বিশাল আমগাছটা ছিলো বলেই রক্ষা। না হলে এক টুকরো ছায়াও মিলতো না এখানে। কী হতো আমাদের তাই ভাবছি। ভাবছি টিফিন আওয়ারে আমাদের স্কুলের ভেতরেই বসে থাকতে হতো। বলেই থামলো ওয়াসিম।
সীমান্ত বললো- ঠিকই বলেছিস দোস্ত। এ আমগাছটি আমাদের ভাগ্য বটে। এর ছায়ায় আমরা নিজেদের ডুবিয়ে রাখছি। নইলে এই রোদে মাথা গরম হয়ে যেতো।
পিয়াল বললো- খালি মাথা গরম হতো? মাথা ফেটেই যেতো যা অবস্থা। যা গরম পড়ছে! খেলাধুলা তো বন্ধই। হাঁটা চলারও সুযোগ নেই। কাল রাতে ঘুমাতেই পারিনি। এত গরম যদি পড়ে ঘুমাই কিভাবে। ফ্যানের বাতাসও গরম হয়ে যায়।
ওয়াসিম খানিকটা ভাবনায় পড়ে গেলো। চুপচাপ চেয়ে আছে পথের শেষ মাথার দিকে। এ পথের বাঁকেই আমগাছটি। দূর থেকে এসে রাস্তাটি ডানে মোড় নিয়েছে। এ মোড়েই আমগাছটি ডাল-পালা ছড়িয়ে নিজেকে বেশ বড়সড় করে তুলেছে। এটি একটি প্রাচীন আমগাছ। এ গাছে আম কম হয়। কিন্তু যা হয় দারুণ স্বাদের। দারুণ মিষ্টি। ফলে যা হবার তা হয়। দ্রুত আম শেষ হয়ে যায়। কেউ ঢিল ছোড়ে। কেউ আবার গাছের ডালে উঠে পেড়ে নেয়।
স্কুলের সামনে আর কোনো বড় গাছ নেই। ছোটখাটো গাছ আছে বটে। মাঠের তিন পাশটাই রাস্তা। রাস্তায় প্রাইভেট কার আর রিকশার ছোটাছুটি চলতেই থাকে। টিফিন আওয়ারে ওয়াসিমরা মাঠেই খানিকটা দৌড় ঝাঁপ করে।
গত পনেরো দিন কোনো খেলাধুলা নেই। এক নাগাড়ে বৃষ্টিহীন পনের দিন। আষাঢ় মাসে ঘন বর্ষা থাকার কথা। অথচ গত পনের দিনে আকাশে কোথাও মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই।
ওয়াসিম কি জানি ভাবতে ভাবতে শেষে বললো- সীমান্ত ।
পিয়াল বললো- ওতো এমনই ভাবুক প্রকৃতির।
নারে দোস্ত তোরা যা-ই বলিস আমার ভাবতে হয়। ভাবি দেখ- কিভাবে বদলে গেলো বাংলাদেশের প্রকৃতি। শীতকালে শীত নেই। বর্ষায় বৃষ্টি নেই। প্রায় সারা বছর ধরেই গরম আর গরম। কখনো বেশি। কখনো কম। এই যা-। গরম কিন্তু আছেই। এই যে একটি আষাঢ় মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রায়। সামান্য এক দু’দিন ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলো। আর বৃষ্টির সাথে দেখা নেই। নেই তো নে-ই। বৃষ্টি না হোক। তাই বলে এত গরম ঝরবে?
আহা প্রকৃতির সাথে যেনো ওর কত অভিমান! প্রকৃতিও যেনো ওর বন্ধু। খোঁটা দিলো- পিয়াল।
সীমান্ত বললো- নারে পিয়াল ও ঠিকই বলেছে। দেখ এ বছর শীতকালে একদম শীত পড়েনি। শীতের পোশাকই পরা লাগলো না। আমার বড় দুঃখ লাগে। শীতে শীত না পড়লে কার ভালো লাগে। আমার ভালো লাগে- দুষ্টুমি হেসে বললো- সীমান্ত। তোর ভালো লাগবে। কারণ তুই আস্ত একটা গাই বললো- পিয়াল।
আহা তুই বুঝি দামড়া! জবাব দিলো সীমান্ত।
ওয়াসিম বললো- এই তোরা ঝগড়া শুরু করলি? থাম। এত কথা বলার কী আছে?
এ সময় উদম গায়ে একটি ভারী খাঁচা মাথায় একজন বৃদ্ধ এসে দাঁড়ালো। ওদের পাশেই। খাঁচাটা বেশ খানিকটা ভারী। ঘামে সারা শরীর ভেজা। গা থেকে প্রায় বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরছে ঘাম। পরনে হাঁটু অবধি নামানো লুঙ্গি। ভিজে একাকার। গাছের ছায়ায় খানিকটা বিশ্রাম নেয়ার আশায় এলো এখানে।
কিন্তু এখানে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জটলা। তবুও এক পাশে বসার ইচ্ছে করলো বৃদ্ধ। কিন্তু মাথা থেকে খাঁচাটি নামাতে পারছিলেন না।
এগিয়ে গেলো ওয়াসিম। বললো- চাচা আমি সাহায্য করি? বলেই খাঁচার একপাশ ধরলো। অন্য পাশ বৃদ্ধটিা ধরে নামালেন। কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠলো বৃদ্ধের চোখ। বললেন- বাবা তোমারে আল্লায় অনেক বড় করবো। অনেক বড় মানুষ হবার দোয়া করি।
হ্যাঁ দোয়া করবেন চাচা- বললো ওয়াসিম। বলে দেখছে বৃদ্ধকে। হালকা ঘাস পাতা। তার ওপরে বসে পড়লো বৃদ্ধটি। হাঁফাচ্ছে প্রায়। পেটটা যেনো পিঠের সাথে লাগানো। বুকের দু’পাশে হাড়গুলো যেনো গোনা যাবে। ঘোলাটে চোখ। চুলগুলো বেশ বড়। সাদা হয়ে গেছে বেশি অংশ। দাড়ি সব সাদা। মাথার তালুর চুলগুলো মাথার সাথে লেপ্টে আছে। খাঁচার ভারে চুলগুলোর এ দশা।
ওয়াসিমের দু’পাশে সীমান্ত পিয়াল এসে দাঁড়ালো। ওরাও বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনজনের মধ্যে সীমান্ত একটু সাইজে ছোটখাটো। ওকে দেখিয়ে বৃদ্ধটি বললো- আমার পোলাডায় আছিলো ঠিক অর মতো। গেলো বছর এই সময়টায় মরে গেলো। মরে গেলো হিট ইস্ট্রোকে। আহারে আমার পোলাডা কত যে ভালো আছিলো। বেসুমার সুনাম ছিলো পাড়ায়। কারোর দিকে বেয়াদবি চোখে চাইতো না। আমার সেই পোলাডাই মইরা গেলো। বলেই ডুকরে কেঁদে চোখ ঢাকলো বৃদ্ধ।
ওয়াসিমের চোখ ভরে উঠলো অশ্রুতে। পিয়ালের চোখও ছলোছলো। দুঃখে মুখটা কেমন করে আছে সীমান্ত। কারো মুখে কথা নেই। তিনজনই চেয়ে আছে বৃদ্ধের দিকে। বৃদ্ধ তখনো চোখ ঢেকে ফোঁফাচ্ছে। ঘাম আর চোখের অশ্রু মিলে মিশে একাকার।
ওয়াসিম ভাবে- এই বৃদ্ধকে সান্ত¡না দেবার ভাষা এখন কারো নেই। একজন বৃদ্ধের সন্তান হারানোর বেদনা মোছাবে কে? তবুও বৃদ্ধের মাথায় হাত বোলায় ওয়াসিম। বললো- চাচা আমরাই আপনার ছেলে। আপনি এখানে আসবেন প্রতিদিন। এই সময়টা আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। দু’চোখ থেকে হাত সরালেন বৃদ্ধ। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ওয়াসিমের দিকে। কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎ আকাশের দিকে দু’হাত তুলে বললো ও আল্লাহ এই পোলাগুলার প্রতি তোমার রহমতের চোখ দিও। বিপদ মসিবত পার করে দিও। বড় মানুষ কইরা দিও। আমিন।
এমন আন্তরিক প্রার্থনা। এমন হৃদয় ছোঁয়া উচ্চারণ। মনটা ভরে উঠলো ওয়াসিমের। বললো- আমাদের জন্য দোয়া করবেন চাচা। আমরা বড় হয়ে যেনো মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বৃদ্ধ। যেনো মানুষের জন্য কাজ করার অর্থ কিছুই বুঝলেন না।
ওয়াসিম আবার বললো- আগামীকাল ঠিক এই সময়ে আবার আসবেন চাচা। আসবেন কিন্তু।
চুপচাপ তখনো তাকিয়ে আছেন বৃদ্ধ। বুঝতে চাইছেন কাল আসলে কি হবে!
এ সময় ঢংঢং ঘণ্টা বাজলো।
ওয়াসিম বললো- চাচা আমাদের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। আমরা এখনি যাবো। কাল আসবেন। আসবেন তো?
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো বৃদ্ধ।
ওয়াসিমেরা দ্রুত ক্লাসের দিকে ছুটলো-
পরদিন টিফিন পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলো। ওয়াসিম সীমান্ত পিয়াল তিনজনই আমগাছের তলায়। আজ গরমটা আরো বেড়েছে। রোদ গায়ে পড়লে চামড়া জ্বালাপোড়া করছে। আষাঢ়ের অসহনীয় গরম। আজ ষোলো দিন বৃষ্টি নেই। মানুষ প্রাণীতো বটেই গাছগাছালিও যেনো হাঁপিয়ে উঠেছে। গাছের পাতাগুলো যেনো ক্লান্তিতে নুয়ে আছে। সামান্য বাতাস আসে মাঝে মাঝে। বাতাসতো নয় যেনো আগুনের হল্কা। গায়ে লাগলে গা জ্বলে। এমন গরমেও মাঠে ঘাটে কাজ করছে কিছু লোক। রিকশা চালাচ্ছে কেউ কেউ। কেউ আবার মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এদের কথা ভেবে কষ্ট হয় ওয়াসিমের।
ওরা অপেক্ষা করছে বৃদ্ধটির জন্য। কখন আসবে চেয়ে আছে পথের দিকে। ওদের তিনজনের হাতেই তিনটি কাপড়ের ব্যাগ। বাসার কিছু পুরনো জামা-কাপড় নিয়ে এলো তিনজন। সাথে পাঁচশ করে টাকা। বৃদ্ধের হাতে তুলে দেবে ওরা। নিশ্চয় খুশি হবে বৃদ্ধটি। তিনজন যুক্তি করেই এনেছে বৃদ্ধের জন্য। তিনজনেরই ভালো লেগেছে বৃদ্ধকে।
এখনো আসেনি বৃদ্ধ। দূরে কোথাও গিয়েছে হয়তো আসতে দেরি হচ্ছে। বললো পিয়াল।
সীমান্ত বললো- আসবে নিশ্চয়। চাচা নিশ্চয় ওয়াদা মিস করবে না।
ওয়াসিম বললো- দেখে মনে হয়েছে কথার খেলাপ করবে না চাচা। আমাদের জন্য যে আন্তরিক দোয়া করেছেন। আমার ভাবতেই ভালো লাগছে।
কত মানুষ আসছে যাচ্ছে। বৃদ্ধটি আসছে না। হাতে সময় বেশি নেই। গরমও এত বেপরোয়া। গাছের ছায়ায় হলেও ঘামে ভেজা তিনজন। রোদ যেনো রোদ নয়। আগুনের নতুন রূপ।
বৃদ্ধের পথের দিকে চেয়ে আছে ওরা। না বৃদ্ধের ছায়াও নেই। তবে কি আসবে না? নাকি ভুলেই গেলো ওয়াসিমদের কথা। হতেও পারে। মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে হয়তো অনেক কিছু মনে থাকে না। ভাবে ওয়াসিম।
সীমান্ত বললো- খামোখাই আমরা জামা কাপড় নিয়ে এলাম। চাচার কোনো হদিস নেই।
পিয়াল বললো- ভুলটা আমরাই করেছি। চাচার ঠিকানাটা রেখে দেয়া উচিত ছিলো।
ওয়াসিম বললো- পিয়াল ঠিকই বলেছে। উচিত ছিলো ঠিকানাটা রাখা। ঠিকানা বিনে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তোর মাথায় এটা এলো না কেন? তুইতো আমাদের থেকে বুদ্ধি বেশি রাখিস। ওয়াসিমকে বললো সীমান্ত।
ওয়াসিম বললো- বুদ্ধি সব সময় কাজ করে নারে। বুদ্ধি এত কাজ করলে বুদ্ধিজীবীই হয়ে যেতাম। বলেই হাসলো ও।
এ সময় রাস্তার দক্ষিণ দিক থেকে ঠিক মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোনায় দেখা গেলো বেশ ক’জন মানুষের জটলা। মানুষের এমন জটলা দেখেই সীমান্তের মনে একটা কৌতূহল জেগে ওঠে। ওয়াসিম ও পিয়ালকে বললো- চল দেখি কি হলো।
ওয়াসিম বললো- আমার এসব পছন্দ না।
আমতা আমতা করলো পিয়াল। ততক্ষণে সীমান্ত এগিয়েই চললো। সীমান্তের পথের দিকে তাকিয়ে আছে ওয়াসিম ও পিয়াল।
সীমান্ত পৌঁছে গেলো জটলায়। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। জটলা থেকে খানিকটা সরে এলো। খুব অস্থিরতার সাথে হাতের ইশারায় ডাকলো ওয়াসিমদের এবং দ্রুত আসতেই ইঙ্গিত দিলো।
দ্রুত এলো ওয়াসিম পিয়াল। এসেই উঁকি দিলো। ভিরমি খেয়ে গেলো ওয়াসিম পিয়াল। হিট স্ট্রোকে সেন্স হারিয়েছে বৃদ্ধটি। হায় হায় করে উঠলো ওয়াসিম। একি হলো চাচা! চিৎকার দিয়ে বললো- পানি পানি। কেউ একটু পানি নিয়ে আসবেন!
মাঠের কোনায় পাতলা দূর্বাঘাসে চিত হয়ে পড়ে আছে বৃদ্ধ মানুষটি। সম্ভবত ওয়াসিমদের দেয়া ওয়াদা রক্ষা করতেই আসছিলেন তিনি। ভর দুপুরে রোদের প্রচণ্ডতায় সেন্স হারিয়েছে। এখন মুখে পানি ছিটাতে হবে। পানিই ঔষধ।
জটলার বেশির ভাগ মানুষই যেনো সার্কাসের দর্শক। দু’চারজন কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করছে। বাকিরা চেয়ে চেয়ে দেখছে। ওয়াসিমের মুখে পানি শব্দ শুনে একজন মানুষ দৌড়ে গেলো একটি বাসার দিকে। কিছুক্ষণ। তারপর একটি ভরা বালতি নিয়ে প্রায় দৌড়ানোর চেষ্টা করছে লোকটি। ছলকে ছলকে রাস্তায় পড়ে যাচ্ছিলো পানি। তবুও সম্ভব যতটা দ্রুত গতিতে আসছে। সবাই লোকটিকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
ওয়াসিম লোকটির দিকে কয়েক কদম এগিয়েও গেলো। লোকটির হাত থেকে নিলো বালতিটি। বৃদ্ধের মাথার পাশে বালতি রাখলো। দু’হাতে কোষ করে নিলো পানি। বৃদ্ধের মুখের ওপর আনতেই শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। আকাশে মেঘ জমেছে কখন খেয়ালই করেনি কেউ। আজ আষাঢ়ের ষোলো দিনের মাথায় নামলো বৃষ্টি। নামলো প্রচণ্ড বেগে।
সবার চোখ বৃদ্ধের দিকে। ত্রিশ চল্লিশ সেকেন্ড বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির ফোঁটা যেনো আঘাত করছে শরীরে। পঞ্চাশ সেকেন্ড। একটুখানি নড়ে উঠলো বৃদ্ধটি।
চাচা- চাচা- ডাকলো ওয়াসিম। না চাচার কোনো সাড়া নেই। আরো দশ সেকেন্ড। চোখ খোলার চেষ্টা করছেন চাচা।
ওয়াসিমদের মনে আশা জেগে উঠলো- হয়তো বেঁচে যাবে লোকটি।
চোখ খোলার চেষ্টা করছে। বৃষ্টির ফোঁটার তীব্রতার দরুন পারছে না।
চোখের উপর হাত রাখলো ওয়াসিম। এখন বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ওয়াসিমের হাতের ওপর পড়ছে। ধীরে ধীরে চোখ খুললো বৃদ্ধ। ওয়াসিমকে দেখলো। খুব ক্ষীণ কণ্ঠে বললো- বাবা পানি। একটু পানি। বুক ফেটে গেলো।
বালতির পানি তো আর খাওয়ানো যায় না। ওই যুবকটি দৌড় দিলো আবার। খাবার পানি সংগ্রহের জন্য ছুটলো সে।
সীমান্তর মাথায় এলো বুদ্ধি। দু’হাত কোষ করে ধরলো। অঝোর ধারায় বৃষ্টির পানি জমছে ওর হাতে। বৃষ্টির পানিই মুখে দিলো বৃদ্ধের। একই কাজ করলো পিয়ালও। বৃষ্টির পানি খেয়ে বৃদ্ধের প্রাণ যেনো ফিরে এলো।
তখনো হাত দিয়ে বৃদ্ধের চোখ রক্ষা করছে ওয়াসিম।
সীমান্ত পিয়াল দু’জনই খাওয়ালো পানি।
হাত পা নাড়াচাড়া করলো বৃদ্ধ।
মাথা ধরে বসানোর চেষ্টা করছে ওয়াসিম।
জটলার আরো দু’একজন সাহায্য করলো।
ওয়াসিমের সাথে ঠেস দিয়েই বসলো লোকটি। ওয়াসিম বললো- চাচা আমরা আপনার জন্য জামা কাপড় এনেছি। কিছু টাকাও এনেছি। চলুন চাচা আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
ডুকরে কেঁদে উঠলেন চাচা। বললেন- আমার পোলাডার মতো আমারও হিট ই-স্ট্রোক হইলো। আমি মরতে মরতে বাইচা রইছি। আমার পোলাডাই চইলা গেলো। আজরাইল নিয়া গেলো আমার পোলাডারে। হায়রে কপাল! এই কপালে খালি দুঃখের ছবি। বলেই কাঁদছে বৃদ্ধ। বৃদ্ধের চোখের অশ্রু বৃষ্টির পানিতে মিশে যায়। বৃষ্টির পানি ঠাণ্ডা-শীতল। চোখের পানি গরম। কিন্তু দুই পানির একই রঙ। দুই পানি গড়িয়ে যায় বৃদ্ধের শরীর বেয়ে। এখনো বৃদ্ধের দুঃখগুলো অশ্রু হয়ে ঝরে যাচ্ছে। আর তা ধুয়ে দিচ্ছে আষাঢ়ের বৃষ্টি।