরই নানান রঙের প্রজাপতি দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। তার পরেও একটু খেয়াল করলেই আমাদের চারপাশে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর পাখাওয়ালা এসব পতঙ্গের দেখা মেলে, অনেক সময় আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমাদের সামনে দিয়েই উড়ে চলে যায়।
প্রজাপতি হচ্ছে Lepidoptera বর্গের এক ধরনের পতঙ্গ পৃথিবীর বুকে যাদের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে Eocene ইপোকে। এই বর্গের অধীনে প্রধানত সাতটি পরিবার আছে এবং প্রতি পরিবারেই ভিন্ন ধরনের প্রজাপতির দেখা মেলে।
সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ২০০০০ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মেলে এর মধ্যে আমাদের দেশে IUCN Red List এর তথ্যানুযায়ী ৩০৪ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া গেছে।
প্রজাপতি কয়দিন বাঁচে এটা নিয়ে অনেকের মধ্যেই অনেক গুজব ছড়িয়েছে এবং কেউ কেউ মনে করেন যে মাত্র সাতদিনেই প্রজাপতির জীবনকালের সমাপ্তি ঘটে! কিন্তু না। প্রজাপতির জীবনচক্রের চারটি ধাপ শেষ হতে প্রায় এক মাস সময় লাগে অর্থাৎ এরা সাধারণত এক মাস বাঁচে।
প্রজাপতির জীবনচক্রে চারটি ধাপ থাকে, এগুলো হচ্ছে, ডিম, শুঁয়োপোকা, গুটিপোকা, পিউপা এবং পরিণত প্রজাপতি। স্ত্রী প্রজাপতি সাধারণত পাতার ওপরে ডিম পাড়ে এবং এই পাতা ঠিক করার ব্যাপারে অনেক শর্ত আছে, ডিম থেকে শুঁয়োপোকা অবস্থায় পরিণত হওয়ার পরে ঐ অবস্থায় এদের খাদ্যের ওপরে ভিত্তি করেই মা প্রজাপতি পাতা বাছাই করে এবং ডিমগুলো আঠা জাতীয় পদার্থ দিয়ে যুক্ত থাকে যার কারণে নিচে পড়ে না। ডিম থেকে শুঁয়োপোকাতে পরিণত হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। এদের বৃদ্ধির হার অনেক বেশি যার কারণে এদের অনেক খাবারের প্রয়োজন পড়ে। এরা অনবরত খেতে থাকে যার কারণে এদের বৃদ্ধি অনেক তাড়াতাড়ি হয়। শুঁয়োপোকা থেকে গুটিপোকাতে পরিণত হতে কমপক্ষে পাঁচদিন সময় লাগে। এসময় এরা একটা ককুনের মধ্যে থাকে। গুটিপোকা হতে পরিণত প্রজাপতিরূপে বের হতে প্রায় দু-সপ্তাহ সময় লাগে। গ্রামে-গঞ্জে সাধারণত যেগুলো ছেঙ্গা নামে পরিচিত ঐগুলো হচ্ছে মথের শুঁয়োপোকা।
অনেকেই হয়তো ধারণা করছেন যে, শরীরে নানান ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকার কারণেই এদের এরকম রঙিন পাখা থাকে! আসলে তা-না। প্রকৃত কারণ হচ্ছে আলোর বিচ্যুতি। কোন বর্ণের আলো কিভাবে বিচ্ছুরিত হবে এবং কিভাবে আমাদের আমাদের চোখে ধরা দেবে তার পুরোটাই নির্ভর করে কিসের ওপরে আপতিত হচ্ছে তার ওপরে। আলোর এই ধর্মকে iridescence বলে।
প্রজাপতিরা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে। নিষ্ক্রিয় বলতে বোঝানো হয়েছে কোন কাজ না করে স্থির হয়ে থাকা। আমরা সাধারণত প্রজাপতির নিষ্ক্রিয় অবস্থার সাথে পরিচিত নই কারণ সবসময়ই দেখি এরা ফুলে ফুলে মধু খেয়ে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রজাপতির পেছনে একটু সময় দিলেই দেখতে পারবে যে এরা দিনের বেলাতে ছায়া পছন্দ করে না, রৌদ্রে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করতে থাকে। তোমরা যদি এদের গায়ের ওপরে কোন কিছুর প্রতিবিম্ব ফেলার মাধ্যমে ছায়ার সৃষ্টি করো তাহলে এরা তখনি উড়ে যাবে। কিন্তু দিনের শেষভাগে ঘটে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা। তখন এরা গাছ কিংবা অন্য কোন কিছুর ওপরে বসে থাকে এবং শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। বিকেলের শেষভাগ থেকে পরের দিন ভোর হওয়া পর্যন্ত এরা এভাবেই থাকে যার কারণে এ সময় এদেরকে দেখা যায় না।
আবার অনেক প্রজাপতিতে ডায়াপজ নামক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে গুটিপোকাগুলো একই রকম অবস্থাতে মাসের পর মাস থাকে। বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্যের দেখা মেলে। একে ডায়াপজ বলে।
বন্ধুরা তোমাদের কি মনে হচ্ছে প্রজাপতির ঘরবাড়ি কেমন হবে, কোথায়-ই বা এরা থাকে, দিনের শেষে এরা কোথায় যায়! বাসা বলতে যা বোঝায় এদের এরকম কিছুই থাকে না। এরা সাধারণত দিনের শেষভাগ হতে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ইটের খাঁজে, কোন বিল্ডিংয়ের মাঝে, গাছের ডালে কিংবা ঝোপঝাড়ে বসে থাকে। বিভিন্ন সরু স্থানে থাকার কারণে এদেরকে ঐ সময়টাতে দেখা যায় না।
সবাই চোখ বুজে বলে দিতে পারবেন যে সব প্রজাপতিই ফুলের মধু কিংবা গাছের রস খেয়ে থাকে কিন্তু মজার কথা হচ্ছে, পতঙ্গ শিকারি প্রজাপতিরও দেখা মেলে। Miletinae নামক উপ-পরিবারের সদস্যরা যাদেরকে সাধারণতHervestersw Ksev Woolly Legs নামে ডাকা হয়, এরা Homoptera উপপর্বের পতঙ্গদের শিকার করে পিঁপড়াদের সাথে মিথোজীবী সম্পর্কের সৃষ্টি করে।
প্রজাপতি সম্পর্কে অনেক মজার কথা জানালাম। শেষ করার আগে আরেকটি মজার কথা জানিয়ে দেই, প্রজাপতি কোন কিছু স্পর্শ করে স্বাদ অনুভব করতে পারে। এদের পায়ের কিনারাতে এক ধরনের কেমোরিসেপ্টর থাকে যার কারণেই এরকম সম্ভব হয়।
তো বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই থাক। প্রজাপতি সম্পর্কে জানতে পেরে নিশ্চয় তোমাদের ভালো লেগেছে। এমন আরও মজার বিষয় তোমাদের আগামীতে জানাব।

SHARE

Leave a Reply