তৃতীয় খণ্ড
প্রায় এক মাস ছেলেটা কাজ করলো ওই শো-রুমে। কারবারি তাকে প্রতিটি বিক্রির জন্য কমিশন দিলেন। ফলে তার হাতে টাকা জমতে লাগল। এভাবে কাজ করে গেলে এক বছরের মধ্যে সে অনেক ভেড়া কিনতে পারবে।
‘আচ্ছা আমরা ক্রিস্টালের একটা ডিসপ্লে কেস বানাই না কেন?’ ছেলেটা বলল কারবারিকে। ‘এই দোকানের বাইরে, যাতে লোকজন দূর থেকে দেখতে পায়।’ কারবারি প্রথমে রাজি না হলেও পরে সম্মত হলো। বিক্রি বেড়ে গেল।
কয়েক দিন পর ছেলেটা ক্রিস্টালের পেয়ালায় চা বিক্রির প্রস্তাব করলো। নতুন জিনিস। এতেও সাড়া পড়ল। অনেকেই ওই এলাকায় এসে ক্রিস্টালের পেয়ালায় চা খেতে লাগল মুগ্ধতা নিয়ে। বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেল।
কারবারি একদিন তাকে বললেন, ‘আমাদের নবী আমাদেরকে কুরআন দিয়েছেন। পাঁচটি কাজ আমাদের জন্য ফরজ। এক আল্লাহকে বিশ্বাস, দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া, রমজানে রোজা রাখা, জাকাত দেওয়া।’
তিনি থামলেন। আল্লাহ-নবীর কথায় তার চোখে পানি এসে গেছে। তিনি পরহেজগার মানুষ। তিনি ইসলামি বিধান মতো তার জীবনযাপন করতে চান।
‘পঞ্চম ফরজটি কী,’ জানতে চাইলো ছেলেটা।
‘হজ করা। সক্ষম মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ। মক্কা এখান থেকে অনেক দূরে, পিরামিডের চেয়েও দূরে।’
‘এই দোকান দেওয়ার সময় ভেবেছি, একটু সচ্ছল হলেই হজ করতে যাব। একসময় বেশ অর্থও হয়েছিল। কিন্তু কাকে দায়িত্ব দিয়ে যাব এই দোকানের, এই ভাবনায় আর যাওয়া হয়নি। অথচ আমার দোকানের সামনে দিয়ে প্রতি বছর লোকজন হজে যাচ্ছে। তাদের অনেকে ধনী, অনেকে গরিব। একবার তো দেখলাম, এক মুচি হজ করতে চলেছে, তার সারা বছরের কামাই দিয়ে।’
ছয় মাস হয়ে গেছে। ছেলেটা এখন সাবলীলভাবে আরবি বলতে পারে। সে হিসাব করে দেখেছে, সে এখন স্পেন ফিরে গেলে আগের ৬০টির সাথে আরো ৬০টি ভেড়া কিনতে পারবে। ইচ্ছা করলে সে আরবদের সাথে ব্যবসাও করতে পারে।
পিরামিডের যাওয়ার কথাও মনে হয়, তবে খুব কম। একদিন কারবারির সাথে অনেক কিছু নিয়ে কথা হচ্ছিল। কারবারি একপর্যায়ে বললেন, ‘মাকতুব।’
‘মানে?’
এটা জানতে হলে তোমাকে আরবে জন্মাতে হবে। তবে তোমার ভাষায় বললে বলা যায় ‘নিয়তি।’
ছেলেটা ফজরের আগে উঠেছিল। আফ্রিকা মহাদেশে সে প্রথম এসেছিল আজ থেকে ১১ মাস ৯ দিন আগে। আজকের দিনটির জন্য সে আরবীয় ঐতিহ্যের বিশেষ সাদা পোশাক পরে নিল। মস্তকাবরণ, সেটা ঠিক রাখার জন্য চাকতি- সবই ছিল। নতুন স্যান্ডেলও পরেছিল। ধীরে ধীরে সিঁড়িতে নেমে এলো। নগরী তখনো ঘুমাচ্ছিল। নিজেই স্যান্ডউইচ বানিয়ে খেল, ক্রিস্টাল গ্লাসে পান করল চা। রোদ-ভরা দরজার সামনে বসে আস্তে আস্তে হুক্কায় টান দিতে লাগল।
হুক্কায় দম দিচ্ছিল নীরবে, কিছুই চিন্তা করছিল না, শুনছিল মরুভূমি থেকে বাতাস যে গন্ধ নিয়ে আসছিল সেই শব্দ। তামাক-পর্ব শেষ করে সে তার একটা পকেটে হাত ঢোকাল। অনেক টাকা। ১২০টা ভেড়া অনায়াসেই কেনা যাবে। কেনা যাবে ফেরার টিকেট, তার দেশ থেকে আফ্রিকায় পণ্য আমদানি-রফতানির ব্যবসাও সে করতে পারে।
তার অপেক্ষা ছিল ক্রিস্টাল কারবারির দোকান খোলার। তারপর তারা আবার বসল চা নিয়ে।
‘আমি আজ চলে যাচ্ছি’, ছেলেটি বলল। ‘আমার ভেড়া কেনার জন্য যথেষ্ট টাকা আমার কাছে আছে। আর আপনারও আছে হজ করার টাকা।’
প্রবীণ লোকটি কথা বললেন না।
‘আপনি কি আমাকে দোয়া করবেন না?’ ছেলেটি জানতে চাইল। ‘আপনি আমাকে সাহায্য করেছেন।’
লোকটি তার চা তৈরি করতে থাকলেন। তারপর ছেলেটির দিকে মুখ ফেরালেন।
‘আমি তোমার জন্য গর্বিত,’ তিনি বললেন। ‘তুমি ক্রিস্টাল শো-রুম নিয়ে আমার মধ্যে নতুন অনুভূতি এনে দিয়েছ। তবে আমি মক্কা যাচ্ছি না। ঠিক যেমন তুমিও আর ভেড়া কিনতে যাচ্ছ না।’
‘আপনাকে কে বলেছে এই কথা?’ ছেলেটি চমকে জানতে চাইল।
‘মাকতুব,’ প্রবীণ ক্রিস্টাল কারবারি জানালেন।
তারপর তিনি ছেলেটিকে দোয়া করলেন।
ছেলেটি তার রুমে ফিরল, তার মালামাল গোছাতে লাগল। তিনটি বস্তা ভরে গেল। সে চলে যাচ্ছে। রুমের এক কোনায় তার রাখাল আমলের থলেটা দেখতে পেল। অনেক দিন সে এই থলির কথা চিন্তাও করেনি। সে থলি থেকে জ্যাকেটটা বের করল, মনে করল, রাস্তায় কাউকে দিয়ে দেবে। তখনই পাথর দুটি মেঝেতে পড়ে গেল। উরিম আর থুমিম।
আর তাতেই বুড়ো রাজার কথা মনে পড়ল। এক বছর ধরে সে স্বপ্নবাজ বুড়ো রাজার কথা ভুলে ছিল। ছিল কেবল টাকার ধান্ধায়।
‘স্বপ্ন দেখা কখনো বন্ধ করবে না,’ বুড়ো রাজা তাকে বলেছিলেন। ‘ভাগ্য পরীক্ষা করবে।’
ছেলেটা উরিম আর থুমিম কুড়িয়ে নিল। আবারো মনে হলো বুড়ো রাজা এখানেই আছেন।
না, আমি স্বপ্নের পেছনে দৌড়াচ্ছি না, আমি যাচ্ছি ভেড়ার পাল কিনতে, ছেলেটা ভাবল। কিন্তু ভেড়ারাই তাকে শিখিয়েছে, এমন একটা বিশ্ব-ভাষা আছে, তা সবাই বুঝতে পারে। ক্রিস্টালের শো-রুমে কাজ করতে গিয়ে বিষয়টি সে আরো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। এটা হলো আশাবাদের ভাষা, এর সাথে থাকে ভালোবাসা আর মহান কিছু করার লক্ষ্য, কিছু পাওয়ার চেষ্টা।
তানজিয়ার্স এখন আর তার কাছে নতুন কোনো নগরী নয়। তার মনে হলো, সে যখন এই স্থানটি জয় করতে পেরেছে, সে বিশ্ব জয় করতে পারবে।
‘তুমি কিছু করতে চাইলে, পুরো বিশ্ব তোমাকে সেটা করতে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে,’ বুড়ো রাজা তাকে বলেছিলেন।
কিন্তু বুড়ো রাজা তো চুরি, সীমাহীন মরুভূমি, স্বপ্ন দেখেও তার পেছনে না-ছোটা লোকদের সম্পর্কে কিছু বলেননি। তিনি তো বলেননি যে পিরামিড আসলে পাথরের স্তূপ, কিংবা যে কেউ তার বাড়ির পেছনে এটা বানাতে পারে। তিনি এটাও বলেননি, তোমার কাছে যদি আগের চেয়েও বেশি ভেড়া কেনার টাকা জমে, তবে সেগুলো কিনে ফেলো।
ছেলেটা ওই থলিটি অন্য মালামালের মধ্যে রাখল। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। ক্রিস্টাল শো-রুমে তখন এক বিদেশী দম্পতি। আরো দুজন সেদিকে যাচ্ছে। সকালেই এত ভিড়। এই প্রথমবার তার কাছে মনে হলো, ক্রিস্টাল কারবারির চুল দেখতে বুড়ো রাজার চুলের মতোই। ওই যে তানজিয়ার্সে আসার প্রথম দিন সে পিঠা দোকানদারের সাথে তার পরিচয় ঘটেছিল, তার হাসিটা বুড়ো রাজার হাসির মতোই।
সবকিছুই মিলে যাচ্ছে! সে ক্রিস্টাল কারবারিকে কিছু না বলে বিদায় নিল। তার মনে হলো, সে বিশ্বজয় করতে পারবে। এখন আর সে রাখাল হতে চাইছে না। বাড়ি ফিরতে মাত্র দুই ঘণ্টার পথ। কিন্তু তার আর পিরামিডের মধ্যে রয়েছে একটা পুরো মরুভূমি। তখনই তার আরেকটা চিন্তা মাথায় ঢুকল : সে আসলে তার গুপ্তধনের দুই ঘণ্টা কাছে চলে এসেছে।… সত্যিই, দুই ঘণ্টা যে পুরো একটা বছরকে টেনে নিয়ে যেতেই পারে।
না, আবার পিছু টান। রাখালিতেই ফিরে যাব? কেন যাব না? আবার ক্রিস্টাল শো-রুমেও তো ফিরে যাওয়া যায়! কিন্তু না। তার একটা স্বপ্ন আছে, তার সাথে এক রাজার দেখা হয়েছিল। এই ঘটনা আর কখনো ঘটবে না।
‘যখন কেউ তার স্বপ্নের দিকে ছুটে চলে, আমি তার সাথে থাকি,’ বলেছিলেন বুড়ো রাজা।
পিরামিডে যাওয়া কি অনেক দূরের রাস্তা?
কাফেলায় এক ইংরেজের সাথে সাক্ষাৎ হলো। ১০ বছর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েছেন। রসায়নশাস্ত্রের পাতার পর পাতা ঘেঁটেছেন। সব ধর্ম তিনি অধ্যয়ন করেছেন। কিন্তু তার ঘোর কাটছে না, বরং বেড়েছে। তার এখন আল কেমিস্টের সন্ধান চাই-ই চাই। চেষ্টাও কম করেননি। কিন্তু আল কেমিস্টরা তো অদ্ভুত মানুষ। তারা কেবল নিজেদের নিয়েই ভাবে, কাউকেই বলতে গেলে সাহায্য করে না। কে জানে, হয়তো তারা তাদের সেরা কাজ তথা পরশপাথর তারা আবিষ্কারই করতে পারেনি। এ কারণেই তারা নিজেদের লোকচক্ষুর অগোচরে রেখেছে!
তিনি এর মধ্যেই তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি শেষ করে ফেলেছেন পরশপাথরের খোঁজে। লাইব্রেরির পর লাইব্রেরি চষে ফেলেছেন। একবার তিনি পড়েছিলেন, অনেক বছর আগে এক বিখ্যাত আরব আল কেমিস্ট ইউরোপ গিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তার বয়স ছিল দুই শ’ বছরের বেশি। তিনি পরশপাথর আর ‘আবে হায়াত’ আবিষ্কার করেছিলেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। এই কাহিনী পড়ে ইংরেজ ভদ্রলোক বেশ অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। এটাকে গালগল্প বলে তার মনে হয়নি। এখন তিনি নিজেই সন্ধানে নেমে পড়েছেন।
‘তিনি বাস করেন আল-ফেয়ুম মরূদ্যানে,’ তার বন্ধু বলেছেন। ‘আর লোকজন বলে, তার বয়স দুই শ’ বছর। তিনি যেকোনো ধাতুকে সোনায় পরিণত করতে পারেন।’
ইংরেজ ভদ্রলোক তার উত্তেজনা দমাতে পারছিলেন না। তিনি এখন সাহারা পাড়ি দিচ্ছেন। যাচ্ছেন সেই আল-ফেয়ুম মরূদ্যানে।
এখানেই ছেলেটির সাথে ইংরেজ ভদ্রলোকের পরিচয় ঘটল। দেখা গেল ওই ভদ্রলোকের কাছেও উরিম ও থুমিম আছে।
তাদের কথোপকথনের মধ্যেই এক মোটা আরব বের হয়ে এলেন। জানালেন, আজই কাফেলা রওনা হচ্ছে আল-ফেয়ুমের দিকে।
ছেলেটি বাধা দিয়ে বলল, ‘কিন্তু আমি তো যাচ্ছি মিসরে।’
‘আল-ফেয়ুম তো মিসরেই,’ আরব লোকটি বললেন।
‘আমি এই কাফেলার নেতা,’ কালো চোখের এক দাড়িওয়ালা লোক বললেন, ‘আমি এই কাফেলার প্রতিটি ব্যক্তির জীবন আর মরণের মালিক। মরুভূমি আসলে খেয়ালি নারীর মতো, অনেক সময় সে পুরুষদের পাগল বানিয়ে দেয়।’
সেখানে ছিল প্রায় দুই শ’ মানুষ, চার শ’ উট, ঘোড়া, খচ্চর, পাখ-পাখালি। তাদের মধ্যে নারী আছে, শিশুও আছে। পুরুষদের মধ্যে অনেকের কোমরে তরবারি, কাঁধে রাইফেল বাঁধা। ইংরেজ ভদ্রলোকের সাথে কয়েকটি স্যুটকেস ভর্তি বই। হট্টগোলে কারো কথাই কেউ শুনতে পারছে না। নেতা কয়েকবার বলে গেলেন তিনি কী বলতে চান।
‘এখানে নানা ধরনের লোকজন আছে, প্রত্যেকেরই নিজ নিজ উপাস্য আছেন। তবে আমি এক আল্লাহর গোলাম। আমি তাঁর নামে শপথ করছি, এই মরুভূমি পাড়ি দিতে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব। তবে আমি তোমাদের প্রত্যেককে আল্লাহর নামে শপথ করাতে চাই, যা-ই হোক না কেন, তোমরা আমার হুকুম মেনে চলবে। মরুভূমিতে অবাধ্যতা মানে মৃত্যু।’
জনতার মধ্যে গুঞ্জন শোনা গেল। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ উপাস্যের নামে শপথ করল।
কাফেলা চলতে শুরু করল। ছেলেটার মনে একটা ভাবনা ভিড় করে আছে : একটা রহস্যময় চেইন একটার সাথে আরেকটাকে জুড়ে দিয়েছে। ওই চেইনই তাকে রাখাল বানিয়েছিল, তার সাথে পশম ব্যবসায়ীর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, সেটা তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, সেটাই তাকে আফ্রিকার একটা নগরীর কাছে এনে দিয়েছে, তাকে রাজার সন্ধান দিয়েছে, ক্রিস্টাল কারবারির সাথে সাক্ষাতের জন্য চোরকে তার সবকিছু চুরি করতে বলেছে,…
যখন কেউ তার লক্ষ্যের যত কাছাকাছি যাবে, লক্ষ্য তখন সত্যি সত্যি ধরা দেওয়ার জন্য কাছে আসবে, ছেলেটি ভাবল।
কাফেলা পূর্ব দিকে চলছিল। তারা সকালে এগিয়ে যায়, সূর্য যখন মাথার ওপর গনগনে রোদ ছড়ায়, তখন যাত্রাবিরতি ঘটে। বিকেলে আবার যাত্রা শুরু হয়। ইংরেজ ভদ্রলোকের সাথে ছেলেটির কথা বলার সুযোগ হয় কমই। তিনি প্রায় সবসময় বইপত্রে ডুবে থাকেন।
ছেলেটি নীরবে মরুভূমি দিয়ে পশু আর মানুষের এগিয়ে যাওয়া দেখতে লাগল। তারা যাত্রা করার সময় যেমন ছিল, এখন সবকিছুই বদলে গেছে : তখন ছিল হইচই-চিৎকার-চেঁচামেচি, বিভ্রান্তি, শিশুরা কাঁদছিল, পশুগুলো ডাকছিল, এর সাথে মিশে গিয়েছিল গাইড আর বণিকদের উৎকণ্ঠিত আদেশ-নিষেধ।
কিন্তু মরুভূমিতে শব্দ আছে কেবল শ্বাশত বাতাসের আর ঘোড়া-উটের খুরের। ‘আমি অনেকবার এসব বালি অতিক্রম করেছি,’ এক উটচালক এক রাতে বলল। ‘কিন্তু মরুভূমি এত বিশাল আর দিগন্তগুলো এত বিস্তৃত যে, এগুলো মানুষ যে অতি ক্ষুদ্র, সেই অনুভূতিই সৃষ্টি করে। এ কারণেই নীরব থাকা দরকার।’
ছেলেটা অন্তর থেকে বুঝতে পারল, সে কী বলতে চাচ্ছে, আগে কখনোই মরুভূমিতে পা না ফেলেই। যখনই সে সাগর, আগুন দেখত, সে নীরব হয়ে যেত, তাদের মূল শক্তিতে অভিভূত হয়ে।
‘আমি ভেড়াদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি, আমি ক্রিস্টাল থেকে অনেক কিছু শিখেছি,’ সে ভাবল। আমি মরুভূমি থেকেও শিখতে পারি। প্রবীণ আর জ্ঞানীর মতো চিন্তা হলো। বাতাস কখনো থামে না। ক্রিস্টাল কারবারির ‘মাকতুব’ কথাটিও তার মনে এলো।
মরুভূমির পুরোটাই বালু আর বালু। মাঝে মাঝে পাথুরে এলাকা। কাফেলা যখন কোনো বড় পাথরের মুখে পড়ে, তারা ঘুরে যায়। পুরো এলাকাটাই পাথুরে হলে তাদেরকে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। তারপর তারা আবার কম্পাস দেখে ঠিক পথে চলে আসে।
ছেলেটা এর মধ্যেই উটচালকদের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলেছে। রাতে সে তাদের সাথেই থাকে। তারা তাকে গল্প শোনায়। একবার এক চালক তার নিজের জীবন-কাহিনী শোনাল। তার বাগান ছিল, সন্তান ছিল, স্ত্রী ছিল। খুবই সুখের জীবন ছিল। কিন্তু একবার পৃথিবী কাঁপতে লাগল। নীলনদ উপচে এলো পানি। ভেসে গেল আমার বাগান, সন্তান, স্ত্রী। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি হয়ে পড়লাম উটচালক। এই বিপর্যয় আমাকে আল্লাহর বাণী বুঝতে শিখিয়েছে : অজানাকে ভয় করা উচিত নয় মানুষের, যদি তাদের চাহিদা পূরণ করার সামর্থ্য তাদের থাকে। (চলবে)