বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ২০১৫ সালটা ছিল স্বপ্নের মতো। তারপর ২০১৬ ছিল একটু কঠিন। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের যে শুরুটা হলো তা বাকি সময়ে ক্রমাগত আরো কঠিন হওয়ারই আভাস দিয়ে গেল। বিশেষ করে বিদেশে বেশি বেশি খেলতে হওয়ায় বাংলাদেশকে অনেক বেশি পরীক্ষায় পড়তে হবে। বিদেশের মাটিতে ক্রিকেট খেলা যেকোনো দলের জন্যই কঠিন। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারতের মতো দলও বিদেশের মাটিতে শোচনীয়ভাবে বিধ্বস্ত হয়। খুব কম দেশই বিদেশের মাটিতে ভালো করে। আর সেই ভালোটার মধ্যেও তেমন ধারাবাহিকতা থাকে না। ফলে বাংলাদেশকে যে পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে, বা পুরো ২০১৭ সালে পড়তে হবে, তা নতুন কিছু নয়।
নিউজিল্যান্ড সফরের পর বাংলাদেশের পরবর্তী সিরিজ হচ্ছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তবে সিরিজটা পাকিস্তানে হবে না। হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেটাই পাকিস্তানের হোম গ্রাউন্ড। ফেব্রুয়ারিতে হবে এই সফরটি।
এতে বাংলাদেশ দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে এবং একটি টি-২০ ম্যাচ খেলবে। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তান নাকানিচুবানি খেলেও আমিরাতে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ফলে সিরিজটা সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য।
তারপর আছে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ইংল্যান্ডে হবে সেটা।
তবে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে পারে। বাংলাদেশকে নিয়ে যে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ছিল ইংল্যান্ডের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেখানে দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশ। অবিস্মরণীয় কিছু খেলা উপহার দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি। তারপর নিজ দেশে একের পর এক সিরিজ জয় করতে থাকে বাংলাদেশ। তখন সত্যিকারের টাইগারে পরিণত হয় মাশরাফিরা।
তবে এবার টি-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ অবশ্য ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটটিতে খুব বেশি সাবলীল নয়। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো বোঝে ও খেলে ওয়ানডে ক্রিকেট। কারণ প্রায় দুই যুগ ধরে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে এসেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটের রেশ ধরেই বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু ৫ দিন ধরে টেস্ট খেলাটা এখনো আয়ত্তে আসেনি বাংলাদেশের। ফলে ওয়ানডে ম্যাচের মতো ততটা দক্ষতা আসেনি টেস্ট ক্রিকেটে। আর টি-২০ ক্রিকেট এখনো রপ্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র ২০ ওভারের খেলা। আর একটি ওভারই পুরো গেম প্ল্যান বদলে দিতে পারে। আবার একবার বিপদে পড়লে তা থেকে কিভাবে উত্তরণ ঘটাতে হবে, সেটা বোঝাও কঠিন কাজ। তবে সমস্যাটা কেবল বাংলাদেশেরই নয়। অনেক বড় দলও বিষয়টা রপ্ত করতে পারেনি।
যা-ই হোক, ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আরো কঠিন স্থান। এই তো শ্রীলঙ্কার মতো দলও সেখানে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছে। তারা মাত্র নিজ দেশে দুর্দান্ত খেলেছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে লঙ্কান সিংহকে আফ্রিকার সিংহের সামনে একটা গর্জনও করতে দেখা যায়নি। একেবারে মিইয়ে ছিল। ফলে অক্টোবর নভেম্বরে দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে আর একটি টি-২০ ম্যাচ টাইগারদের জন্য খুব ভালো না-ও হতে পারে।
এর মধ্যে আবার অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। তারা অবশ্য কেবল টেস্ট ম্যাচ খেলবে। সেখানেও তাই খুব সহজ হবে না।
সব মিলিয়ে ২০১৭ সালটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন অবস্থায় পড়তে হবে। তবে নতুন নতুন প্রতিভার সন্ধান পাওয়া গেলে এবং তারা যদি স্থায়ী অবদান রাখতে পারেন, তবে বদলে যেতে পারে সব সমীকরণ। সত্যিকারের বাঘ হিসেবেই আবির্ভাব ঘটবে বাংলাদেশের। তখন বিশ্বের সব জায়গা থেকে তাদের হুঙ্কার শোনা যাওয়াটা অসম্ভব কিছু কাজ নয়।
হাল ছাড়লে চলবে না। স্বপ্ন না দেখলে তো কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখতে হবে। সেই পথে চলতে হবে। মাঝে মাঝে হোঁচট খেলেই সব শেষ হয়ে যায় না। বরং তাতেই পথচলা হয় আরো সুন্দর। বাংলাদেশ তা-ই করবে। হ