‘গাছেরও জীবন আছে’। দোলনায় দোল খেয়ে খেয়ে পড়ছে জুন।
জুঁই ভুরু কুঁচকে বলে, অমন করছ কেন জুন, টেবিলে গিয়ে পড়তে বসো। আরাম করে বিছানায় শুয়ে দোলনায় দোল খেয়ে বুঝি পড়া হয়!
মায়ের কথা শোনার পরে জুন বললো আচ্ছা মা, সত্যি করে বলো তো গাছের প্রাণ আছে কি?
টবের গাছগুলোর পাতা ঠিকঠাক করতে করতে জুঁই বলে, নিশ্চয়ই আছে। বৈজ্ঞানিক জগদীশ চন্দ্র বসু তো বলেই গেছেন। তুমি বইয়ের লাইনটি পড়ছ না কেন জুন?
একসাথে কি সব কিছু পড়া যায়? সে ছোট তো একটু একটু করে পড়বে। জুনের মগজে এখন আর কিছুই নেই। শুধু গাছ গাছ আর গাছ। ও চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকে টবের গাছের দিকে।
হ্যাঁ সত্যিই গাছেরও জীবন আছে। যখন চড়চড় রোদ ওঠে, গনগনে দুপুরটা ভীষণ রাগি হয়ে খাঁ খাঁ করে তখন ফুল গাছগুলোর পাতা নেতিয়ে যায়। নিশ্চয়ই রোদের তাপে গাছের খুব কষ্ট হয়। আর বৃষ্টি ঝরলে? খুব মজা ওদের। ঝিপঝিপ ঝিরিঝিরি টিপটাপ যেমনই বৃষ্টি ঝরুক না কেন ভীষণ খুশি হয়ে ওঠে মানিপ্ল্যান্ট, পাতাবাহার, নয়নতারা আর অপরাজিতার লতা। খিলখিল করে হেসে ওঠে ওরা। জুন ওদের হাসি শুনেছে বৈকি? তাই যদি হয় তবে সাইকেল, মোটর বাইক আর ওদের টুকটুকে লাল রঙের জেন গাড়িটাও কথা বলতে পারে, এটিরও দুঃখ আছে, কষ্ট আছে, আনন্দ আছে।
জুঁই খুরপি দিয়ে টবের মাটি কুরে দিতে দিতে বলে, শুধু তো দোল খাচ্ছ জুন! পড়ছ কোথায়? আবার কিছু ভাবছ নাকি? হোমওয়ার্ক করছ না, কি ব্যাপার বলতো?
– মা।
– আবার কী?
– আমাদের গাড়িরও প্রাণ আছে, এটি কথাও বলতে পারে তাই না মা?
জুঁই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। গতকাল বিকেলে ফ্যান্টাসি কিংডমে যাবার পথে ড্রাইভার ভীষণ জোরে গাড়ি চালিয়েছে। শুভময় বলেছেন রাসেল আস্তে চালাও, আস্তে চালাও।
কে শোনে কার কথা। বাতাসে চুল উড়ছিল জুনের, বুকের ভেতর টিপ টিপ আওয়াজ। ঠিক সে সময়েই অ্যাকসিডেন্ট হয়। লাইটপোস্টে লেগে ভেঙে যায় গাড়ির হেডলাইট। সে কী কান্ড! রাস্তায় লোক জড়ো হয়ে যায়। শুভময় রেগে বললেন এবার হলো তো রাসেল।
খুব মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে ওরা। সেই থেকে একেবারে চুপচাপ হয়ে আছে জুন। গাড়ির হেডলাইট নিশ্চয়ই নতুন করে লাগানো হবে, বাবা কোম্পানিতে নিয়ে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে আনবেন, কিন্তু গাড়িটি যে ব্যথা পেল ওর কী হবে।
রাতে বিছানায় শুতে গেছে ছোট্ট পাশ বালিশটি নিয়ে। কাছে এসে হঠাৎ করে জাপটা দেয় কার গুনগুন কান্না, কে যেন বলছে, জুন ও জুন তুমি ঘুমিয়ে গেছ। চমকে উঠে ও।
কে আমাকে ডাকছে? মিঠি তুমি ঘুমোওনি মিঠি। করুণ গলায় মিঠি নামের গাড়িটি বলে, আমি কি ঘুমোতে পারি জুন? আমার সারা শরীরে বড্ড ব্যথা যে।
গ্যারেজে রাখা গাড়ির কথা শুনে গভীর রাতে ভীষণ কান্না পায় জুনের। মা বাবা, বড় বোন মুন কেউ সে কান্না শুনতে পায় না।
চমৎকার লাল টুকটুকে রঙের ‘জেন’কে প্রথম যেদিন কোম্পানি থেকে নিয়ে আসা হলো মা-বাবা মুনদিদি সবাই খুশি। জুন খুশি খুশি গলায় বলে ওর একটা নাম দেবে না বাবা জুঁই ভরু কুচকে বলে, গাড়ির আবার নাম! তোমার পাগলামি ছাড়ো তো।
মুন খিল খিল করে হেসে গড়িয়ে পড়ে।
গাড়ি? ওর আবার নাম বলছিস কি করে?
কেউ না দিক জুন নাম দিয়েছে মিঠি। ভীষণ মিষ্টি নাম বাবা-ই শুধু কথাটি বললেন।
মুনদি বলল, মিষ্টি মিঠি তাই না জুন? পুরনো হয়ে অনেক বয়স হলে তখন বলব মি. মিঠি।
সবাই ওকে নিয়ে হাসে গড়ি আবার কথা বলে নাকি রে। ও ব্যথা পাবে কি ওর কি প্রাণ আছে ও হলো জড় পদার্থ।
জড় পদার্থ না ছাই। মুনদি আর ওর বন্ধুরা কিভাবে নিজেকে? ওরা কি সবজান্তা! অনেক কিছুই ওরা জানে না।
দুদিন পর পর ছুটি দিয়ে রাসেল বাড়িতে যায়। তখন মিঠি ঢাকা দেয় কালো কাপড়ের নিচে। স্কুলে যেতে আসতে জুন ওদিকে তাকাতেই পারে না, কারোর মন খারাপ হয় না, রিকশা সিএনজি ট্যাক্সিতে চড়ে সবাই ঘোরাফেরা করে লাল রঙের জেন গাড়িটি যে চুপসি করে বসে আছে ওর কথা কেউ মনে রাখে না।
শেষ বিকেলে যখন ব্যালকনিতে বসে জুন দোল খায়, চন্দন-কুচু, পাতাবাহার আর নয়নতারা গাছের দিকে তাকিয়ে গান গায়- কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে তখনই শুনতে পায় গুনগুন কান্না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেউ যেন বলে তুমি হারিয়ে যাবার গান গাচ্ছ জুন, আমারও তো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
তাই বুঝি?
– হ্যাঁ তাইতো কিন্তু আমি তো নিজে চলতে পারি না। আমাদের চালায় মানুষটি। স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে পা দিয়ে ক্লাস আর ব্রেক সামলায়, গিয়ার চেঞ্জও করে তবেই না আমি চলতে পারি। তোমার বাবা কেন ড্রাইভারকে ছুটি দিয়েছে জুন?
বাবা দিয়েছে তা আমি কি করে বলব বলো, তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে মিঠি, আমি বেশ বুঝতে পারি।
মুন চুপি চুপি এসে পেছনে দাঁড়ায়। খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়ে, বলে মা ওমা দেখে যাও।
– কি রে, ডাকছিস কেন?
-দেখে যাও মা, জুন একা একা বিড়বিড় করে কথা বলছে, পাশে তো কেউ নেই মা। গাছ নয়তো গাড়ির সঙ্গে কথা বলছে। জুঁই মুখ গম্ভীর করে বলে, নিশ্চয়ই তুমি মিঠির সঙ্গে কথা বলছ, কিন্তু কই আমার সঙ্গে তো ও কথা বলে না।
– গাছও তো কথা বলে মা তোমরা কি শুনতে পাও?
মা ঘরে গিয়ে টুকিটাকি কাজ করে। মুনদি অঙ্ক কষতে বসেছে। আবার একা হলো জুন, মিঠি ভীষণ লাজুক, কেউ পাশে থাকলে ও চুপটি করে বসে থাকে।
– হ্যাল্লো মাস্টার মিঠি।
– বলো জুন।
– এখন আর কেউ নেই, এবার কি বলবে বলো।
মন খারাপ করা সুরে বলে জুন আমার আর কিইবা বলার আছে জুন। সকালবেলা থেকে পাশের টয়োটা, মার্সিডিজ, হাইহুন্দাই, মিৎসুবিসি সব গাড়ি চলে গেল টা টা বাই বাই করে। স্টার্ট নেয়ার সময় ঘোৎ ঘোৎ করে কত কী বলে গেল। ফিরে এসে হাইহুন্দাই কি বলল জানো? বলল মিঠি শোন বেশ হাওয়া খেয়ে এলাম। দারুণ লাগল। টয়োটা বলল বেইলী রোড ইস্টার্ন প্লাস, মৌচাক ঘুরে এলাম জিনিসপত্রের দাম দারুণ বেড়েছে। মানুষ যে কী করবে মুরুতি সুজুকি বলল, ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। মোগলাই পরাটা চটপটি আর দোসার কী চমৎকার গন্ধ। পেট ভরে গেছে দু তিন দিন পেট্রল না খেলেও চলবে।
পাজেরো জিপ কি বলল জানো জুন?
– তুমি না বললে আমি কি করে জানব?
– বলল, অ্যাই বেশি ফুটুনি করবি না তো। আমি গ্যাসে চলি বলে কথাটি বললি। খবরদার আর কক্ষনো বলবি না। আমার শক্তি কত জানিস তো।
এবার খুব হাসি পায় জুনের।
তাহলে তোমাদের আড্ডা ভালো জমেছে বলো।
– তা হয়েছে তবে সবাই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এসেছে ভীষণ মজা করেছে ওরা। আমি তো এভাবেই পড়ে থাকব।
– জুন বলে, মাস্টার মিঠি একদম মুখভার করবে না। বাবা বলেন কখনই মন খারাপ করতে নেই তোমারও নতুন চালক এসে যাবে।
– ফোঁস করে উঠে মিঠি।
– রাসেলকে রাখবো না বলে দিচ্ছি। তোমার বাবাকে বলে দিয়ো তো। জোরে জোরে চালিয়ে কতবার অ্যাক্সিডেন্ট করে আমায় ব্যথা দিল, গায়ে কত আঁচড় পড়ল আমার শরীরে কত কাদামাটি লেগে থাকে, ও ভালো করে আমাকে ধুয়ে দেয় না। তার চেয়ে রতন ড্রাইভার অনেক ভালো ছিল। সে কি করত জানো? বালতির জলে শ্যাম্পু ঢেলে কী যত করে আমার শরীরটা ধুয়ে খুব আস্তে করে আমাকে ঘুমিয়ে দিত। আহ সেসব ছিল কী আরামের দিন।
হ্যাঁ ঠিক তক্ষনি রতন ভাইয়ার কথা মনে পড়ে যায় ওর। মুন আর জুন দু’ বোন নিচে নামলেই গাড়ির দরজা খুলে বলত আরে বেবি এসো এসো। যা মিষ্টি আর আদুরে গলা ছিল রতন ভাইয়ার। জুন বলে, সত্যিই ও ভীষণ ভালো ছিল মিঠি। কিন্তু ও তো দুবাই চলে গেছে।
– সত্যি -ভালো মানুষরা একে একে দূরে চলে যায়। যত বাজে আর দুষ্টু লোক আছে সবাই মিঠিকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে। দুদিন পর পর ওরা এক একটা অদ্ভুত কান্ড করে বসে। সে কথাটিই নতুন করে মনে পড়ে মিঠির। বলে, তোমাদের সিকিউরিটি গার্ড আর পাঁচতলার ড্রাইভার কী মারামারি আর ঝগড়াই না করল। চেঁচামেচি তোমরা শোন কি?
– হ্যাঁ শুনেছি তো।
ঘটনাটি পুরোটাই জুন জানে, তবু মা বলেছে, কেউ কিছু বললে সব শুনতে হয়। নয়তো যে বলতে চায় সে সব উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
মিঠি শুরু করে এই বুড়ো বুড়ো লোক দুটি কি নিয়ে ঝগড়া করল জানো? একটা চেয়ার নিয়ে। গার্ড বলল, এই চিকনু, তুমি আমার চেয়ারে বসলে কেন? চিকনু বলে কেন ডাকে জানো? রোগা বলে ও ঠিক পাটকাঠির মতো তো। ড্রাইভার বলল অ্যাই মোটকু বসছি তো কি হয়েছে র্যা? পুরনো একটা পিড়ি হাতে নিয়ে গার্ডের দিকে ছুড়েছে। ও সরে গেল, লাগল এসে ঠিক আমার দরজায়। সারা শরীরটা আমার কেঁপে উঠেছিল।
হ্যাঁ জুন সব জানে। মিঠির যে জায়গায় রঙ চটে উঠছে টোল পড়েছে রোজ জুন সেই জায়গাটিতে নরম আঙুলে হাত বুলিয়ে দেয়। বুকের ভেতরে আজও গুন গুনিয়ে উঠে কান্না- কেন তোমরা আমার মিঠিকে ব্যথা দিলে। ও ভীষণ কেঁদেছে সেদিন। এখনও রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে গায়ে ঢাকনা দিয়ে ওকে যখন ঘুম পাড়িয়ে রাখে ও ঘুমোয় না, গুন গুন করে কাঁদে।
মিঠি রাগি রাগি গলায় বলে কি ব্যাপার জুন তুমি ঘুমিয়ে গেছ? কথা বলছ না কেন?
মিন মিন করে জুন বলে, কই আমি ঘুমোইনি তো। মিঠি বলে, দ্যাখো জুন তোমরা হরতালে, মিছিল করো ঠিক আছে, তোমাদের যা ইচ্ছে তাই তো করবে। কিন্তু হাতে ইয়া বড় লাঠি নিয়ে আমাদের মারবে কেন বলতো? গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলে, দুমড়ে মুচড়ে দেয় পার্টসগুলো।
– সত্যিই তো, এ ভারী অন্যায়।
অন্যায় বলে অন্যায় এই তো সেদিন স্পেনের ক্যাস্টেজোনে কী কান্ডটাই না ঘটল। অফিসে মালিক ওদেরকে দিয়ে বেশি কাজ করায় রাগ কার ওপর ঝাড়ল জানো? আমাদের ওপর।
তাই বুঝি? কই আমি তো ওসব জানি না।
তুমি তো ছোট মেয়ে জুন। যখন বড় হবে বই পত্রিকা পড়বে তখন কত কিছু জানতে পারবে। দেখবে আমাদের অনেক অনেক দুঃখ। গাছ নিজেরা চলতে পারে বলো? পারে নাতো? আমাদের ও কেউ না কেউ চালায় নিজেরা চলতে পারি না। রতন ভাইয়ার মতো যতœ করে কেউ চালায় না। এক একটা দুষ্টু চালক আসে ভালো করে গিয়ারও চেঞ্জ করতে পারে না, ক্লাসে এত জোরে চাপ দেয় ভীষণ ব্যথা লাগে।
সত্যি তোমার খুব কষ্ট মিঠি। এবার তুমি ঘুমোবে মিঠি সন্ধ্যে হয়ে গেছে, দ্যাখো মেঘ সরে গেছে। চাঁদের মিঠি এবার হাসল।
হ্যাঁ এবার আমি ঘুমোব। তুমি পড়তে বসো জুন।
জুঁই ডাকল, জুন এখন তুমি ঘরে আসনি, ব্যালকনিতে এখনও বসে আছ? শিগগির এসো। টেবিলে হরলিকস দিয়েছি খেয়ে পড়তে বসো।
টেবিলের কাছে আসার আগেই ডোরবেল বেজে ওঠে। বড় মাসী এসেছে সঙ্গে তার দুই ছেলে রন্তু আর অন্তু।
কোথায় ওর পড়া। চৌদ্দশ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটটি খেলার মাঠ হয়ে যায়। ধবধবে লুচিতে বেগুন ভাজি জুড়িয়ে খেতে খেতে রন্তু বলল, তোর মিঠি কেমন আছেরে জুন? অন্তু জিজ্ঞেস করে গাড়ি এখনও কথা বলে তোর সঙ্গে? কী বোকা রে তুই।
চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে বড় মাসী ড্রয়িংরুমে এলেন।
কি রে জুন তুই নাকি একেবারেই পড়িস না। সারাদিন নাকি মিঠি মিঠি করেই পাগল। বোকা মেয়ে মানুষ গাড়ি গ্যারেজে ফেলে রেখে দেয় কত অ্যাক্সিডেন্ট হয় কত ড্রাইভার আসে, এগুলো নিয়ে ভাবতে হয় নাকি রে?
মুনও সবার সাথে ভীষণ হাসাহাসি করে।
সত্যি কি মিঠি আমার সাথে কথা বলে না? আসলেই কি আমি বোকা। তাহলে কে কথা বলে আমার সাথে? কে গুন গুন করে কাঁদে?
বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে থাকে জুন। রন্তু-অন্তু আর মাসী অনেক আগেই চলে গেছে। কিন্তু সবার খিলখিল হাসি ওর কানে বাজতে থাকে।
জুঁই ডাকে খেতে এসো জুন।
মুনদিদি দুধ আম আর পাটালি গুড় দিয়ে ভাত মেখে খেতে খেতে বলে, তুই না ভীষণ বোকা রে জুন।
শুভময় ভীষণ রাগ করেন।
কি শুরু করেছ তোমরা সারাদিন মেয়েটাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা এমন কথা। ও আজ ভাত খাবে না তাই না জুন?
আদরে গলে যেতে জুন বলে হ্যাঁ বাবা। জুঁই, ওর জন্য দু’পিস পাউরুটি টোস্ট করে আনো তো একটিতে মাখন আর অন্যটিতে জেলি মাখাবে আর ডাবল ডিমের ওমলেট।
বাবার আদরে সব দুঃখ লজ্জা ভুলে যেতে থাকে জুন।
অনেক রাত। নির্জন হাওয়া এসেছে চার পাশ। আকাশ ছোঁয়ার ফ্ল্যাটগুলো বাতি নিভে গেছে।
শুভময় বলেন সবাই পেয়েছেটা কি? আমি তুমি কেউ দেখি না বলে বাতাস কি আর নেই? গাছ যে কথা বলে, কষ্ট পায়, নিজেদের মধ্যে সুখ দুঃখের কথা বলে জগদীশ চন্দ্র বসু বলার আগে কি আমরা জানতে পেরেছি? বলো এও ঠিক তাই। তোমরা কেউ শুনতে পাচ্ছ না বলে জেন গাড়িটি কি কথা বলতে পারে না? হয়তো পারে। পৃথিবীতে কত মিরাকল হয় কত আশ্চর্য ঘটনা ঘটে তাই না রে জুন।
ভীষণ সাহসী গলায় জুন বলে, ঘটেই তো।
তাহলে সবাই মামণিকে নিয়ে হাসছ কেন? ও এতো ভালোবাসে জুনকে, ওর সাথে কথা বলতেই পারে। পাথরেও কিন্তু ফুল ফোটে।
সত্যি বাবা?
হ্যাঁ রে সত্যি দ্যাখোনি পুরনো দালানের ইট ফুঁড়ে কত কচি কচি গাছ বেরোয়। তুমি ছোট বলে বড়রা কেউ তোমার কথা বিশ্বাস করছে না।
গম্ভীর হয়ে শুভময় বলেন, শোন জুঁই গাড়ি কথা বলতেও তো পারে। ওর সুখ দুঃখ কষ্ট আনন্দ থাকতেই পারে। গভীর রাত। আকাশে বাঁকা চাঁদ হাসছে। সেদিকে তাকিয়ে জুঁই বলে। থাকতেই তো পারে।
তাহলে? কোন কিছু আবিষ্কার না হলে প্রমাণ না পেলে বড়রা বিশ্বাসই করতে চায় না। আমরা বড়রা ভীষণ খারাপ। ভালো করে সার্ভে করে, খোঁজ খবর নিয়ে নিজে ভালো করে জেনে শুনে তবেই বিশ্বাস করি। জানো আগের সবাই বলত, ডিম সেদ্ধ করে খাওয়া ভালো নয়। পোচ করে খাও নয়তো কাঁচা খাও। এখন গবেষণা করে বলা হয়েছে ডিম ভালো করে সেদ্ধ করে খাও।
বাড়িতে কুকুর পুষলে অনেকেই দূর দূর করে তাড়াতে চায়, নতুন কি খবর বেরিয়েছে জানো ? যারা কুকুর পোষে, কুকুরের পশমে হাত বুলিয়ে আদর করে ওদের হার্টের সমস্যা কম হয়।
শুভময় ওদের সম্পর্কে অনেক লেখাপড়া করেছেন। লতা পাতা আরও অনেক কিছু নিয়ে গবেষণা করেন। উনার কথা সবাই মনোযোগ দিয়ে শোনে। জুন জানে বাবা যা বলেন তাই ঠিক।
বাবা বলেন, মিঠি জুনকে ভালোবাসে, দুঃখ পেয়ে কাঁদলে ওর সাথে শেয়ার করে এতে অবাক হবার কি আছে। জুনদের মতো মিষ্টি মেয়েরাই ওর কথা শুনতে পায়, আর কেউ মিঠির কথা শুনতে পাবে না, তাই না জুন?
গবেষক বাবা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরেন জুনের বুকের ভেতরটা থই থই খুশিতে ছলাৎ ছলাৎ করে ওঠে। হ