Home সায়েন্স ফিকশন বামক-০৭ হারুন -ইবনে শাহাদাত

বামক-০৭ হারুন -ইবনে শাহাদাত

গত সংখ্যার পর

৪০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন হতে বাংলাদেশী দুই তরুণ নভোচারী শাকিব কামাল ও সুলতান সালাম যাত্রা শুরু করবে শুক্রগ্রহের উদ্দেশে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৪০০১ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পদ্মা-০২ অবতরণের ঘটনা সারাবিশ্ব সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে প্রতিটি নিউজ চ্যানেলের মাধ্যমে। চন্দ্র অভিযানের পর ইতঃপূর্বে আর কোন মহাকাশ অভিযানকে এত গুরুত্বের সাথে নেয়নি মিডিয়া। এ অভিযানকে এতো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তিন কারণে : ১. বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মহাকাশ অভিযান, ২. শুক্রগ্রহে অভিযান যা এতদিন ছিল কল্পনারও বাইরে, ৩. এত কম বয়সী এবং ছাত্র নভোচারীদের দুঃসাহসী অভিযান, এটাই প্রথম।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরিচালক টুংকু সা’দাত বিশেষ গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের এ অভিযানকে। মালয়েশিয়ান রাজপরিবারের সদস্য তিনি, নাম শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। মালয় ভাষার শব্দ টুংকু অর্থ যুবরাজ। শাকিব কামাল এবং সুলতান সালাম টুংকু সাদাতের রাজকীয় আতিথেয়তায় মুগ্ধ।
মহাকাশে চলতে হয় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে, এর একটু ব্যতিক্রম হলেই ঘটতে পারে বড় ধরনের অঘটন। পৃথিবীর মত রান্না করা ভাত-মাছ, গোশত রুটি খাওয়ার ব্যবস্থা এখানে নেই। অবশ্য যেসব গ্রহে মানুষ বসবাস শুরু করেছে সেখানকার কথা আলাদা। মহাকাশ স্টেশনের যে বিশেষ মহাবাসে শাকিব কামাল আর সুলতান সালামের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানকার আয়োজনও সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে ওদের খেতে দেয়া হয়েছে বিশেষ ধরনের ক্যাপসুল। এ ক্যাপসুল খেলে নভোচারীদের প্রস্রাব-পায়খানার কোন প্রকার বেগ হয় না, ঘামের মাধ্যমে শরীর হতে বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ হয়। বিশ্রাম, খাওয়া এবং বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী গবেষক যারা স্টেশনে অবস্থান করছিলেন তাদের সাথে মতবিনিময় আর সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে ভালোই কাটালো মহাবাসের একদিন তরুণ অভিযাত্রী দু’জনের। আজই পদ্মা-০২ যাত্রা শুরু করবে শুক্রগ্রহের উদ্দেশে। মহাকাশ কেন্দ্র ০৭ থেকে বাংলাদেশ মহাকাশ কেন্দ্রে প্রধান পরিচালক সাদিক জামান প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠাচ্ছেন বামক ০০১-এ জাহিদ সায়েমের কাছে। জাহিদ সায়েম যথাযথভাবে তা পৌঁছে দিচ্ছেন শাকিব আর সুলতানের নিকট।
যাত্রা শুরুর আগে টুংকু সাদাতের সাথে কথা বলেছেন সাদিক জামান। তরুণ নভোচারীদের পোশাক, ওয়ারলেস সিস্টেম পদ্মা-০২তে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আছে কিনা আবারও পরীক্ষা করলেন নিজে এসে টুংকু সাদাত। পদ্মা-০২তে গিয়ে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলো শাকিব ও সুলতান। টানা কয়েক ঘণ্টা বিশ্রামের পর নতুন উদ্যম ওদের চোখে মুখে। গত কয়েক শতক আগেও এমন সুবিধা ছিল না। মহাকাশ স্টেশনে আসলেও দু’জন নভোচারী মহাকাশ যান ত্যাগ করতে পারতেন না। কমান্ডার বা পাইলট এস্ট্রোনটকে বিশ্রাম নিতে হতো নভোযানে বসেই। তোমরা নিশ্চয়ই জান, একটা নভোযানে দু’ধরনের নভোচারী থাকেন :
১. যারা নভোযান বা মহাকাশযান বা খেয়াযান চালিয়ে নিয়ে যান এবং নিয়ে আসেন তাদের বলা হয় কমান্ডার বা পাইলট এস্ট্রোনট। এরা হলেন ড্রাইভার।
২. যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং মিশনের মূল গবেষণার দায়িত্ব পালন করেন তাদের বলা হয় মিশন স্পেশালিস্ট। কমান্ডার এবং মিশন স্পেশালিস্ট দু’জনকেই হতে হয় নভোযান পরিচালনায় দক্ষ। এমন দুঃসাহসিক অভিযানে যে কোন সময় একজনের আরেকজনের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে, তাই একজন কমান্ডারকে স্পেশালিস্টের দক্ষতা এবং স্পেশালিস্টকে কমান্ডারের কাজে অভিজ্ঞ হতে হয়।
পদ্মা-০২ এ অভিযাত্রী কমান্ডার শাকিব এবং স্পেশালিস্ট সুলতান দু’জনই এক সাথে নভোযান ত্যাগ করে মহাবাসে বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছে। পদ্মা-০২ এর ইঞ্জিনও পেয়েছে কয়েক ঘণ্টার বিশ্রাম। মহাকাশ গবেষণায় এ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশেী গবেষকগণ।
: হ্যালো হ্যালো পদ্মা-০২ ওভার,
: রেডি রেডি। পদ্মা-০২ থেকে বলছি। ওভার
: ০০১। ওভার
: শুনতে পাচ্ছি। ওভার
: ভ্যানঅ্যালেন রেডিয়েশন অতিক্রমের সময় বিশেষ সতর্ক থাকবে। সব সময় মনে রাখবে আমাদের চূড়ান্ত মিশন শুরু হবে ২৬ মার্চ ৪০০১। তোমাদের মিশনের সাফল্যের ওপরই নির্ভর করছে সেই মিশনের সাফল্য। ওভার-ওভার?
: … ইয়েস স্যার ওভার।

শুক্রগ্রহে পদ্মা-০২
পদ্মা-০২ তৈরি করা হয়েছে, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যহার করে। মহাজাগতিক রশ্মি (ঈড়ংসরপ জধু) ও সৌর শিখা (ঝড়ষধৎ ঋষড়ৎব) কোন কিছুর প্রভাবই একে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না।
তারপরও কেন ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে এক মুহূর্ত ভাবার পরই স্পেশালিস্ট সুলতান সালামের মনে পড়লো, সাদিক জামান স্যারের মহামূল্যবান উপদেশ, ‘সব সময় সতর্ক থাকবে। মহাকাশের বিশেষ বিশেষ এলাকা অতিক্রমের সময় কোন সমস্যা দেখা দেয়ার আগেই প্রস্তুত থাকবে। টাইটানিকের নাবিকদের মত শুধু যন্ত্রের নির্মাণ কৌশলের ওপর ভরসা করে বসে থাকবে না, আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হবে।’
আমাদের এই পৃথিবীকে মহাজাগতিক রশ্মি ও সৌর শিখার খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে, বিশেষ ধরনের চুম্বক ক্ষেত্র যা ভূপৃষ্ঠকে চারদিক থেকে ঢেকে রেখেছে; পদ্মা-০২ এর চারদিকেও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে, এমন চুম্বক ক্ষেত্র। শাকিব কামাল ও সুলতান সালাম যে পোশাক পড়েছে তাও বিশেষভাবে তৈরি। মহাজাগতিক রশ্মি, সৌর শিখা ও উচ্চ তাপ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে এ পোশাকের। শুক্রগ্রহ সূর্যের খুব কাছে। সে জন্য এ গ্রহে অন্য যে কোন গ্রহের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। সে কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা এই বিশেষ ধরনের নভোযান এবং নভোযাত্রীদের জন্য বিশেষ পোশাক তৈরি করেছেন। প্রথম চাঁদে পদার্পণকারী নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, অলড্রিন আর ইউরি গ্যালারিন যে বিশেষ ধরনের পোশাক পরে চাঁদে অবতরণ করেছিলেন তারও ছিল বিশেষ তাপ প্রতিরোধ ক্ষমতা। চাঁদের অভিযানের ছবি তোলার জন্য নভোচারীদেরকে যে ফিল্ম সরবরাহ করা হয়েছিল তা ৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়ও গলে না। সেই ১৯৬৯ সালে কোডাককে দিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে ব্যবহার উপযোগী ঔ ট্রান্সপারেন্সি ফিল্ম তৈরি করা হয়েছিল। কারণ, চাঁদের তাপমাত্রা ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আর শুক্রগ্রহ এ অভিযান চলছে ৪০০১ সালে। মহাকাশ গবেষণায় অনেক এগিয়েছে পৃথিবী। বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরাও কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই। যে দুঃসাহস কেউ দেখায়নি, সেই অসাধ্য সাধন করার দুঃসাহস দেখিয়েছে বাংলাদেশী দুই তরুণ। পদ্মা-০২ পৃথিবীর নিরক্ষরেখার ৪০ ডিগ্রি ল্যাটিচিউড এবং নিরক্ষরেখার ২০ ডিগ্রি আপ অ্যান্ড ডাউন বিস্তৃত চৌম্বক ক্ষেত্রের কাছাকাছি এসে গেছে। হ্যাঁ এটাই অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট। না তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হলো না শাকিব কামাল ও সুলতান সালামকে। পদ্মা-০২ এর দুই নভোযাত্রী নিরাপদেই এগিয়ে চলছে শুক্রগ্রহের দিকে।
বামক-০০১ এর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
: আলহামদুলিল্লাহ। জাহিদ সায়েমের সাথে সাথে শাকিব কামাল এবং সুলতান সালামের কণ্ঠ হতে এক সাথে বের হলো। ওরা বুঝতে পারলো অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট খুব সহজে পাড়ি দিতে পেরেছে ওদের নভোযান। এই খুশিতেই জাহিদ সায়েম আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করলেন।
: হ্যালো পদ্মা-০২ …
: শুনতে পাচ্ছি বামক ০০১
: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদ্মা-০২ শুক্রগ্রহের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে …
: হ্যাঁ। আমরা দেখতে পাচ্ছি …
: পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে নভোযান অবতরণ করবে …
: অবশ্যই …
: পরিবেশ অনুকূল না হলে সোজা চলে আসবে মহাকাশ স্টেশনে …
: অবশ্যই ….
: আমি এখনো বামক ০০১ বসে মনিটরে তোমাদের দেখতে পাচ্ছি। তোমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছো …
পাহাড়-পর্বতে ভরা মনে হচ্ছে এ পাশটা। …
: হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। নভোযান অবতরণ এ মেরুতে সম্ভব নয়…
: প্রদক্ষিণ করতে থাক। সমতল ভূমিতে অবতরণ করবে …
পদ্মা-০২ শুক্রগ্রহের চারদিকে ঘুরছে। বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ এবং মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহে বসবাসকারীরা টিভির পর্দায় এ দৃশ্য দেখছে। আর বাহবা দিচ্ছে। বাংলাদেশের খুশির বন্যা বইয়ে, হাজার হাজার মানুষ আবেগে রাস্তায় বের হয়ে এসেছে। শ্লোগান দিচ্ছে মিছিল করছে।
বাংলাদেশের তরুণ দুই নভোচারী এখন ব্যস্ত শুক্রগ্রহের মাটিতে অবতরণের আয়োজনে। সাগর-নদী-আবার পাহাড়-পর্বত … এই তো মনে হয় বন-বনানী … কিন্তু সবুজ শ্যামল নয় মনে হয় আগুনে পুড়ে গেছে কিন্তু কেন?
আর একটু সামনে শুধু বালি আর বালি …
স্পেশালিস্ট সুলতান সালামের অনুমতির অপেক্ষা করছে কমান্ডার শাকিব কামাল।
: হ্যালো বামক ০০১ আমি সুলতান …
: ঠিক আছে। বলো বলো …
: মনে হয় অবতরণ করা যাবে …।
: ভূমির ঘনত্ব, বাতাসের আর্দ্রতা আরেকবার দেখে লও।
: সব কিছু ঠিক আছে …
: তাহলে অবতরণ করতে পার সুলতান ইশারা করলো শাকিবকে। আস্তে আস্তে শুক্রগ্রহের মাটিকে স্পর্শ করছে পদ্মা-০২। বাংলাদেশের মহাকাশ জয়ের এ দৃশ্য দেখছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশের পতাকা হাতে বুক ফুলিয়ে নামছে সুলতান সালাম, আর পেছনে শাকিব কামাল। শুক্রগ্রহের মাটি স্পর্শ করে, পতাকা হাতেই ওরা দু’জন মহান আল্লাহর কুদরতি পায়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। সিজাদ থেকে ওঠে ভালো করে দেখে নিলো চারদিক। তারপর তাকালো ওপরের দিকে। ওরা যা ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি অনুকূল এ গ্রহের আবহাওয়া। সুলতান তার হাতের পতাকার খুঁটি পুঁতে দিল শুক্রগ্রহের মাটিতে লাল-সবুজের পতাকা পত পত করে উড়ছে …।
সুলতান ভাবছে এমন অনুকূল পরিবেশে নিশ্চয়ই কোন প্রাণীর দেখা মিলবে। শাকিব আর সুলতান হাত ধরে হাঁটছে। বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এই বিশেষ ধরনের নভোযান পদ্মা-০২ এর কারণেই কমান্ডার নামতে পারলো। এর আগে যত অভিযান হয়েছে কমান্ডার মাটিতে নামতে পারেনি। তাকে নভোযানেই থাকতে হয়েছে নিয়ন্ত্রণের জন্য। শুধু স্পেশালিস্টরাই গ্রহের মাটি স্পর্শ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। এদিক থেকে শাকিব নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে।
ওরা এখন ব্যস্ত বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ এবং ছবি তুলতে। কারণ, ওদের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই পরিচালিত হবে চূড়ান্ত অভিযান। বাংলাদেশীদের জন্য নতুন এই গ্রহে গড়ে উঠবে ঘরবাড়ি, শহর-নগর, রাস্তাঘাট, মহাকাশে সৃষ্টি হবে আরেকটি বাংলাদেশ।

SHARE

Leave a Reply