ফিরে আসার পথে একটি ঘুঘু পাখির করুণ সুর কানে ভেসে আসছে। বারবার। এ পাখি কি তাহলে তার মায়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে? কেন যেন, ঘুঘুর ডাক শুনলেই সাবিতের মনটা উতলা হয়ে ওঠে। ভেতরের লুকানো দুঃখগুলোও জেগে ওঠে নতুনরূপে। এ জন্যই সে ঘুঘুর নাম দিয়েছে বিরহী পাখি। হায় পাখি! তুমি কতকাল এমন বিরহের গান গেয়ে যাবে?
এই তো, একটু আগেই মা-কে ঘরে রেখে শহরের পথে পা বাড়িয়েছে সাবিত। মা-কে ছেড়ে যেতে তার ভীষণ কষ্ট হয়। এ কষ্টকে কোনো উপমায় প্রকাশ করা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়। তাই মনে মনে সে গেঁথে ফেলেছে বিরহের পঙ্ক্তিমালা-
সবুজ গ্রামের ছায়াঘন পথ ছেড়ে / শহরের পথে বাড়াই যখন পা- /
মনের জানালা অনায়াসে দুলে ওঠে / যেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন আমার মা।
সত্যিই! মনের জানালায় মা যেন দাঁড়িয়েই আছেন। মায়ের এ দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না সাবিত। কোনোভাবেই না।
মায়ের কাছে সে কতটা ঋণী, তা যে সে কতভাবে অনুভব করছে! মনে পড়ে, তার ছোট ভাই সিফাতের জন্মের পর কী অবস্থা হয়েছিল মায়ের। পাশের ঘরে ঘুমাতো সাবিত। কিন্তু যখনই ঘুম ভাঙতো তার, তখনই সে বুঝতে পারত যে, মা এখনো জেগে আছেন। ছোট ভাইকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এমনও হতো, সিফাত একটানা কেঁদেই চলেছে। আর মা নরম সুরে গুনগুন করে কী যেন বলছেন আর তাকে সান্ত¡না দিচ্ছেন। আরও কত কী! এসব সে নিজের চোখেই দেখেছে। আর মনে মনে বলেছে, আহা মা! তুমি তো আমার জন্যও এমনটিই করেছো। আমিও তো তোমাকে ঘুমোতে দেইনি। আমাকে একা রেখেও তো তুমি এক মুহূর্তের জন্য কোথাও যেতে পারতে না।
স্মৃতির সাগরে ভাসতে ভাসতে সাবিতের চোখ দু’টি অশ্রুসজল হয়ে উঠল। মনে পড়ল, একটি হাদিসের কথা। এ হাদিসে কেন মা-কে এত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তাও সে বুঝতে পারল।
“এক ব্যক্তি রাসূল সা:-এর কাছে এসে বলল, আমার সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখেন কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর? তিনি বললেন, তোমার মা। তারপর? তিনি এবারও বললেন, তোমার মা। এরপর বললেন, তোমার বাবা।” (বুখারি ও মুসলিম)
সাবিত ভাবে, পড়ালেখাটা একটু শেষ হোক! মা-কে ছেড়ে সে কখনোই একা থাকবে না। মায়ের আঁচলতলেই নিজেকে লুকিয়ে রাখবে সে সারা জীবন।
বিলাল হোসাইন নূরী