Home তোমাদের গল্প সেই ছেলেটি -মেহদী হাসান তালহা

সেই ছেলেটি -মেহদী হাসান তালহা

বাংলাদেশের এক সীমান্তবর্তী এলাকার নাম হিম্মতপুর, এলাকাটা খুবই ছোট তেমনি জনসংখ্যাও একেবারে নগণ্য। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। সেই গ্রামেই বেড়ে ওঠা এক কিশোর আবির। মা-বাবার আদরের একমাত্র সন্তান সে। বাবা কৃষিকাজ করেন আর মা গৃহিণী। বাবার এই ছোট্ট আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। সংসারে দুঃখের লেশমাত্র নেই। আবির যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি দুষ্ট প্রকৃতির আর চরম মেধাবী। সারাদিন বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আবার বন্ধুদের নিয়ে খালে মাছ ধরে, খালের পাড়ে সেগুলো রান্না করে খায়, হাজার দুষ্টুমির পরও এলাকাজুড়ে রয়েছে তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা। ছোট বড় সবাই তাকে ভালোবাসে। সেও সবাইকে সম্মান করে। সে লেখাপড়া করত স্থানীয় একটি স্কুলে। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, সবার মনে একটি আশা, আবির কিছু একটা রেজাল্ট করবে, ধীরে ধীরে পরীক্ষার ফলাফলের দিন ঘনিয়ে এলো।
সবার চোখ ফলাফল বোর্ডের দিকে আবির কী রেজাল্ট করে? প্রকাশিত হলো রেজাল্ট, সবাইকে অবাক করে দিয়ে পুরো জেলার মধ্যে প্রথম এবং বাংলাদেশের সেরা দশের তালিকায় উঠে আসে আবির! পুরো এলাকাবাসীর খুশির শেষ নেই। বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক তার বাড়িতে আসতে থাকেন এবং এই রেজাল্টের নেপথ্য জানতে থাকেন। এলাকাবাসী অবাক হন যে বাংলাদেশের মানচিত্রে হিম্মতপুর নামক একটা গ্রাম আছে কি না কেউ জানতো না, কিন্তু আবিরের কারণে আজ সবার কাছে পরিচিত হয়ে গেল এই গ্রামের নাম। এ জন্য তার প্রতি সবার ভালোবাসা আরো বেড়ে গেল।
এবার আবিরকে চলে যেতে হবে এলাকা ছেড়ে শহরে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে। এলাকার কেউ তার এই চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলো না। কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই, তাই সবাই তাকে অশ্রুসিক্ত হৃদয়ে বিদায় জানাল। সবার আশা আবির তাদের এলাকার নাম আরো উজ্জ্বল করবে।
আবির চলে এলো শহরে, ভর্তি হলো এক নামকরা কলেজে। শুরু হলো তার নতুন জীবন। বাবার এই ছোট্ট আয় দিয়ে তাকে শহরে পড়ানো খুবই কষ্টকর মনে হচ্ছিল। কিন্তু ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আর কিছু বললেন না।
প্রথম দিনই আবিরের সাথে মালেকের নানা বিষয়ে কথাবার্তা হয়, আনন্দ করে, তাদের মধ্যে ভাব তৈরি হয়। মালেক প্রতিদিন রাত্রিবেলা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করত এবং আবিরকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকত।
আবির তার বাবা ও মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। বড় ভাইদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে। শিক্ষকদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেয়- কিভাবে একজন ভালো এবং সফল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে।
সে প্রতিদিনই নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে তার সফলতার জন্য দোয়া কামনা করত। অবশেষে মহান রব তার সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন।
আবির এখন প্রকৃত অর্থেই একজন ভালো এবং মেধাবী ছাত্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে। এ জন্য আল্লাহর কাছে সে সকল সময় শুকরিয়া জ্ঞাপন করে। আর কৃতজ্ঞ সে শিক্ষকমন্ডলী, পিতা-মাতা ও বড় ভাইদের কাছে।
আবির এখন বুঝে গেছে যে বড় হওয়ার স্বপ্ন শুধু থাকলেই চলবে না, তার সাথে প্রয়োজন কঠোর সাধনার।

SHARE

Leave a Reply